মোশতাক আহমদ

তাঁর কবিতায় বিপুলসংখ্যক স্মরণযোগ্য পঙ্ক্তি আমি পেয়েছি, সম্ভবত এত বেশিসংখ্যক স্মরণযোগ্য পঙ্ক্তি আর কোনো কবির রচনাসমগ্রে পাইনি। আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, যাঁর কথা বলছি, তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত কবিতার বই ছিল মাত্র তিনটি। নীরবে পেছনে ফেলে গিয়েছিলেন প্রায় সমপরিমাণ অগ্রন্থিত কবিতা আর কিছু অতি তরুণ বয়সের কবিতা, ডজনখানেক অগ্রন্থিত গল্প, একটি কাব্যনাট্য, আরও একটি নিখোঁজ কাব্যনাট্য, আর শতসহস্র চিরকুটে ভাসমান নিরুদ্দিষ্ট একগুচ্ছ কবিতা। কিন্তু তাঁকে নিয়ে একটি উপন্যাসোপম ডকু-ফিকশন ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ লেখার একমাত্র কারণ তাঁর কবিতার ‘উচ্চতা’ নয়। উচ্চতা শব্দটি হাসান হাফিজুর রহমান ব্যবহার করেছিলেন; বলেছিলেন, ‘হাসানের উচ্চতায় তাঁর সমসাময়িক কোনো কবিই পৌঁছাতে পারেননি’। যিনি কেবল একজন কবিই হতে চেয়েছিলেন—আবুল হাসান, সেই কবির নাম।
আবুল হাসান একজন মনোযোগ্য কবি, গবেষণা উপযোগী কবি বলে আমার মনে হয়েছে। সম্প্রতি মনে হলো, আবুল হাসান হচ্ছেন সন্ধি আর সমাসের রাজা–এ নিয়েও গবেষণা হতে পারে। উপমা আর চিত্রকল্পে তো তিনি অঘোষিত রাজা হয়েই আছেন। গবেষণা হতে পারে একুশে সংকলনে প্রকাশিত তাঁর কবিতা নিয়েও, যার অধিকাংশই হয়তোবা এখনো আমাদের চোখের আড়ালে আছে। তো, তাঁকে নিয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ কেন আর কীভাবে লিখতে বসলাম—প্রশ্নটা আমাকে একাধিক দিনে একাধিক পরিবেশে জিজ্ঞেস করা হলে আমিও প্রতিবারই নতুনভাবে উত্তর দিতে পারব। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, কোনো সংস্করণই মিথ্যাভাষণ হবে না।
আবুল হাসানের কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে গত শতাব্দীর চুরাশি সালের দিকে, বিচিত্রার পাতায় বইপত্রের রিভিউ দেখে বাংলাবাজারে বই কিনতে গিয়ে বইয়ের তাকে পাওয়া আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতার মাধ্যমে; সেই থেকে এটি আমার সর্বাধিকবার পঠিত বই। এর পরপরই কবির তিনটি কবিতার বই আমার হাতে আসে। অগ্রন্থিত কবিতার বইয়ের ভূমিকা পড়ে কবিকে জানার আশ মেটে না। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত জীবনী গ্রন্থমালা সিরিজে আবুল হাসানের জীবনী আর নির্মলেন্দু গুণের আত্মকথা পড়ে কবি সম্পর্কে আরও জানলাম। তখন আমি নিজে একটি সার্বক্ষণিক কবিজীবন বেছে নিতে না পারা আর বোহিমিয়ান একটি জীবন যাপন করতে না পারার গোপন কষ্টে অভিভূত হতে থাকি। আবুল হাসানের কবিতা হয়ে উঠতে থাকে হৃদয়ের প্রতিবেশী আর তাঁর জীবন আমাকে ক্রমশ করে তোলে ঈর্ষাকাতর।
মনে পড়ছে, আবুল হাসানের উপরোক্ত বইগুলো প্রকাশ ও পুনঃপ্রকাশের পরপর ১৯৮৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশে আবুল হাসানের একধরনের পুনর্জাগরণ শুরু হয়। সেই ঢেউ আমাদের শিক্ষাঙ্গনে এসেও লাগে। আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজ ক্যাম্পাসে আবুল হাসান স্মরণ অনুষ্ঠানে ‘একজন কবি আবুল হাসান’ প্রবন্ধ লিখে পাঠ করি। একই সময়ে একদিন ঘটনাক্রমে ঢাকায় এসে দেশ প্রকাশনের নয়াপল্টনের অফিসে যাই; সেখানে আবুল হাসানের গল্প সংকলন দেখি, কাব্যনাট্য ‘ওরা কয়েকজন’ দেখি। একই সন্ধ্যায় আবুল হাসানের মানসপুত্র আবিদ আজাদের শিল্পতরু অফিসেও যাই।
আবুল হাসানের কবিতা আমার কর্কশ ও কিঞ্চিৎ আঞ্চলিকতাদুষ্ট উচ্চারণে আনন্দ শংকরের আবহ সংগীত সহযোগে ক্যাসেটবন্দী করে নিজে নিজেই শুনি। কামরুল হাসান মঞ্জুর চিনে বাদামের মতো মচমচে কণ্ঠে ‘বনভূমিকে বলো ওইখানে একজন মানুষ লম্বালম্বিভাবে শুয়ে আছে’ শুনতে শুনতে আমিও লিখে ফেলি ‘চিবুক ছুঁয়ে বলেছিলাম/ তোমার চোখে বলেছিলাম/ ভালোবাসি’ (স্মরণ করা যাক হাসানের ‘আমার চোখে বলেছিলাম’ কবিতাটি) কিংবা ‘তোমার সান্নিধ্য যদিবা অগ্নিময়/ রঙিন চোখমুখ নিয়ে অন্য কেউ/ তোমার সামনে বসে থাকুক/ আমি রইলাম নির্বাপিত নিরাপদ’ (স্মরণ করা যাক হাসানের ‘কল্যাণ মাধুরী’ কবিতাটি) ইত্যাদি। এইভাবে কিছুকাল ‘আমার এই নবযৌবনে’ আবুল হাসানের প্রতিধ্বনিময় জীবন যাপন করি।
অভিন্ন ‘সরজুদিদি’ময় শৈশব আমার, ‘স্বাতী’র আবির্ভাব ঘটে গেছে তত দিনে, ‘রোমেনা’রা বুদ্ধদেব বসুর বদলে শীর্ষেন্দুর বই ধার নেয়। বন্ধুরা কবিতা লেখে, গলায় মাফলার পেঁচিয়ে সৈয়দ হকের ‘প্যাটের বিষ’ বা ‘বাসন’ নাটকের রিহার্সাল করে, লেবু চায়ে বাড়তি চিনি চেয়ে নেয়। সামরিক শাসনের দীর্ঘ ছায়ায় আমিও তত দিনে ‘জেনে গেছি রাজনীতি এক কালো হরিণের নাম’। আর নির্মলেন্দু গুণ যেমন হাসানের জন্য এলিজি লিখেছেন, ছাব্বিশ-সাতাশ বছর বয়সে আমাকেও কবিবন্ধু কামরুজ্জামান উবাইদুল্লাহর জন্য দৈনিক পূর্বকোণে ‘কুমুর বন্ধন’ শীর্ষক এলিজি লিখতে হয়! সে মারা গিয়েছিল পিজি হাসপাতালেই, ফুসফুসের ক্যানসারে।
এইভাবে আমি আবুল হাসানকে ধারণ করে বড় হতে থাকি। এ সময়ে আমি লিখে ফেলি ‘আমি কীভাবে আবুল হাসান হতে চেয়েছিলাম’।
আবুল হাসান তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে মাহবুব তালুকদারকে ফোন করে প্রেসক্লাবে ডেকে এনে তাঁর নতুন প্রেমের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে এমন একজন এসেছে, তাঁকে পেয়ে আমি ধন্য। পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য আমি এই একটা মুখেই খুঁজে পেয়েছি। জীবনে আমি যা কিছু চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি। জীবনের কাছে আমার আর কিছু চাওয়া নাই।’ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘সম্পাদক’ পত্রিকায় পাই, নির্মলেন্দু গুণকে আবুল হাসান চিঠিতে লিখছেন, ‘এখন সেই রমণীও আমাকে আর নিঃসঙ্গতা দিতে পারে না।’ কেউ একজন আমাকে জানালেন, আহমদ ছফার তিনটি সত্যি ঘটনাশ্রিত উপন্যাস আছে, যার একটিতে তিনি আবুল হাসান ও সুরাইয়া খানমের সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পর্কের রসায়নের বয়ান করেছেন। আবার খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল! এই সব নানা কথার অর্থ জানতে জানতে, নানা কাহিনির সূত্র খুঁজতে খুঁজতে আমি আবুল হাসান সম্পর্কে যেখানে যা পাই, তা-ই ক্ষুধার্তের মতো পড়তে থাকি; পাশাপাশি ফেসবুকের ‘আবুল হাসান’ পাতায় সংরক্ষণ করতে থাকি। আবুল হাসানকে আমি প্রতিদিনই খনন করতে থাকি। একপর্যায়ে কবির পুরো জীবনটাই আমার চোখের সামনে চলচ্চিত্রের মতো ভাসতে থাকে। তবে কবির জীবনকাহিনি লেখার স্পর্ধা তখনো জন্মায়নি, কেননা বৃহৎ কলেবরের লেখা লিখে আমি অভ্যস্ত তো নইই, বরং হাসনাত আবদুল হাই কিংবা শাহাদুজ্জামানের লেখা জীবনভিত্তিক উপন্যাসগুলো পড়ে আমি তাঁদের গবেষণা ও শ্রমের পরিমাণ আন্দাজ করতে পেরে এটিকে আমার পক্ষে একটি অসম্ভব প্রকল্প বলেই ভাবলাম।
এর পর আমি কবির জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট কিছু ঘটনা নিজের মতো করে লিখে রাখতে শুরু করি; কবির কোনো কোনো কবিতা লেখার কাল্পনিক ইতিহাস লিখতে শুরু করি। এইভাবে অল্প পরিসরে হলেও আমার নোটবুকে তাঁর জীবনের বাস্তবতার সাথে আমার কল্পনার কিছু মিশেল দেওয়ার একটা ঘটনা ঘটে যায়। একপর্যায়ে অধুনালুপ্ত ‘নতুনধারা’য় আবুল হাসানকে নিয়ে একগুচ্ছ সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান প্রকাশ করি। লিখতে গিয়ে হাসানকে আরও নিবিড়ভাবে অনুভব করি। তাঁর কবিতার শিরোনাম আর উজ্জ্বল পঙ্ক্তিগুলো আমাকে ঘিরে রাখে। আমিই হয়ে উঠি আবুল হাসান ৷ এবারে উত্তম পুরুষে হাসানের জীবনের হাহাকারময় একটি দিনের কথা লিখে ফেলি; পাঠকের বিস্ময়সূচক মন্তব্যে প্রমাণ পাই যে আমার লেখা আবুল হাসানের সেই ডায়েরির পাতাটি পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। তখন আমি আবুল হাসানকে নিয়ে কাজ করার আত্মবিশ্বাস অর্জন করি। কিন্তু যেহেতু আমার ডকু-ফিকশনে অন্যের রচনার প্রচুর উদ্ধৃতি রাখতে হবে বলে নিজে নিজে সম্মত হয়েছিলাম, উত্তম পুরুষে লেখার চিন্তাটি বাদ দিয়ে দিলাম। পরদিন থেকে কবিকে নিয়ে এযাবৎকাল যা যা লিখেছি, সেগুলো কবির জীবনকাল ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সাজাই। এর পরের এক বছর সেই হাড়ের কাঠামোতে নিরন্তর মাংস-মজ্জা যোগ করে যাই আর চেনা-অচেনা অনেক মানুষের নিরন্তর অভাবিত সহযোগিতা পেতে থাকি।
আবুল হাসানের জীবনে বাংলাদেশের সবচেয়ে চড়াই-উতরাইময় সময়টিও প্রভাব ফেলেছে। তাই শুরু থেকেই মাথায় রেখেছিলাম ‘সময়’ এই উপাখ্যানের একটি বিশেষ চরিত্র হয়ে থাকবে এবং সমান মনোযোগপ্রাপ্য হবে। কবির লেখা দু-চারটি চিঠি, প্রবন্ধ, গদ্যের নমুনা আর গল্পগুলো আমি বারবার পড়ে কবির মানসকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি, কবির প্রাত্যহিক জীবনযাপনকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। কবির কবিতাসহ সমগ্র রচনায় একধরনের আর্তিও আছে, শুশ্রূষাও আছে—যেহেতু তিনি শেষাবধি একজন জীবনবাদী মানুষ হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি কেমন আছেন—এ কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ‘শরীরের খবর জানি না, মনের খবর জানি, মন ভালো আছে।’ এই সাহসের বলেই নাকে অক্সিজেনের নল নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লিখেছেন; পূর্ব বার্লিনে অসুস্থ শরীরে পায়ে ব্যথা আর বাইরে নববর্ষের আতশবাজির বিরক্তিকর শব্দে বিব্রত না হয়ে জার্মান বন্ধুর সঙ্গে বসে সেসব ভুলে যাওয়ার জন্যই বুঝিবা তাঁর সাথে যৌথভাবে নিজের বাংলা কবিতার ভাব অবলম্বনে জার্মান গান লিখে বন্ধুর মুখে শুনলেন। শেষে ব্যথা-বেদনা ভুলে আরামে ঘুমালেন। অসুস্থতাকে জয় করতে পারেননি, কিন্তু বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলেন; ‘পৃথক পালঙ্ক’ বইটিতে জীবনের শ্রেষ্ঠতম আর বিধুরতম কবিতাগুলো লিখছিলেন সে সময়। কবির এই বিস্ময়কর সময়টুকু ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবনের কঠিনতম সময়েও প্রেরণা জুগিয়েছে, যখন আমি প্রাণঘাতী অসুখে হাসপাতালবাসী হয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ লেখার শেষ পর্যায়ের কাজ আর সম্পাদনার কাজ করছিলাম। সে অন্য গল্প। এই ডকু-ফিকশনে আবুল হাসান তো বটেই, আরও অনেক কবি, লেখক ও গবেষকের রচনা, কথাবার্তা, মন্তব্য ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে—কখনো উদ্ধৃতির ভেতরে, কখনো রচনাটিকে নির্ঘণ্ট-কণ্টকিত না করার অভিপ্রায়ে অন্তর্বয়নের মাধ্যমে আত্মস্থ করা হয়েছে। যে লেখায় সব চরিত্রই বাস্তব, আমি মনে করি এই পরিস্থিতিটা লেখকের পক্ষে ঈষৎ ঝুঁকিপূর্ণ; কিন্তু সব চরিত্র কাল্পনিক—এই কথা তো আর বলার সুযোগ নাই!
শুরুতে বলছিলাম, আবুল হাসান গবেষণা উপযোগী কবি। তার শব্দচয়নও অভিনব এবং এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর আগে আর কারও লেখায় আমি দেখিনি। আবুল হাসানের একটি গল্পের নাম ‘নির্বাসনায় মাইল মাইল’। নির্বাসনা শব্দটি নির্বাসন শব্দের বিকল্প ভেবেও মনের খটকা দূর হয় না। তারপর খুঁজে দেখি নির্বাসনার অর্থ বাসনামুক্ত হওয়া—“বাসনামুক্ত হওয়া সম্ভব। সেই জন্যই জপ, ধ্যান, সাধনা এসব দরকার। যদি তুমি নির্বাসনা হও, তবে ভক্তি লাভ করতে পারবে।” আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘হাসানের মৃত্যু হলেও ক্ষতি কী; অমৃতের সন্ধান সে তো পেয়েই গেছে!’ জীবনের একপর্যায়ে গিয়ে আবুল হাসান বাসনামুক্ত হতে পেরেছিলেন, সন্তের আসনে তাঁকে অধিষ্ঠিত হতে দেখি, আর কবির সুনাম বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছে মাইলের পর মাইল, এ এক পাঠক পরম্পরা; যে কারণে তিনি আজও সমান জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক।

তাঁর কবিতায় বিপুলসংখ্যক স্মরণযোগ্য পঙ্ক্তি আমি পেয়েছি, সম্ভবত এত বেশিসংখ্যক স্মরণযোগ্য পঙ্ক্তি আর কোনো কবির রচনাসমগ্রে পাইনি। আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, যাঁর কথা বলছি, তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত কবিতার বই ছিল মাত্র তিনটি। নীরবে পেছনে ফেলে গিয়েছিলেন প্রায় সমপরিমাণ অগ্রন্থিত কবিতা আর কিছু অতি তরুণ বয়সের কবিতা, ডজনখানেক অগ্রন্থিত গল্প, একটি কাব্যনাট্য, আরও একটি নিখোঁজ কাব্যনাট্য, আর শতসহস্র চিরকুটে ভাসমান নিরুদ্দিষ্ট একগুচ্ছ কবিতা। কিন্তু তাঁকে নিয়ে একটি উপন্যাসোপম ডকু-ফিকশন ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ লেখার একমাত্র কারণ তাঁর কবিতার ‘উচ্চতা’ নয়। উচ্চতা শব্দটি হাসান হাফিজুর রহমান ব্যবহার করেছিলেন; বলেছিলেন, ‘হাসানের উচ্চতায় তাঁর সমসাময়িক কোনো কবিই পৌঁছাতে পারেননি’। যিনি কেবল একজন কবিই হতে চেয়েছিলেন—আবুল হাসান, সেই কবির নাম।
আবুল হাসান একজন মনোযোগ্য কবি, গবেষণা উপযোগী কবি বলে আমার মনে হয়েছে। সম্প্রতি মনে হলো, আবুল হাসান হচ্ছেন সন্ধি আর সমাসের রাজা–এ নিয়েও গবেষণা হতে পারে। উপমা আর চিত্রকল্পে তো তিনি অঘোষিত রাজা হয়েই আছেন। গবেষণা হতে পারে একুশে সংকলনে প্রকাশিত তাঁর কবিতা নিয়েও, যার অধিকাংশই হয়তোবা এখনো আমাদের চোখের আড়ালে আছে। তো, তাঁকে নিয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ কেন আর কীভাবে লিখতে বসলাম—প্রশ্নটা আমাকে একাধিক দিনে একাধিক পরিবেশে জিজ্ঞেস করা হলে আমিও প্রতিবারই নতুনভাবে উত্তর দিতে পারব। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, কোনো সংস্করণই মিথ্যাভাষণ হবে না।
আবুল হাসানের কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে গত শতাব্দীর চুরাশি সালের দিকে, বিচিত্রার পাতায় বইপত্রের রিভিউ দেখে বাংলাবাজারে বই কিনতে গিয়ে বইয়ের তাকে পাওয়া আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতার মাধ্যমে; সেই থেকে এটি আমার সর্বাধিকবার পঠিত বই। এর পরপরই কবির তিনটি কবিতার বই আমার হাতে আসে। অগ্রন্থিত কবিতার বইয়ের ভূমিকা পড়ে কবিকে জানার আশ মেটে না। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত জীবনী গ্রন্থমালা সিরিজে আবুল হাসানের জীবনী আর নির্মলেন্দু গুণের আত্মকথা পড়ে কবি সম্পর্কে আরও জানলাম। তখন আমি নিজে একটি সার্বক্ষণিক কবিজীবন বেছে নিতে না পারা আর বোহিমিয়ান একটি জীবন যাপন করতে না পারার গোপন কষ্টে অভিভূত হতে থাকি। আবুল হাসানের কবিতা হয়ে উঠতে থাকে হৃদয়ের প্রতিবেশী আর তাঁর জীবন আমাকে ক্রমশ করে তোলে ঈর্ষাকাতর।
মনে পড়ছে, আবুল হাসানের উপরোক্ত বইগুলো প্রকাশ ও পুনঃপ্রকাশের পরপর ১৯৮৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশে আবুল হাসানের একধরনের পুনর্জাগরণ শুরু হয়। সেই ঢেউ আমাদের শিক্ষাঙ্গনে এসেও লাগে। আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজ ক্যাম্পাসে আবুল হাসান স্মরণ অনুষ্ঠানে ‘একজন কবি আবুল হাসান’ প্রবন্ধ লিখে পাঠ করি। একই সময়ে একদিন ঘটনাক্রমে ঢাকায় এসে দেশ প্রকাশনের নয়াপল্টনের অফিসে যাই; সেখানে আবুল হাসানের গল্প সংকলন দেখি, কাব্যনাট্য ‘ওরা কয়েকজন’ দেখি। একই সন্ধ্যায় আবুল হাসানের মানসপুত্র আবিদ আজাদের শিল্পতরু অফিসেও যাই।
আবুল হাসানের কবিতা আমার কর্কশ ও কিঞ্চিৎ আঞ্চলিকতাদুষ্ট উচ্চারণে আনন্দ শংকরের আবহ সংগীত সহযোগে ক্যাসেটবন্দী করে নিজে নিজেই শুনি। কামরুল হাসান মঞ্জুর চিনে বাদামের মতো মচমচে কণ্ঠে ‘বনভূমিকে বলো ওইখানে একজন মানুষ লম্বালম্বিভাবে শুয়ে আছে’ শুনতে শুনতে আমিও লিখে ফেলি ‘চিবুক ছুঁয়ে বলেছিলাম/ তোমার চোখে বলেছিলাম/ ভালোবাসি’ (স্মরণ করা যাক হাসানের ‘আমার চোখে বলেছিলাম’ কবিতাটি) কিংবা ‘তোমার সান্নিধ্য যদিবা অগ্নিময়/ রঙিন চোখমুখ নিয়ে অন্য কেউ/ তোমার সামনে বসে থাকুক/ আমি রইলাম নির্বাপিত নিরাপদ’ (স্মরণ করা যাক হাসানের ‘কল্যাণ মাধুরী’ কবিতাটি) ইত্যাদি। এইভাবে কিছুকাল ‘আমার এই নবযৌবনে’ আবুল হাসানের প্রতিধ্বনিময় জীবন যাপন করি।
অভিন্ন ‘সরজুদিদি’ময় শৈশব আমার, ‘স্বাতী’র আবির্ভাব ঘটে গেছে তত দিনে, ‘রোমেনা’রা বুদ্ধদেব বসুর বদলে শীর্ষেন্দুর বই ধার নেয়। বন্ধুরা কবিতা লেখে, গলায় মাফলার পেঁচিয়ে সৈয়দ হকের ‘প্যাটের বিষ’ বা ‘বাসন’ নাটকের রিহার্সাল করে, লেবু চায়ে বাড়তি চিনি চেয়ে নেয়। সামরিক শাসনের দীর্ঘ ছায়ায় আমিও তত দিনে ‘জেনে গেছি রাজনীতি এক কালো হরিণের নাম’। আর নির্মলেন্দু গুণ যেমন হাসানের জন্য এলিজি লিখেছেন, ছাব্বিশ-সাতাশ বছর বয়সে আমাকেও কবিবন্ধু কামরুজ্জামান উবাইদুল্লাহর জন্য দৈনিক পূর্বকোণে ‘কুমুর বন্ধন’ শীর্ষক এলিজি লিখতে হয়! সে মারা গিয়েছিল পিজি হাসপাতালেই, ফুসফুসের ক্যানসারে।
এইভাবে আমি আবুল হাসানকে ধারণ করে বড় হতে থাকি। এ সময়ে আমি লিখে ফেলি ‘আমি কীভাবে আবুল হাসান হতে চেয়েছিলাম’।
আবুল হাসান তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে মাহবুব তালুকদারকে ফোন করে প্রেসক্লাবে ডেকে এনে তাঁর নতুন প্রেমের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে এমন একজন এসেছে, তাঁকে পেয়ে আমি ধন্য। পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য আমি এই একটা মুখেই খুঁজে পেয়েছি। জীবনে আমি যা কিছু চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি। জীবনের কাছে আমার আর কিছু চাওয়া নাই।’ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘সম্পাদক’ পত্রিকায় পাই, নির্মলেন্দু গুণকে আবুল হাসান চিঠিতে লিখছেন, ‘এখন সেই রমণীও আমাকে আর নিঃসঙ্গতা দিতে পারে না।’ কেউ একজন আমাকে জানালেন, আহমদ ছফার তিনটি সত্যি ঘটনাশ্রিত উপন্যাস আছে, যার একটিতে তিনি আবুল হাসান ও সুরাইয়া খানমের সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পর্কের রসায়নের বয়ান করেছেন। আবার খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল! এই সব নানা কথার অর্থ জানতে জানতে, নানা কাহিনির সূত্র খুঁজতে খুঁজতে আমি আবুল হাসান সম্পর্কে যেখানে যা পাই, তা-ই ক্ষুধার্তের মতো পড়তে থাকি; পাশাপাশি ফেসবুকের ‘আবুল হাসান’ পাতায় সংরক্ষণ করতে থাকি। আবুল হাসানকে আমি প্রতিদিনই খনন করতে থাকি। একপর্যায়ে কবির পুরো জীবনটাই আমার চোখের সামনে চলচ্চিত্রের মতো ভাসতে থাকে। তবে কবির জীবনকাহিনি লেখার স্পর্ধা তখনো জন্মায়নি, কেননা বৃহৎ কলেবরের লেখা লিখে আমি অভ্যস্ত তো নইই, বরং হাসনাত আবদুল হাই কিংবা শাহাদুজ্জামানের লেখা জীবনভিত্তিক উপন্যাসগুলো পড়ে আমি তাঁদের গবেষণা ও শ্রমের পরিমাণ আন্দাজ করতে পেরে এটিকে আমার পক্ষে একটি অসম্ভব প্রকল্প বলেই ভাবলাম।
এর পর আমি কবির জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট কিছু ঘটনা নিজের মতো করে লিখে রাখতে শুরু করি; কবির কোনো কোনো কবিতা লেখার কাল্পনিক ইতিহাস লিখতে শুরু করি। এইভাবে অল্প পরিসরে হলেও আমার নোটবুকে তাঁর জীবনের বাস্তবতার সাথে আমার কল্পনার কিছু মিশেল দেওয়ার একটা ঘটনা ঘটে যায়। একপর্যায়ে অধুনালুপ্ত ‘নতুনধারা’য় আবুল হাসানকে নিয়ে একগুচ্ছ সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান প্রকাশ করি। লিখতে গিয়ে হাসানকে আরও নিবিড়ভাবে অনুভব করি। তাঁর কবিতার শিরোনাম আর উজ্জ্বল পঙ্ক্তিগুলো আমাকে ঘিরে রাখে। আমিই হয়ে উঠি আবুল হাসান ৷ এবারে উত্তম পুরুষে হাসানের জীবনের হাহাকারময় একটি দিনের কথা লিখে ফেলি; পাঠকের বিস্ময়সূচক মন্তব্যে প্রমাণ পাই যে আমার লেখা আবুল হাসানের সেই ডায়েরির পাতাটি পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। তখন আমি আবুল হাসানকে নিয়ে কাজ করার আত্মবিশ্বাস অর্জন করি। কিন্তু যেহেতু আমার ডকু-ফিকশনে অন্যের রচনার প্রচুর উদ্ধৃতি রাখতে হবে বলে নিজে নিজে সম্মত হয়েছিলাম, উত্তম পুরুষে লেখার চিন্তাটি বাদ দিয়ে দিলাম। পরদিন থেকে কবিকে নিয়ে এযাবৎকাল যা যা লিখেছি, সেগুলো কবির জীবনকাল ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সাজাই। এর পরের এক বছর সেই হাড়ের কাঠামোতে নিরন্তর মাংস-মজ্জা যোগ করে যাই আর চেনা-অচেনা অনেক মানুষের নিরন্তর অভাবিত সহযোগিতা পেতে থাকি।
আবুল হাসানের জীবনে বাংলাদেশের সবচেয়ে চড়াই-উতরাইময় সময়টিও প্রভাব ফেলেছে। তাই শুরু থেকেই মাথায় রেখেছিলাম ‘সময়’ এই উপাখ্যানের একটি বিশেষ চরিত্র হয়ে থাকবে এবং সমান মনোযোগপ্রাপ্য হবে। কবির লেখা দু-চারটি চিঠি, প্রবন্ধ, গদ্যের নমুনা আর গল্পগুলো আমি বারবার পড়ে কবির মানসকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি, কবির প্রাত্যহিক জীবনযাপনকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। কবির কবিতাসহ সমগ্র রচনায় একধরনের আর্তিও আছে, শুশ্রূষাও আছে—যেহেতু তিনি শেষাবধি একজন জীবনবাদী মানুষ হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি কেমন আছেন—এ কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ‘শরীরের খবর জানি না, মনের খবর জানি, মন ভালো আছে।’ এই সাহসের বলেই নাকে অক্সিজেনের নল নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লিখেছেন; পূর্ব বার্লিনে অসুস্থ শরীরে পায়ে ব্যথা আর বাইরে নববর্ষের আতশবাজির বিরক্তিকর শব্দে বিব্রত না হয়ে জার্মান বন্ধুর সঙ্গে বসে সেসব ভুলে যাওয়ার জন্যই বুঝিবা তাঁর সাথে যৌথভাবে নিজের বাংলা কবিতার ভাব অবলম্বনে জার্মান গান লিখে বন্ধুর মুখে শুনলেন। শেষে ব্যথা-বেদনা ভুলে আরামে ঘুমালেন। অসুস্থতাকে জয় করতে পারেননি, কিন্তু বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলেন; ‘পৃথক পালঙ্ক’ বইটিতে জীবনের শ্রেষ্ঠতম আর বিধুরতম কবিতাগুলো লিখছিলেন সে সময়। কবির এই বিস্ময়কর সময়টুকু ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবনের কঠিনতম সময়েও প্রেরণা জুগিয়েছে, যখন আমি প্রাণঘাতী অসুখে হাসপাতালবাসী হয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ লেখার শেষ পর্যায়ের কাজ আর সম্পাদনার কাজ করছিলাম। সে অন্য গল্প। এই ডকু-ফিকশনে আবুল হাসান তো বটেই, আরও অনেক কবি, লেখক ও গবেষকের রচনা, কথাবার্তা, মন্তব্য ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে—কখনো উদ্ধৃতির ভেতরে, কখনো রচনাটিকে নির্ঘণ্ট-কণ্টকিত না করার অভিপ্রায়ে অন্তর্বয়নের মাধ্যমে আত্মস্থ করা হয়েছে। যে লেখায় সব চরিত্রই বাস্তব, আমি মনে করি এই পরিস্থিতিটা লেখকের পক্ষে ঈষৎ ঝুঁকিপূর্ণ; কিন্তু সব চরিত্র কাল্পনিক—এই কথা তো আর বলার সুযোগ নাই!
শুরুতে বলছিলাম, আবুল হাসান গবেষণা উপযোগী কবি। তার শব্দচয়নও অভিনব এবং এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর আগে আর কারও লেখায় আমি দেখিনি। আবুল হাসানের একটি গল্পের নাম ‘নির্বাসনায় মাইল মাইল’। নির্বাসনা শব্দটি নির্বাসন শব্দের বিকল্প ভেবেও মনের খটকা দূর হয় না। তারপর খুঁজে দেখি নির্বাসনার অর্থ বাসনামুক্ত হওয়া—“বাসনামুক্ত হওয়া সম্ভব। সেই জন্যই জপ, ধ্যান, সাধনা এসব দরকার। যদি তুমি নির্বাসনা হও, তবে ভক্তি লাভ করতে পারবে।” আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘হাসানের মৃত্যু হলেও ক্ষতি কী; অমৃতের সন্ধান সে তো পেয়েই গেছে!’ জীবনের একপর্যায়ে গিয়ে আবুল হাসান বাসনামুক্ত হতে পেরেছিলেন, সন্তের আসনে তাঁকে অধিষ্ঠিত হতে দেখি, আর কবির সুনাম বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছে মাইলের পর মাইল, এ এক পাঠক পরম্পরা; যে কারণে তিনি আজও সমান জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

আবুল হাসান হচ্ছেন সন্ধি আর সমাসের রাজা–এ নিয়েও গবেষণা হতে পারে। উপমা আর চিত্রকল্পে তো তিনি অঘোষিত রাজা হয়েই আছেন। তো, তাঁকে নিয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ কেন আর কীভাবে লিখতে বসলাম—প্রশ্নটা আমাকে একাধিক দিনে একাধিক পরিবেশে জিজ্ঞেস করা হলে আমিও প্রতিবারই নতুনভাবে উত্তর দিতে পারব। কোনো সংস্করণই মিথ্যাভাষণ হবে
০৪ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আবুল হাসান হচ্ছেন সন্ধি আর সমাসের রাজা–এ নিয়েও গবেষণা হতে পারে। উপমা আর চিত্রকল্পে তো তিনি অঘোষিত রাজা হয়েই আছেন। তো, তাঁকে নিয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ কেন আর কীভাবে লিখতে বসলাম—প্রশ্নটা আমাকে একাধিক দিনে একাধিক পরিবেশে জিজ্ঞেস করা হলে আমিও প্রতিবারই নতুনভাবে উত্তর দিতে পারব। কোনো সংস্করণই মিথ্যাভাষণ হবে
০৪ আগস্ট ২০২২
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

আবুল হাসান হচ্ছেন সন্ধি আর সমাসের রাজা–এ নিয়েও গবেষণা হতে পারে। উপমা আর চিত্রকল্পে তো তিনি অঘোষিত রাজা হয়েই আছেন। তো, তাঁকে নিয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ কেন আর কীভাবে লিখতে বসলাম—প্রশ্নটা আমাকে একাধিক দিনে একাধিক পরিবেশে জিজ্ঞেস করা হলে আমিও প্রতিবারই নতুনভাবে উত্তর দিতে পারব। কোনো সংস্করণই মিথ্যাভাষণ হবে
০৪ আগস্ট ২০২২
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

আবুল হাসান হচ্ছেন সন্ধি আর সমাসের রাজা–এ নিয়েও গবেষণা হতে পারে। উপমা আর চিত্রকল্পে তো তিনি অঘোষিত রাজা হয়েই আছেন। তো, তাঁকে নিয়ে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ কেন আর কীভাবে লিখতে বসলাম—প্রশ্নটা আমাকে একাধিক দিনে একাধিক পরিবেশে জিজ্ঞেস করা হলে আমিও প্রতিবারই নতুনভাবে উত্তর দিতে পারব। কোনো সংস্করণই মিথ্যাভাষণ হবে
০৪ আগস্ট ২০২২
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫