Ajker Patrika

‘গাঙ্গে এহন দুই এউক্কা ইলিশ ওডে’

প্রতিনিধি, বরগুনা
‘গাঙ্গে এহন দুই এউক্কা ইলিশ ওডে’

ভাদ্রের খরদুপুরে জাল টেনে ব্যাগভর্তি  ইলিশ নিয়ে আরতে যাচ্ছেন জলিল মাঝি। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা কালমেঘা এলাকায় বিশখালী নদীতে ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। জলিলের মতো এই এলাকায় শতাধিক নৌকায় চার শতাধিক জেলে মাছ শিকার করেন। নদী সাগরে মাছের ভাটা পড়া মানে তাঁদের ঘরেও তখন চাল বাড়ন্ত। প্রাকৃতিক মৎস্য আহরণ করে পেট চললেও কখনো ভাগ্য ফেরেনা তাঁদের। তাই প্রকৃতি একটু কৃপণ হলেই টান পড়ে তাঁদের পেটেও। 

জলিল মাঝি জানান, মৌসুম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না নদীতে। তবে গত তিন চারদিন ধরে বড় মাঝারি সাইজের কিছু ইলিশ ধরা পড়ছে। এর মধ্যে এক কেজি বা এর বেশি ওজনের দুএকটি আর বাকি সব ৫শ থেকে ৭শ গ্রাম। 

জলিল মাঝির কণ্ঠে হতাশা। তিনি বলেন, ‘ইলিশের সিজন এক্কারে শ্যাষের দিগে, এহন হপায় মোগো গাঙ্গে দুই এউক্কা ইলিশের দেহা পাইতে আছি।’ 

দিনে দুইবার জোয়ার ভাঁটায় জাল পাতেন মাঝিরা। দুইবার মিলিয়ে ১০ / ১২ কেজি ইলিশ ধরা পড়ছে এখন। এর আগে তিন চার কেজির বেশি জাটকাও পাওয়া যায়নি। জেলে ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরগুনার বিশখালী বলেশ্বর ও পায়রা এবং বঙ্গোসাগরের মোহনা পাথরঘাটা থেকে অদূরে জেলেদের জালে মাঝারি ও বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এতে মোটামুটি আশার সঞ্চার হয়েছে জেলেদের। জেলেপাড়াগুলোতেও খুশির আমেজ ছড়িয়েছে। 

পাথরঘাটার বলেশ্বর তীরবর্তী পদ্মা গ্রামের জেলে সেলিম মিয়া বলেন, ‘হাঙ্গা (সারা) সিজনে ইলিশের দেহা পাই নায়, এহন কিছু মাছ ধরা পড়তে আছে। আশায় আছি, আরও বেশি ইলিশ শিগগিরই আইয়া পড়বে।’ 

প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরাতালতলীর নিশানবাড়িয়া এলাকার জেলে সগীরও তাই বলেন। তিনিও আশা করছেন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই সাগরের ইলিশ নদীতে ধরা পড়বে। স্থানীয় পাইকার হারুন মিয়া বলেন, তিন চারদিন ধরে নদীতে বড় সাইজের ইলিশ আসতে শুরু করেছে। এসব ইলিশ ওজন ভেদে ১ হাজার ৫শ থেকে সর্বনিম্ন ৭শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুসারে বরিশাল বিভাগ এখন দেশের মোট ইলিশের প্রায় ৬৬ ভাগের জোগানদাতা।  গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৮৮ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চল থেকে আহরণ করা হয় ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৫ টন।  এর প্রায় ১ লাখ টন ইলিশের জোগানদাতা বরগুনা। 

জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক দফাদার বলেন, বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ মৎস্যজীবী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রান্তিক জেলের সংখ্যা ৭০ হাজার। এছাড়াও রয়েছেন সুন্দরবন ও আশপাশের নদী  খাল ও গভীর সমুদ্রগামী জেলে।  ইলিশের ওপরই মূলত তাঁদের জীবিকা নির্ভর করে। 

তিনি বলেন, তিন নদীতে ইলিশের দেখা না মেলায় জেলেরা হতাশ ছিলেন। তবে এখন কিছু ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরে আসতে শুরু করেছে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার দেব বলেন, পূর্ণিমার জোর কারণে নদ-নদীর স্রোত বেড়েছে। এ কারণে গভীর সমুদ্রের ইলিশ নদীতে আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রজনন মৌসুমের কাছাকাছি সময় এখন। এখন কয়েকদিন নদীতে ইলিশ ধরা পড়বে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত