নুসরৎ নওরিন

‘বৃষ্টি হলেই আমার একজনের কথা মনে পড়ে।’
‘বিশেষ কেউ?’
লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
আমি বুঝতে পারলাম না, শেষের কথাটায় আমার অনুমোদন জরুরি কেন। তবু ভদ্রতাবশত হালকা মাথা ঝাঁকালাম।
লোকটা বলল, ‘তবে যতটা বিশেষ হয়ে উঠতে পারত, শেষমেশ তা হয়নি। আমিই হতে দিইনি। সত্যি বলতে কি, আমার জীবনে সবচেয়ে বিশেষ মানুষ হওয়ার কথা ছিল তারই।’
কী বলা উচিত বুঝলাম না। বলাটা জরুরিও মনে হলো না। কারণ, লোকটা কথা চালিয়ে যাচ্ছে মোটামুটি একাই। পেটে তিন পেগ পড়াটাই হয়তো কারণ। অনেক চাপা স্বভাবের লোকও দু-তিন পেগের পর বেশ দিলখোলা হয়ে ওঠে। জীবনের সব গল্প বলে দিতে চায়। অন্যদিকে, হাসিখুশি কেউ কেউ মুখে কঠিন কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এই অভিজ্ঞতা প্রথম নয়।
আমি যা ভেবেছিলাম তা হলো না অবশ্য। লোকটা গড়গড় করে সেই বিশেষ মানুষের প্রসঙ্গে গেল না, বরং গ্লাসের দিকে স্বপ্নময় চোখে তাকিয়ে থাকল। একসময় গুনগুন করে পরিচিত একটা গানের সুর ভাজতে লাগল। মনে হলো, গ্লাসের মধ্যে কোনো মুখ দেখা যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়েই গান। অনেকটা ‘এক ঘর বানাউঙ্গা তেরে ঘরকে সামনে’র মতো।
লোকটা কী সুর ভাজছিল, এখন আমার ঠিক মনে পড়ছে না। তবে এটুকু মনে আছে, জানালার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা ধীরে ধীরে নামছিল। ঠান্ডা আবহাওয়া। পরদিন ছুটি। কাজের তাড়া নেই। সব মিলিয়ে সেই বিকেলে পৃথিবীটাকে খুব শান্ত, সুন্দর মনে হচ্ছিল।
একসময় গুনগুন থামিয়ে বলল, ‘বৃষ্টি হলেই মনে হয় মেয়েটা ওই শাড়িটা পরেছে... ও বলত, ওই শাড়িটা ও যেদিন পরে, সেদিনই বৃষ্টি নামে।’
আমি কিছু বললাম না। পৃথিবীতে কত পাগল আছে! এ কথা যখন ভাবছি, তখনই লোকটা বলল, ‘আমিও আপনার মতো কথাটা শুনে প্রথম ওকে পাগল ভেবেছিলাম। তবে তত দিনে আমাদের সম্পর্কটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছি। তাই পাগল ভাবলেও সেটাকে খুব বেশিক্ষণ মনের মধ্যে জায়গা দিইনি। তার পরও খেয়াল না করে উপায় ছিল না যে ব্যাপারটা উদ্ভট।’
কথাটা বলে লোকটা একটা চুমুক দিয়ে আবার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি পরের কথাটা শোনার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকলাম। লোকটা যেন ভুলেই গিয়েছিল। বলল, ‘ওহ, হ্যাঁ... আচ্ছা। এরপর... আমি তো কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলাম। ও বেশ সিরিয়াস হয়ে গেল। বলল, আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছ না তুমি। তোমাকে প্রমাণ করে দেখাব।’
আমি কৌতূহলী হয়ে বললাম, ‘প্রমাণ করতে পেরেছিল?’
‘এগুলো কী প্রমাণ হয় রে ভাই? একটা আজগুবি ক্লেইম। কয়েক দিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের ছবি পাঠাল। প্রতিটা ছবিতে ওই ছাইরঙা শাড়িটা পরা। অফিসে বসা। ওই দিনগুলোতে দুপুরের দিকে ঘন বৃষ্টি নেমেছে। সকালে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ছিল না। ওই মাসের অন্য দিনগুলোতে বৃষ্টি হয়নি, তা না। হয়েছে। কিন্তু ওর কথা হলো, ও যেদিন শাড়িটা পরেছে, সেদিন অবশ্যই বৃষ্টি হয়েছে, মিস হয়নি।’
‘তাহলে তো প্রমাণ হয়েই গেল।’
‘হা হা হা। তাতে প্রমাণ হয় না মোটেই। শাড়িটা পরা অবস্থায়ও ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি হাত দিয়ে ধরে দেখেছি। হিসাব করে দেখেছি, ব্যাপারটা খুব সোজা। অরণি, মানে আমার সেই প্রেমিকার নাম অরণি। অরণির অফিসে শাড়ি হলো ফরমাল ড্রেস। সপ্তাহে চার দিন শাড়ি পরতে হয়। জুলাই, আগস্ট মিলিয়ে পাঁচ দিন শাড়িটা পরেছিল ও। ওই কদিনই রাত থেকে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। ভ্যাপসা গরম। বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা।
ওর অন্য শাড়িগুলোর তুলনায় ওই শাড়িটা খুব মিহি, আরামদায়ক। গরমে কমফোর্টেবল বলেই ও বেছে বেছে ওটা পরত। ওই রকম ওয়েদারে বৃষ্টি নামাটাই স্বাভাবিক।’
‘ওহ। ...তো, আপনি কী করলেন? কথাটা তাকে বললেন?’
‘প্রথমেই বলিনি। প্রথম প্রথম মজা করতাম। বলতাম, অরণি, আজ খুব গরম পড়েছে। তোমার বেদেনী শাড়িটা পর তো!’
‘বেদেনী?’
‘ওহ। বলা হয় নাই, তাই না? বেদেনী শাড়ি বলার কারণ, শাড়িটা কেনার ইতিহাস ছিল। তখন নতুন নতুন অফিসে জয়েন করেছে। আলমারিতে তত শাড়ি নেই। যেখানেই যায়, শাড়ি কেনে। এই সময়েই ফুটপাতে একদিন এক বেদেনীর সঙ্গে দেখা। সাপের খেলা দেখাচ্ছিল, সঙ্গে ছোট একটা বাচ্চা... অন্য গল্পে চলে যাচ্ছি, ভাই। আসলে অরণির এত গল্প জমা আমার কাছে! গল্পগুলো কাউকে বলা হয় নাই।’
সেই মুহূর্তে লোকটাকে খুব দুঃখী মনে হলো আর অ্যালকোহলের প্রভাবেই মনে হয় আমি একটা বেমানান উত্তর দিলাম। থেমে থেমে বললাম, ‘আমাকে বলতে পারেন। আমি খুব...ভালো...শুনতে পারি।’
কী যেন চিন্তা করে নিয়ে লোকটা একটা নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ‘কথাগুলো ওকে বললাম। হ্যাঁ। তবে... আসলে এত খোলাখুলি না বললেও পারতাম।
কষ্ট পেল, কেঁদে ফেলল। ইগোতে লেগেছিল তো! তারপর একসময় শান্ত হলো। বলল, মন থেকে যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিনই সে শাড়িটা পরে। আমি বোঝালাম, মন সেদিনই চায়, যেদিন সত্যি খুব গরম পড়ে। বৃষ্টির সঙ্গে গরমের সম্পর্ক থাকতে পারে, শাড়ির না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি কখনো শীত কিংবা সুদিং ওয়েদারে শাড়িটা পরেছ?’ সে একটু চিন্তাভাবনা করে উত্তর দিল, ‘না।’
‘যাই হোক। সেবারের মতো ব্যাপারটা মিটমাট হলো। কারণ, অরণি খুব ইজিগোয়িং মেয়ে ছিল। তাই সব স্বাভাবিক হয়ে এল। কয়েক দিন পর আমরা আউটিংয়ের একটা প্ল্যান করলাম। প্ল্যানটা তারই। বলল, “আসো পূজার ছুটিতে একদিন আমরা সারা দিন নৌকায় ঘুরব। চরের দোকানে চা খাব। বালুতে গড়াগড়ি দেব, সাঁতার কাটব। ব্যাগে কাপড়-চোপড় নিয়ে যাব। পোলাপানের মতো যা মনে আসে করব...।”’
প্রাপ্তবয়স্ক দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা পোলাপানের মতো কী করতে পারে ভাবতে ভাবতে বললাম, ‘তারপর?’
‘ঘোরা হয় নাই, ভাই।’
‘কেন?’
‘সেদিন ওয়েদার নরমাল ছিল। অক্টোবরের ৩ তারিখ। বাতাসে হিউমিডিটি নাই। গরম নাই। বৃষ্টির কোনো ফোরকাস্ট নাই। সকালে দুজন রেডি হয়ে বের হব, তখন অঝোরধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করল। সেই বৃষ্টি থামাথামির কোনো খবর নাই। বাসার সামনে নৌকা চালানোর মতো পানি জমে গেল। অরণির বাসার অবস্থা আরও খারাপ। এত বৃষ্টিতে কেন সে বাইরে যাবে, সেই প্রশ্নের কোনো যুক্তিসংগত উত্তর নাই। আমার সঙ্গে যখন ফোনে কথা হলো, তখন জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছ? অরণি বলল, “হ্যাঁ।”’
‘বাহ!’
‘হুমম...তবে শাড়ির সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নাই। আশ্বিন মাসে ঝড়বৃষ্টি খুব সাধারণ ব্যাপার।’
‘আচ্ছা... তারপর? আরেক দিন ছুটি কাটালেন আপনারা?’
‘না। আমাদের আর একসঙ্গে কোনো দিন কাটানো হয় নাই। পরপর কয়েকটা ডেট ক্যানসেল হওয়ার পর একসময় প্রেমটাই ভেঙে যায়।’ কথাটা বলে লোকটা আবার কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। তারপর বলল, ‘আসলে কী জানেন? জীবনে আমরা ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আশা করি।
কিন্তু সত্যিকারের ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আমাদের হজম হয় না। অরণির শাড়ির ব্যাপারটা আমার মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি করেছিল। আধ্যাত্মিকতার প্রতি ওর খুব ঝোঁক ছিল। আমাকেও ও নিজের জীবনে বিরাট একটা প্রাপ্তি মনে করত। হরোস্কোপ নিয়ে মেতে থাকত। এগুলো যে আমার খুব ভালো লাগত, তা না।’
আমি বুঝতে পারলাম না কেউ কাউকে প্রাপ্তি মনে করলে এমন কী সমস্যা। লোকটা তখন বলছে, ‘...কিন্তু আমি অরণিকে খুব মিস করি। বৃষ্টি হলেই গত পাঁচ বছর ধরে প্রথমে আমার মাথায় যে জিনিসটা কাজ করে সেটা হলো, অরণি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছে? আরও অনেক কথা মাথায় আসে। বিশেষ করে...’
আমি অপেক্ষায় থাকি। ‘বিশেষ করে’ কথাটা লোকটা আর শেষ করে না। সেদিন সারা সন্ধ্যা আর কোনো কথা হয়নি আমাদের। তার সঙ্গে ওই দিনের আগে আমার মাত্র এক বা দুবার দেখা হয়েছিল। এরপর আর দেখা হয়নি। কিন্তু আমার মাথায় অরণি নামের একটা মেয়েকে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে সে। এখন বৃষ্টি হলেই আমি একটা মেঘরং শাড়ি পরা মেয়ের কথা ভাবি। তার মুখ অবশ্য দেখতে পাই না।
পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে আসা দিনগুলোতে ভাবি, এই বৃষ্টিটা কার? মেঘের, নাকি অরণির? আরও ভাবি, মানুষ প্রেমের মতো যাদুকরি জিনিস পেয়েও কী সব তুচ্ছ কারণে তাকে দূরে ঠেলে দেয়!

‘বৃষ্টি হলেই আমার একজনের কথা মনে পড়ে।’
‘বিশেষ কেউ?’
লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
আমি বুঝতে পারলাম না, শেষের কথাটায় আমার অনুমোদন জরুরি কেন। তবু ভদ্রতাবশত হালকা মাথা ঝাঁকালাম।
লোকটা বলল, ‘তবে যতটা বিশেষ হয়ে উঠতে পারত, শেষমেশ তা হয়নি। আমিই হতে দিইনি। সত্যি বলতে কি, আমার জীবনে সবচেয়ে বিশেষ মানুষ হওয়ার কথা ছিল তারই।’
কী বলা উচিত বুঝলাম না। বলাটা জরুরিও মনে হলো না। কারণ, লোকটা কথা চালিয়ে যাচ্ছে মোটামুটি একাই। পেটে তিন পেগ পড়াটাই হয়তো কারণ। অনেক চাপা স্বভাবের লোকও দু-তিন পেগের পর বেশ দিলখোলা হয়ে ওঠে। জীবনের সব গল্প বলে দিতে চায়। অন্যদিকে, হাসিখুশি কেউ কেউ মুখে কঠিন কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এই অভিজ্ঞতা প্রথম নয়।
আমি যা ভেবেছিলাম তা হলো না অবশ্য। লোকটা গড়গড় করে সেই বিশেষ মানুষের প্রসঙ্গে গেল না, বরং গ্লাসের দিকে স্বপ্নময় চোখে তাকিয়ে থাকল। একসময় গুনগুন করে পরিচিত একটা গানের সুর ভাজতে লাগল। মনে হলো, গ্লাসের মধ্যে কোনো মুখ দেখা যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়েই গান। অনেকটা ‘এক ঘর বানাউঙ্গা তেরে ঘরকে সামনে’র মতো।
লোকটা কী সুর ভাজছিল, এখন আমার ঠিক মনে পড়ছে না। তবে এটুকু মনে আছে, জানালার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা ধীরে ধীরে নামছিল। ঠান্ডা আবহাওয়া। পরদিন ছুটি। কাজের তাড়া নেই। সব মিলিয়ে সেই বিকেলে পৃথিবীটাকে খুব শান্ত, সুন্দর মনে হচ্ছিল।
একসময় গুনগুন থামিয়ে বলল, ‘বৃষ্টি হলেই মনে হয় মেয়েটা ওই শাড়িটা পরেছে... ও বলত, ওই শাড়িটা ও যেদিন পরে, সেদিনই বৃষ্টি নামে।’
আমি কিছু বললাম না। পৃথিবীতে কত পাগল আছে! এ কথা যখন ভাবছি, তখনই লোকটা বলল, ‘আমিও আপনার মতো কথাটা শুনে প্রথম ওকে পাগল ভেবেছিলাম। তবে তত দিনে আমাদের সম্পর্কটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছি। তাই পাগল ভাবলেও সেটাকে খুব বেশিক্ষণ মনের মধ্যে জায়গা দিইনি। তার পরও খেয়াল না করে উপায় ছিল না যে ব্যাপারটা উদ্ভট।’
কথাটা বলে লোকটা একটা চুমুক দিয়ে আবার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি পরের কথাটা শোনার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকলাম। লোকটা যেন ভুলেই গিয়েছিল। বলল, ‘ওহ, হ্যাঁ... আচ্ছা। এরপর... আমি তো কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলাম। ও বেশ সিরিয়াস হয়ে গেল। বলল, আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছ না তুমি। তোমাকে প্রমাণ করে দেখাব।’
আমি কৌতূহলী হয়ে বললাম, ‘প্রমাণ করতে পেরেছিল?’
‘এগুলো কী প্রমাণ হয় রে ভাই? একটা আজগুবি ক্লেইম। কয়েক দিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের ছবি পাঠাল। প্রতিটা ছবিতে ওই ছাইরঙা শাড়িটা পরা। অফিসে বসা। ওই দিনগুলোতে দুপুরের দিকে ঘন বৃষ্টি নেমেছে। সকালে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ছিল না। ওই মাসের অন্য দিনগুলোতে বৃষ্টি হয়নি, তা না। হয়েছে। কিন্তু ওর কথা হলো, ও যেদিন শাড়িটা পরেছে, সেদিন অবশ্যই বৃষ্টি হয়েছে, মিস হয়নি।’
‘তাহলে তো প্রমাণ হয়েই গেল।’
‘হা হা হা। তাতে প্রমাণ হয় না মোটেই। শাড়িটা পরা অবস্থায়ও ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি হাত দিয়ে ধরে দেখেছি। হিসাব করে দেখেছি, ব্যাপারটা খুব সোজা। অরণি, মানে আমার সেই প্রেমিকার নাম অরণি। অরণির অফিসে শাড়ি হলো ফরমাল ড্রেস। সপ্তাহে চার দিন শাড়ি পরতে হয়। জুলাই, আগস্ট মিলিয়ে পাঁচ দিন শাড়িটা পরেছিল ও। ওই কদিনই রাত থেকে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। ভ্যাপসা গরম। বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা।
ওর অন্য শাড়িগুলোর তুলনায় ওই শাড়িটা খুব মিহি, আরামদায়ক। গরমে কমফোর্টেবল বলেই ও বেছে বেছে ওটা পরত। ওই রকম ওয়েদারে বৃষ্টি নামাটাই স্বাভাবিক।’
‘ওহ। ...তো, আপনি কী করলেন? কথাটা তাকে বললেন?’
‘প্রথমেই বলিনি। প্রথম প্রথম মজা করতাম। বলতাম, অরণি, আজ খুব গরম পড়েছে। তোমার বেদেনী শাড়িটা পর তো!’
‘বেদেনী?’
‘ওহ। বলা হয় নাই, তাই না? বেদেনী শাড়ি বলার কারণ, শাড়িটা কেনার ইতিহাস ছিল। তখন নতুন নতুন অফিসে জয়েন করেছে। আলমারিতে তত শাড়ি নেই। যেখানেই যায়, শাড়ি কেনে। এই সময়েই ফুটপাতে একদিন এক বেদেনীর সঙ্গে দেখা। সাপের খেলা দেখাচ্ছিল, সঙ্গে ছোট একটা বাচ্চা... অন্য গল্পে চলে যাচ্ছি, ভাই। আসলে অরণির এত গল্প জমা আমার কাছে! গল্পগুলো কাউকে বলা হয় নাই।’
সেই মুহূর্তে লোকটাকে খুব দুঃখী মনে হলো আর অ্যালকোহলের প্রভাবেই মনে হয় আমি একটা বেমানান উত্তর দিলাম। থেমে থেমে বললাম, ‘আমাকে বলতে পারেন। আমি খুব...ভালো...শুনতে পারি।’
কী যেন চিন্তা করে নিয়ে লোকটা একটা নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ‘কথাগুলো ওকে বললাম। হ্যাঁ। তবে... আসলে এত খোলাখুলি না বললেও পারতাম।
কষ্ট পেল, কেঁদে ফেলল। ইগোতে লেগেছিল তো! তারপর একসময় শান্ত হলো। বলল, মন থেকে যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিনই সে শাড়িটা পরে। আমি বোঝালাম, মন সেদিনই চায়, যেদিন সত্যি খুব গরম পড়ে। বৃষ্টির সঙ্গে গরমের সম্পর্ক থাকতে পারে, শাড়ির না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি কখনো শীত কিংবা সুদিং ওয়েদারে শাড়িটা পরেছ?’ সে একটু চিন্তাভাবনা করে উত্তর দিল, ‘না।’
‘যাই হোক। সেবারের মতো ব্যাপারটা মিটমাট হলো। কারণ, অরণি খুব ইজিগোয়িং মেয়ে ছিল। তাই সব স্বাভাবিক হয়ে এল। কয়েক দিন পর আমরা আউটিংয়ের একটা প্ল্যান করলাম। প্ল্যানটা তারই। বলল, “আসো পূজার ছুটিতে একদিন আমরা সারা দিন নৌকায় ঘুরব। চরের দোকানে চা খাব। বালুতে গড়াগড়ি দেব, সাঁতার কাটব। ব্যাগে কাপড়-চোপড় নিয়ে যাব। পোলাপানের মতো যা মনে আসে করব...।”’
প্রাপ্তবয়স্ক দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা পোলাপানের মতো কী করতে পারে ভাবতে ভাবতে বললাম, ‘তারপর?’
‘ঘোরা হয় নাই, ভাই।’
‘কেন?’
‘সেদিন ওয়েদার নরমাল ছিল। অক্টোবরের ৩ তারিখ। বাতাসে হিউমিডিটি নাই। গরম নাই। বৃষ্টির কোনো ফোরকাস্ট নাই। সকালে দুজন রেডি হয়ে বের হব, তখন অঝোরধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করল। সেই বৃষ্টি থামাথামির কোনো খবর নাই। বাসার সামনে নৌকা চালানোর মতো পানি জমে গেল। অরণির বাসার অবস্থা আরও খারাপ। এত বৃষ্টিতে কেন সে বাইরে যাবে, সেই প্রশ্নের কোনো যুক্তিসংগত উত্তর নাই। আমার সঙ্গে যখন ফোনে কথা হলো, তখন জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছ? অরণি বলল, “হ্যাঁ।”’
‘বাহ!’
‘হুমম...তবে শাড়ির সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নাই। আশ্বিন মাসে ঝড়বৃষ্টি খুব সাধারণ ব্যাপার।’
‘আচ্ছা... তারপর? আরেক দিন ছুটি কাটালেন আপনারা?’
‘না। আমাদের আর একসঙ্গে কোনো দিন কাটানো হয় নাই। পরপর কয়েকটা ডেট ক্যানসেল হওয়ার পর একসময় প্রেমটাই ভেঙে যায়।’ কথাটা বলে লোকটা আবার কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। তারপর বলল, ‘আসলে কী জানেন? জীবনে আমরা ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আশা করি।
কিন্তু সত্যিকারের ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আমাদের হজম হয় না। অরণির শাড়ির ব্যাপারটা আমার মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি করেছিল। আধ্যাত্মিকতার প্রতি ওর খুব ঝোঁক ছিল। আমাকেও ও নিজের জীবনে বিরাট একটা প্রাপ্তি মনে করত। হরোস্কোপ নিয়ে মেতে থাকত। এগুলো যে আমার খুব ভালো লাগত, তা না।’
আমি বুঝতে পারলাম না কেউ কাউকে প্রাপ্তি মনে করলে এমন কী সমস্যা। লোকটা তখন বলছে, ‘...কিন্তু আমি অরণিকে খুব মিস করি। বৃষ্টি হলেই গত পাঁচ বছর ধরে প্রথমে আমার মাথায় যে জিনিসটা কাজ করে সেটা হলো, অরণি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছে? আরও অনেক কথা মাথায় আসে। বিশেষ করে...’
আমি অপেক্ষায় থাকি। ‘বিশেষ করে’ কথাটা লোকটা আর শেষ করে না। সেদিন সারা সন্ধ্যা আর কোনো কথা হয়নি আমাদের। তার সঙ্গে ওই দিনের আগে আমার মাত্র এক বা দুবার দেখা হয়েছিল। এরপর আর দেখা হয়নি। কিন্তু আমার মাথায় অরণি নামের একটা মেয়েকে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে সে। এখন বৃষ্টি হলেই আমি একটা মেঘরং শাড়ি পরা মেয়ের কথা ভাবি। তার মুখ অবশ্য দেখতে পাই না।
পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে আসা দিনগুলোতে ভাবি, এই বৃষ্টিটা কার? মেঘের, নাকি অরণির? আরও ভাবি, মানুষ প্রেমের মতো যাদুকরি জিনিস পেয়েও কী সব তুচ্ছ কারণে তাকে দূরে ঠেলে দেয়!
নুসরৎ নওরিন

‘বৃষ্টি হলেই আমার একজনের কথা মনে পড়ে।’
‘বিশেষ কেউ?’
লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
আমি বুঝতে পারলাম না, শেষের কথাটায় আমার অনুমোদন জরুরি কেন। তবু ভদ্রতাবশত হালকা মাথা ঝাঁকালাম।
লোকটা বলল, ‘তবে যতটা বিশেষ হয়ে উঠতে পারত, শেষমেশ তা হয়নি। আমিই হতে দিইনি। সত্যি বলতে কি, আমার জীবনে সবচেয়ে বিশেষ মানুষ হওয়ার কথা ছিল তারই।’
কী বলা উচিত বুঝলাম না। বলাটা জরুরিও মনে হলো না। কারণ, লোকটা কথা চালিয়ে যাচ্ছে মোটামুটি একাই। পেটে তিন পেগ পড়াটাই হয়তো কারণ। অনেক চাপা স্বভাবের লোকও দু-তিন পেগের পর বেশ দিলখোলা হয়ে ওঠে। জীবনের সব গল্প বলে দিতে চায়। অন্যদিকে, হাসিখুশি কেউ কেউ মুখে কঠিন কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এই অভিজ্ঞতা প্রথম নয়।
আমি যা ভেবেছিলাম তা হলো না অবশ্য। লোকটা গড়গড় করে সেই বিশেষ মানুষের প্রসঙ্গে গেল না, বরং গ্লাসের দিকে স্বপ্নময় চোখে তাকিয়ে থাকল। একসময় গুনগুন করে পরিচিত একটা গানের সুর ভাজতে লাগল। মনে হলো, গ্লাসের মধ্যে কোনো মুখ দেখা যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়েই গান। অনেকটা ‘এক ঘর বানাউঙ্গা তেরে ঘরকে সামনে’র মতো।
লোকটা কী সুর ভাজছিল, এখন আমার ঠিক মনে পড়ছে না। তবে এটুকু মনে আছে, জানালার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা ধীরে ধীরে নামছিল। ঠান্ডা আবহাওয়া। পরদিন ছুটি। কাজের তাড়া নেই। সব মিলিয়ে সেই বিকেলে পৃথিবীটাকে খুব শান্ত, সুন্দর মনে হচ্ছিল।
একসময় গুনগুন থামিয়ে বলল, ‘বৃষ্টি হলেই মনে হয় মেয়েটা ওই শাড়িটা পরেছে... ও বলত, ওই শাড়িটা ও যেদিন পরে, সেদিনই বৃষ্টি নামে।’
আমি কিছু বললাম না। পৃথিবীতে কত পাগল আছে! এ কথা যখন ভাবছি, তখনই লোকটা বলল, ‘আমিও আপনার মতো কথাটা শুনে প্রথম ওকে পাগল ভেবেছিলাম। তবে তত দিনে আমাদের সম্পর্কটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছি। তাই পাগল ভাবলেও সেটাকে খুব বেশিক্ষণ মনের মধ্যে জায়গা দিইনি। তার পরও খেয়াল না করে উপায় ছিল না যে ব্যাপারটা উদ্ভট।’
কথাটা বলে লোকটা একটা চুমুক দিয়ে আবার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি পরের কথাটা শোনার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকলাম। লোকটা যেন ভুলেই গিয়েছিল। বলল, ‘ওহ, হ্যাঁ... আচ্ছা। এরপর... আমি তো কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলাম। ও বেশ সিরিয়াস হয়ে গেল। বলল, আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছ না তুমি। তোমাকে প্রমাণ করে দেখাব।’
আমি কৌতূহলী হয়ে বললাম, ‘প্রমাণ করতে পেরেছিল?’
‘এগুলো কী প্রমাণ হয় রে ভাই? একটা আজগুবি ক্লেইম। কয়েক দিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের ছবি পাঠাল। প্রতিটা ছবিতে ওই ছাইরঙা শাড়িটা পরা। অফিসে বসা। ওই দিনগুলোতে দুপুরের দিকে ঘন বৃষ্টি নেমেছে। সকালে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ছিল না। ওই মাসের অন্য দিনগুলোতে বৃষ্টি হয়নি, তা না। হয়েছে। কিন্তু ওর কথা হলো, ও যেদিন শাড়িটা পরেছে, সেদিন অবশ্যই বৃষ্টি হয়েছে, মিস হয়নি।’
‘তাহলে তো প্রমাণ হয়েই গেল।’
‘হা হা হা। তাতে প্রমাণ হয় না মোটেই। শাড়িটা পরা অবস্থায়ও ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি হাত দিয়ে ধরে দেখেছি। হিসাব করে দেখেছি, ব্যাপারটা খুব সোজা। অরণি, মানে আমার সেই প্রেমিকার নাম অরণি। অরণির অফিসে শাড়ি হলো ফরমাল ড্রেস। সপ্তাহে চার দিন শাড়ি পরতে হয়। জুলাই, আগস্ট মিলিয়ে পাঁচ দিন শাড়িটা পরেছিল ও। ওই কদিনই রাত থেকে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। ভ্যাপসা গরম। বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা।
ওর অন্য শাড়িগুলোর তুলনায় ওই শাড়িটা খুব মিহি, আরামদায়ক। গরমে কমফোর্টেবল বলেই ও বেছে বেছে ওটা পরত। ওই রকম ওয়েদারে বৃষ্টি নামাটাই স্বাভাবিক।’
‘ওহ। ...তো, আপনি কী করলেন? কথাটা তাকে বললেন?’
‘প্রথমেই বলিনি। প্রথম প্রথম মজা করতাম। বলতাম, অরণি, আজ খুব গরম পড়েছে। তোমার বেদেনী শাড়িটা পর তো!’
‘বেদেনী?’
‘ওহ। বলা হয় নাই, তাই না? বেদেনী শাড়ি বলার কারণ, শাড়িটা কেনার ইতিহাস ছিল। তখন নতুন নতুন অফিসে জয়েন করেছে। আলমারিতে তত শাড়ি নেই। যেখানেই যায়, শাড়ি কেনে। এই সময়েই ফুটপাতে একদিন এক বেদেনীর সঙ্গে দেখা। সাপের খেলা দেখাচ্ছিল, সঙ্গে ছোট একটা বাচ্চা... অন্য গল্পে চলে যাচ্ছি, ভাই। আসলে অরণির এত গল্প জমা আমার কাছে! গল্পগুলো কাউকে বলা হয় নাই।’
সেই মুহূর্তে লোকটাকে খুব দুঃখী মনে হলো আর অ্যালকোহলের প্রভাবেই মনে হয় আমি একটা বেমানান উত্তর দিলাম। থেমে থেমে বললাম, ‘আমাকে বলতে পারেন। আমি খুব...ভালো...শুনতে পারি।’
কী যেন চিন্তা করে নিয়ে লোকটা একটা নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ‘কথাগুলো ওকে বললাম। হ্যাঁ। তবে... আসলে এত খোলাখুলি না বললেও পারতাম।
কষ্ট পেল, কেঁদে ফেলল। ইগোতে লেগেছিল তো! তারপর একসময় শান্ত হলো। বলল, মন থেকে যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিনই সে শাড়িটা পরে। আমি বোঝালাম, মন সেদিনই চায়, যেদিন সত্যি খুব গরম পড়ে। বৃষ্টির সঙ্গে গরমের সম্পর্ক থাকতে পারে, শাড়ির না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি কখনো শীত কিংবা সুদিং ওয়েদারে শাড়িটা পরেছ?’ সে একটু চিন্তাভাবনা করে উত্তর দিল, ‘না।’
‘যাই হোক। সেবারের মতো ব্যাপারটা মিটমাট হলো। কারণ, অরণি খুব ইজিগোয়িং মেয়ে ছিল। তাই সব স্বাভাবিক হয়ে এল। কয়েক দিন পর আমরা আউটিংয়ের একটা প্ল্যান করলাম। প্ল্যানটা তারই। বলল, “আসো পূজার ছুটিতে একদিন আমরা সারা দিন নৌকায় ঘুরব। চরের দোকানে চা খাব। বালুতে গড়াগড়ি দেব, সাঁতার কাটব। ব্যাগে কাপড়-চোপড় নিয়ে যাব। পোলাপানের মতো যা মনে আসে করব...।”’
প্রাপ্তবয়স্ক দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা পোলাপানের মতো কী করতে পারে ভাবতে ভাবতে বললাম, ‘তারপর?’
‘ঘোরা হয় নাই, ভাই।’
‘কেন?’
‘সেদিন ওয়েদার নরমাল ছিল। অক্টোবরের ৩ তারিখ। বাতাসে হিউমিডিটি নাই। গরম নাই। বৃষ্টির কোনো ফোরকাস্ট নাই। সকালে দুজন রেডি হয়ে বের হব, তখন অঝোরধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করল। সেই বৃষ্টি থামাথামির কোনো খবর নাই। বাসার সামনে নৌকা চালানোর মতো পানি জমে গেল। অরণির বাসার অবস্থা আরও খারাপ। এত বৃষ্টিতে কেন সে বাইরে যাবে, সেই প্রশ্নের কোনো যুক্তিসংগত উত্তর নাই। আমার সঙ্গে যখন ফোনে কথা হলো, তখন জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছ? অরণি বলল, “হ্যাঁ।”’
‘বাহ!’
‘হুমম...তবে শাড়ির সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নাই। আশ্বিন মাসে ঝড়বৃষ্টি খুব সাধারণ ব্যাপার।’
‘আচ্ছা... তারপর? আরেক দিন ছুটি কাটালেন আপনারা?’
‘না। আমাদের আর একসঙ্গে কোনো দিন কাটানো হয় নাই। পরপর কয়েকটা ডেট ক্যানসেল হওয়ার পর একসময় প্রেমটাই ভেঙে যায়।’ কথাটা বলে লোকটা আবার কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। তারপর বলল, ‘আসলে কী জানেন? জীবনে আমরা ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আশা করি।
কিন্তু সত্যিকারের ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আমাদের হজম হয় না। অরণির শাড়ির ব্যাপারটা আমার মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি করেছিল। আধ্যাত্মিকতার প্রতি ওর খুব ঝোঁক ছিল। আমাকেও ও নিজের জীবনে বিরাট একটা প্রাপ্তি মনে করত। হরোস্কোপ নিয়ে মেতে থাকত। এগুলো যে আমার খুব ভালো লাগত, তা না।’
আমি বুঝতে পারলাম না কেউ কাউকে প্রাপ্তি মনে করলে এমন কী সমস্যা। লোকটা তখন বলছে, ‘...কিন্তু আমি অরণিকে খুব মিস করি। বৃষ্টি হলেই গত পাঁচ বছর ধরে প্রথমে আমার মাথায় যে জিনিসটা কাজ করে সেটা হলো, অরণি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছে? আরও অনেক কথা মাথায় আসে। বিশেষ করে...’
আমি অপেক্ষায় থাকি। ‘বিশেষ করে’ কথাটা লোকটা আর শেষ করে না। সেদিন সারা সন্ধ্যা আর কোনো কথা হয়নি আমাদের। তার সঙ্গে ওই দিনের আগে আমার মাত্র এক বা দুবার দেখা হয়েছিল। এরপর আর দেখা হয়নি। কিন্তু আমার মাথায় অরণি নামের একটা মেয়েকে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে সে। এখন বৃষ্টি হলেই আমি একটা মেঘরং শাড়ি পরা মেয়ের কথা ভাবি। তার মুখ অবশ্য দেখতে পাই না।
পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে আসা দিনগুলোতে ভাবি, এই বৃষ্টিটা কার? মেঘের, নাকি অরণির? আরও ভাবি, মানুষ প্রেমের মতো যাদুকরি জিনিস পেয়েও কী সব তুচ্ছ কারণে তাকে দূরে ঠেলে দেয়!

‘বৃষ্টি হলেই আমার একজনের কথা মনে পড়ে।’
‘বিশেষ কেউ?’
লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
আমি বুঝতে পারলাম না, শেষের কথাটায় আমার অনুমোদন জরুরি কেন। তবু ভদ্রতাবশত হালকা মাথা ঝাঁকালাম।
লোকটা বলল, ‘তবে যতটা বিশেষ হয়ে উঠতে পারত, শেষমেশ তা হয়নি। আমিই হতে দিইনি। সত্যি বলতে কি, আমার জীবনে সবচেয়ে বিশেষ মানুষ হওয়ার কথা ছিল তারই।’
কী বলা উচিত বুঝলাম না। বলাটা জরুরিও মনে হলো না। কারণ, লোকটা কথা চালিয়ে যাচ্ছে মোটামুটি একাই। পেটে তিন পেগ পড়াটাই হয়তো কারণ। অনেক চাপা স্বভাবের লোকও দু-তিন পেগের পর বেশ দিলখোলা হয়ে ওঠে। জীবনের সব গল্প বলে দিতে চায়। অন্যদিকে, হাসিখুশি কেউ কেউ মুখে কঠিন কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এই অভিজ্ঞতা প্রথম নয়।
আমি যা ভেবেছিলাম তা হলো না অবশ্য। লোকটা গড়গড় করে সেই বিশেষ মানুষের প্রসঙ্গে গেল না, বরং গ্লাসের দিকে স্বপ্নময় চোখে তাকিয়ে থাকল। একসময় গুনগুন করে পরিচিত একটা গানের সুর ভাজতে লাগল। মনে হলো, গ্লাসের মধ্যে কোনো মুখ দেখা যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়েই গান। অনেকটা ‘এক ঘর বানাউঙ্গা তেরে ঘরকে সামনে’র মতো।
লোকটা কী সুর ভাজছিল, এখন আমার ঠিক মনে পড়ছে না। তবে এটুকু মনে আছে, জানালার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা ধীরে ধীরে নামছিল। ঠান্ডা আবহাওয়া। পরদিন ছুটি। কাজের তাড়া নেই। সব মিলিয়ে সেই বিকেলে পৃথিবীটাকে খুব শান্ত, সুন্দর মনে হচ্ছিল।
একসময় গুনগুন থামিয়ে বলল, ‘বৃষ্টি হলেই মনে হয় মেয়েটা ওই শাড়িটা পরেছে... ও বলত, ওই শাড়িটা ও যেদিন পরে, সেদিনই বৃষ্টি নামে।’
আমি কিছু বললাম না। পৃথিবীতে কত পাগল আছে! এ কথা যখন ভাবছি, তখনই লোকটা বলল, ‘আমিও আপনার মতো কথাটা শুনে প্রথম ওকে পাগল ভেবেছিলাম। তবে তত দিনে আমাদের সম্পর্কটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছি। তাই পাগল ভাবলেও সেটাকে খুব বেশিক্ষণ মনের মধ্যে জায়গা দিইনি। তার পরও খেয়াল না করে উপায় ছিল না যে ব্যাপারটা উদ্ভট।’
কথাটা বলে লোকটা একটা চুমুক দিয়ে আবার গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি পরের কথাটা শোনার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকলাম। লোকটা যেন ভুলেই গিয়েছিল। বলল, ‘ওহ, হ্যাঁ... আচ্ছা। এরপর... আমি তো কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলাম। ও বেশ সিরিয়াস হয়ে গেল। বলল, আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছ না তুমি। তোমাকে প্রমাণ করে দেখাব।’
আমি কৌতূহলী হয়ে বললাম, ‘প্রমাণ করতে পেরেছিল?’
‘এগুলো কী প্রমাণ হয় রে ভাই? একটা আজগুবি ক্লেইম। কয়েক দিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের ছবি পাঠাল। প্রতিটা ছবিতে ওই ছাইরঙা শাড়িটা পরা। অফিসে বসা। ওই দিনগুলোতে দুপুরের দিকে ঘন বৃষ্টি নেমেছে। সকালে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ছিল না। ওই মাসের অন্য দিনগুলোতে বৃষ্টি হয়নি, তা না। হয়েছে। কিন্তু ওর কথা হলো, ও যেদিন শাড়িটা পরেছে, সেদিন অবশ্যই বৃষ্টি হয়েছে, মিস হয়নি।’
‘তাহলে তো প্রমাণ হয়েই গেল।’
‘হা হা হা। তাতে প্রমাণ হয় না মোটেই। শাড়িটা পরা অবস্থায়ও ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি হাত দিয়ে ধরে দেখেছি। হিসাব করে দেখেছি, ব্যাপারটা খুব সোজা। অরণি, মানে আমার সেই প্রেমিকার নাম অরণি। অরণির অফিসে শাড়ি হলো ফরমাল ড্রেস। সপ্তাহে চার দিন শাড়ি পরতে হয়। জুলাই, আগস্ট মিলিয়ে পাঁচ দিন শাড়িটা পরেছিল ও। ওই কদিনই রাত থেকে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। ভ্যাপসা গরম। বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা।
ওর অন্য শাড়িগুলোর তুলনায় ওই শাড়িটা খুব মিহি, আরামদায়ক। গরমে কমফোর্টেবল বলেই ও বেছে বেছে ওটা পরত। ওই রকম ওয়েদারে বৃষ্টি নামাটাই স্বাভাবিক।’
‘ওহ। ...তো, আপনি কী করলেন? কথাটা তাকে বললেন?’
‘প্রথমেই বলিনি। প্রথম প্রথম মজা করতাম। বলতাম, অরণি, আজ খুব গরম পড়েছে। তোমার বেদেনী শাড়িটা পর তো!’
‘বেদেনী?’
‘ওহ। বলা হয় নাই, তাই না? বেদেনী শাড়ি বলার কারণ, শাড়িটা কেনার ইতিহাস ছিল। তখন নতুন নতুন অফিসে জয়েন করেছে। আলমারিতে তত শাড়ি নেই। যেখানেই যায়, শাড়ি কেনে। এই সময়েই ফুটপাতে একদিন এক বেদেনীর সঙ্গে দেখা। সাপের খেলা দেখাচ্ছিল, সঙ্গে ছোট একটা বাচ্চা... অন্য গল্পে চলে যাচ্ছি, ভাই। আসলে অরণির এত গল্প জমা আমার কাছে! গল্পগুলো কাউকে বলা হয় নাই।’
সেই মুহূর্তে লোকটাকে খুব দুঃখী মনে হলো আর অ্যালকোহলের প্রভাবেই মনে হয় আমি একটা বেমানান উত্তর দিলাম। থেমে থেমে বললাম, ‘আমাকে বলতে পারেন। আমি খুব...ভালো...শুনতে পারি।’
কী যেন চিন্তা করে নিয়ে লোকটা একটা নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ‘কথাগুলো ওকে বললাম। হ্যাঁ। তবে... আসলে এত খোলাখুলি না বললেও পারতাম।
কষ্ট পেল, কেঁদে ফেলল। ইগোতে লেগেছিল তো! তারপর একসময় শান্ত হলো। বলল, মন থেকে যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিনই সে শাড়িটা পরে। আমি বোঝালাম, মন সেদিনই চায়, যেদিন সত্যি খুব গরম পড়ে। বৃষ্টির সঙ্গে গরমের সম্পর্ক থাকতে পারে, শাড়ির না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি কখনো শীত কিংবা সুদিং ওয়েদারে শাড়িটা পরেছ?’ সে একটু চিন্তাভাবনা করে উত্তর দিল, ‘না।’
‘যাই হোক। সেবারের মতো ব্যাপারটা মিটমাট হলো। কারণ, অরণি খুব ইজিগোয়িং মেয়ে ছিল। তাই সব স্বাভাবিক হয়ে এল। কয়েক দিন পর আমরা আউটিংয়ের একটা প্ল্যান করলাম। প্ল্যানটা তারই। বলল, “আসো পূজার ছুটিতে একদিন আমরা সারা দিন নৌকায় ঘুরব। চরের দোকানে চা খাব। বালুতে গড়াগড়ি দেব, সাঁতার কাটব। ব্যাগে কাপড়-চোপড় নিয়ে যাব। পোলাপানের মতো যা মনে আসে করব...।”’
প্রাপ্তবয়স্ক দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা পোলাপানের মতো কী করতে পারে ভাবতে ভাবতে বললাম, ‘তারপর?’
‘ঘোরা হয় নাই, ভাই।’
‘কেন?’
‘সেদিন ওয়েদার নরমাল ছিল। অক্টোবরের ৩ তারিখ। বাতাসে হিউমিডিটি নাই। গরম নাই। বৃষ্টির কোনো ফোরকাস্ট নাই। সকালে দুজন রেডি হয়ে বের হব, তখন অঝোরধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করল। সেই বৃষ্টি থামাথামির কোনো খবর নাই। বাসার সামনে নৌকা চালানোর মতো পানি জমে গেল। অরণির বাসার অবস্থা আরও খারাপ। এত বৃষ্টিতে কেন সে বাইরে যাবে, সেই প্রশ্নের কোনো যুক্তিসংগত উত্তর নাই। আমার সঙ্গে যখন ফোনে কথা হলো, তখন জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছ? অরণি বলল, “হ্যাঁ।”’
‘বাহ!’
‘হুমম...তবে শাড়ির সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নাই। আশ্বিন মাসে ঝড়বৃষ্টি খুব সাধারণ ব্যাপার।’
‘আচ্ছা... তারপর? আরেক দিন ছুটি কাটালেন আপনারা?’
‘না। আমাদের আর একসঙ্গে কোনো দিন কাটানো হয় নাই। পরপর কয়েকটা ডেট ক্যানসেল হওয়ার পর একসময় প্রেমটাই ভেঙে যায়।’ কথাটা বলে লোকটা আবার কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। তারপর বলল, ‘আসলে কী জানেন? জীবনে আমরা ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আশা করি।
কিন্তু সত্যিকারের ম্যাজিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার আমাদের হজম হয় না। অরণির শাড়ির ব্যাপারটা আমার মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি করেছিল। আধ্যাত্মিকতার প্রতি ওর খুব ঝোঁক ছিল। আমাকেও ও নিজের জীবনে বিরাট একটা প্রাপ্তি মনে করত। হরোস্কোপ নিয়ে মেতে থাকত। এগুলো যে আমার খুব ভালো লাগত, তা না।’
আমি বুঝতে পারলাম না কেউ কাউকে প্রাপ্তি মনে করলে এমন কী সমস্যা। লোকটা তখন বলছে, ‘...কিন্তু আমি অরণিকে খুব মিস করি। বৃষ্টি হলেই গত পাঁচ বছর ধরে প্রথমে আমার মাথায় যে জিনিসটা কাজ করে সেটা হলো, অরণি কি আজ ওই শাড়িটা পরেছে? আরও অনেক কথা মাথায় আসে। বিশেষ করে...’
আমি অপেক্ষায় থাকি। ‘বিশেষ করে’ কথাটা লোকটা আর শেষ করে না। সেদিন সারা সন্ধ্যা আর কোনো কথা হয়নি আমাদের। তার সঙ্গে ওই দিনের আগে আমার মাত্র এক বা দুবার দেখা হয়েছিল। এরপর আর দেখা হয়নি। কিন্তু আমার মাথায় অরণি নামের একটা মেয়েকে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে সে। এখন বৃষ্টি হলেই আমি একটা মেঘরং শাড়ি পরা মেয়ের কথা ভাবি। তার মুখ অবশ্য দেখতে পাই না।
পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে আসা দিনগুলোতে ভাবি, এই বৃষ্টিটা কার? মেঘের, নাকি অরণির? আরও ভাবি, মানুষ প্রেমের মতো যাদুকরি জিনিস পেয়েও কী সব তুচ্ছ কারণে তাকে দূরে ঠেলে দেয়!

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
০৯ জুলাই ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
০৯ জুলাই ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
০৯ জুলাই ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

লোকটা এক মুহূর্ত চিন্তা করল। যেন বিশেষ কেউ কি না—এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বিশেষ তো অবশ্যই... বৃষ্টির মতো সুন্দর সময়ে কারও কথা মনে পড়লে সে তো বিশেষই, তাই না?’
০৯ জুলাই ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫