Ajker Patrika

তিন টাকার বিরোধে ঘাট বন্ধ

হোসাইন জিয়াাদ, চট্টগ্রাম
তিন টাকার বিরোধে ঘাট বন্ধ

বিরোধ মাত্র তিন টাকার। নৌকার মাঝি, ঘাট ইজারদার ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ত্রিপক্ষীয় বিরোধ। কিন্তু এর জন্যই কর্ণফুলী নদীর অন্যতম ব্যস্ত ঘাট বাংলাবাজার বন্ধ চার দিন ধরে। নদীর দক্ষিণ পাড়ে ইছানগর থেকে এ ঘাটে প্রতিদিন যাতায়াত করে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, ব্যবসায়ীসহ অন্তত দুই হাজার যাত্রী। পারাপার হয় সবজি, দুধ, ওষুধসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। ঘাট বন্ধ থাকায় গত চার দিন ধরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সবাই।

র্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে ১৬টি ঘাট। এর মধ্যে নয়টি ঘাটে হয় যাত্রী পারাপার। নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বোয়ালখালী ও পটিয়ার মানুষ এসব ঘাটে আসা যাওয়া করে। এ ছাড়া দুই পাশের শিল্পকারখানা, সরকারি–বেসরকারি নানা দপ্তর, লাইটার জাহাজের শ্রমিক, নাবিক, মাঝিসহ কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন নদী পারাপার হয়। এসব ঘাট প্রতি বছর ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন।

গত বছর বাংলাবাজার ঘাটটি ইজারা হয় প্রায় ৩৭ লাখ টাকায়। অথচ এ বছর ঘাটটি ইজারা দিতে পারেনি চসিক। ফলে গত প্রায় পাঁচ মাস বৈধ ইজারাদার ছাড়াই এটি পরিচালিত হচ্ছে। এ নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত।

মাঝিদের অভিযোগ, আগের ইজারাদারের লোকজনই এখনো পর্যন্ত টাকা আদায় করছে।  অন্য আটটি ঘাটেই ইজারদাররা যাত্রীপ্রতি ১ টাকা আদায় করেন। কিন্তু এ ঘাটের ইজারাদার আদায় করছেন পাঁচ টাকা। মাঝিরা যাত্রী প্রতি দুই টাকা দিতে রাজিও আছেন। কিন্তু বাড়তি তিন টাকা দিতে রাজি নন। এ দাবিতেই চার দিন ধরে ঘাট বন্ধ রেখে আন্দোলন কর্মসূচি ও অনশন পালন করছেন প্রায় দুই শ সাম্পান মাঝি।

কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম পিয়ার আলী বলেন, ‘শুধু এ ঘাটেই কেন পাঁচ টাকা আদায় করা হবে? অন্য সব ঘাটে যাত্রী পারাপারে দশ টাকা নিই। ইজারদারকে এক টাকা দিয়ে, আমরা পাই নয় টাকা। এ ঘাটে নিতে হচ্ছে ১৩ টাকা। যাত্রীপ্রতি পাঁচ টাকা দিতে হচ্ছে আগের ইজারদারের লোকজনকে। আমরা পাই আট টাকা।’

সাম্পান সমিতির সাবেক সভাপতি মো. এনামুল বলেন, ‘প্রতিদিন যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছে, এ ঘাটে আমরা কেন ১৩ টাকা নিচ্ছি? আমরা তো ভাড়া বাড়াইনি, ইজারাদারের লোকজন বাড়িয়েছে, তাই বাধ্য হয়েছি। সম্প্রতি ম্যাজিস্ট্রেট এসে দুবার  জরিমানা করেছে মাঝিদের। অথচ আমাদের দোষ নেই। সিটি করপোরেশন এ ঘাটটি এ বছর ইজারা দেয়নি কেন?’

ইউসুফ নামে এক মাঝি বলেন, ঘাটে মালামাল পারাপারেও বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ৫০ কেজি পর্যন্ত পণ্য যাত্রীরা ফ্রি পরিবহন করতে পারেন। কিন্তু এ ঘাটে বিশ কেজি মালামাল নিলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি আদায় করা হয়। তা ছাড়া লাইটার জাহাজের নাবিকেরা যখন পার হন তখনো দুই–তিন শ টাকা বাড়তি নেওয়া হয় ।

গতকাল ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শহরের নানা প্রান্ত থেকে আসা যাত্রী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছেন। শামিম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘জানতাম না ঘাট বন্ধ। এখন কলেজে যাওয়ার উপায় নেই। সড়ক পথে অনেক দূর ঘুরতে হবে, টাকাও বেশি লাগবে।’

লাইটার জাহাজের শ্রমিক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইছানগর ঘাটে এসেই বিপদে পড়েছি। শহরে যাওয়া খুব প্রয়োজন। গত দুই ঘণ্টায় কোনো নৌকায় ছাড়েনি।

নদীর অভয়মিত্র ঘাটের ইজারাদার জাফর আহমদ বলেন, ‘পাঁচ টাকা আদায় করা অন্যায়। আমরা যাত্রী প্রতি এক টাকা নিচ্ছি । ঘাটে যাত্রী বেড়ে যাচ্ছে। ওই ঘাটে কমছে। বাংলাবাজার ঘাটের দুই শ মাঝি বিপাকে পড়েছে।’

তবে বাংলাবাজার ঘাটের আগের ইজারাদার হাজী সফিক আহমেদ বলেন, এ ঘাট এখন চসিকের তত্ত্বাবধানে আছে। এ বছর তারা কাউকে ইজারা দেয়নি। তাদেরই জিজ্ঞেস করেন কেন পাঁচ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

বক্তব্য নিতে বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করেও চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, প্রধান ভূমি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, প্রধান নির্বাহী শহীদুল আলম কাউকে পাওয়া যায়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত