Ajker Patrika

তেল খালাসে নতুন যুগে বাংলাদেশ, জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১৬: ১৬
তেল খালাসে নতুন যুগে বাংলাদেশ, জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে

জ্বালানি তেল খালাসে নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। বহু প্রতীক্ষার পর গভীর সমুদ্রে বড় জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে তেল খালাস শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে এই কার্যক্রম শুরু হয় বলে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান জানান।

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, সকাল সোয়া ১০টায় মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরে নোঙর করা জাহাজ এমভি হোরাই থেকে পাইপলাইনে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়েছে। এই জাহাজে ৮২ হাজার টন তেল আছে। প্রথম জাহাজটি খালাস হতে সময় লাগবে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা।

সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ৮২ হাজার মেট্রিকটন ক্রুড অয়েল আসে। সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় এসপিএম লাইনে তেল খালাস প্রকল্পের কমিশনিং শুরু করা যায়নি। গতকাল রোববার খালাসের অপেক্ষায় থাকা জাহাজটি মাতারবাড়ী এসপিএম প্রকল্পের হোস পাইপে নোঙর করে। সব চেক করে আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় পাইপলাইনে তেল খালাস শুরু হয়। এরপরের দফায় পরিশোধিত তেলের জাহাজ এলে দ্বিতীয় পাইপলাইনটিও কমিশনিং করা হবে।

ইআরএল সূত্র জানায়, বড় জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল খালাসে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ (এসপিএম) প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসপিএম প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে ২৫ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

আজ সোমবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরে নোঙর করা বড় জাহাজ ‘এমভি হোরাই’ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাইপলাইনে গভীর সাগর থেকে ১ লাখ মেট্রিকটন তেলবাহী বড় জাহাজ থেকে তেল খালাসে সময় লাগবে মাত্র ২-৩ দিন। আগে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তেল খালাসে সময় লাগত ১০-১২ দিন। পাইপলাইনে তেল খালাসের ফলে দেশে জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা বাড়বে ১০-১৫ দিন। কমবে তেল চুরি, সিস্টেম লসসহ নানা পরিবহন নৈরাজ্য।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে গভীর সাগর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পাইপলাইন সাগরে নোঙর করা জাহাজ থেকে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে তেল নেওয়া হবে। পাইপলাইন কমিশনিং করার পর সেখানে থাকা হেজ, সার্কিট ভাল্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরপর স্টোরেজ থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত পাইপলাইন কমিশনিং করা হবে। প্রথমে ক্রুড অয়েল, পরে ডিজেলে পাইপলাইন কমিশনিং করা হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী আগস্টে প্রধানমন্ত্রী এসপিএম প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

সূত্র জানায়, বন্দরের অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় এখন তেলবাহী বড় জাহাজগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটার জাহাজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১২ দিন সময় লেগে যায়।

আজ সোমবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরে নোঙর করা বড় জাহাজ ‘এমভি হোরাই’ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাগতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরীর পতেঙ্গার মধ্যে সংযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহেশখালীর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এসপিএম থেকে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথমে মাতারবাড়ী এলটিই পর্যন্ত এবং পরে সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে তেল জমা হবে। পরে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অবস্থিত স্টোরেজ ট্যাংকে আনা হবে। 

২০১৫ সালে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) হাতে নেওয়া হয়। মোট ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতিমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণসহায়তা দিচ্ছে চীন সরকার। এ ছাড়া বিপিসি ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৬০১ কোটি টাকা দিচ্ছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে।

প্রকল্পের অধীনে এক সেট এসপিএম-পিএলইএম, একটি ভাসমান ভয়া, ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন, এর মধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার সাগরের তলদেশ দিয়ে এবং ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইন উপকূল দিয়ে, ২ লাখ ৮৮ হাজার ঘনমিটারের ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক, তিনটি ব্লক ভাল্ব স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। 

চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কারিগরি তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে এসপিএম প্রকল্প। এতে পরামর্শক হিসেবে সহায়তা দিচ্ছে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ। এসপিএম চালু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা। এখন ৪০ দিনের জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা থাকলেও এসপিএম চালুর পর তা আরও ১০-১৫ দিন বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

শান্ত যে কারণে টি-টোয়েন্টি দলে, মিরাজ কেন নেই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত