Ajker Patrika

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

ক্যাশিয়ারের পেটে ৫৬ লাখ, উদ্ধারের চেষ্টাকারীকে বদলি

  • বিভিন্নভাবে চাপের কারণে ২ লাখ জমা দিয়েছেন অভিযুক্ত সেলিম।
  • সাবেক তত্ত্বাবধায়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ।
  • টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে: তত্ত্বাবধায়ক
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
মো. আজিজুল হক সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
মো. আজিজুল হক সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

তিন অর্থবছরে শয্যা, কেবিন ভাড়া, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট নানা সেবার বিপরীতে ১ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ২৮৫ টাকা আয় হয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের। কিন্তু সব টাকা জমা দেননি ক্যাশিয়ার মো. আজিজুল হক সেলিম। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যদিও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের চিঠি, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, টাকা পরিশোধে বিভাগীয় চাপ ও দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার কারণে সেই টাকার মাত্র ২ লাখ জমা দিয়েছেন সেলিম।

এদিকে সেলিমের অনিয়ম উদ্‌ঘাটন ও সরকারি টাকা উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে বিপদে পড়েন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মান্নান। একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাঁকে কর্মস্থল ছাড়তে হয়। তবে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন ‘ক্ষমতাশালী’ সেলিম।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সেলিমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। তবে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে বদলি হওয়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মান্নানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘কী কারণে বদলি করা হলো, জানি না। তবে বদলির আদেশে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মস্থল (চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল) থেকে অবমুক্ত হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। সেই হিসাবে আমিও চলে এসেছি নতুন কর্মস্থলে।’ সেলিমের আর্থিক অনিয়ম উদ্‌ঘাটন ও ঠিকাদারদের রোষানলে পড়ে বদলি হয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঠিক কী কারণে, সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে বদলির আদেশে জনস্বার্থের কথা বলা হয়েছে।’

সেলিমের বিষয়ে আবদুল মান্নানের সম্প্রতি আর্থিক রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৫ মে সেলিম ক্যাশিয়ার পদে যোগ দেন। হাসপাতালের শয্যা ও কেবিন ভাড়া, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট নানা সেবার বিপরীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ টাকা। তবে এসবের মধ্যে ১ টাকাও জমা হয়নি কোষাগারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ কোটি ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৫ টাকা আয় হলেও জমা হয়েছে ৮৫ লাখ ২২ হাজার ৫৯০ টাকা। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আয় হয়েছে ৬১ লাখ ৯১ হাজার ৪৮০ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে জমা পড়েছে ৫১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৫ টাকা। অর্থাৎ গত তিন অর্থবছরে মোট আয় হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ২৮৫ টাকা। এই পুরো অর্থ আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন সেলিম। তবে সরকারি রেকর্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৫ টাকা। এই তিন অর্থবছরে তিনি পকেটে পুরেছেন ৫৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯০ টাকা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরেও সেলিমের অর্থ জমা না দেওয়ার বিষয়টি অডিট আপত্তিতে ওঠে। চাপাচাপির পর সেলিম ইতিমধ্যে ২ লাখ টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছেন বলে জানান আবদুল মান্নান। সাবেক এ তত্ত্বাবধায়ক জানান, গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি হাসপাতালে যোগদান করেন। এরপর রোগীদের খাবারের মানোন্নয়ন, জরুরি বিভাগ সংস্কার ও মেরামত, হাসপাতাল অঙ্গনে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও হাসপাতালে বিভিন্ন কেনাকাটায় টেন্ডার কার্যক্রমে স্বচ্ছতাসহ তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়ায়। আর সেলিমের কাছে থাকা হাসপাতালের উল্লিখিত অঙ্কের টাকা উদ্ধারে পদক্ষেপ নেন। সেলিমের কাছে থাকা হাসপাতালের টাকা উদ্ধারে তৎপরতা ও কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনার চেষ্টাই তাঁর কাল হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বদলির বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সনজীদা শারমিনের স্বাক্ষরে ৩ জুন আবদুল মান্নানের বদলির আদেশ হয়। জনস্বার্থে তাঁকে বদলি করার কথা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করে ৪ জুনই অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন।

সেলিমের উল্লিখিত আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সিনিয়র কনসালট্যান্ট অজয় দেবকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনেও আর্থিক অনিয়মের কথা উঠে আসে। পরে বিভাগীয় পর্যায়ে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ওই প্রতিবেদনেও অনিয়মের কথা উঠে আসে।

সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. একরাম হোসেন বলেন, ‘সেলিমের আর্থিক অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটিতে আমিও ছিলাম। আমাদের কমিটির সামনে সেলিম কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে। তারাও একটি কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিয়েছে বলে শুনেছি।’

বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. অং সুই প্রু মারমা বলেন, ‘আমরাও একটা প্রতিবেদন তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় কী, তার নির্দেশনা চেয়েছি। টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সর্বোচ্চ মহল অবগত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত