Ajker Patrika

বাঁকখালীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আবারও অভিযান শুরু

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। আজ দুপুরে কস্তুরাঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। আজ দুপুরে কস্তুরাঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশ ঘেঁষে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে বাঁকখালী নদী। খরস্রোতা এ নদী দখল-দূষণে এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালী দখলদারেরা নদীর তীরের প্যারাবন কেটে ও চর ভরাট করে গড়ে তুলেছেন একের পর এক পাকা স্থাপনা। এসব স্থাপনা উচ্ছেদে আজ সোমবার কস্তুরঘাট এলাকায় আবারও অভিযান শুরু হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শতাধিক পাকা-আধা পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, বাঁকখালী নদী দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার জন্য অভিযান শুরু করা হয়েছে। অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

অভিযান চলাকালে যাতে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয়, সে জন্য পুলিশ, কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‍্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে মো. খায়রুজ্জামান বলেন, বেলা ১১টা থেকে ৬টা পর্যন্ত শতাধিক পাকা-আধা পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আগামীকাল সকাল থেকে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। আজ দুপুরে কস্তুরাঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। আজ দুপুরে কস্তুরাঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুপুরে কস্তুরাঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচ-ছয়টি এক্সকাভেটর দিয়ে একের পর এক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় প্যারাবনের পাশে গড়ে ওঠা বাড়িঘরের টিন, দরজা-জানালা ও মালামাল সরিয়ে ফেলছেন মালিকেরা। কস্তুরাঘাটের আশপাশের এলাকার মানুষের মাঝেও উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা গেছে।

এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ অভিযান চালিয়ে পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর কস্তুরাঘাট এলাকার ৩০০ একর জমি দখলমুক্ত করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু দীর্ঘদিন দখলমুক্ত থাকার পর গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আবারও দখল হয়ে যায় অধিকাংশ এলাকা।

গত শনিবার কক্সবাজার সার্কিট হাউসে বাঁকখালী নদী দখল-দূষণমুক্ত করার লক্ষে এক বিশেষ সমন্বয় সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার দেশের পর্যটনকেন্দ্র। সভায় বাঁকখালী নদী ঘিরে পর্যটন আকর্ষণে প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি নদীর দখল-দূষণরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে গত ২৪ আগস্ট এ নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত নদীর তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা জনস্বার্থমূলক মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দীকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না জানান, আদালত বাঁকখালী নদীকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা ও সে মোতাবেক ব্যবস্থাপনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ‘কক্সবাজারে বাঁকখালীর তীর দখলের মচ্ছব’ শিরোনামে আজকের পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর আগে একাধিকবার আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাঁকখালী নদীর দখল-দূষণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত