Ajker Patrika

ফোন করলেই বলেন ৩৩ কেভি সমস্যা

প্রতিনিধি, আখাউড়া
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২১, ১৬: ৪৯
ফোন করলেই বলেন ৩৩ কেভি সমস্যা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মানেই ৩৩ কেভি সমস্যা। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে বিদ্যুৎ নেই কেন জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের বরাবরই উত্তর থাকে ৩৩ কেভিতে সমস্যা। এতে সাধারণ মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে ৩৩ কেভি নিয়ে নানা প্রশ্ন। পাশাপাশি ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে পুরো উপজেলাবাসী। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যুতের এই সমস্যা ছাড়াও বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল তৈরি নিয়েও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। অনেকের অভিযোগ বর্তমান ডিজিএম তাঁর মনগড়া কথাই আইন। বিল পরিশোধ না হলে লাইন কেটে দিয়ে নিকট আত্মীয়দের বিলে ওই বিল সংযুক্ত করে বিল তৈরি করে দেন তিনি। আর সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো আকাশ কালো হলেই বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যায়। এর কারণ জানতে কল করলেই উত্তরে জানানো হয় ৩৩ কেভি সমস্যা। আর সারা দিনে ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসা লেগেই আছে। এতে এখানকার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র প্রতিনিয়তই নষ্ট হচ্ছে। 

আখাউড়া পল্লি বিদ্যুৎ জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির আখাউড়া জোনাল অফিসের মোট গ্রাহকসংখ্যা ৫৭ হাজার। আখাউড়া জোনাল অফিসের আওতায় রয়েছে আখাউড়ার ধরখার ইউনিয়নের আংশিক এলাকা ছাড়া পুরো উপজেলা। পাশের বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর এবং সিংগারবিল ইউনিয়ন। পত্তন ইউনিয়নের আংশিক এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের আংশিক এলাকাও রয়েছে এ জোনাল অফিসের আওতায়। 

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের সংখ্যা ৫টি। অফিস গুলো হলো, কসবা দুইটি, আখাউড়া একটি, নবীনগর একটি ও নাসিরনগরে একটি। সাব-জোনাল অফিসও রয়েছে চারটি, নবীনগর দুইটি, বিজয়নগরে একটি ও সুলতানপুরে একটি। 

আখাউড়া উপজেলা জোনাল অফিসের বিদ্যুৎ গ্রাহকেদের অভিযোগ উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত হওয়ার পড়েও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। দিনের ডাকেই বিদ্যুতের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে আখাউড়া এলাকার গ্রাহকদের। বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি না থাকলেও অদক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের লাইন সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় লাইন সংস্কার করতে দীর্ঘ সময় লাগে বলে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন। প্রতিদিন বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনায় গ্রাহকেরা বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। 

মোগড়া ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেন জানান, ৩৩ কেভি সমস্যার নাম করে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতের লাইন বন্ধ থাকে। অফিসে ফোন করলেই বলে ৩৩ কেভি তে সমস্যা। ২ / ৩ ঘণ্টা পর ছাড়া সার্ভিস চালু করা সম্ভব নয়। 

পৌরশহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান অপু জানান, বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং দেওয়ার ফলে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার বেশ সমস্যা হচ্ছে। 

পৌরশহরের একাধিক ব্যবসায়ী গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, একে তো করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। তাঁর ওপর বিদ্যুতের এই অব্যবস্থাপনা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে চরম হতাশা তাঁরা। সব মিলিয়ে পল্লি বিদ্যুতের এই অব্যবস্থাপনা অযোগ্য অদক্ষ লাইন ম্যান, টেকনিশিয়ানের কারণে উপজেলাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এর মাশুল গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে বলে জানান তাঁরা। 

শহরের মসজিদপাড়ার জেসি সুলতানা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গত ২১ এপ্রিল রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসভবন থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ ও অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা’ সংক্রান্ত সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। কিন্তু আখাউড়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির টনক নড়েনি। জনগণের লোডশেডিং-এর অভিযোগকে পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। 

এ ব্যাপারে আখাউড়া পল্লি বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবুল বাশার অভিযোগ অস্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও যান্ত্রিক সমস্যার জন্য মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু আখাউড়ার কোথাও লোডশেডিং নেই। ৩৩ কেভি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রিড হতে বিভিন্ন উপজেলায় স্থাপন করা উপকেন্দ্র পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন কে ৩৩ কেভি লাইন বলা হয়। 

এদিকে বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজিতে গ্রাহকেরা অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানববন্ধনসহ বড় আন্দোলন করার হুমকি দিচ্ছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত