Ajker Patrika

অকুপাইড

রওশন আরা মুক্তা
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২: ০৯
অকুপাইড

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয় মাথায়ই ছিল না। আর এ বছরই কিনা তার অফিশিয়াল মেইলে জানানো হলো সে এখন থেকে বিন্দু গ্রুপ অব কোম্পানিজের জেনারেল ম্যানেজার। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আফতাব সাহেবের স্ত্রী খেয়া আহমেদ। স্বামীকে অভিনন্দন জানিয়ে হাজার শব্দের ডুয়েট ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট তো করেছেই; আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে কল করে সুখবর দিচ্ছে। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয় যে কাণ্ডটি ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, আফতাব আহমেদের পরিবারের জন্য পাওয়া যাবে ড্রাইভারসহ আলাদা একটি গাড়ি! জেনারেল ম্যানেজারের পরিবারের প্রতি এই আলাদা খেয়ালের কোনো তুলনা হয় না। খেয়া ভাবছে বড় করে কোনো পার্টি দেবে। আফতাব সাহেবের অফিসের লোকজন, তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। মসজিদে কিছু টাকাও দান করবে, একদিন ফকির-মিসকিনও খাওয়ানো যেতে পারে।

প্রমোশনের ই-মেইলটা এসেছে শুক্রবার, ছুটির দিনে। যদিও আফতাব আহমেদ প্রতি শুক্রবারই সাইট ভিজিটে ঢাকার বাইরে যায়। তাই ছুটি বলতে আলাদা কিছু আসলে তার জীবনে নেই। বিন্দু গ্রুপের চেয়ারম্যান অরবিন্দু আচার্য শূন্য থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কোথায় ফ্যাক্টরি নেই তাঁদের! গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা, দিনাজপুর—বিশাল বিস্তৃতি! সত্যি বলতে, সাত বছর আগেই জেনারেল ম্যানেজার পদটা পেতে পারত আফতাব আহমেদ। কেন পায়নি, তার উত্তর একমাত্র অরবিন্দু আচার্যই জানেন। তাঁর সামনে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আফতাব আহমেদের নেই। এই সাহসের অভাবটিকে ভয়, সমীহ ইত্যকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়—এটা অন্য কিছু। এমনও নয় যে আফতাব আহমেদের কোনো উপকার করেছেন অরবিন্দু, যার ফলে কৃতজ্ঞতা মেশানো সম্মানের ফলে চুপ থাকা। মূলত অরবিন্দু আচার্যর সামনে আফতাব আহমেদ কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এই প্রমোশনের ই-মেইলের ব্যাপারেও তাই সে বসকে নিজে থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার আজ ময়মনসিংহে সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা। সে জন্যই তৈরি হতে লাগল। খেয়া যখন বুঝল এমন খুশির দিনেও আফতাব আহমেদ বের হবে, দ্রুত ফোনালাপ বন্ধ করে স্বামীর জন্য কাপড়-জুতা, খাবার-দাবার ইত্যাদির খোঁজে কোন দিকে যেন ছুটল। আফতাব আহমেদ গোসলে ঢুকে গেল। খেয়ার কিছু কথা কানে এসেছে তার। তার যে আলাদা গাড়ির দরকার ছিল, তাকে কখনোই কেন বলেনি খেয়া? প্রশ্নটা খেয়াকে করবে ভাবল, কিন্তু গোসল থেকে বের হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুলে গেল।

আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল রাত ১টার দিকে। গ্যারেজে সম্পূর্ণ নতুন একটি গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, খেয়ার জন্য নতুন গাড়িটি চলে এসেছে। এই গাড়ির ড্রাইভার কি তার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই চিলেকোঠায় থাকবে? নাকি তার নিজের থাকার জায়গা আছে? খেয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে। লিফটে উঠতে উঠতে এ বিষয়টিও ভুলে গেল আফতাব। কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ সাইট থেকে, খাওয়া শেষে সেগুলো দেখে সকালের অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেল এবং তিন মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।

কথাটা খেয়াকে প্রথম বলল আসিফের বউ পাপড়ি; আসিফ আফতাবের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। দূর সম্পর্কের হলেও খেয়াদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত ছাত্রাবস্থায়। এখন তার চাকরি হয়েছে, সংসার হয়েছে; বছরে এক-দুবার দেখা হয় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খেয়া আসিফকে তার ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আফতাবের সঙ্গে আসিফের দেখা নেই অনেককাল। কীভাবেই বা দেখা হবে! আফতাব থাকে অফিস নিয়ে ব্যস্ত, তাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদে-পর্বণেও আফতাব অফিসকেই প্রাধান্য দেয়। কোরবানির ঈদের ছুটিতে একবার আফতাব তার বসের পরিবারের সঙ্গে ব্যাংককে চলে গেল। আর ছোটখাটো ছুটিছাঁটায় নানা রকম ইভেন্ট এবং সাইট ভিজিটিংয়েই ব্যস্ত থাকে। আফতাব আহমেদকে খেয়া আর তার বাচ্চারাই পায় না ঠিকমতো, অন্যরা কী পাবে! 

আসিফ সেদিন সন্ধ্যায় তার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিল। চা-নাশতা খাওয়ার সময় কথাটা বলে পাপড়ি। কোনো এক লেড বিলবোর্ডে আফতাব আহমেদের ছবি দেখেছে সে। খেয়া চমকিত হয়, কিসের বিলবোর্ড, কোন এলাকায়—সব জানতে চায়। জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবে আড়ংয়ের পাশে যে লেড স্ক্রিন আছে, সেখানে আফতাবদের কোনো একটা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যমণি হয়ে ছিল আফতাব। পাপড়ি বেশ গর্ব করে বলে কথাটা। খেয়ারও খুব ভালো লাগে, কিন্তু প্রকাশ করে না। নিজের স্বামীর সাফল্যকে খেয়া বরাবরই নিজের সাফল্য হিসেবে গণ্য করে, তাই গর্ব প্রকাশ না করে সে বিনয়ীই থাকে।

বিলবোর্ডের ব্যাপারটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চায় না খেয়া, তবে মন থেকে সরাতেও পারে না। বাচ্চারা যখন ছোট ছিল, প্রচুর নিউমার্কেটে যেত খেয়া। এখন বড় চেইন শপ থেকেই কেনাকাটা করে। গাড়ি রাখার যন্ত্রণা, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ভিড়ে তার যেতে ইচ্ছে করে না। তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একদিন নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গেল খেয়া। ভাবটা এমন—আসলে কেনাকাটা করতেই যাচ্ছে, মূলত সে চাইছিল বিলবোর্ডটা দেখতে। এ বিষয়ে সে আফতাবকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারেনি। কোথায় কোন বিলবোর্ডে তার ছবি গেছে—এ সমস্ত ব্যাপারে কৌতূহলকে বাচ্চামি মনে করার কথা আফতাবের। এ ছাড়া আফতাবের তো ক্যামেরাভীতিও আছে, কোনো ছবিতে তাঁকে ঠিকঠাক ধরা যায় না। গ্রুপ ছবিতে সে থাকে সবার পেছনে, না হয় কোনো কোনায়, চোখ নিচু বা বন্ধ অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে—সে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে বিলবোর্ডে, খেয়ার অবিশ্বাস্য লাগে। নিজের চোখে দেখতে চায়, সেই ছবিতে কেমন দেখাচ্ছে তার স্বামীকে।

নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে বসেই বিলবোর্ড দেখে ফেলতে পারবে ভেবেছিল খেয়া, কিন্তু রাস্তায় খুব বেশি চাপ ছিল না। তবু গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে দেখে সে। পরপর তিনটা বিজ্ঞাপন দেখে, কিন্তু বিন্দু গ্রুপের কোনো প্রোডাক্ট নজরে পড়ে না। অগত্যা নিউমার্কেটে ঢুকে পড়ে সে। চকলেট, বাদাম এবং নতুন একটা শিল-পাটা কিনে ফেলে ঘুরে ঘুরে। ড্রাইভারের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যায় খেয়া। ঠিক মোড়টায় গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দাঁড়াতেই একঝলক দেখে বিন্দু গ্রুপের নাম। তার মানে, বিজ্ঞাপনটা এখনো চলছে! খেয়া সানগ্লাসটা খুলে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ-ছটা বিজ্ঞাপন চলে নানা রকম। বিন্দু গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা আসতেই খেয়া অ্যালার্ট হয়ে যায়, এই বিজ্ঞাপনেই দেখা যাবে আফতাবকে! সহকর্মীদের মাঝখানে দাঁড়ানো রিমলেস চশমা পরা ভদ্রলোককে আফতাব আহমেদের মতোই লাগছে। তবে এমন চকচকে নীল রঙের কোনো শার্ট কখনোই আফতাবের জন্য কেনেনি খেয়া। খেয়ার শরীর ঘেমে যায়। ২০ মিনিট সময় নিয়ে আরও দুবার বিজ্ঞাপনটা দেখে সে। ঘেমে গোসলের অবস্থা হয় তার। খেয়া দেখল, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনটিতে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকা ভদ্রলোকটি আসলে অরবিন্দু আচার্য, আর সবার পেছনে এক কোনায় হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরিহিত অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো তার স্বামী আফতাব আহমেদ। অরবিন্দু আচার্যর সঙ্গে উচ্চতা ও গায়ের রঙে মিল থাকলেও তাদের চেহারায় কোনো মিল ছিল না আগে। কিন্তু পাপড়ি যে অরবিন্দু আচার্যকে আফতাব আহমেদ ভেবে নিয়েছে, তাকেও দোষ দেওয়া যায় না—তাদের চেহারায় আসলেই অদ্ভুত মিল পাচ্ছে খেয়াও।

খেয়া আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ায় মোড়টায়। চারপাশে প্রচুর লোকজন চলাফেরা করছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে খেয়াকে। খেয়া তার মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনটার একটা ছবি তুলে নেয়। নিউমার্কেটের পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যায়। তার কাছে ধাঁধার মতো লাগে পুরো ব্যাপারটা। অরবিন্দু সাহেবের চেহারা তো আগের মতোই আছে, বয়সের তুলনায় বেশ ইয়াং লাগছে তাকে। আর আফতাবের চেহারায় গত পাঁচ-সাত বছরে এত পরিবর্তন হলো কীভাবে? খেয়া হাঁটতে হাঁটতে ছবিটা বের করে দেখে, মেলাতে পারে না কিছু। হোয়াটস অ্যাপে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠায় ছবিটা। তার ছেলে সৌরভ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়—‘DAD!’ তবে তার মেয়ে সাজিয়া মেসেজটা সিন করলেও কোনো রিপ্লাই করে না। খেয়া বেশ অন্যমনস্কভাবেই গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় হেঁটে।

আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল ১১টার দিকে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসল কিছু কাগজপত্র নিয়ে। খেয়া টেবিলে খাবার দিয়ে সৌরভ-সাজিয়াকে ডাকল। ওরা টেবিলে বসতেই আফতাব খেতে এল। সৌরভ কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে উঠল—ড্যাডি, তোমার চেহারার সঙ্গে অরবিন্দু আচার্যের চেহারার ভৌতিক কিছু মিল পাওয়া গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির লেড বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এটা জানলাম, অথচ আগে চোখেই পড়েনি। আফতাব একটু থমকে গেল, এক সেকেন্ডের মতো, আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাহ!’ খেয়া সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাজিয়া চুপচাপ। সৌরভ আবার বলল, ‘তোমার হোয়াটস অ্যাপ দেখো, আমি এখনই পাঠাচ্ছি ছবিটা।’ আফতাব হাসিমুখেই বলল, ‘আচ্ছা, তুমি পাঠিয়ে রাখো, আমি পরে দেখব।’ খেয়া তার ফোন বের করে ছবিটা মেলে ধরল আফতাবের সামনে। ‘পরে কেন? এখনই দেখো। ছেলেমেয়েরা আরও কিছু বলতে চায়, শোনো ওদের কথা। কি রে সাজিয়া, বল?’ সাজিয়া শান্তভাবে ভাত খাচ্ছে। কিছুই বলল না। আফতাব খেতে খেতে একপলক দেখল ছবিটা, এরপর বলল, ‘ডালের বাটিটা দাও।’ সাজিয়া এগিয়ে দিল। খেয়া অপ্রস্তুতভাবে মোবাইল ফোনটা সরিয়ে নিল। সৌরভ বলল, ‘আমরা রিসার্চ করে দেখলাম, অরবিন্দু সাহেব একটা রিমলেস চশমা পরেন, চশমা আছে কি নাই বোঝাই যায় না। তুমি যদি মোটা কালো ফ্রেমের একটা চশমা পরো, তাহলে এই মিল আর বোঝা যাবে না। বড়জোর লোকে অরবিন্দু সাহেবের ভাই ভাবতে পারে তোমাকে, কিন্তু একেবারে আইডেন্টিকাল লাগবে না।’

আফতাব খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, সে সবার দিকে একে একে দেখে বলে, ‘আচ্ছা, এই চশমার আইডিয়াটা কার?’ খেয়া আর সৌরভ দুজনই সাজিয়ার দিকে তাকায়। সাজিয়ার খাওয়া শেষ। সে কিছুই না বলে হাত ধুতে চলে যায়। আফতাব কিছুটা উৎফুল্ল গলায় বলে, ‘আচ্ছা, আমি চশমা পরব অবশ্যই!’ সাজিয়া একটা প্যাকেট এনে রাখে আফতাবের পাশে। বলে, ‘এই যে তোমার চশমা। গুড নাইট।’ সাজিয়া তার রুমে চলে যায়। সৌরভও ড্রইংরুমে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসে যায়। আফতাব আহমেদ হাত ধুয়ে প্যাকেটটা নিয়ে বেডরুমের দিকে যায়। বলা বাহুল্য, খেয়া টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে আফতাব আহমেদ ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল আফতাব। খেয়া ডাকে, ‘নাশতা খেয়ে নাও, রেডি।’ আফতাব আহমেদ ড্রেসিং টেবিলটার ওপর রাখা তার কন্যা সাজিয়ার দেওয়া চশমার প্যাকেটটা নেয়। খুলে দেখে দুটো বাক্স আছে, সঙ্গে একটা চিরকুট; সাজিয়ার হাতের লেখা—‘যেটা ভালো লাগে পরো’। আফতাব হা হা করে হেসে ওঠে। খেয়া দরজায় একবার উঁকি দিয়ে যায়। কিছু বলে না। অদ্ভুত ঠেকে সব তার কাছে। খেয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, বাচ্চারা যে যার রুমে। নতুন চশমা পরিহিত আফতাব তার নির্ধারিত চেয়ারটায় এসে বসে, খেয়া তার দিকে তাকাতেই একটু অপ্রস্তুতভাবে হাসে আফতাব। খেয়া থমকে যায়, এটা কে? অরবিন্দু, নাকি আফতাব? মুহূর্তেই সামলে নেয় খেয়া, রিমলেস চশমা পরিহিত আফতাব আহমেদের পাতে সদ্য সেঁকা রুটি তুলে দেয় সে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত