Ajker Patrika

যেমন ছিল কিশোর সাকিব

নওশাদ জামিল
যেমন ছিল কিশোর সাকিব

ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল ফয়সাল। এ নামেই এখনো তাকে ডাকেন মা-বাবা। বাবা মাশরুর রেজা ফুটবলার, রীতিমতো ফুটবলপাগল মানুষ। বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাজমুল হাসান। বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে বাবা ফয়সালের নাম রাখলেন। কী নাম জানো? সাকিব আল হাসান। হ্যাঁ, তোমাদের প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। আজ তার গল্প বলব। গল্প না, এটা একদম সত্য ঘটনা ওর জীবনের, শৈশব-কৈশোরের।

শৈশব-কৈশোরে কেমন ছিল ছোট্ট সাকিব? সে কি ছোটবেলায় খুব দস্যিপনা করত?

পাড়ার বন্ধু কিংবা স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি করত? পুকুর-নদীতে দাপাদাপি করত? মোটেও না। সে ছিল খুব শান্ত স্বভাবের। একটু চাপা স্বভাবের। দুষ্টুমি করত না, ঝগড়া-মারামারিও করত না। পাশের বাড়ির গাছ থেকে পেয়ারাও চুরি করত না।

ছোট্ট সাকিব চুপচাপ থাকলেও খেলার মাঠে পাল্টে যেত। সবুজ ঘাসে পা দিয়েই হয়ে উঠত চঞ্চল, দুরন্ত। ছিপছিপে শরীরটা নিয়ে যেন হাওয়ার বেগে দৌড়াত, ঘাসফড়িংয়ের মতো মাঠের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে উড়ত। সে প্রায় সারাক্ষণ মেতে থাকত ক্রিকেট নিয়ে। ফুটবলারের ছেলে ক্রিকেটার হবে?

বাবা-ছেলের হাঙ্গামা বাধল।

ক্রিকেট মোটেও সহ্য করতে পারতেন না মাশরুর রেজা। ফুটবলার কেন সহ্য করবেন ক্রিকেট? এ ছাড়া এখন যেমন ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা, সাকিবের ছোটবেলায় ক্রিকেট তেমন দর্শকপ্রিয় ছিল না। চারদিকে ছিল ফুটবলের জোয়ার, ফলে ফুটবলার বাবা মনেপ্রাণে চাইতেন—ছেলে মস্ত বড় ফুটবলার হবে। জাতীয় দলে খেলবে। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে মাতাবে ফুটবল মাঠ।

 বাড়ির কাছাকাছিই ছিল মাগুরা স্টেডিয়াম। সেখানে প্রায় প্রতিদিন বাবা ফুটবল খেলতে যেতেন, প্র্যাকটিস করতে যেতেন। সঙ্গে নিয়ে যেতেন ছোট্ট ফয়সালকে। বাবার সঙ্গে ফয়সালও ফুটবল প্র্যাকটিস করত। কিন্তু ওর ভালো লাগত ক্রিকেট। শুধু ভালো লাগা বললে ভুল হবে, ক্রিকেটের প্রতি ভীষণ ভালোবাসা ফয়সালের।

ছোট্ট সাকিবের ক্রিকেটপ্রীতির একটা উদাহরণ দিই। স্কুলে যাওয়ার পথে কিংবা স্কুল থেকে ফেরার পথে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাঁটত সে। হাঁটতে হাঁটতে অদৃশ্য বোলিং করত। কখনো হঠাৎ পথের ধারে দাঁড়িয়ে যেত, তারপর অদৃশ্য ব্যাট দিয়ে বল পেটাত। মানে শ্যাডো বোলিং, ব্যাটিং করত। এটা দেখে স্কুলের বন্ধুরা অবাক হতো। অদ্ভুত স্টাইল দেখে বলত, ‘তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?

আরে! কী সব শ্যাডো ক্রিকেট খেলছিস?’ বন্ধুরা খ্যাপাত, পাগল বলত। সাকিব বন্ধুদের খ্যাপানোয় রাগ করত না। নিজের মতো সময় পেলেই বোলিং করত, ব্যাটিং করত।

কখনো স্কুলের মাঠে, কখনো বাড়ির উঠানে কাঠের তক্তা ব্যাট বানিয়ে ব্যাটিং করত। টেনিস বলে সজোরে বল করত। ছোটবেলায় সাকিব স্পিনার ছিল না। মিডিয়াম পেস বল করত। এটা কি তোমরা জানো?

সাকিবের ক্রিকেটপ্রেম দেখে বাবা রেগেমেগে আগুন। একদিন তক্তা দিয়ে বানানো ব্যাট দা দিয়ে কেটে ফেললেন। ধমক দিয়ে বললেন, ‘হয় তুমি ফুটবলার হবে, নয় তুমি পড়াশোনা করে বড় চাকরি করবে?’

চাপা স্বভাবের সাকিবের মনজুড়ে ক্রিকেট। সে বাবার ভয়ে কিছু বলতে পারল না। অভিমান নিয়ে আরও চুপচাপ থাকত। এ সময় এগিয়ে এলেন মা শিরিন আক্তার। ছেলেকে প্রশ্রয় দিয়ে বলতেন, ‘এখন তো ছোট, খেলুক না। বড় হলে আর খেলবে না। মন দিয়ে তখন পড়াশোনাই করবে।’

মূলত মায়ের প্রশ্রয় পেয়েই সাকিবের ক্রিকেটপ্রেম দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তারপর বাড়তে থাকে সাকিবের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা।

২০০১ সালের কথা। সাকিব তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। এ পাড়ায়-ও পাড়ায় খেলে বেশ সুনাম হলো তার। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘খ্যাপ’ খেলার ডাক আসত তার কাছে। ‘খ্যাপ’ খেলা সম্পর্কে জানো তো? সামান্য টাকার বিনিময়ে এক দলের খেলোয়াড় অন্য দলে খেলা। খ্যাপ খেলতে গিয়ে বের হয়ে এল সাকিবের আসল প্রতিভা। মাগুরার আলোকদিয়ায় খ্যাপ খেলতে গেল সাকিব। সেটাই ছিল তার প্রথম ম্যাচ। অদ্ভুত ব্যাপার, প্রথম ম্যাচে প্রথম বলেই উইকেট পেল সে। সব মিলিয়ে ওই ম্যাচে দারুণ খেলল। তার খেলা দেখে ম্যাচের আম্পায়ার সাদ্দাম হোসেন অভিভূত হলেন। ম্যাচে আম্পায়ার হলেও সাদ্দাম স্থানীয় কোচ ও ক্রিকেটপাগল মানুষ। জীবনের প্রথম পর্বে সাদ্দামই রত্নের সন্ধান দিলেন, সেই রত্ন আর কেউ নয়, আজকের সাকিব আল হাসান।

তারপর ধীরে ধীরে মাগুরা থেকে সাকিব এল বিকেএসপিতে। সেখান থেকে বয়সভিত্তিক দল হয়ে একেবারে জাতীয় দল। তারপরের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। সেই ছোট্ট সাকিব ক্রিকেটে অনন্য সব রেকর্ড করেছে, বাংলাদেশের অসংখ্য জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, ক্রিকেট বিশ্বে বৃদ্ধি করেছে সুনাম।

সাকিব আল হাসানের শৈশব-কৈশোর নিয়ে একটা বই আছে—‘হালুম’। বইটিতে সাকিব লিখেছেন, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার যেভাবে আমাদের দেশকে সম্মানের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করে, আমরা সবাই যেন সেই বাঘের মতো বাংলাদেশকে প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করতে পারি। আমি বিশ্বের ১ নম্বর অলরাউন্ডার হতে পেরেছি, তোমরাও চাইলে নিজ ক্ষেত্রে বিশ্ব জয় করতে পারবে।’

তোমরা সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে তো? সমম্বরে বলো, হ্যাঁ, অবশ্যই পারব! হালুম!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত