Ajker Patrika

নিজস্ব জমি নেই, অন্যের জমিতে নির্মিত ঘরে চলে পাঠদান

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
নিজস্ব জমি নেই, অন্যের জমিতে নির্মিত ঘরে চলে পাঠদান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নিজস্ব ভবন না থাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে নির্মিত একটি টিনের ঘরে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। প্রায় এক দশক ধরে এভাবেই চলছে উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের পূর্ব বালিখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। যেখানে এখন বিদ্যালয় চলছে, সেই জমির মালিক জায়গা খালি করতে বলছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ে ঝরে পড়াসহ শিক্ষার্থী হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষকেরা। অন্যদিকে উপজেলার প্রকৌশলী সৈয়দ জাকির হোসেন বলছেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব যে জায়গা রয়েছে তা নিম্নভূমিতে। তাই ভবন নির্মিত হয়নি। এখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি ভবন নির্মাণের জন্য জমি দিতে পারে তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের পূর্ব বালিখোলায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৩ সালে এটিকে সরকারিকরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের নিজস্ব যে জায়গা রয়েছে তা নিম্নভূমিতে। যা প্রতি বর্ষায় তালিয়ে যায়। এ কারণে শুরু থেকে বিদ্যালয়ের পাঠদান ও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় মো. নিদু মিয়ার জায়গায়। তাঁর জায়গায় টিনের ঘর তুলে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। সম্প্রতি তিনি জায়গা খালি করতে বলেছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন এতে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টিতে এক বছর আগেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০৬। বর্তমানে রয়েছে ১৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী। রয়েছন মাত্র চারজন শিক্ষক। 

এ নিয়ে জানতে চাইলে মো. নিদু মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। আমি গরিব মানুষ। আমারও জায়গা দরকার। এই কারণে তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছি।’ 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ পাওয়া গেলেও, নানা কারণে তা ফেরত গেছে। ২০১৮ সালে ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে দেখে, যে জায়গায় ভবন নির্মাণের করা কথা তা বিদ্যালয়ের নিজের জমি না। ২০২১ সালে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন (পিইডিপি-৪) আওতায় ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসে। এর পর ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠির জবাব দেন তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী ওমর ফারুক। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, পূর্ব বালিখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনুভূমিক ভবন না থাকায় ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ সম্ভব নয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির দুই দিকে বেমালিয়া নদী। ছোট্ট একটা টিনের ঘরে চলছে পাঠদান। জরাজীর্ণ টিনের ঘরের ছোট ছোট কক্ষের ভেতরে গাদাগাদি করেই ক্লাস করছে শিশুরা। বিদ্যালয়ে আসার নেই কোনো রাস্তা। নেই খেলার মাঠ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও টয়লেট। এক ঘরেই অফিস ও পাঠদানসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হয়। বিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ। তাই অনেক শিক্ষার্থীকে মাটিতে বসতে হয় ক্লাসে। 

এ নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী দাস বলেন, ‘আমি ২০১৩ সালে এখানে যোগদান করি। একটি টিনের ঘরে স্কুল চালাতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আর কত দিন এভাবে চলতে হবে তা জানি না। এখন যে জায়গায় আছি সেটা ব্যক্তি মালিকানাধীন। জায়গার মালিক আমাদের চলে যেতে বলছেন। এখন আমরা কী করব?’ 

এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, ‘শিক্ষা কমিটি আগামী মাসের সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করবে এবং এ নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের বিষয়ে কী করা যায় তা নিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমাধানের ব্যবস্থা নিতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত