Ajker Patrika

চট্টগ্রাম আদালতে হামলা-ভাঙচুর: তিন মামলায় আসামি প্রায় ১৫০০

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ৩৪
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম আদালতে সনাতন সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই তিন মামলায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় নগরের কোতোয়ালি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৭টা) মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘটনার দিন আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল ও কোতোয়ালি মোড়ে তিনটি স্থানে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের পৃথক ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় আজ বিকেল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আটক হওয়া ২৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আইনজীবী হত্যা মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। এডিসি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছি, তার মধ্যে ৮ জনকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’

পুলিশের তথ্যমতে, আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনার মামলায় নাম উল্লেখসহ ৪৯ জন ও ৬০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। রঙ্গম সিনেমা হলের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় নাম উল্লেখসহ ১৪ জন ও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০০-৪০০ জনকে। কোতোয়ালি মোড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৩ জন এজাহারনামীয় ও ২৫০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আজ সকালে পুলিশ জানিয়েছিল, গতকাল মঙ্গলবার সহিংসতার ঘটনায় রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। এরপর একই দিন আরও তিনজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ২৮ জনকে তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগে, সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

গতকাল রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে নেওয়ার সময় চিন্ময়ের বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা প্রায় তিন ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখেন। পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্যরা লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

ওই সংঘর্ষ চলাকালে বেলা ৩টা নাগাদ আদালত এলাকার প্রবেশমুখে রঙ্গম টাওয়ার এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। আইনজীবী নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।

পরে আদালতে আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি আজ কর্মবিরতির ডাক দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তৌহিদি জনতার ব্যানারে নিউমার্কেট মোড়ে সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠন আইনজীবী হত্যার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গতকাল রাতভর অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী ৩০ জনকে আটক করে।

আজও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। নগরের টাইগারপাস মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা, আদালতে প্রাঙ্গণে আইনজীবীরা ও বহদ্দারহাটে ইসলামী ছাত্রশিবির সমাবেশ করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।

পুলিশ বলেছে, গতকাল ওই সংঘর্ষের ঘটনায় একজন আইনজীবী নিহতের পাশাপাশি পুলিশের ১২ সদস্যসহ ১৮ জন আহত হয়েছেন। যাঁদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ছাড়া গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুরের পর ওই শুনানির বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে পিটিশন দাখিল করেন চিন্ময়ের আইনজীবীরা। আজ দায়রা জজ আদালতে আবেদনের ওপর শুনানির কথা থাকলেও আইনজীবী সাইফুল হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আদালত বর্জনের ডাক দেওয়ায় শুনানি হয়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধানমন্ডি ৩২ থেকে সন্দেহভাজন কিশোর ও যুবক আটক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সন্দেহভাজন কিশোর ও এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সন্দেহভাজন কিশোর ও এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা থেকে এক সন্দেহভাজন কিশোর ও এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে কিশোরটিকে এবং দুপুর ১টার দিকে যুবককে আটক করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, আটক কিশোরের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার বক্তব্যে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। সে একবার নিজেকে শিক্ষার্থী, আবার একবার ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আটক কিশোরের পরনে প্যান্ট, কোট ও টাই এবং হাতে একটি ব্যাগ ছিল। তাকে আটক করার পর পুলিশের ভ্যানে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, আটক কিশোরের ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র ও আলামত জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের যোগসূত্র থাকতে পারে।

অন্যদিকে আটক যুবকের বয়স ২২ বছর। তারও বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় রাখা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ও পরিচয় যাচাইয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাফরুল থানার সামনে ককটেল ছুড়ে পালানোর সময় যুবক আটক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
কাফরুল থানা। ছবি: সংগৃহীত
কাফরুল থানা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুরে কাফরুল থানার সামনে দুটি ককটেল ছুড়ে পালানোর সময় এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় দুটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

প্রাথমিকভাবে আটক যুবকের নাম জানা যায়নি।

পুলিশ জানায়, ওই যুবক কাফরুল থানার সামনে দ্রুতগতিতে এসে দুটি ককটেল ছুড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তবে ককটেল দুটি বিস্ফোরিত হয়নি। ঘটনার সময় পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) এলপি গেটের সামনে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি লক্ষ্য করে তৎপর হয়ে ওঠেন। আশপাশে থাকা স্থানীয়রাও সহযোগিতা করে ওই যুবককে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে। পরে তাকে কাফরুল থানায় সোপর্দ করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র তালেবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘কাফরুল থানার সামনে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তবে তা বিস্ফোরিত হয়নি। পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় একজনকে আটক করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে কোনো সহিংস কার্যক্রমে জড়িত চক্রের সদস্য হতে পারে। ককটেল দুটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেগুলো পরীক্ষার জন্য বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলকে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুড়িগ্রামে জনজীবন স্বাভাবিক, নাশকতা চেষ্টার অভিযোগে আটক ৩৩

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
বিশেষ অভিযানে আটক ব্যক্তিদের কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিশেষ অভিযানে আটক ব্যক্তিদের কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্যক্রম নি‌ষিদ্ধ আওয়ামী লী‌গের অনলাইনে ডাকা কর্মসূ‌চির কারণে কু‌ড়িগ্রা‌মে জনজীবনে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। সবকিছু স্বাভা‌বিকভাবে চলছে। আজ বৃহস্প‌তিবার (১৩ ন‌ভেম্বর) সকাল থে‌কে বি‌ভিন্ন রু‌টে মালবাহী ও গণপ‌রিবহন চলাচল কর‌তে দেখা গে‌ছে। এ ছাড়া সরকা‌রি প্রতিষ্ঠানসহ বি‌ভিন্ন দপ্তরে দি‌নের স্বাভা‌বিক কার্যক্রম চলমান র‌য়ে‌ছে। তবে নাশকতা চেষ্টার অভি‌যো‌গে দুই দি‌নে কু‌ড়িগ্রা‌মে আওয়ামী লীগের ৩৩ নেতা-কর্মী‌কে আটক ক‌রে‌ছে পু‌লিশ।

জেলা শহরসহ উপ‌জেলা শহ‌রে সরকা‌রি, বেসরকা‌রি ও শ্বায়ত্তশা‌সিত প্রতিষ্ঠানগু‌লো‌তে স্বাভা‌বিক কার্যক্রম চলমান র‌য়ে‌ছে। ‌শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগু‌লো‌তে পাঠদান চল‌ছে। এ ছাড়া ব‌্যবসাপ্রতিষ্ঠা, বাজার ও দোকানপা‌টে বেচাকেনা ও লেন‌দেন স্বাভা‌বিক র‌য়ে‌ছে। আজ বেলা সা‌ড়ে ১১টা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রী‌তিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়‌নি।

জেলা মোটর মা‌লিক স‌মি‌তির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ক‌বির ব‌লেন, জেলার সব রু‌টে প‌রিবহন চলাচল স্বাভা‌বিক র‌য়ে‌ছে। প‌রিবহন সেক্টরসহ কোনো পর্যা‌য়ে কার্যক্রম নি‌ষিদ্ধ দল আওয়ামী ল‌ী‌গ ঘো‌ষিত কর্মসূ‌চির কোনো প্রভাব প‌ড়ে‌নি।

জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উলিপুর সার্কেল) মো. আশরাফুল আলম বলেন, তথাকথিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নাশকতা সৃ‌ষ্টির চেষ্টার অভিযো‌গে কুড়িগ্রাম জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনসহ গত দুই দি‌নে ৩৩ জন‌কে গ্রেপ্তার করে আদাল‌তে সোপর্দ করা হ‌য়ে‌ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই অভিযান নিয়মিত চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিশোরকে বাসা থেকে নিয়ে নির্যাতনের পর ফেলে যায় রাস্তায়, হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু

ঢামেক প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগে চোর সন্দেহে নির্যাতনের শিকার কিশোর বাপ্পি (১৫) মারা গেছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে তার মারধর করা হয়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে গেলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছে।

বাপ্পি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার কদমতলা গ্রামের মো. শাহজাহানের ছেলে। তার বাবা রিকশাচালক এবং মা পারুল বেগম একটি কারখানায় কাজ করেন। বাপ্পিও মায়ের সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করত। সে ধোলাইপাড় এলাকার প্রেমগলিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত।

বাপ্পির বড় ভাই মো. পারভেজ জানান, গত মঙ্গলবার আনুমানিক দিবাগত রাত ২টার দিকে একই এলাকার কাপশি রাসেল, মোল্লা শুভ এবং শাকিব তাঁদের বাসায় আসে। তারা অভিযোগ করে, বাপ্পি মীরহাজীরবাগের একটি বাসা থেকে জানালা দিয়ে টাকা ও বিদ্যুতের প্রিপেইড কার্ড চুরি করেছে। এরপর তাকে জোর করে ধরে নিয়ে মীরহাজীরবাগের আবু হাজী মসজিদ গলির একটি বাসার নিচতলার ‘ক্লাব ঘরে’ আটকে রাখা হয়।

পারভেজ আরও বলেন, সেখানে বাপ্পিকে রাতভর পেটানো হয়। বুধবার সকাল ৬টার দিকে চুরির টাকা ও মালামাল বের করে দেওয়ার কথা বলে বাপ্পিকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু কিছু না পেয়ে তারা আবার বাপ্পিকে নিয়ে যায়। বাপ্পিকে ছাড়াতে তার মা পিছু পিছু গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। সারা দিন নির্যাতনের পর বাপ্পি যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে, তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে তাকে মীরহাজীরবাগের বড়বাড়ি প্রথম গেটের সামনের রাস্তায় ফেলে রেখে যায় অভিযুক্তরা। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথেই বাপ্পি মারা যায়।

ঢামেক মর্গে বাপ্পির বাবা মো. শাহজাহান আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে যদি কোনো অপরাধ করেও থাকে, তাহলে মারধর করার পর পুলিশের কাছে তুলে দিত। এইভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলল কেন? আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে জানান, চোর সন্দেহে বাপ্পি নামে ওই কিশোরকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এসআই জুয়েল নিশ্চিত করেন, বাপ্পির মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে যার বাসায় চুরির সন্দেহে বাপ্পিকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল, সেই ফৌজিয়া রওশন আক্তার প্রীতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ৫-৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত