Ajker Patrika

২ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী বাসা ভাড়া দেন ১০ হাজার

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২০ মে ২০২২, ০০: ১৬
২ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী বাসা ভাড়া দেন ১০ হাজার

মো. জসিম উদ্দিন (ছদ্মনাম) সোনার বাংলা ট্রেনের একজন স্টুয়ার্ড (সেবাদাতা)। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন নগরের কোতোয়ালি থানার নিউমার্কেট এলাকার একটি বাসায়। তাঁর বাসা ভাড়া মাসে ১০-১২ হাজার টাকা। সংসার খরচ মিলিয়ে তাঁর মাসে খরচ ২৫-৩০ হাজার টাকা। অথচ তিনি বেতন পান মাত্র ২ হাজার টাকা। বাড়তি টাকা আসে তাঁর ট্রেনে অবৈধভাবে চলাচল করা যাত্রীদের কাছ থেকে।

জসিম উদ্দিনের মতো সোনার বাংলা ট্রেনের ১৫-২০ জন স্টুয়ার্ড ২ হাজার টাকা বেতন পান। সবাই নগরের বিভিন্ন স্থানে পরিবার নিয়ে থাকেন। তাঁদেরও মূল আয় ট্রেনের অবৈধ যাত্রী থেকে। একই অবস্থা সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি, মহানগর এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেসসহ অন্য ৯ ট্রেনের।

সূত্রমতে, প্রতিটি ট্রেনের যত বগি, ওই পরিমাণ স্টুয়ার্ড রাখতে হয়। একটি ট্রেনের বগি থাকে ১২-১৪টা। সে হিসাবে একটি ট্রেনে ১৫ জন করে ৯ ট্রেনের কম করে হলেও ১৩৫ জন স্টুয়ার্ড থাকার কথা। পাশাপাশি একটি ট্রেনের একজন গার্ড, দুজন ম্যানেজারও রাখার নিয়ম রয়েছে। রাখতে হবে সুইপারসহ অন্যান্য কর্মচারীও।

সরেজমিন সোনার বাংলা, সুবর্ণ, তূর্ণা, মহানগর গোধূলি ও মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টুয়ার্ড ও ম্যানেজারের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, একজন ম্যানেজারের ন্যূনতম ১২-১৫ হাজার ও স্টুয়ার্ডদের ১০ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার অলিখিত নিয়ম থাকলেও তা দেওয়া হয় না। ম্যানেজারদের সর্বোচ্চ ১০ ও স্টুয়ার্ডদের ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এর বাইরে তাদের আয় আসে ট্রেনে অবৈধ যাত্রী তুলে। একটি ট্রেনে প্রতি ট্রিপে কম করে হলেও ৫০ জন যাত্রী তোলেন তাঁরা।

প্রতিজন থেকে অন্তত ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। সে হিসাবে এক ট্রেনে ওঠা ১৫ হাজার টাকা এই ১২-১৪ জন ভাগ করে নেন। এ ছাড়া ট্রেন টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের ভাগও পান তাঁরা। তা ছাড়া ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্মচারীও এই ভাগ পান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্টুয়ার্ড জানান, প্রতিদিন ট্রেনে তাঁদের কাজ করা সম্ভব হয় না। একদিন কাজ করে পরদিন বিশ্রাম নিতে হয়। ১৫ দিন কাজ করেও ২ হাজার টাকা বেতন পান। তবে অন্য কোথাও চাকরি করারও সুযোগ নেই তাঁদের। এই সামান্য বেতনে তাঁদের পকেট খরচই হয় না। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করতে হয়।

৯ ট্রেন যারা পরিচালনা করে, তারা অনবোর্ড সার্ভিস নামে পরিচিত। তারাই ট্রেনে স্টুয়ার্ড, ম্যানেজার ও সুইপার নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এর বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে মাসে ৫ লাখ টাকা দেয় রেলওয়ে। ৯ ট্রেনে প্রতি মাসে রেলওয়ের ব্যয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে পাওয়া অনবোর্ডের চুক্তিপত্রে স্টুয়ার্ড ও ম্যানেজারদের বেতন কাঠামো কী রকম হবে তার উল্লেখ নেই। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও তাদের চাপাচাপি করতে পারে না।

সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনা করছেন মো. শাহ আলম। তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আলম পরিচালনা করছেন মহানগর গোধূলি ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেন। তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে জান্নাতুল নাঈম, মো. তোফ্ফাজল হোসেন পারাবত এক্সপ্রেস, মো. শহিদুল ইসলাম মহানগর ও বিজয় এক্সপ্রেস, মো. ওবায়দুল হক কালনী এক্সপ্রেস, মো. আলমগীর হাওর এক্সপ্রেস, মো. মামুন হোসেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস এবং মো. শহিদুল ইসলাম মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস পরিচালনা করেন। 

সোনার বাংলা ট্রেনের মো. মামুন হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার ফোস দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মেসেজ দিলেও জবাব দেননি। 

স্টুয়ার্ডরা যা বেতন পান তা কম বলে স্বীকার করেন সুবর্ণ ট্রেনের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মো. শাহ আলম। তবে ট্রেনে অবৈধ যাত্রী তোলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইপিএলে চাহালের রেকর্ড হ্যাটট্রিকের রাতে রহস্যময় পোস্ট এই নারীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত