আলমগীর শাহরিয়ার

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’। ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। তিনি কিছু কারণে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। একদিন তিনি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তো, যাত্রী তাঁর দেশ বাংলাদেশ শুনে জানতে চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিনকে চেনেন কি না। মিনার মাহমুদ বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনকে চিনি। তিনি আমার স্ত্রী ছিলেন।’ যাত্রী তাঁর কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন। চিৎকার করে মিনার মাহমুদকে ট্যাক্সি থামিয়ে তাঁকে নামিয়ে দিতে বলেছিলেন। হয়তো যাত্রী ভেবেছিলেন, চালক মাতাল বা মাথায় গন্ডগোল আছে। তা না হলে নিজেকে তসলিমার স্বামী দাবি করে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার!
নিবন্ধের শুরুতে গল্পটা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, বাংলা সাহিত্যে যে কজন সাহিত্যিকের নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তাঁদের একজন তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখনীর জন্য তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি নিন্দিতও। মূলত নারীবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর আপসহীন ভূমিকার জন্য তিনি নানা সময়ে হামলা, মামলা, জীবননাশের হুমকির মুখে যেমন পড়েছেন, তেমনি সারা বিশ্বে নানা সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তসলিমা নাসরিন যখন লেখালেখির কারণে, সত্য বলার কারণে, মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি বসবাসের জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারতেন। নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করতে পারতেন। ইউরোপ-আমেরিকায় ছিলেনও তিনি। শুধু লেখালেখি করার জন্যই, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সান্নিধ্যের জন্যই বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কলকাতায় চলে এসেছিলেন। প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বাইরে থাকছেন তিনি। কখনো ভারতে, কখনো ইউরোপ-আমেরিকায়। ভারত তাঁর দেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকাও তাঁর দেশ নয়; বাংলাদেশের জল-হাওয়া-মাটিতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশই তাঁর আরাধ্য ভূমি, প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তিনি নিজের জন্মভূমিতে কেন ফিরতে পারছেন না?
কয়েক দিন আগে তসলিমা নাসরিনের ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তসলিমাও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছেন, দাবি জানিয়েছেন, অনুরোধ-আবদার করেছেন—তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হোক। বিভিন্ন সময়ে তসলিমা তাঁর কবিতায়, উপন্যাসে, আত্মজীবনীতে, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পোস্টে দেশে ফেরার প্রবল আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশ থেকে দূরে থাকার গভীর দীর্ঘশ্বাস শুধু পাঠক নয়, মানবিক মানুষমাত্রই যে কাউকে স্পর্শ করবে। কবিতায় তিনি লিখেছেন—
‘মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে ক’ফোটা জল দিচ্ছি চোখের,
যেন গোল পুকুরপাড়ের বাড়ির টিনের চালে একবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষ্যায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড পাহাড়—আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।’
তসলিমা নাসরিন শুধু নন, পৃথিবীর অনেকে দেশেই কবি-লেখকেরা নিগৃহের শিকার হয়েছেন, হামলা-মামলা ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আলেকজান্ডার সোলঝিনিৎসিনের কথা বলা যায়। তিনি খ্যাতিমান রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। তাঁর লেখালেখিতে উঠে আসত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন-শোষণের প্রতিবাদ। ফলে তিনি নিজেও শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শুধু কারাদণ্ড নয়, নির্যাতন-নিপীড়ন নয়, নিজ দেশ থেকে নির্বাসিতও হয়েছিলেন। একসময়ের প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়, তারপর ১৯৯৪ সালে তিনি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাশিয়াতেই বসবাস করেন। তসলিমা নাসরিনের নির্বাসনের প্রায় তিন দশক হতে চলল। তিনি কি ফিরতে পারবেন নিরাপদ স্বদেশে?
তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরতে পারছেন না—এই দুর্ভাগ্য কি তাঁর একার? এই ব্যর্থতার দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে? দীর্ঘ নির্বাসনজীবনে তসলিমা নাসরিন তাঁর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। মায়ের পর পিতৃবিয়োগের মতো শোক সইতে হয়েছে। অনেক স্বজন হারিয়েছেন। তবু দেশে ফিরতে পারেননি। তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আসল বাধা কোথায়?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পত্রিকায় কলাম ও নারীদের অধিকার নিয়ে জোরালো লেখালেখির মধ্য দিয়ে তসলিমা বেশ আলোচনায় আসেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ নামক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন বলে সেই অফিসে একদল ধর্মান্ধ লোক হামলা চালায়। এ সময় তাঁর আলোচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ১৯৯২ সালে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হয়। এটা নিয়ে তসলিমা লিখেছিলেন তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘লজ্জা’। বইটি প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হয় এবং তাঁর জীবননাশের হুমকি আসতে থাকে। বইমেলায় তিনি নিগ্রহের শিকার হন। এর কিছুদিন পরে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তসলিমা নাসরিন প্রায়ই বলেন, শুধু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীই নয়, তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও। নানা সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি দেশ ছাড়ার পর তসলিমা নাসরিন নবায়ন করতে পারেননি নিজ দেশের পাসপোর্ট। দূতাবাসগুলো বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। বিএনপি আমলে দেশ ছাড়লেও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভয়ে খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তসলিমা নাসরিন প্রশ্নে অভিন্ন ঐক্য বলে লেখক নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর লেখায় মন্তব্য করেছেন। কারও আমলেই তিনি দেশে বসবাসের জন্য ফিরে আসতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও তসলিমার দেশে ফেরার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আইনি বাধা নিয়ে কথা হয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘তসলিমা নাসরিনের দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই। কোনো নাগরিককে নিজ দেশে আসতে সরকার বাধা দিতে পারে না। কোনো কারণেই পারে না। এমনকি কেউ অপরাধী হলেও দেশে তার বিচার হতে পারে, শাস্তি হতে পারে; কিন্তু দেশে আসতে বাধা দেওয়া যায় না। তসলিমা নাসরিনের দেশে প্রবেশে বাধা সামাজিক ও রাজনৈতিক। ধর্মীয় মৌলবাদীদের ভয়ে কোনো সরকারই তাঁকে দেশে আসতে দিতে ইচ্ছুক নয়। সে জন্যই তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে না।’
তসলিমা নাসরিন একজন লেখক; তিনি খুনি নন, যুদ্ধাপরাধী বা দেশদ্রোহী নন, দুর্নীতিবাজও নন। একজন লেখক তাঁর মা, মাটি ও ভাষাকে গভীরভাবে ভালোবেসেই লেখালেখি করেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? কেন নির্বাসিত থাকবেন দীর্ঘদিন? সভ্যতার এত উন্নতির কালে রাষ্ট্রই তার জবাব দিক।
লেখক: তরুণ কবি ও গবেষক

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’। ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। তিনি কিছু কারণে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। একদিন তিনি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তো, যাত্রী তাঁর দেশ বাংলাদেশ শুনে জানতে চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিনকে চেনেন কি না। মিনার মাহমুদ বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনকে চিনি। তিনি আমার স্ত্রী ছিলেন।’ যাত্রী তাঁর কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন। চিৎকার করে মিনার মাহমুদকে ট্যাক্সি থামিয়ে তাঁকে নামিয়ে দিতে বলেছিলেন। হয়তো যাত্রী ভেবেছিলেন, চালক মাতাল বা মাথায় গন্ডগোল আছে। তা না হলে নিজেকে তসলিমার স্বামী দাবি করে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার!
নিবন্ধের শুরুতে গল্পটা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, বাংলা সাহিত্যে যে কজন সাহিত্যিকের নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তাঁদের একজন তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখনীর জন্য তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি নিন্দিতও। মূলত নারীবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর আপসহীন ভূমিকার জন্য তিনি নানা সময়ে হামলা, মামলা, জীবননাশের হুমকির মুখে যেমন পড়েছেন, তেমনি সারা বিশ্বে নানা সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তসলিমা নাসরিন যখন লেখালেখির কারণে, সত্য বলার কারণে, মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি বসবাসের জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারতেন। নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করতে পারতেন। ইউরোপ-আমেরিকায় ছিলেনও তিনি। শুধু লেখালেখি করার জন্যই, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সান্নিধ্যের জন্যই বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কলকাতায় চলে এসেছিলেন। প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বাইরে থাকছেন তিনি। কখনো ভারতে, কখনো ইউরোপ-আমেরিকায়। ভারত তাঁর দেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকাও তাঁর দেশ নয়; বাংলাদেশের জল-হাওয়া-মাটিতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশই তাঁর আরাধ্য ভূমি, প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তিনি নিজের জন্মভূমিতে কেন ফিরতে পারছেন না?
কয়েক দিন আগে তসলিমা নাসরিনের ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তসলিমাও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছেন, দাবি জানিয়েছেন, অনুরোধ-আবদার করেছেন—তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হোক। বিভিন্ন সময়ে তসলিমা তাঁর কবিতায়, উপন্যাসে, আত্মজীবনীতে, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পোস্টে দেশে ফেরার প্রবল আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশ থেকে দূরে থাকার গভীর দীর্ঘশ্বাস শুধু পাঠক নয়, মানবিক মানুষমাত্রই যে কাউকে স্পর্শ করবে। কবিতায় তিনি লিখেছেন—
‘মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে ক’ফোটা জল দিচ্ছি চোখের,
যেন গোল পুকুরপাড়ের বাড়ির টিনের চালে একবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষ্যায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড পাহাড়—আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।’
তসলিমা নাসরিন শুধু নন, পৃথিবীর অনেকে দেশেই কবি-লেখকেরা নিগৃহের শিকার হয়েছেন, হামলা-মামলা ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আলেকজান্ডার সোলঝিনিৎসিনের কথা বলা যায়। তিনি খ্যাতিমান রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। তাঁর লেখালেখিতে উঠে আসত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন-শোষণের প্রতিবাদ। ফলে তিনি নিজেও শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শুধু কারাদণ্ড নয়, নির্যাতন-নিপীড়ন নয়, নিজ দেশ থেকে নির্বাসিতও হয়েছিলেন। একসময়ের প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়, তারপর ১৯৯৪ সালে তিনি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাশিয়াতেই বসবাস করেন। তসলিমা নাসরিনের নির্বাসনের প্রায় তিন দশক হতে চলল। তিনি কি ফিরতে পারবেন নিরাপদ স্বদেশে?
তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরতে পারছেন না—এই দুর্ভাগ্য কি তাঁর একার? এই ব্যর্থতার দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে? দীর্ঘ নির্বাসনজীবনে তসলিমা নাসরিন তাঁর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। মায়ের পর পিতৃবিয়োগের মতো শোক সইতে হয়েছে। অনেক স্বজন হারিয়েছেন। তবু দেশে ফিরতে পারেননি। তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আসল বাধা কোথায়?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পত্রিকায় কলাম ও নারীদের অধিকার নিয়ে জোরালো লেখালেখির মধ্য দিয়ে তসলিমা বেশ আলোচনায় আসেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ নামক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন বলে সেই অফিসে একদল ধর্মান্ধ লোক হামলা চালায়। এ সময় তাঁর আলোচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ১৯৯২ সালে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হয়। এটা নিয়ে তসলিমা লিখেছিলেন তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘লজ্জা’। বইটি প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হয় এবং তাঁর জীবননাশের হুমকি আসতে থাকে। বইমেলায় তিনি নিগ্রহের শিকার হন। এর কিছুদিন পরে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তসলিমা নাসরিন প্রায়ই বলেন, শুধু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীই নয়, তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও। নানা সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি দেশ ছাড়ার পর তসলিমা নাসরিন নবায়ন করতে পারেননি নিজ দেশের পাসপোর্ট। দূতাবাসগুলো বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। বিএনপি আমলে দেশ ছাড়লেও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভয়ে খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তসলিমা নাসরিন প্রশ্নে অভিন্ন ঐক্য বলে লেখক নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর লেখায় মন্তব্য করেছেন। কারও আমলেই তিনি দেশে বসবাসের জন্য ফিরে আসতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও তসলিমার দেশে ফেরার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আইনি বাধা নিয়ে কথা হয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘তসলিমা নাসরিনের দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই। কোনো নাগরিককে নিজ দেশে আসতে সরকার বাধা দিতে পারে না। কোনো কারণেই পারে না। এমনকি কেউ অপরাধী হলেও দেশে তার বিচার হতে পারে, শাস্তি হতে পারে; কিন্তু দেশে আসতে বাধা দেওয়া যায় না। তসলিমা নাসরিনের দেশে প্রবেশে বাধা সামাজিক ও রাজনৈতিক। ধর্মীয় মৌলবাদীদের ভয়ে কোনো সরকারই তাঁকে দেশে আসতে দিতে ইচ্ছুক নয়। সে জন্যই তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে না।’
তসলিমা নাসরিন একজন লেখক; তিনি খুনি নন, যুদ্ধাপরাধী বা দেশদ্রোহী নন, দুর্নীতিবাজও নন। একজন লেখক তাঁর মা, মাটি ও ভাষাকে গভীরভাবে ভালোবেসেই লেখালেখি করেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? কেন নির্বাসিত থাকবেন দীর্ঘদিন? সভ্যতার এত উন্নতির কালে রাষ্ট্রই তার জবাব দিক।
লেখক: তরুণ কবি ও গবেষক
আলমগীর শাহরিয়ার

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’। ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। তিনি কিছু কারণে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। একদিন তিনি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তো, যাত্রী তাঁর দেশ বাংলাদেশ শুনে জানতে চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিনকে চেনেন কি না। মিনার মাহমুদ বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনকে চিনি। তিনি আমার স্ত্রী ছিলেন।’ যাত্রী তাঁর কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন। চিৎকার করে মিনার মাহমুদকে ট্যাক্সি থামিয়ে তাঁকে নামিয়ে দিতে বলেছিলেন। হয়তো যাত্রী ভেবেছিলেন, চালক মাতাল বা মাথায় গন্ডগোল আছে। তা না হলে নিজেকে তসলিমার স্বামী দাবি করে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার!
নিবন্ধের শুরুতে গল্পটা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, বাংলা সাহিত্যে যে কজন সাহিত্যিকের নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তাঁদের একজন তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখনীর জন্য তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি নিন্দিতও। মূলত নারীবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর আপসহীন ভূমিকার জন্য তিনি নানা সময়ে হামলা, মামলা, জীবননাশের হুমকির মুখে যেমন পড়েছেন, তেমনি সারা বিশ্বে নানা সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তসলিমা নাসরিন যখন লেখালেখির কারণে, সত্য বলার কারণে, মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি বসবাসের জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারতেন। নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করতে পারতেন। ইউরোপ-আমেরিকায় ছিলেনও তিনি। শুধু লেখালেখি করার জন্যই, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সান্নিধ্যের জন্যই বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কলকাতায় চলে এসেছিলেন। প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বাইরে থাকছেন তিনি। কখনো ভারতে, কখনো ইউরোপ-আমেরিকায়। ভারত তাঁর দেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকাও তাঁর দেশ নয়; বাংলাদেশের জল-হাওয়া-মাটিতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশই তাঁর আরাধ্য ভূমি, প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তিনি নিজের জন্মভূমিতে কেন ফিরতে পারছেন না?
কয়েক দিন আগে তসলিমা নাসরিনের ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তসলিমাও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছেন, দাবি জানিয়েছেন, অনুরোধ-আবদার করেছেন—তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হোক। বিভিন্ন সময়ে তসলিমা তাঁর কবিতায়, উপন্যাসে, আত্মজীবনীতে, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পোস্টে দেশে ফেরার প্রবল আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশ থেকে দূরে থাকার গভীর দীর্ঘশ্বাস শুধু পাঠক নয়, মানবিক মানুষমাত্রই যে কাউকে স্পর্শ করবে। কবিতায় তিনি লিখেছেন—
‘মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে ক’ফোটা জল দিচ্ছি চোখের,
যেন গোল পুকুরপাড়ের বাড়ির টিনের চালে একবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষ্যায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড পাহাড়—আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।’
তসলিমা নাসরিন শুধু নন, পৃথিবীর অনেকে দেশেই কবি-লেখকেরা নিগৃহের শিকার হয়েছেন, হামলা-মামলা ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আলেকজান্ডার সোলঝিনিৎসিনের কথা বলা যায়। তিনি খ্যাতিমান রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। তাঁর লেখালেখিতে উঠে আসত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন-শোষণের প্রতিবাদ। ফলে তিনি নিজেও শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শুধু কারাদণ্ড নয়, নির্যাতন-নিপীড়ন নয়, নিজ দেশ থেকে নির্বাসিতও হয়েছিলেন। একসময়ের প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়, তারপর ১৯৯৪ সালে তিনি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাশিয়াতেই বসবাস করেন। তসলিমা নাসরিনের নির্বাসনের প্রায় তিন দশক হতে চলল। তিনি কি ফিরতে পারবেন নিরাপদ স্বদেশে?
তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরতে পারছেন না—এই দুর্ভাগ্য কি তাঁর একার? এই ব্যর্থতার দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে? দীর্ঘ নির্বাসনজীবনে তসলিমা নাসরিন তাঁর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। মায়ের পর পিতৃবিয়োগের মতো শোক সইতে হয়েছে। অনেক স্বজন হারিয়েছেন। তবু দেশে ফিরতে পারেননি। তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আসল বাধা কোথায়?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পত্রিকায় কলাম ও নারীদের অধিকার নিয়ে জোরালো লেখালেখির মধ্য দিয়ে তসলিমা বেশ আলোচনায় আসেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ নামক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন বলে সেই অফিসে একদল ধর্মান্ধ লোক হামলা চালায়। এ সময় তাঁর আলোচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ১৯৯২ সালে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হয়। এটা নিয়ে তসলিমা লিখেছিলেন তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘লজ্জা’। বইটি প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হয় এবং তাঁর জীবননাশের হুমকি আসতে থাকে। বইমেলায় তিনি নিগ্রহের শিকার হন। এর কিছুদিন পরে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তসলিমা নাসরিন প্রায়ই বলেন, শুধু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীই নয়, তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও। নানা সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি দেশ ছাড়ার পর তসলিমা নাসরিন নবায়ন করতে পারেননি নিজ দেশের পাসপোর্ট। দূতাবাসগুলো বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। বিএনপি আমলে দেশ ছাড়লেও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভয়ে খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তসলিমা নাসরিন প্রশ্নে অভিন্ন ঐক্য বলে লেখক নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর লেখায় মন্তব্য করেছেন। কারও আমলেই তিনি দেশে বসবাসের জন্য ফিরে আসতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও তসলিমার দেশে ফেরার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আইনি বাধা নিয়ে কথা হয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘তসলিমা নাসরিনের দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই। কোনো নাগরিককে নিজ দেশে আসতে সরকার বাধা দিতে পারে না। কোনো কারণেই পারে না। এমনকি কেউ অপরাধী হলেও দেশে তার বিচার হতে পারে, শাস্তি হতে পারে; কিন্তু দেশে আসতে বাধা দেওয়া যায় না। তসলিমা নাসরিনের দেশে প্রবেশে বাধা সামাজিক ও রাজনৈতিক। ধর্মীয় মৌলবাদীদের ভয়ে কোনো সরকারই তাঁকে দেশে আসতে দিতে ইচ্ছুক নয়। সে জন্যই তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে না।’
তসলিমা নাসরিন একজন লেখক; তিনি খুনি নন, যুদ্ধাপরাধী বা দেশদ্রোহী নন, দুর্নীতিবাজও নন। একজন লেখক তাঁর মা, মাটি ও ভাষাকে গভীরভাবে ভালোবেসেই লেখালেখি করেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? কেন নির্বাসিত থাকবেন দীর্ঘদিন? সভ্যতার এত উন্নতির কালে রাষ্ট্রই তার জবাব দিক।
লেখক: তরুণ কবি ও গবেষক

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’। ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। তিনি কিছু কারণে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। একদিন তিনি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তো, যাত্রী তাঁর দেশ বাংলাদেশ শুনে জানতে চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিনকে চেনেন কি না। মিনার মাহমুদ বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনকে চিনি। তিনি আমার স্ত্রী ছিলেন।’ যাত্রী তাঁর কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন। চিৎকার করে মিনার মাহমুদকে ট্যাক্সি থামিয়ে তাঁকে নামিয়ে দিতে বলেছিলেন। হয়তো যাত্রী ভেবেছিলেন, চালক মাতাল বা মাথায় গন্ডগোল আছে। তা না হলে নিজেকে তসলিমার স্বামী দাবি করে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার!
নিবন্ধের শুরুতে গল্পটা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, বাংলা সাহিত্যে যে কজন সাহিত্যিকের নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তাঁদের একজন তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখনীর জন্য তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি নিন্দিতও। মূলত নারীবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর আপসহীন ভূমিকার জন্য তিনি নানা সময়ে হামলা, মামলা, জীবননাশের হুমকির মুখে যেমন পড়েছেন, তেমনি সারা বিশ্বে নানা সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তসলিমা নাসরিন যখন লেখালেখির কারণে, সত্য বলার কারণে, মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি বসবাসের জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারতেন। নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করতে পারতেন। ইউরোপ-আমেরিকায় ছিলেনও তিনি। শুধু লেখালেখি করার জন্যই, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সান্নিধ্যের জন্যই বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কলকাতায় চলে এসেছিলেন। প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বাইরে থাকছেন তিনি। কখনো ভারতে, কখনো ইউরোপ-আমেরিকায়। ভারত তাঁর দেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকাও তাঁর দেশ নয়; বাংলাদেশের জল-হাওয়া-মাটিতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশই তাঁর আরাধ্য ভূমি, প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তিনি নিজের জন্মভূমিতে কেন ফিরতে পারছেন না?
কয়েক দিন আগে তসলিমা নাসরিনের ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তসলিমাও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছেন, দাবি জানিয়েছেন, অনুরোধ-আবদার করেছেন—তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হোক। বিভিন্ন সময়ে তসলিমা তাঁর কবিতায়, উপন্যাসে, আত্মজীবনীতে, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পোস্টে দেশে ফেরার প্রবল আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশ থেকে দূরে থাকার গভীর দীর্ঘশ্বাস শুধু পাঠক নয়, মানবিক মানুষমাত্রই যে কাউকে স্পর্শ করবে। কবিতায় তিনি লিখেছেন—
‘মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে ক’ফোটা জল দিচ্ছি চোখের,
যেন গোল পুকুরপাড়ের বাড়ির টিনের চালে একবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষ্যায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড পাহাড়—আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।’
তসলিমা নাসরিন শুধু নন, পৃথিবীর অনেকে দেশেই কবি-লেখকেরা নিগৃহের শিকার হয়েছেন, হামলা-মামলা ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আলেকজান্ডার সোলঝিনিৎসিনের কথা বলা যায়। তিনি খ্যাতিমান রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। তাঁর লেখালেখিতে উঠে আসত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন-শোষণের প্রতিবাদ। ফলে তিনি নিজেও শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শুধু কারাদণ্ড নয়, নির্যাতন-নিপীড়ন নয়, নিজ দেশ থেকে নির্বাসিতও হয়েছিলেন। একসময়ের প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়, তারপর ১৯৯৪ সালে তিনি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাশিয়াতেই বসবাস করেন। তসলিমা নাসরিনের নির্বাসনের প্রায় তিন দশক হতে চলল। তিনি কি ফিরতে পারবেন নিরাপদ স্বদেশে?
তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরতে পারছেন না—এই দুর্ভাগ্য কি তাঁর একার? এই ব্যর্থতার দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে? দীর্ঘ নির্বাসনজীবনে তসলিমা নাসরিন তাঁর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। মায়ের পর পিতৃবিয়োগের মতো শোক সইতে হয়েছে। অনেক স্বজন হারিয়েছেন। তবু দেশে ফিরতে পারেননি। তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আসল বাধা কোথায়?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পত্রিকায় কলাম ও নারীদের অধিকার নিয়ে জোরালো লেখালেখির মধ্য দিয়ে তসলিমা বেশ আলোচনায় আসেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ নামক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন বলে সেই অফিসে একদল ধর্মান্ধ লোক হামলা চালায়। এ সময় তাঁর আলোচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ১৯৯২ সালে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হয়। এটা নিয়ে তসলিমা লিখেছিলেন তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘লজ্জা’। বইটি প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হয় এবং তাঁর জীবননাশের হুমকি আসতে থাকে। বইমেলায় তিনি নিগ্রহের শিকার হন। এর কিছুদিন পরে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তসলিমা নাসরিন প্রায়ই বলেন, শুধু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীই নয়, তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও। নানা সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি দেশ ছাড়ার পর তসলিমা নাসরিন নবায়ন করতে পারেননি নিজ দেশের পাসপোর্ট। দূতাবাসগুলো বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। বিএনপি আমলে দেশ ছাড়লেও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভয়ে খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তসলিমা নাসরিন প্রশ্নে অভিন্ন ঐক্য বলে লেখক নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর লেখায় মন্তব্য করেছেন। কারও আমলেই তিনি দেশে বসবাসের জন্য ফিরে আসতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও তসলিমার দেশে ফেরার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আইনি বাধা নিয়ে কথা হয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘তসলিমা নাসরিনের দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই। কোনো নাগরিককে নিজ দেশে আসতে সরকার বাধা দিতে পারে না। কোনো কারণেই পারে না। এমনকি কেউ অপরাধী হলেও দেশে তার বিচার হতে পারে, শাস্তি হতে পারে; কিন্তু দেশে আসতে বাধা দেওয়া যায় না। তসলিমা নাসরিনের দেশে প্রবেশে বাধা সামাজিক ও রাজনৈতিক। ধর্মীয় মৌলবাদীদের ভয়ে কোনো সরকারই তাঁকে দেশে আসতে দিতে ইচ্ছুক নয়। সে জন্যই তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে না।’
তসলিমা নাসরিন একজন লেখক; তিনি খুনি নন, যুদ্ধাপরাধী বা দেশদ্রোহী নন, দুর্নীতিবাজও নন। একজন লেখক তাঁর মা, মাটি ও ভাষাকে গভীরভাবে ভালোবেসেই লেখালেখি করেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? কেন নির্বাসিত থাকবেন দীর্ঘদিন? সভ্যতার এত উন্নতির কালে রাষ্ট্রই তার জবাব দিক।
লেখক: তরুণ কবি ও গবেষক

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’।
৩০ আগস্ট ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’।
৩০ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’।
৩০ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’।
৩০ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫