Ajker Patrika

নবান্ন উৎসব নেই ৬০ হাজার কৃষক পরিবারে

  • বন্যায় উপজেলার ১৮ হাজার ৪৪০ হেক্টর আমনের খেত নষ্ট।
  • কৃষি বিভাগ অসময়ে ৬ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিলেও ভালো ফলন হয়নি।
মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

প্রতিবছর হেমন্তের এই সময়ে আমন ধান ওঠার পর কৃষকদের ঘরে ঘরে চলত নবান্ন উৎসব। চারদিকে খেত থেকে পাকা ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন কৃষকেরা। নতুন ধানে পিঠাপুলির আয়োজনে তাঁরা আনন্দমুখর থাকতেন। কিন্তু এ বছর নবান্ন উৎসব নেই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৃষকদের।

চলতি বছরের আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ৬৬ হাজার কৃষকের খেতের আমন ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে ঘরে খোরাকির চাল তুলতে না পারায় পরিবারের সদস্যদের খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা, অন্যদিকে গবাদিপশুর খড়ের জোগান নিয়েও কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। যে মাঠে ফসল কাটা নিয়ে ব্যস্ততা ছিল, সেই মাঠ এখন বিরান ভূমির মতো।

যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, ছয় হাজার কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ঘরে ধান তুলতে পারবেন। তবে আমনচাষিরা বলছেন, তাঁরা বন্যাপরবর্তী কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি এবং অসময়ে ধান চাষ করায় ভালো ফলন পাচ্ছেন না।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগস্টের বন্যায় ১৮ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়। এতে ৪০০ কোটি টাকার বেশি লোকসানে পড়ে ৬৬ হাজার ৩২৮ কৃষক পরিবার। বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় আমনের বীজতলা নষ্ট হয়। ক্ষতি পোষাতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় ছয় হাজার কৃষকের মধ্যে ধান ও সার বিতরণ করে। অথচ সেই প্রণোদনা বীজ ও সার কৃষকদের কাজে আসেনি। একাধিকবার ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমন ধান ফলাতে পারেনি ৬৬ হাজার ৩২৮ কৃষক পরিবার। তাই এবার নবান্ন উৎসব নেই এই পরিবারগুলোতে।

উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রান্তিক কৃষকদের বেশির ভাগ ফসলের মাঠ আগাছায় পূর্ণ। অথচ প্রতিবছর এমন সময় এসব মাঠে ফসল কাটার ধুম থাকে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে আরও জানা গেছে, এই উপজেলায় ১৮ হাজার ৪৪০ হেক্টরের মধ্যে মাত্র ১০ হাজার হেক্টরে আমন চাষ হয়েছে। তা-ও আবার আশানুরূপ ফসল পাওয়া যাবে না বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। এখনো বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের আবাদি জমিতে বন্যার পানি জমে আছে। আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চৌদ্দগ্রামের প্রায় ছয় হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বীজধান ও সার দেওয়া হয়।

আমনের বীজ দেওয়া হলেও এবার তা কাজে আসছে না। অসময়ে কৃষকেরা অন্য উপজেলা থেকে আমনের চারা এনে জমিতে রোপণ করলেও আশানুরূপ ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

বাতিসা ইউনিয়নের দেবিপুর গ্রামের মো. আমির হোসেন মজুমদার বলেন, বন্যার ক্ষতি পোষাতে কৃষিস্প্রসারণ দপ্তর থেকে ধান ও সার দেয়। কিন্তু বীজতলা তৈরীর পর ভারী বর্ষণে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রণোদনা কোনো কাজে আসেনি।

মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামে কৃষক নজির আহমেদ বলেন, ‘আমি তিন হাজার টাকা খরচ করে অন্যের জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু আগস্টের বন্যায় সেই বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। পরে পানি নেমে গেলে আবার বীজতলা তৈরি করি। তখন একাধিকবার জলাবদ্ধতায় সেই বীজতলাও নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এবার আমন চাষ করা সম্ভব হয়নি। ঘরে নতুন ধানও ওঠেনি।’

এদিকে প্রতিবছর আমনের খড় দিয়ে কৃষকেরা তাঁদের গৃহপালিত পশুর খাদ্যের জোগান দিতে পারলেও এবার আমন চাষ না হওয়ায় গোখাদ্যের সংকট সৃষ্টি হবে। এই নিয়ে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সোনাপুর গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, ‘প্রতিবছর আমনের খড়ে গৃহপালিত গরুর খাদ্যের জোগান হতো। আমার সাতটি গরু আছে। আমন চাষ না হওয়ায় এগুলো নিয়ে খাদ্যসংকটে পড়তে হবে।’

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জুবায়ের আহমেদ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয় হাজার কৃষককে ধান ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কৃষকেরা গোলায় তুলতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অমর কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী আজ

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৪
কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের আজ ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মীর মশাররফ হোসেন। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মায়ের নাম দৌলতন নেছা।  

মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী ঘিরে বাংলা একাডেমি, প্রশাসন, মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজ, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মীরের সমাধিস্থল বালিয়াকান্দির নবাবপুরের পদমদীতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের আমন্ত্রণপত্র সূত্রে জানা যায়, জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিতে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর বেলা ১১টায় সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে সভাপ্রধান হিসেবে থাকবেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলা একাডেমির সচিব (উপসচিব) ড. মো. সেলিম রেজা।  

স্বাগত বক্তব্য দেবেন বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান এবং প্রবন্ধকার হিসেবে থাকবেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। বিশেষ অতিথি থাকছেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. সরকার আমীন ও সমীর কুমার সরকার।  

১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করলে তাঁকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে সমাহিত করা হয়।

কবির বাস্তুভিটায় বসছে গ্রামীণ মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কবির বাস্তুভিটায় বসছে গ্রামীণ মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়ায় কবির বাস্তুভিটায় দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। বিকেলে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। এতে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিকেলে লাঠিখেলা ও আলোচনা শেষে মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাট্যানুষ্ঠান। এদিন মঞ্চায়িত হবে কবির লেখা নাটক ‘জমিদার দর্পণ’। পরিবেশনা করবেন উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। শুক্রবার মধ্যরাতে কবির কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ-সিন্ধু’ অবলম্বনে নাটক ‘এজিদের পরিণতি’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হবে জন্মোৎসব।

এ উপলক্ষে কবির বাস্তুভিটায় বসবে গ্রামীণ মেলা। মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্যকর্ম রচনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ভারতী, সংবাদ প্রভাকর, মিহির, হাফেজ, আহমদী, নবরত্ন প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। ধর্ম, আইন, প্রবন্ধ, ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা, নাটক, গান ও উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে ‘শাহনামা’, ‘গুলিস্তা’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘রামায়ণ-মহাভারত’, ‘বিদ্যাসুন্দর দাশরথী রায়ের পাঁচালী’, ‘বানভট্রের কাদম্বরী’ উল্লেখযোগ্য।

১৮৬৯ সালে লেখা মীর মশাররফ হোসেনের “রত্নাবতী” উপন্যাসটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর তাঁর অমর সৃষ্টি ১৮৮৫ সালে লেখা ‘বিষাদ-সিন্ধু’ ছাড়াও ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’, ‘রাজিয়া খাতুন’, ‘তহমিনা’, ‘বাঁধাখাতা’, ‘বধূমাতা’ও উল্লেখ্য। তাঁর রচিত নাটক ‘বসন্ত কুমারী’ ও ‘জমিদার দর্পণ’ বাংলাসাহিত্যে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘কবির ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে আজ তাপমাত্রা ১৩.৪ ডিগ্রি, শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিল আবহাওয়া অফিস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৪
পঞ্চগড় করতোয়া নদী থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় করতোয়া নদী থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হিমালয়ের পাদদেশে বইছে হিমেল বাতাস, সকালবেলায় চারদিক ঢেকে যাচ্ছে ঘন কুয়াশায়। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমে আসে, তবে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আবারও বাড়তে থাকে ঠান্ডা অনুভূতি। প্রতিদিনই নামছে তাপমাত্রা। তবে গতকালের চেয়ে আজ তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়েছে। শীতের আমেজ।

বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। এর আগে বুধবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি, মঙ্গলবার ১৪ দশমিক ৫ এবং সোমবার সকালে ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তি বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। গভীর রাতে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। সকালে খোলা জায়গায় কাজ করা হয়ে পড়ছে কষ্টকর। তালমা কাটাবাড়ি এলাকার দিনমজুর মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোরে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, ঠান্ডায় হাত-পা জমে যায়। কিন্তু কাজ বন্ধ রাখলে সংসার চলে না।’ আরেক শ্রমিক রবিউল মিয়া বলেন, ‘নদীতে বালু তোলার সময় মনে হয় বরফের পানিতে নেমেছি। তবু পেটের দায়ে নামতেই হয়।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘উত্তর দিক থেকে হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মাসের শেষ দিকে হালকা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনা-২ আসন: মঞ্জুর দলীয় মনোনয়নে বিভক্ত মহানগর বিএনপি

  • খুলনা-২ আসনে মঞ্জুকে বর্জন করেছে মহানগরের ৫ থানা কমিটি।
  • জরুরি সভায় মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে দুটি থানা কমিটি।
  • মঞ্জুর পক্ষে কাজ করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৯
খুলনা-২ আসন: মঞ্জুর দলীয় মনোনয়নে বিভক্ত মহানগর বিএনপি

খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা) আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল সামনে এসেছে। স্থানীয় নেতারা তাঁর পাশে নেই। গত মঙ্গলবার রাতে সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা কমিটি জরুরি সভা করে মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় দলীয় কোনো পদে না থাকায় মহানগরের পাঁচটি থানা কমিটির সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে তাঁর। সেই দূরত্ব কাটাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে মহানগর বিএনপির ৫ থানার বর্তমান নেতারা দলীয় প্রার্থী মঞ্জুকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই তাঁরা বৈঠকেও উপস্থিত হচ্ছেন না।

খুলনা-২ আসনে মঞ্জুকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর গত রোববার দলীয় নীতিনির্ধারকদের প্রথম বৈঠক হয় মঞ্জুর বাসভবনে। পরদিন সোম ও মঙ্গলবার রাতে খুলনা ক্লাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়। বৈঠকে খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর, খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা) আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল ও খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া ও ফুলতলা) আসনের প্রার্থী আলী আসগর লবী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাবেক নেতারা নজরুলের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

বৈঠক শেষে খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘কীভাবে খুলনা-২ এবং খুলনা-৩ আসনে নির্বাচনী কাজ করব, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা নির্বাচন করব।’

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে খুলনার কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা করেন সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা কমিটির বর্তমান নেতারা। সভায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—১২ নভেম্বর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে স্মারকলিপি পেশ। ১৩ নভেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয় ও বিএনপি মহাসচিব এবং কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বাবু বলেন, ‘আমরা আজ (বুধবার) রাত ১০টার পর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের কাছে স্মারকলিপি দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর: উপজেলা প্রকৌশলী নিজেই ‘ঠিকাদার’

  • উপজেলার ছয় প্রকল্পে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ।
  • নিজেই কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহারের অভিযোগ।
  • দুটি কালভার্টের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ, একটি কালভার্ট নির্মাণ।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের ছয়টি প্রকল্পে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই ‘ঠিকাদার’ হয়ে কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করেন। এসব কাজে তিনি মেসার্স আনাস এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ফয়সাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছেন বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৬টি প্রকল্পে আরএফকিউ ও পিআইসির মাধ্যমে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুমোদন করে উপজেলা পরিষদ। প্রকল্পগুলো হলো, চরমার্টিন ইউনিয়নের বলিরপুল সড়কে ২টি কালভার্ট নির্মাণ এবং সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ ১৩ লাখ টাকা, তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে বরাদ্দ ৬ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের গেজেটেড নন-গেজেটেড কোয়ার্টার ও অন্যান্য সংস্কারে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেট সংস্কারে বরাদ্দ ৪ লাখ টাকা এবং হাজিরহাট দক্ষিণ বাজার ড্রেন সংস্কারে বরাদ্দ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব প্রকল্পেই নয়ছয় করে বেশির ভাগ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে এলাকাবাসী জানান, চরমার্টিনের বলিরপুল রাস্তা সংস্কারের ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখ টাকার মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে। আবার ওই সড়কে দুটি কালভার্টের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হলেও মাত্র একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এদিকে তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টয়লেট সংস্কারের নামে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও সামান্য কিছু কাজ করে বাকি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে উপজেলা পরিষদের গেজেটেড ও নন গেজেটেড কোয়ার্টার সংস্কারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও কিছু কিছু অংশে রঙের কাজ করেই শেষ। এ ছাড়াও হাজিরহাট বাজারের ড্রেন সংস্কারে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চরমার্টিন বলিরপুল এলাকার বাসিন্দা হোসেন আহমেদ বলেন, ‘এ রাস্তা বন্যার সময় ভেঙে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সমস্যার কথা বলার পর পরিষদের অর্থায়নে বেধে দিয়েছে। তা ছাড়া মাটি তো আমি দিয়েছি। তাহলে এত টাকা লাগবে কেন?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ঠিকাদার বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ এ উপজেলায় আসার পর থেকে নিজে অনেক কাজ করেছেন। অতীতের কোনো প্রকৌশলী এমন করেননি।

এ বিষয়ে আনাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘এ কাজগুলো উপজেলা পরিষদ থেকে করা হয়েছে। শুধু আমাদের লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’

এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ছয়টি প্রকল্প আমি নিজেই এস্টিমেট করে দিয়েছি। আমার স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন হওয়ার কথা। এখন শুনছি আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে বিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এভাবে বিল করার কোনো নিয়ম নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ বলেন, ‘কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তা ছাড়া চাকরিকে অনেক ভালোবাসি; আমার চাকরির ক্ষতি হবে, এমন কোনো কাজ করি না।’

লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী একরামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত