Ajker Patrika

গুলতির মালা

অদিতি ফাল্গুনী
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২: ০৮
গুলতির মালা

নানা কিছুর মালা হয় পৃথিবীতে। ফুলের মালা, পুঁতির মালা থেকে বিয়েবাড়িতে কনের গলায় সোনার হার—কী না? শিখা গুলতির মালা বানানো প্রথম শেখে হরিদাসী পাগলির কাছ থেকে। হরিদাসী বুড়িকে সবাই ‘পাগলি ‘ডাকে কেন কে জানে! মোটেই সে পাগলি নয়। সূত্রাপুর-২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় বস্তি এলাকায় হরিদাসীর নিজেরই একটি ছোট চায়ের দোকানের মতো আছে। দোকান চালানো ছাড়াও সাদা থান পরা হরিদাসী অবসর সময়ে মাঝে মাঝেই মাটির ছোট ছোট চাড়া আগুনে পুড়িয়ে টুকরো ইটের মতো বানিয়ে, একটু দূরের কয়েক ঘর চামার বসতি থেকে মোটা সুই এনে সদ্য আগুনে পোড়া সেই চাড়াগুলো মালার মতো গাঁথে। কখনো সেই মালায় সে আরও যুক্ত করত নারকেলের আইচার টুকরা বা খেজুরের কাঁটা।  ‘এই মালা—বুঝলি ছেমড়ি—অপজিশন, মানে বিরোধী পক্ষের গলায় ছুড়লে অপজিশন ঠান্ডা!’

এভাবে হরিদাসীর কাছ থেকেই শিখা মার্গারেট কস্টা প্রথম গুলতির মালা বানাতে শেখে। সূত্রাপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বলতে গেলে শিখারা মাত্র কয়েক ঘর খ্রিষ্টান আছে। খ্রিষ্টানও হয়েছে মাত্র তারা এক-দুই পুরুষ। বাকিটা তারাই সংখ্যায় ভারী, যারা শিখাদের পূর্বপুরুষ ছিল। সূত্রাপুর ছাড়ালে অবশ্য আবার মুসলমান বসতি শুরু।

‘শিখা! ঘুম দিয়া ওঠ। আইজ ফ্যাক্টরিত যাবি না?’

শিখা হাই তুলে ওঠে। মা গ্লাসে চা আর টোস্ট এনেছে। শিখার বয়স প্রায় কুড়ি। ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েটরে একের পর এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করছে সে। এক গার্মেন্টসে ছিল দুই বছর, তারপর ব্যাটারি তৈরির একটি কারখানায় আরও দেড় বছর, লজেন্সের একটি কারখানায় দুই বছর, আবার এখন এই বিস্কুট তৈরির কারখানায় প্রায় এক বছর হতে চলল। বাবা-মাকে সবাই যদিও বলে যে শিখার বিয়ের কত দূর, তবু শিখা একের পর এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করছে বলে বিয়ের চাপ পাড়ায় উঠে উঠেও ওঠে না। যদিও শিখার বয়সী অধিকাংশ মেয়েই এই সূত্রাপুর, শাঁখারীবাজার, নারিন্দা, র‍্যাঙ্কিন স্ট্রিট, ওয়ারীসহ এন্তার পুরান ঢাকায় বিয়ে করে কমসে কম এক-দুটো বাচ্চার মা, শিখা দিব্যি একের পর এক কারখানায় কাজ নেয়, মাঝে মাঝে বেকার হয়, তখন দু-তিন মাস বিয়ের কথা ওঠে, তারপর আবার কাজ পেলে বিয়ের কথা থিতিয়ে যায়। আর এ ছাড়া সবাই জানে যে শিখা একটু ‘ছিটেল’। ‘ছিটেল’ কেমন? যে মেয়ের নিজেরই বিয়ে নিয়ে তেমন ভাবনা নেই, তাকে আলাদাভাবে কোনো ছেলের সাথে ঘুরতে-ফিরতে বা হুট করে কোনো বাজে অবস্থায় কোনো ছেলের সঙ্গেই কারোর চোখে তেমন পড়েছে বলে তল্লাটের কেউই কিছু বলতে পারবে না, কিন্তু আবার শিখার কিছু বদনামও আছে। শিখাকে প্রায়ই দেখা যায় শুধু এই কয়েক ঘর খ্রিষ্টানপাড়ার খ্রিষ্টান ছেলেই না, শাঁখারীবাজারের ছেলে থেকে শুরু করে মুসলমান বসতি যেখানে শুরু হয়েছে—সব তল্লাটের ছেলেদের সঙ্গেই তাকে মাঝে মাঝে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিড়ের ভেতর হইচই করতে দেখা যায় এবং অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, প্রায়ই সমবয়সী ছেলেদের সাথে তাকে ঝগড়া করতে বা মারামারি কি হাতাহাতি করতেও দেখা যায়।

‘এই মেয়েটার মাথায় কি ছিট আছে? অর বয়সী মেয়েরা যখন লুকায়া একটা পোলার লগে সিনেমা দেখতে যায়, ও দেখি পোলাগো লগে রাস্তায় দাঁড়ায়া ঝগড়া করে, মাইরপিট করে। চেহারাও কিন্তু খারাপ না! অর মায়ে-বাপে কিছু দ্যাখে না?’

‘অর মায়েই লাই দেয়। কিছু বললে বলে, পোলাগো সাথে ঝগড়া বা মাইরপিট করলেও তার মাইয়ারে একলা কোনো পোলার লগে কেউ খারাপভাবে কখনো চলতে-ফিরতে দ্যাখছে? তয় তার মেয়ের বয়সের তুলনায় বুদ্ধিশুদ্ধি কম। আবার বুদ্ধি কম হইলেও চাকরি তো করতেছে একের পর এক। বুঝি না বাবা!’

‘অর মায়েরই দোষ। সারা জীবন মাইয়া তো চাকরি করবে না। অনেক পোলার সাথে আড্ডা বা ঝগড়াঝাটি করার চাইতে একটা ছেলে ধইরা কয়েক দিন মিলামিশা কইরা বিয়া করলেও তো হয়। আইজকাল তো এইভাবেও কত বিয়া হইতেছে। অর মায়ে মেয়েরে কোথায় বুঝাইবে তা না।’ 
 ‘দ্যাখো, হয়তো মেয়ের ইনকাম খায়।’ 

 ২. ‘মই মার্কা দেখিয়া/ভোট দেবেন হাসিয়া!’ 
ওয়ার্ড কমিশনার পদে শিখাদের পাড়ায় শুক্রবারের মিছিলে সবার আগে আছে শিখা। ওমা! পাশের গলি থেকে আর একটি মিছিল আসছে দেখি। 
 ‘আনারস মার্কা দেখিয়া/ভোট দেবেন হাসিয়া।’

শিখার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়। ‘মই’ মার্কায় দাঁড়ানো প্রার্থী গত বছর এলাকায় কিছু কাজ করেছে। তার পাল্টা এই ‘আনারস’ মার্কার প্রার্থী আবার কে? একটা এসপার-ওসপার তো করা লাগে দেখি! 

 ৩. জোড়পুল পদ্মনিধি লেনের জুতার ফ্যাক্টরি থেকে ফেরার সময় শিখার মুখোমুখি হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় পিটার। রাগ হয় তার। প্রায় পাঁচ বছর আগে কী মনে করে শিখা নিজে থেকে একবার এসে খানিকক্ষণ তার সাথে কথা বলল। ওমা! তারপর পিটার যতবার কথা বলতে যায়, শিখা সরে যায়। কিন্তু শিখার যে কারো সাথে প্রেম আছে, সেটাও পিটার অনেক খুঁজে বার করতে পারছে না। শিখা ওই রকমই ফ্যাক্টরিতে যায়, মাঝে মাঝে বেকার হয়, আবার কাজে ঢোকে, মাঝে মাঝে ছুটির দিনের বিকালে কখনো বান্ধবীদের সাথে আবার কখনো মহল্লার ছেলেদের সাথেও কথা বলতে দেখা যায়। কখনো কখনো ছেলেদের সাথে ঝগড়া বা মারপিটও চলে। কিন্তু কারো সাথে একা রিকশায় বা সিনেমা হলে কি খাবারের দোকানে—কোথাও কি দেখেছে? না, তাহলে শিখা কেন পিটারের সাথে এক দিনই কথা বলে আশা জাগিয়ে আবার এমন হয়ে গেল? পিটার অপেক্ষা করে আছে তো করেই আছে।

হারামজাদি শিখা...। নাকি শাঁখারীবাজারের সোলেমান যে ওর পিছু কিছুদিন ঘুরছিল—না, সোলেমানের সাথেও আলাদাভাবে ওকে দেখা যায়নি। ইদানীং শুনছে হাসি-খুশি সোলেমান না, গম্ভীর মুখের সুলতানকে নাকি শিখা একটু পছন্দ করত। কিন্তু সুলতানের সাথেও তো শিখাকে দেখা যায়নি কোথাও। মেয়েরা একটু ঘুরলে-ফিরলে কি দেখা যায় না? তাহলে এই পিশাচি কেন পিটারের কাছে আসে না? পিটার আর কত দিন একা থাকবে? 

 ৪. এক শুক্রবার গিয়ে আরেক শুক্রবার ছুটির দিন। বিকাল বেলা মহল্লার গলিতে ডালপুরি কিনতে গিয়ে শিখার চোখ ছানাবড়া। গলির দেয়ালে এই নতুন ছেলেটা কে পোস্টার মারছে? তা-ও আবার ‘আনারস’ মার্কার পোস্টার! বারে বাহ্, পোস্টার মারছে তো মারছেই। তা-ও কিনা শিখাদের পাড়ায়? দু-এক মিনিট চুপ থেকে অসহ্য লাগে শিখার। 
 ‘এই যে, আপনি আনারস মার্কার পোস্টার দিতেছেন ক্যান?’

অবাক হয়ে আনারসের চিকা মারা ছেলেটা তার দিকে তাকায়। 
 ‘আনারস মার্কার পোস্টার মারছি আমার ইচ্ছা!’ 
 ‘না, আমাদের পাড়ায় মই মার্কার পোস্টারই থাকবে।’

ছেলেটা অবাক হয়ে শিখার দিকে তাকিয়ে আবার আনারস মার্কার পোস্টার সাঁটতে থাকে। ভালো তো? 
 ‘কথা শুনছেন? আমাদের পাড়ায় মই মার্কার পোস্টার ছাড়া কিছু চলবে না।’ 
 ‘তুমি কে?’

ছেলেটা খুবই বিরক্ত হয়ে শিখার দিকে তাকায়, ‘আমি আনারস মার্কার পোস্টারই সাঁটব।’ 
 ‘আমি কে মানে? আমি এই পাড়ারই মেয়ে, তুমি কে?’

 ‘আমি আনারস মার্কার প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের সূত্রাপুর থানার সম্পাদক।’ 
 ‘হুমম-সম্পাদক। ভাগো তো!’

 ‘তোমার কথায় ভাগব নাকি?’ 
আজব ছেলে তো! তাদের পাড়ায় কেন আনারস মার্কার পোস্টার চলবে? শিখা থাকতে এমন হতেই পারে না। তাদের পাড়ায় চলবে মই মার্কার পোস্টার। কাজেই শিখা তর্ক চালাতে থাকে। আর নতুন ছেলেটাও মুখে মুখে জবাব দিতে থাকে। হুট করে কী যেন হয় শিখার। পাগলি হরিদাসীর দিকে ফিরে বলে, ‘মাসি, তোমার দোকানে ওই ইটের টুকরা আর নারকেলের আইচার যে মালা রাখো, একটা দাও তো!’

 ‘কী করবি?’ 
 ‘অপজিশনরে দেব।’ 
 ‘পাঁচ টাকা লাগবে। 
 ‘নেও।’ 
পাঁচ টাকায় একটা গুলতির মালা নিয়ে এসে শিখা হনহন করে নতুন ছেলেটা যেখানে নিজেই একটি মইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে বৈদ্যুতিক তারের নিচে দেয়ালে আনারস মার্কার পোস্টার সাঁটছে, সেদিকে এসে হুট করে ছেলেটার দিকে গুলতির মালা ছুড়ে মারল। পরবি তো পর গুলতির মালা, ছেলেটার গলায় ঢুকে গেল। ছেলেটি এক ঝলক বোকা বনে গিয়ে সে-ও হুড়মুড় করে মই থেকে নেমে—ওমা! সে-ও হরিদাসীর দোকানের দিকে ছুটছে। এক লহমায় তার হাতেও একটি গুলতির মালা এবং সেও গুলতির মালা শিখার দিকে ছুড়ল।

 ‘ঠাকুর, এই মেয়ে কী বেহায়া! একটা অচেনা ছেলের গলায় মালা দিয়া বসল!’ 
শিখা হুট করে একটি তির্যক মন্তব্যে পেছন ফিরে দেখে একদল নারী-পুরুষ তাকে ঘিরে এবং প্রথম মন্তব্যের পরেই আর একটি মন্তব্য ছিটকে এল—‘ভরত হারামজাদাও দেখি পাল্টা এই মেয়ের গলায় মালা দিল। আরে ভরত হারামজাদার বিয়া ঠিক, তবু...’

অবাক শিখা পাল্টা প্রতিবাদ করে যেই না বলতে গেল, ‘আপনারা ভুল করতেছেন। এইটা কি কোনো ফুলের মালা? এইটা তো গুলতির মালা, অপজিশনরে দ্যায়!’

পুরো বাক্য শেষ করার আগেই শিখা দ্যাখে তার মা ছুটে আসছে এবং শিখার ভয়ানক শান্ত, নরম মা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিখার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে দুই গালে চড় কষিয়ে বলতে থাকে, ‘কলঙ্কিনী, বেজাতের ছেলের গলায় মালা দিলি? তা-ও যে ছেলের বিয়া ঠিক?’

এই ভরত কে? সে নাকি পাশের পাড়ায় দুই বছর অন্য শহরে কাজ করে ফিরেছে। তার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়েটিও ছুটে আসে। 
 ‘এই রাক্ষসী, তুই আমার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া ছেলের গলায় মালা দিলি ক্যান?’ 
 ‘আপনারা ভুল করতেছেন। এইটা গুলতির মালা।’

কিন্তু পুরো কথা শিখার আর বলা হয় না। আশপাশের তিন-চার পাড়ার মানুষ জড়ো হয়ে ভরত ও শিখা যে দুই পাপী এবং তারা এত দিন লুকিয়ে এবং এখন প্রকাশ্যে বেলেল্লাপনা শুরু করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত মন্তব্য করতে থাকে। দুজনকেই নিজের নিজের মানুষেরা রাস্তার ওপরেই প্রচণ্ড পেটানো শুরু করে। অনেকটা সাপ পেটানোর মতো। পেটাতে পেটাতে এবং গালি দিতে দিতে তাদের যে যার পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

৫. ‘এই পাড়ায় লুকায়া লুকায়া কত মেয়ে কত কী করে! বিয়ার আগে পেটে বাচ্চা আসছে এমন মেয়েও লুকায়া গর্ভ নষ্ট করার পর আবার বিয়া হয়। আর তুই কিনা বলদের মতো এক গুলতির মালা দিয়া এত কলঙ্কিনী হইলি? কবে তোর বুদ্ধি-শুদ্ধি হবে? মেয়েমানুষের ছেলেদের মতো নির্বাচনের প্রচারে নামা, কে ওয়ার্ড কমিশনার হবে কি না, মই না আনারসের পোস্টার—এসব ভাবার দরকারই নাই। সমাজ এতে মেয়েদের খারাপ মনে করে’—শিখার বিধবা পিসি মায়ের হাত থেকে শিখাকে বাঁচানোর জন্য নিজের শরীর দিয়ে শিখাকে আড়াল করতে করতে বলেন। 

 ৬. ভরতের সাথে দেখা হলো মাসখানেক পরে। আশপাশের কয়েকটা মহল্লায় ঢি ঢি পড়ে গেছে। কয়েক দফা মার খেয়ে তাদের দুজনেরই হাতে-পায়ে, গিঁটে গিঁটে ব্যথা। শিখার ফ্যাক্টরি এক মাস করোনায় বন্ধ ছিল। আজ খুলেছে। আজ বের হতেই হবে। যতই পাড়ায় ঢি ঢি পড়ুক। কিন্তু আসলে ভরতের সাথে সে কী করেছে? ওই মালাটা তো কোনো ফুলের মালা ছিল না, ছিল কিনা একটা গুলতির মালা, যা অপজিশনকে দেয়।

ওমা! পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে—গলির মোড়েই ভরত। একী! ওর হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ কেন? খানিকটা মন খারাপও লাগে তার। তারা না হয় মই আর আনারস মার্কা নিয়ে ঝগড়া করেছে, কিন্তু লোকজন তাদের পেটালই বা কেন, আর এত নোংরা কথাই বা বলছে কেন? 
 ‘অনেক পিটান খাইছিস?’ 
শক্ত মুখে বলে শিখা। 
ভরত ঘাড় গোঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকে। 
 ‘ব্যান্ডেজ লাগছে? এত পিটান কে পিটাইল?’ 
 ‘লক্ষ্মীর বাপের বাড়ির লোকেরা।’ 
 ‘মানে, তোর হবু বউয়ের বাড়ির লোকজন?’ 
 ‘হ্যাঁ।’ 
 ‘আমাকে কী করতে হবে? তোর হবু বউ বা তার বাড়ির লোকজনরে বুঝাব?’ 
 ‘তারা তো বুঝতেছে না। ইয়ে...মানে, তোমার চোখ-মুখ ফোলা কেন?’ 
 ‘মাইর খাইছি।’ শুকনো মুখে বলে ফ্যাক্টরির দিকে পা বাড়ায় শিখা। 

কিন্তু জোসেফের কী হবে? নতুন ঢাকায় একটা রেস্তোরাঁয় শেফের কাজ করা জোসেফের সাথে পরিচয় হয়েছিল মাত্র তিন মাস আগে। ছোট মাসির বাসায়। মাসতুতো দাদার বন্ধু। শিখার ফোন নম্বর নিয়ে প্রায়ই ফোন করত।

 ‘কাউকে ভালো লাগেনি তোমার কখনো?’ 
 ‘পিটারকে ভালো লাগছিল, কিন্তু...’
 ‘তয় লজ্জাও লাগত, তাই এড়ায়া যাইতাম!’ 
 ‘আমি কিন্তু খোঁজ-খবর নিছি। সোলেমান পোলাডা একবার সাকরাইনের ঘুড়ি ওড়ানোয় তোমার মুখ ঘুড়িতে আঁকছিল, না?’ 
 ‘হ্যাঁ।’

 ‘ওকে ভালো লাগে নাই?’ 
 ‘হ্যাঁ, ঘুড়িতে আমার মুখ আঁকার পরে কিছুদিন খুব ঢি ঢি পড়ছিল। কিন্তু ও তো অন্য সম্প্রদায়ের পোলা। আমি তাই দূরে দূরে থাকতাম। এ ছাড়া সুলতান...’
 ‘সুলতান কে?’ 
 ‘সোলেমানের আগেই পরিচয়। ভারি জিদ্দি পোলা। মুখ ফুইটা কোনো দিন কিছু বলেও নাই। কিন্তু শুধু এক জিদ। আমার গায়ে মাছিটাও বসতে পারব না। তাইলেই আমারে খুন করবে। ভয়ে আমিও আগাইতে পারি নাই। তবে মন টানছিল এটা ঠিক। কিন্তু ওরে আমার সব সময়ই ভয় করত।’ 
 ‘ও বিয়া করছে?’

 ‘এই সেদিন। সোলেমান অনেক আগেই বিয়া করছে। পিটার কিন্তু একা। কাল সকালে আবার ফ্যাক্টরি আছে।’ 
 ‘তুমি ঘুমাবে, না?’

অপ্রস্তুত হয়ে চুপ হয়ে যেত শিখা। জোসেফের মতো সারা রাত জেগে মোবাইলে কথা সে বলতে পারে না। তার ঘুম পেয়ে যায়। আর জোসেফ মন খারাপ করে। তবে জোসেফ ভালো। কোনো দিন কোনো খারাপ কথা বলে নাই। কিন্তু সবাইকে সরিয়ে কোথাকার কোন ভরত—কেন যে সে আনারস মার্কা আর সে মই মার্কার পোস্টার দিতে গিয়ে কথা-কাটাকাটি থেকে গুলতির মালা ছুড়তে গিয়ে এত ঝামেলা হলো? না পিটার, না জোসেফ আর কেউ তাকে কোনো দিন মনে করবে? ভরতের সাথে লক্ষ্মীর সবকিছু জোড়া লাগুক...কিন্তু লক্ষ্মী তাকে অনেক গালি দিয়েছে...লক্ষ্মীর বন্ধু-পরিবারও...আর ভরত পোলাডাও এত মাইর খাইল শুধু শুধু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত