Ajker Patrika

চট্টগ্রামে যেসব কারণে বন্যা

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ২০: ৪৩
চট্টগ্রামে যেসব কারণে বন্যা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন। কোনো কোনো এলাকায় ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন তিনজন। স্মরণকালের এমন ভয়াবহ বন্যার কারণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও রেললাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট না থাকা, সাঙ্গু, টঙ্কাবতী ও ডলু নদী থেকে বালু উত্তোলন-দখল এবং বেড়িবাঁধে ভাঙন।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অঞ্চলের তিনটি নদীর নাব্যতা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। প্রতিদিন অবৈধ বালু উত্তোলন, দখল ও খনন না করায় এই দুটি নদী ছোট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে যখন-তখন এলাকা ডুবে যাচ্ছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলনের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত হওয়ায় প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। অথচ বালু উত্তোলন ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, কালভার্ট, বাঁধ, ব্যারেজ, সেতু, বাঁধ, মহাসড়ক, রেললাইন, আবাসিক এলাকা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোর এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। তবু প্রতিদিনই ড্রেজার দিয়ে সেখানে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করছেন। শুধু বালু উত্তোলন নয়, এই দুটি নদী ঘিরে দখল-উৎসবে মেতেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। 

এ ছাড়া সাতকানিয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ড, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড, এওঁচিয়া ইউনিয়নের গাটিয়াডাঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। তাতে পানি ঢুকে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার আরেকটি কারণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অংশে এপার থেকে ওপারে পানি যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কালভার্ট বা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে পানি আটকে বাসাবাড়ি ডুবে যাচ্ছে। 

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক থেকে পড়ে যাওয়া বাস। ছবি: আজকের পত্রিকাসড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত মাত্র ১১০টি কালভার্ট রয়েছে। যা অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এ বছর ভয়াবহ বন্যার অন্যতম একটি কারণ দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প। এই প্রকল্পের কারণে নতুন করে পানি আটকে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমামও মনে করেন কক্সবাজার রেললাইনে পর্যাপ্ত পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে পানিতে লোকালয় ভেসে যাচ্ছে। 

তবে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি এডিবির অর্থায়নে হয়েছে। যথেষ্ট যাচাই করেই তারপর প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইনে ২৪৫টি কালভার্ট স্থাপন করা হয়েছে। পানি যাওয়া আসার ক্ষেত্রে এই রেললাইন কোনো বাধা হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কারণেই পানি আটকে যাচ্ছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কী কারণে এবার ভয়াবহ বন্যা, সেটির কারণ অজানা। প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, ভারত-চীনে বন্যা হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে এবার বন্যা বেশি হয়েছে। কাল সকালে এলাকায় যাব। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও সহযোগিতা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত