Ajker Patrika

‘আমি আমাদের আরাকানে ফিরতে চাই’

ইফতিয়াজ নুর নিশান, উখিয়া, কক্সবাজার: 
আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ২২: ১৪
‘আমি আমাদের আরাকানে ফিরতে চাই’

বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের যৌথভাবে শুমারি থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ জনসংখ্যা বিবরণী অনুযায়ী দেশে মোট রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৬ জন। যার ৫২ শতাংশই শিশু। এর মধ্যে ০-১ বছর বয়সী শিশু ১৭ হাজার ১৮৬ জন, ১-৪ বছর বয়সী শিশু ১ লাখ ২৫ হাজার ৫২৮ জন, ৫-১১ বছর বয়সী শিশু ২ লাখ ৩ হাজার ৭২৭ জন এবং ১২-১৭ বছর বয়সী শিশু ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯ জন। 

পরিসংখ্যান অনুসারে ৫ লাখ ৭ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গা শিশুর মধ্যে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৪ জন মেয়েশিশু ও ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৬ জন ছেলেশিশু। এ বছর বিশ্ব শরণার্থী দিবসের আগের দিন ১৯ জুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আয়োজিত ‘গো হোম’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পগুলোতে আয়োজিত সমাবেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের অংশগ্রহণই ছিল সবচেয়ে বেশি। 

তারাও অগ্রজদের মতো আওয়াজ তুলেছে, ‘চলো চলো আরকান চলো। তাদের হাতেও শোভা পেয়েছে মিয়ানমারের পতাকা, দাবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড-পোস্টার। উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সমাবেশে হাজারো রোহিঙ্গাদের মাঝে একঝাঁক শিশুর মধ্যমণি হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল ১১ বছরের রোহিঙ্গা শিশু মোহাম্মদ আয়াছ। সে মিয়ানমারের মংডু থেকে মাত্র ৭ বছর বয়সে মা ও নানির হাত ধরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে চলে আসে। আয়াছের বাবা নিখোঁজ হয় সহিংসতায়, পাঁচ বছরেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। 

নিজের হাতে থাকা মিয়ানমারের পতাকা দেখিয়ে আয়াছ বলে, ‘এটি আমার দেশের পতাকা, আমি আমাদের আরাকানে ফিরতে চাই। বাবাকে দেখি না অনেক দিন, জানি না তার দেখা আর পাব কিনা। দেশে গেলে অন্তত বাবার স্মৃতির সঙ্গে বাঁচব।’ শিশু আয়াছের মতো বাকি শিশুদেরও একইরকম দাবি। তারাও ফিরতে চায় নিজ দেশে। 

কুতুপালং-১ ইস্ট ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন (২৮)। তিনি বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তাঁর ৮ মাসের পুত্র ইয়ামিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তুলনামূলক শিক্ষিত এই রোহিঙ্গা তরুণ জানালেন, ‘ইয়ামিন এখনো ছোট, আমি জানি না তার ভবিষ্যৎ কী। সে বড় হওয়ার আগেই মর্যাদা নিয়ে আমার নিজের জন্মস্থানে ফিরে যেতে চাই, যেন সে নিজের সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠতে পারে।’ 

শরণার্থী দিবস উপলক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তাহসান খান। পরিদর্শনে শেষে উখিয়ায় এলে তাহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মাঝে নিজ দেশের জাতীয়তাবোধ উপলব্ধি করেছি। তারা জানে, তাদেরও নিজস্ব জাতীয় সংগীত আছে, ভাষা আছে।’ 

এদিকে, বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরে স্কুলে যেতে পারে এমন প্রায় ৪ লাখ শিশু রয়েছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ। শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের এই সংস্থাটি এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিশুদের তাদের নিজ দেশের পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে পাঠদান দিতে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে শুরু করেছে মিয়ানমার কারিকুলাম পাইলট (এমসিপি) প্রকল্প। ২০২২ সালের মে মাসে ১০ হাজার শিশু প্রাথমিকভাবে এই কার্যক্রমের আওতায় এসেছে। 

স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে যদি রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তবে পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রম মিয়ানমারের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের সঙ্গে তাদের একীভূত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা ইউনিসেফের। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত