Ajker Patrika

নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত, ৬০ লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ

রঞ্জন কুমার দে, শেরপুর (বগুড়া) 
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৪, ০৯: ২৫
নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত, ৬০ লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ

বগুড়ার শেরপুরে ছোনকা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করার অভিযোগে উঠেছে। এ ঘটনায় প্রায় ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন পদে আবেদনকারীদের। 

জানা গেছে, উপজেলার ছোনকা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের চারটি পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামীকাল ২৮ জুন। কিন্তু এর আগেই প্রধান শিক্ষক পদে ১০ লাখ টাকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১৬ লাখ টাকা, নিরাপত্তাকর্মী পদে ১৬ লাখ টাকা ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ১৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে একাধিক আবেদনকারী অভিযোগ করেন। 

অন্য প্রার্থীদের তথ্য অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে কেল্লা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে মো. দিলফুজার রহমান, নিরাপত্তা কর্মী পদে শফিনুর রহমান এবং কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে মো. নিশাত নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। 

কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারী ফয়সাল আবির জানান, ‘আমি এই পদে নিয়োগের জন্য স্কুলের সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুলের কাছে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম দুই বছর আগে। এর জন্য আমি জমি ও গরু বিক্রি করেছি। মুকুল আমাকে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সঙ্গে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ও ব্যাংকের চেক দিয়েছেন। কিন্তু এখন ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে নিশাতকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মুকুল আমাকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি ১০ লাখ টাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই দেওয়ার কথা আছে।’ 

প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন মশিউর রহমান। তিনি বলেন, এই পদে তিনিসহ ১০ জন আদেন করেছেন। এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ফেরদৌস তাঁর চাচাতো ভাই দিলফুজার রহমানকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেছেন। মশিউর আরও বলেন, এখন যে রফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাঁর চাকরির মেয়াদ আছে তিন বছর। এরপর দিলফুজার রহমানকে সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই এমনটা করা হচ্ছে। 

প্রধান শিক্ষক পদে আরেক প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত আমাকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তাদের নির্ধারিত প্রার্থী নিয়োগ দিতে পারবে না। তাই কৌশলে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ 

অর্থের লেনদেন ও প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্কুলের ম্যানেজিং অভিভাবক সদস্য আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়ে আমাকেসহ কয়েকজনকে কিছুই জানানো হয়নি। স্কুলের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।’ 

সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী দিলফুজার রহমান অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিয়মমাফিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নিয়োগ পাব। এর জন্য আমি কাউকে টাকা দেইনি।’ 

এ বিষয়ে ছোনকা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদা খুদা বলেন, ‘প্রার্থী নির্বাচন ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ মিথ্যা। আমি এর চেয়ে বেশি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’ 

এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুল বলেন, ‘গত ২২ জুন আলমগীর হোসনের বাড়িতে তাঁর প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত করা ও টাকা লেনদেনের কোনো সত্যতা নেই। শুক্রবার নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমি কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারী ফয়সালের কাছ থেকে নিয়োগের জন্য কোনো টাকা নেইনি। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। তাঁকে ৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’ 

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা ও প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবারের নিয়োগ পরীক্ষায় যেন কোনো অনিয়ম না করা হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হবে। তবে নিয়োগের বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে অথবা এই চারজন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষণা, নেই কাদের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।

নিহত মো. রাকিব (২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য নির্মিত বহুতল ভবনে প্লাস্টারের কাজ করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।

ভবনটি নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ওই ভবনের নবম তলায় প্লাস্টারের কাজ করছিলেন রাকিব। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভবনের জানালা দিয়ে তিনি ময়লা-আবর্জনা ফেলতে গিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে ভবনের কর্মচারীরা উদ্ধার করে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ৮টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে এই ঘটনা ক্যাম্পাসে জানাজানি হয় রাত ১১টার দিকে।

ভবনটিতে সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ভবনের নবম তলায় প্লাস্টারের কাজ করা হচ্ছিল। রাকিব ভবনের জানালা দিয়ে ময়লা ফেলতে গিয়ে পড়ে যান। পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নেওয়া হলে তিনি মারা যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষণা, নেই কাদের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে সিপিবি সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
মাউথ স্পিকার হাতে অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাউথ স্পিকার হাতে অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেট জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমনকে আটক করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। শুক্রবার মধ্যরাতে নগরের কালীবাড়ি এলাকার সুমনের নিজ বাসা থেকে এসএমপি জালালাবাদ থানা-পুলিশ তাঁকে আটক করে।

রাত ২টায় আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। কী অভিযোগে আটক করা হয়েছে, তা সকালে জানাবেন উল্লেখ করে অভিযান চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সিপিবি সিলেটের সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী বেদানন্দ ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে নগরের আখালিয়া কালীবাড়ি এলাকার বাসা থেকে সুমনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

সম্প্রতি আনোয়ার হোসেন সুমন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার নগরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন চালকেরা। এতে আনোয়ার হোসেন সুমনও সম্পৃক্ত ছিলেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে সুমনসহ কয়েকজন মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর দাবি আদায়ে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন চালকেরা। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে রোববার অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন তাঁরা। তার আগেই শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে সুমনকে আটক করা হলো।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, অটোরিকশাচালকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে। এ ছাড়া পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘাতের আশঙ্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের শনি ও রোববারের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে সিলেট মহানগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরীর উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানে বহু রিকশা জব্দ ও একাধিক চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর পর থেকে নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলতে দেওয়া হচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষণা, নেই কাদের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শতবর্ষেও আব্দুর রহিমকে পরতে হয় না চশমা, নড়বড়ে হয়নি দাঁত

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি
মিঠাপুকুর উপজেলা সদরের মোহনা হোটেলের সামনে বসে ভিক্ষা করেন বৃদ্ধ আব্দুর রহিম। ছবি: আজকের পত্রিকা
মিঠাপুকুর উপজেলা সদরের মোহনা হোটেলের সামনে বসে ভিক্ষা করেন বৃদ্ধ আব্দুর রহিম। ছবি: আজকের পত্রিকা

১০৫ বছর বয়স। কিন্তু নড়বড়ে হয়নি একটি দাঁতও, পরতে হয় না চশমা। এই বয়সেও দিব্যি হেঁটে চলাফেরা করেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের নিঝাল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম।

গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরের মোহনা হোটেলের সামনে বসে ভিক্ষা করছিলেন বৃদ্ধ আব্দুর রহিম। তিনি একটি চাকু দিয়ে সুপারি কাটছিলেন। তাঁর কাছে গিয়ে জানতে চাওয়া হয়, এই বয়সেও কি সুপারি চিবোতে পারেন?

প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলেন রহিম। জানালেন, তাঁর দাঁত পড়েনি, এমনকি নড়বড়েও হয়নি। আলাপচারিতার মাঝেই পান-সুপারি মুখে দিয়ে কাপড়ের পোঁটলা থেকে চুনের ডিব্বা বের করলেন। তিনি জানান, তাঁর বয়স এখন ১০৫ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর।

পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের জনক আব্দুর রহিম এখনো বেশ সক্ষম। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে-মেয়েদের দেখলে তাঁদেরই বয়স বেশি মনে হবে। তাঁর আপন চার ছোট ভাই অনেক আগে মারা গেছেন। মাথার চুল দেখিয়ে তিনি বললেন, এখনো কিছুটা চুল কালো রয়েছে।

এত বয়সেও শারীরিক সক্ষমতা ঠিক থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভিক্ষা করি বটে, তবে ভালো খাবার খাই। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করি, মাথায় তেল দিই। ডিম ও কলা খাই। নিয়মিত গোসল করি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের চেষ্টা করি।’

৯ ছেলে-মেয়ে থাকতেও কেন ভিক্ষা করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের সংসার ঠিকমতো চলে না। কেউ চট্টগ্রাম, কেউ ঢাকায় থাকে, অন্যরা কৃষিশ্রমিকের কাজ করে। আমার স্ত্রী বেঁচে আছেন, তবে তিনি এখন অচল হয়ে পড়েছেন।’

জীবনের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধনদৌলত, হায়াত-মৌত আল্লাহর হাতে। তাঁর (স্রষ্টার) রহমতেই এখনো বেঁচে আছি এবং ভালো আছি। তবে আমার টাকার দরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষণা, নেই কাদের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনম রিসার্চ সেন্টার: সাপের বিষের ওষুধ দেশেই তৈরির চেষ্টা

  • বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরি
  • ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষায় সাফল্য মিলেছে: গবেষক
  • দেশের একমাত্র গবেষণা কেন্দ্রের যাত্রা ২০১৮ সালে
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৪
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত দ্বিতল একটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে ভেনম রিসার্চ সেন্টার। বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে সেখানে।	ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত দ্বিতল একটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে ভেনম রিসার্চ সেন্টার। বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে সেখানে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাপের বিষের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামে অবস্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভেনম রিসার্চ সেন্টারে। এ সেন্টারে ইতিমধ্যে বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে। এতে সাফল্যও পাওয়া গেছে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে পরিত্যক্ত দ্বিতল একটি ভবনের নিচতলায় ‘ভেনম রিসার্চ সেন্টার’ পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় আট বছর আগে চারটি সাপ দিয়ে শুরু হয় গবেষণা। পরে সেন্টারটিতে সাপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে। সাপের সংখ্যা বেড়ে ৪০০টিতে দাঁড়িয়েছে। এগুলো ১০ প্রজাতির। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিষধর সাপ সংগ্রহ করা হয়। ভেনম রিসার্চ সেন্টারে পোষা সাপের বিষ দিয়েই সাপে কাটা রোগীর জন্য তৈরি হচ্ছে প্রতিষেধক। এই রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক হিসেবে আছেন চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ। চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ রয়েছেন ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে। ৬ জনের এ গবেষণা দলে সহযোগী গবেষক হিসেবে রয়েছেন মিজানুর রহমান, মো. নোমান, রফিকুল ইসলাম ও আবদুল আউয়াল।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চমেক ক্যাম্পাসে ভেনম রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপারেশনাল প্ল্যান কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত। এ গবেষণা কেন্দ্রে ইতিমধ্যে সাপের বিষ থেকে সংগৃহীত অ্যান্টিবডি ইঁদুরের শরীরে ক্লিনিক্যালি ট্রায়াল করা হয়েছে। এতে সাফল্য এসেছে। বর্তমানে এ কেন্দ্রে বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে পদ্মগোখরা, খৈয়া গোখরা, কালকেউটে, শঙ্খিনী, দুই প্রজাতির সবুজ বোড়া।

দেশে প্রতিবছর বর্ষায় চন্দ্রবোড়া, গোখরা, কালকেউটে, কিং কোবরা ও সবুজ বোড়ার মতো সাপের কামড়ের ঘটনা বাড়ে। আক্রান্তদের অনেকে চিকিৎসকের বদলে কবিরাজ বা ওঝার কাছে যান। ফলে অনেককে আর বাঁচানো যায় না। এভাবে দেশে প্রতিবছর ৬ হাজারের বেশি সাপে কাটা রোগী মারা যায়।

চমেক হাসপাতালের তথ্য বলছে, এ হাসপাতালে ২০২৪ সালে সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয় ১ হাজার ২৮৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছে তিনজন। অ্যান্টিভেনম পেয়েছিল মাত্র ৫২ জন। ২০২৩ সালে ভর্তি ছিল ১ হাজার ৩৬৮ জন। এর মধ্যে মারা যায় দুজন।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টি ভেনম তৈরি করে ইতিমধ্যে আমরা ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়েছি। পরীক্ষামূলক কাজ শেষ করে সফলও হয়েছি।’ এ নিয়ে তৈরি করা গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হলে দেশে অ্যান্টিভেনম তৈরির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেও প্রত্যাশা করেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

এই সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, সাপের কামড় একটি গ্রামীণ সমস্যা। অতীতে এর চিকিৎসা শহরকেন্দ্রিক থাকলেও এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও মিলছে চিকিৎসা। দেশে বর্তমানে ভারতের তৈরি পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয় বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

নেছারাবাদে জামায়াতের ফরম পূরণ আওয়ামী লীগ নেতার

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

নির্বাচনে মধ্যপন্থীদের জয়, প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস

জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষণা, নেই কাদের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত