Ajker Patrika

রিক্তা রিচির একগুচ্ছ কবিতা

রিক্তা রিচি
রিক্তা রিচির একগুচ্ছ কবিতা

মা

আমার মা জানেন সংসারের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ
জানেন তেল, নুন মসলার বাটিগুলোর মাপ। 
বুকে পাথর রেখে হাসি বিলি করার নামতাও
কেবল মা জানেন। 
আমার মায়ের দৈবশক্তি আছে জানেন, 
তিনি কখনো অসুস্থ হন না। 
ঘরের সবার মৌসুমি জ্বর হয়, ঠান্ডা লাগে, মন খারাপ হয়, 
কিন্তু মায়ের কিছুই হয় না। 
মাঝে মাঝে আমার পুরোনো দুঃখগুলো
গরম তেলের মতো তেজ দেখালে
মা সেখানেও মমতার পরশ বুলিয়ে দেন। 
আমাকে শেখান—কীভাবে বিষাদের চোখগুলোকে—
সেলাই করতে হয়। 
শেখান—কীভাবে প্রচণ্ড ঝড়ে ভয় না পেয়ে—
নিজেকে শান্ত রাখতে হয়। 
মা বরাবরই আমাকে স্বপ্ন দেখতে বলেন, 
অনেক অনেক বড় স্বপ্ন। 
আমার স্বপ্ন আর সফলতাগুলোকে তিনি বুকে টেনে নেন। 
কিন্তু মায়ের আলাদা কোনো স্বপ্ন নেই। 
অথচ একদিন তিনি আকাশ হতে চাইতেন, 
কখনো কখনো পাখি হয়ে পুরো আকাশজুড়ে
বিচরণ করতে চাইতেন। 
আজ মা কেবলই বাবার শাসন, চোখ রাঙানো, 
সংসারের অভাব, সমাজের সংকীর্ণতা সহ্য করার মতো
একটি মাটির পুতুল। 
যা সাতাশ বছর আগে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শক্ত করা হয়েছিল। 

যেতে চাইলে যাও

যেতে চাইলে ভালোবাসার শিকড়—
উপড়ে দিয়ে চলে যাও
আর কখনো, কোনো দিন ফিরে আসবে না। 
সাত হাজার চৌদ্দ ঘণ্টাকে চিতার অনলে পুড়িয়ে
শেষ বিকেলের পাখি হয়ে চলে যাও। 
সমস্ত উঠোন, সদর দরজা সব খোলা
চাইলেই যেতে পারো। 
তবে মনে রেখো, 
আমাকে পেঁয়াজের মতো—
কুচিকুচি করে চলে গেলেও
আমি কাঁদব না। 
রাতের কামিজ জড়িয়ে, 
তোমার জন্য অপেক্ষার ডালা সাজাব না। 
একা নিজের জন্য বাঁচতে শিখে যাব
কলার মোচার মতো ভেঙে গেলেও, 
বারংবার সবুজ চারা হয়ে জেগে উঠব। 
মনে রেখো, 
একদিন তুমি কাঁদবে, কাতরাবে, 
বাইন মাছের মতো ছটফট করবে। 
এক বুক ভালোবাসার বিশ্বাস, 
আমাকে হারানোর অপরাধে
এক পৃথিবী ভরা দীর্ঘশ্বাস—
 নিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। 

শূন্যের নামতা

রাত বাড়ছে
গাড়ির হর্নগুলো দ্বিরুক্ত আওয়াজ তুলছে
অন্ধকার এক গালিচায় আমরা হেঁটে চলছি, 
এক পথ থেকে আরেক পথের দিকে। 
শূন্যের নামতা ধরে আরও কত শত—
মানুষ হেঁটে যায়! 
কেউবা মাঝপথে হারিয়ে যায়। 
কেউবা শেষ গোধূলির সাথে মিশে যায়। 
থেকে যায় কিছু ঝরে যাওয়া পাতা। 
ভোরে সেগুলোও নিয়ে যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। 

শব্দহীন বাঁচা

শব্দদূষণের এই শহরে
কেউ কেউ শব্দহীন হয়ে বাঁচে
আঘাতে আঘাতে ক্ষয়ে গেছে যে পাহাড়
সে এখন বাঁচে বুকভরা ঝরনা নিয়ে
তুমি ও তোমরা যার রূপ দেখে মুগ্ধ হও
তার রাতভোরে শব্দহীন ক্ষরণ দেখোনি
দেখোনি কতটা পুড়ে, কতটা ক্ষয়ে, কতটা জল ঝরিয়ে
সে তোমায় দোলনচাঁপার মতো সৌন্দর্য বিলায়। 
যে হরিণ-শাবকের চোখ ও শরীর দেখে মুগ্ধ হও
সেও বাঁচার জন্য সমস্ত শক্তি নিয়ে দৌড়ায়
দৌড়ায় কোনো এক হৃদয়বান্ধব আশ্রয়ের খোঁজে। 
কখনো পায়, কখনো পায় না, ধরা পড়ে জালে। 

জীবন সরলরেখা নয়, ব্যাকরণও মানে না সে। 
সংগ্রামী দু'হাত জানে, জানে পথে কত শত বাধা!

বিষয়:

কবিতা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত