Ajker Patrika

শাটডাউনে স্থবির বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় অফিস করছেন ভিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) দুটি প্রশাসনিক ভবনেই তালা ঝুলিয়ে শাটডাউন করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্য (ভিসি), সহ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের (ট্রেজারার) কার্যালয়েও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন দপ্তরে না থাকলেও সহ-উপাচার্য ও ট্রেজারার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলেছে, উপাচার্য ড. শুচিতা কর্মকর্তাদের রাজধানীতে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউসে অফিস করছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর আগে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিস বন্ধ করে দিয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্র বলেছে, উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক সব দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টায় আন্দোলনকারীরা গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে একটি মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে সেখানে কর্মরত প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। বেলা ১টার দিকে আরেকটি মিছিল প্রশাসনের প্রতীকী কফিন নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রেখে দেয়। প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝোলানোর সময় উপাচার্য দপ্তরে ছিলেন না। তবে ট্রেজারার ও সহ-উপাচার্য বিক্ষোভের মুখে পড়ে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আজমাইন সাকিব বলেন, ‘যারা ফ্যাসিস্ট আমলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে, তারাই পুনরায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গত ৯ মাসে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক ভূমিকা পালন করেনি। উপাচার্য শুচিতা শরমিন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন হামলা-মামলা দিয়ে দমিয়ে রেখেছেন। আমরা উপাচার্যর পদত্যাগ দাবি করছি।’

আন্দোলনরত অপর শিক্ষার্থী আশিক আহমেদ বলেন, ‘উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কোনো অধিকার নেই। দ্রুত তিনি পদত্যাগ না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

এদিকে প্রশাসনিক ভবন তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার খবরে গতকাল সোমবার উপাচার্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক কর্মকর্তাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে রেস্টহাউসে বসে অফিস করছেন। ভিসির নির্দেশে ঢাকায় গেছেন তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, ভিসির দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. সোলায়মানসহ অর্থ ও পরিকল্পনা দপ্তরের দুজন কর্মকর্তা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মুস্তাকিম রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের একটি ব্যাচ সব ক্লাস শেষ করে তিন মাস ধরে বসে আছে ভিসির একটা স্বাক্ষরের আশায়। যে ভিসি তিন মাসে একটা স্বাক্ষর দিতে পারেননি, তাঁকে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন কতটুকু?’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ছাত্ররা প্রশাসনিক শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। আর ভিসি ঢাকায় রেস্টহাউসে বসে বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন। আমাদের ভিসি মাসের ২৫ দিনই ঢাকায় থাকেন। যে কারণে ববির প্রশাসনিক, একাডেমিক কার্যক্রম ৯ মাসে স্থবির হয়ে পড়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মামুন অর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার জানামতে উপাচার্য ক্যাম্পাসে নেই।’ কর্মকর্তাদের ঢাকায় ডেকে উপাচার্যের দাপ্তরিক কার্যক্রম করা প্রসঙ্গে ট্রেজারার বলেন, ‘ঢাকায় তো আমাদের কোনো অফিস নেই, রেস্টহাউস আছে। তাতে অফিস কার্যক্রম করার বিষয়ে ইউজিসির আপত্তি আছে। নিয়োগপত্রেই বলা আছে, ভিসিকে সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিনকে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ধরেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত