Ajker Patrika

ঘুম কেড়েছে দেয়াঙ পাহাড়ের হাতি: ৭ বছরে ১৬ জনের মৃত্যু, নীরব প্রশাসন

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ০১
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও এলাকায় ঘুরছে হাতি। গত বুধবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও এলাকায় ঘুরছে হাতি। গত বুধবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চারদিকে সবুজের সমারোহ, রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট টিলা, নানা জাতের গাছের সারি। বন-বনানীর সবুজ শ্যামলিমায় গড়ে ওঠা বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কেইপিজেড ও দেয়াঙ পাহাড়ে কখনো হাতির অস্তিত্ব ছিল না বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

প্রাচীন তথ্য-উপাত্তেও দেয়াঙ পাহাড়ে হাতির আবাস্থলের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাগর-নদীবেষ্টিত এই অঞ্চলের পাহাড়ের সঙ্গে আর কোনো পাহাড়ি অঞ্চলের সংযোগ নেই। তার পরও গত সাত বছর ধরে কেইপিজেডের দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থান করছে হাতির একটি পাল। এতে ঘুম নেই দুই উপজেলার মানুষের।

দিনের বেলায় পাহাড়ের জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যার পরই নেমে আসে লোকালয়ে। ক্ষুধার্ত হাতি লোকালয়ে এসে কেড়ে নেয় মানুষের প্রাণ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে শিশু, নারী-বৃদ্ধসহ কয়েক শতাধিক।

একদিকে হাতির বোবা কান্না, অন্যদিকে মানুষের আর্তনাদ যেন দেখেও না দেখার ভান করে আছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মানুষ ও হাতিকে রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁদের তরফ থেকে নেই স্থায়ী কোনো উদ্যোগ।

বন্য হাতির তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এ পর্যন্ত আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানায় হাতির বিরুদ্ধে শতাধিক জিডি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন ও কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শরীফ।

এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখ ১৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ।

বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় সারলেও হাতির খাবার ও নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে বাগান তৈরির কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।

বন বিভাগ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সাত বছর ধরে দেয়াঙ পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি কেইপিজেড এলাকায় পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ ও মানুষের বিচরণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনের বেলায় লোকালয়ে আসছে হাতি।

বনরক্ষক মো. ফোরকান মিয়া বলেন, ‘হাতিকে যতক্ষণ মানুষ আক্রমণ না করবে, ততক্ষণ হাতিও কাউকে আক্রমণ করে না। গত দুই মাসে হাতির আক্রমণে কোনো মানুষের ক্ষতি হয়নি। আমরা চাই হাতি ও মানুষ বাঁচুক একসঙ্গে। মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন অঞ্চলে সচেতনতামূলক ক্যাম্প করছি আমরা।’

বৈরাগ মুহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্র প্রতিনিধি মো. শাহেদুল আলম বলেন, ‘মানুষই হাতির আবাস্থল ধ্বংস করেছে, যার কারণে হাতি লোকালয়ে ঢুকে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করছে। পাহাড়, বনজঙ্গল কাটা বন্ধের কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি হাতি ও মানুষ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সরকারের কাছে।

জলদী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, হাতিকে নিরাপদে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যেতে এলিফ্যান্ট রেসকিউ টিম কাজ করছে।

পরিবেশকর্মী রিতু পারভী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এশিয়ান বন্য হাতি রক্ষা করতে হলে হাতির বাসস্থান সুরক্ষিত হতে হবে। থাকতে হবে খাদ্যের প্রাকৃতিক উৎস। এর জন্য বন উজাড় বন্ধ করতে হবে। আন্তমহাদেশীয় পরিকল্পনা, সহযোগিতা ছাড়া এশিয়ান বন্য হাতি রক্ষা করা কঠিন হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত