অনলাইন ডেস্ক
চীনা মার্সেনারি তথা ভাড়াটে ২৫ সেনাকে নিয়ে একটি বিমান গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অবতরণ করে মিয়ানমারের রামরি দ্বীপে। এটি মিয়ানমারের উপকূল থেকে বেশ কাছেই। চার বছর আগে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে চীন দক্ষিণের এই প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। বিশৃঙ্খল এক গৃহযুদ্ধের মাঝে মিয়ানমারে চীনা মার্সেনারির আগমন দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরই ইঙ্গিত।
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিশৃঙ্খল ও সহিংস হয়ে উঠতে দেখেছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। দেশটি মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাজ করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে।
মিয়ানমারে চীনের বিভিন্ন স্বার্থ আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পশ্চিমা প্রভাব নাকচ করা। এ ছাড়া, রামরি দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল-গ্যাস পাইপলাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই পাইপলাইনটি মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত চলে গেছে।
মিয়ানমারে চীন কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পাইপলাইনের আশপাশে চীন কী করছে তা অনুসরণ করা। এই পাইপলাইন চীনের মোট তেল-গ্যাস আমদানির একটি ছোট অংশ বহন করে। এই তেল-গ্যাস কেবলই চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের জন্য যথেষ্ট, সারা দেশের জন্য নয়। তবে এই পাইপলাইনের ফলে তেল-গ্যাসবাহী নৌযানগুলোকে মালাক্কা প্রণালি এবং ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চীনের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরগুলোতে পৌঁছাতে হয় না। যদি কখনো চীন-আমেরিকার যুদ্ধ হয়, তাহলে এই পাইপলাইন চীনা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন হয়ে উঠবে।
এই পাইপলাইন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রতিচ্ছবিও বটে। এই পাইপলাইন যে পথ ধরে গেছে, সেসব এলাকার কোনো অংশই সংঘাত থেকে রেহাই পায়নি। তবুও এটি প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেছে। এই অক্ষত রয়ে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে সহিংস, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে চীনের চতুর কূটনীতিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং অন্যদিকে মিয়ানমারে ঘটে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি তাদের শীতল, আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন।
রামরি দ্বীপে আসা চীনা ভাড়াটে সেনারা সম্ভবত সাবেক সৈনিক। তবে তারা রামরি দ্বীপের মূল ভূখণ্ড রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এএ) জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতে আসেনি। চীনের লক্ষ্য হলো ভারত মহাসাগরে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করা। পাইপলাইন টার্মিনালগুলোর পাশাপাশি, কাছাকাছি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের। একটি প্রস্তাবিত রেলপথ দিয়ে এই বন্দরকে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার রাজি হতেই হয়েছে।’ কারণ, বর্তমান মিয়ানমারে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীই চীনকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারবে না।
তাৎমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক কুখ্যাতি অর্জন করে। অন্তত ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পরের বছর আরাকান আর্মি রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে—এই আশঙ্কায় সেনাবাহিনী ও অং সান সুকির নেতৃত্বে তৎকালীন বেসামরিক সরকার এই বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ মাস পরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জান্তাবাহিনী। এর পরপরই মিয়ানমার জুড়ে অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু আরাকান আর্মি তাদের উপযুক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
এরপর, ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে পড়তে শুরু করে। আর ঠিক তখনই আরাকান আর্মি যুদ্ধবিরতি ভেঙে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লোকবলের অভাবে জান্তা তখন অভাবনীয় এক কাজ করে। তারা রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র দিতে শুরু করে এবং লড়াই করতে বাধ্য করে। এতে তেমন লাভ হয়নি। এক বছরের মধ্যেই তাৎমাদাও রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পরপর এমন ধারাবাহিক পরাজয়ের মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ভাবতে পারেন যে, তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী সম্পর্ক এবং রাখাইনে তাদের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিলে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনের উদ্বেগের কারণ হবে। কিন্তু না। চীন দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। আরাকান আর্মির দ্রুত অগ্রগতিতেও অস্বস্তিতে নেই চীন। আরাকান আর্মি চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা চীনা বিনিয়োগ সমর্থন করে। গোষ্ঠীটি পাইপলাইনের কাছাকাছি ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। এমনকি জান্তাবাহিনীর হাত থেকে পাইপলাইনের পাম্পিং স্টেশনগুলো দখল করার সময়ও এর ক্ষতি করেনি। তারা তেল-গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে দিয়েছে।
রাখাইন রাজ্য থেকে চীনা তেল-গ্যাসের পাইপলাইনটি আরাকান পর্বতমালা অতিক্রম করে এক শুষ্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই শুষ্ক সমভূমি মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর মূল কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে তাৎমাদাও এই অঞ্চলের তরুণদের ব্যাপকহারে বাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটির সীমান্ত এলাকা একের পর এক সংঘাতে জর্জরিত হলেও, এই সমভূমিতে অন্তত বিগত ৫০ বছর ধরে খুব বেশি অশান্তি ছিল না।
তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। জান্তাবাহিনী যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে গুলি করে দমন করে, তখন এই সমভূমি অঞ্চলের তরুণেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তারা প্রতিরোধ ইউনিট গঠন করে এবং সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলোর বড় একটি অংশ একসঙ্গে কাজ শুরু করে। এসব গোষ্ঠীর বেশির ভাগ স্বাধীন হলেও কিছু দল সামরিক শাসনবিরোধী এবং বিদেশে বা জাতিগত সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় থাকা নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
শুরুতে প্রতিরোধে যোগ দেওয়া অনেক গোষ্ঠীই জান্তার পাশাপাশি চীনের প্রতি বিরূপ ছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে, চীনের সমর্থনের কারণেই অভ্যুত্থান ঘটাতে পেরেছে জান্তা। কারণ ১৯৮৮-২০১১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা পূর্ববর্তী সামরিক সরকারকেও চীন সমর্থন দিয়েছিল। তাই এই সংঘাতের প্রথম দিকে চীনা পাইপলাইন বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের সরকার বা এনইউজি তাদের থামতে নির্দেশ দেয়। এই সরকারের ভয় ছিল যে, পাইপলাইনে হামলা হলে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে চীন এবং বিশ্বের কাছে তাদের পরিচিতি লাভের প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
তারপরও পাইপলাইন হামলার শিকার হয়েছে। মান্দালয়ের ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাতোগির কাছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৩ সালের মে মাসে (দুইবার) গেরিলারা পাইপলাইনে হামলা চালায়। তবে, দুর্বল অস্ত্রে সজ্জিত এই দলগুলো তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। পরবর্তী দিনগুলোতে সেনাবাহিনী তাদের কয়েক ডজন বেসামরিক সমর্থককে আটক করে এবং চীনকে বোঝাতে চায় যে, তারা বেইজিংয়ের বিনিয়োগকে কঠোর সুরক্ষা দেবে।
কিছুদিন আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরোধ কমান্ডার দ্য ইকোনমিস্টকে জানান, পাইপলাইনে হামলা না করার জন্য এখন তাদের আর বলে দিতে হয় না। তিনি বলেন, এটি তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রক্সিদের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ—এবং মাঝে মাঝে ভারী সামরিক সরঞ্জাম—সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন প্রতিরোধ বাহিনী চীনকে ক্ষুব্ধ করে, তখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কখনো কখনো কয়েক মাসের জন্য।
প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গ্রাম বা শহর দখল করে রাখতে হিমশিম খেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে তারা মাত্র একদিনের জন্য নাতোগি দখল করেছিল, তাৎমাদাওয়ের শক্তিবৃদ্ধি হলে তারা পিছু হটে। তবে, গ্রামাঞ্চলে এই দলগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী। সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত পরিচালনা করছে।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো—শুষ্ক সমভূমি অঞ্চল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাগাইন শহরের কাছে। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৬০০ জন আহত হন। কিন্তু উদ্ধার ও সহায়তাকর্মীরা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পৌঁছাতে সংগ্রাম করেছে এবং জান্তা সরকার ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে রাখায় দুর্ভোগ বা প্রয়োজনের কোনো খবর বাইরে আসতে দেরি হচ্ছে।
ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি হয়েও থাকে তাহলে চীনা প্রকৌশলীরা কোনো পক্ষের বাধার মুখে না পড়েই ত্রাণ প্রচেষ্টার চেয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন। মান্দালয়ের কাছে পাইপলাইনটি শুষ্ক অঞ্চল থেকে একটি খাঁড়া ঢাল বেয়ে শান পাহাড়ের দিকে উঠে গেছে। এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর নামে। জাতিগত সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকার পাইপলাইন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই তারা পাইপলাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পথে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছিল। শান রাজ্যে চীনা পাইপলাইনের বেশির ভাগ অংশ তখনো জান্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত।
এই ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য জান্তা চীন, প্রতারক এবং নিজেকেই দায়ী করতে পারে। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত মানবপাচারের সব কেন্দ্র থেকে প্রতারক-দালালেরা চীনা সঞ্চয়কারীদের ঠকাত। প্রায়শই তারা চীনাদের জোর করে ধরে এনে এই প্রতারণামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করত। ২০২৩ সালে এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা চীনের জন্য মিয়ানমারে এক নতুন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, যারা আবার পুরোনো জাতিগত মিলিশিয়া—তারা তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে ক্ষমতা ও রাজস্ব ভাগ করে নেওয়ার চুক্তিতে সীমান্ত পাহারা দিত। তারা প্রতারকদের কাছ থেকে ঘুষ নিত এবং তাদের অবাধে কাজ করার সুযোগ দিত। ২০২৩ সালে চীনের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও জান্তা সরকার এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারেনি বা চায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিরক্ত হয়ে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সকে সীমান্ত শহর লাউকাং দখল করে স্ক্যাম সেন্টারগুলো সাফ করার অনুমতি দেয়। এই জোটটি আরাকান আর্মিসহ আরও দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ব্রাদারহুড শান রাজ্যের শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাৎমাদাওয়ের অবস্থানে আক্রমণ করে। এটি ছিল এক শোচনীয় পরাজয়। হাজার হাজার তাৎমাদাও সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। অপারেশন ১০২৭ (তারিখের নামে নামকরণ করা) ব্রাদারহুড গোষ্ঠীগুলোকে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী শক্তিতে পরিণত করে।
বিদ্রোহীরা লাউকাং দখলের পর চীন দ্রুত গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু একবার যা শুরু হয়েছিল, তা আর থামানো যায়নি। ২০২৪ সালের জুনে ব্রাদারহুড যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই জোটের একটি গোষ্ঠী শান রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১ লাখ জনসংখ্যার শহর লাশিও দখল করে নেয়। এটি মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়া সবচেয়ে বড় শহর। ব্রাদারহুডের তৃতীয় সদস্য মান্দালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে। আগস্টের মধ্যে তারা প্রায় পিন উ লুইনে পৌঁছে গিয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোতে চীন অসন্তুষ্ট হয়। মিয়ানমারের যেকোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও, ব্রাদারহুডের অগ্রগতির কারণে জান্তা ভেঙে পড়তে পারে এবং বিদ্রোহের দাবানল এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা তারা নেভাতে পারবে না—এমন আশঙ্কায় চীন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিং ব্রাদারহুডের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। দেশটির একটি গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে অপহরণও করে। ২২ এপ্রিল ব্রাদারহুড লাশিও থেকে সরে আসে। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের হতবাক করে দিয়ে চীনা কূটনীতিকেরা শহরে জান্তার ফিরে আসার তত্ত্বাবধান করেন। তবে নতুন ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এসব ঘটনা পাইপলাইনকেও তীব্র যুদ্ধের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে সিপাও এবং নওংখিও টাউনশিপে। সেখানকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দা আশঙ্কা করেন যে, তাৎমাদাওয়ের বিমানবাহিনীর পাইলটেরা হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে পাইপলাইনে বোমা ফেলতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছে যে গৃহযুদ্ধের কোনো পক্ষই চীনা রোষানল এড়াতে পারবে না। এখন বেসামরিকেরা এই পাইপলাইনের কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। কারণ তারা জানে, এটি এমন কিছু যা থেকে উভয় পক্ষই দূরে থাকতে চায়।
মিয়ানমারে কী ঘটছে সেদিকে চীনের সব সময়ই গভীর নজর ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা চীনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করার পর, হাজার হাজার পরাজিত জাতীয়তাবাদী বা কুওমিনতাং শান পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত পেরিয়ে কমিউনিস্ট ইউনানে অভিযান চালায়। কুওমিনতাং বহু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি এড়াতে চীন মিয়ানমারে বন্দুকধারী যে কারও সঙ্গে কাজ করে। জান্তা ও সেই সব জাতিগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যারা আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের জন্য আদর্শকে ত্যাগ করে। তবে তারা পরোক্ষভাবে হলেও গণতন্ত্রপন্থী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। এই পদ্ধতি চীনকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের এই ভয়াবহ নাটকে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলোতে মিয়ানমারের বিপ্লবীরা পশ্চিমা সহায়তার জন্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। এটি দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখে একটি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারত। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে পশ্চিমা সহায়তার প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই থেকে যায় এবং এই গোষ্ঠীগুলোও চীনের দিকে তাকাতে শুরু করে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এনইউজি (জাতীয় ঐক্য সরকার) চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দশ-দফা নীতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা মিয়ানমারে চীনের স্বার্থ, যেমন পাইপলাইনে বিনিয়োগ সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনইউজির প্রতিশ্রুতির বিশদ বিবরণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের একটি শব্দ ব্যবহার, যা চীন খুঁজছিল—‘পাউক-ফাউ।’ এটি দুই দেশের সম্পর্ক বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি বর্মিজ ভাষায় বিশেষ শব্দ। এটি বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝায়। মিয়ানমার যে-ই শাসন করুক না কেন, তার বড় চীন ভাই নজর রাখছে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
চীনা মার্সেনারি তথা ভাড়াটে ২৫ সেনাকে নিয়ে একটি বিমান গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অবতরণ করে মিয়ানমারের রামরি দ্বীপে। এটি মিয়ানমারের উপকূল থেকে বেশ কাছেই। চার বছর আগে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে চীন দক্ষিণের এই প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। বিশৃঙ্খল এক গৃহযুদ্ধের মাঝে মিয়ানমারে চীনা মার্সেনারির আগমন দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরই ইঙ্গিত।
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিশৃঙ্খল ও সহিংস হয়ে উঠতে দেখেছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। দেশটি মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাজ করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে।
মিয়ানমারে চীনের বিভিন্ন স্বার্থ আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পশ্চিমা প্রভাব নাকচ করা। এ ছাড়া, রামরি দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল-গ্যাস পাইপলাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই পাইপলাইনটি মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত চলে গেছে।
মিয়ানমারে চীন কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পাইপলাইনের আশপাশে চীন কী করছে তা অনুসরণ করা। এই পাইপলাইন চীনের মোট তেল-গ্যাস আমদানির একটি ছোট অংশ বহন করে। এই তেল-গ্যাস কেবলই চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের জন্য যথেষ্ট, সারা দেশের জন্য নয়। তবে এই পাইপলাইনের ফলে তেল-গ্যাসবাহী নৌযানগুলোকে মালাক্কা প্রণালি এবং ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চীনের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরগুলোতে পৌঁছাতে হয় না। যদি কখনো চীন-আমেরিকার যুদ্ধ হয়, তাহলে এই পাইপলাইন চীনা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন হয়ে উঠবে।
এই পাইপলাইন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রতিচ্ছবিও বটে। এই পাইপলাইন যে পথ ধরে গেছে, সেসব এলাকার কোনো অংশই সংঘাত থেকে রেহাই পায়নি। তবুও এটি প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেছে। এই অক্ষত রয়ে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে সহিংস, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে চীনের চতুর কূটনীতিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং অন্যদিকে মিয়ানমারে ঘটে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি তাদের শীতল, আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন।
রামরি দ্বীপে আসা চীনা ভাড়াটে সেনারা সম্ভবত সাবেক সৈনিক। তবে তারা রামরি দ্বীপের মূল ভূখণ্ড রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এএ) জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতে আসেনি। চীনের লক্ষ্য হলো ভারত মহাসাগরে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করা। পাইপলাইন টার্মিনালগুলোর পাশাপাশি, কাছাকাছি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের। একটি প্রস্তাবিত রেলপথ দিয়ে এই বন্দরকে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার রাজি হতেই হয়েছে।’ কারণ, বর্তমান মিয়ানমারে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীই চীনকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারবে না।
তাৎমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক কুখ্যাতি অর্জন করে। অন্তত ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পরের বছর আরাকান আর্মি রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে—এই আশঙ্কায় সেনাবাহিনী ও অং সান সুকির নেতৃত্বে তৎকালীন বেসামরিক সরকার এই বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ মাস পরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জান্তাবাহিনী। এর পরপরই মিয়ানমার জুড়ে অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু আরাকান আর্মি তাদের উপযুক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
এরপর, ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে পড়তে শুরু করে। আর ঠিক তখনই আরাকান আর্মি যুদ্ধবিরতি ভেঙে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লোকবলের অভাবে জান্তা তখন অভাবনীয় এক কাজ করে। তারা রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র দিতে শুরু করে এবং লড়াই করতে বাধ্য করে। এতে তেমন লাভ হয়নি। এক বছরের মধ্যেই তাৎমাদাও রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পরপর এমন ধারাবাহিক পরাজয়ের মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ভাবতে পারেন যে, তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী সম্পর্ক এবং রাখাইনে তাদের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিলে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনের উদ্বেগের কারণ হবে। কিন্তু না। চীন দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। আরাকান আর্মির দ্রুত অগ্রগতিতেও অস্বস্তিতে নেই চীন। আরাকান আর্মি চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা চীনা বিনিয়োগ সমর্থন করে। গোষ্ঠীটি পাইপলাইনের কাছাকাছি ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। এমনকি জান্তাবাহিনীর হাত থেকে পাইপলাইনের পাম্পিং স্টেশনগুলো দখল করার সময়ও এর ক্ষতি করেনি। তারা তেল-গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে দিয়েছে।
রাখাইন রাজ্য থেকে চীনা তেল-গ্যাসের পাইপলাইনটি আরাকান পর্বতমালা অতিক্রম করে এক শুষ্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই শুষ্ক সমভূমি মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর মূল কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে তাৎমাদাও এই অঞ্চলের তরুণদের ব্যাপকহারে বাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটির সীমান্ত এলাকা একের পর এক সংঘাতে জর্জরিত হলেও, এই সমভূমিতে অন্তত বিগত ৫০ বছর ধরে খুব বেশি অশান্তি ছিল না।
তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। জান্তাবাহিনী যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে গুলি করে দমন করে, তখন এই সমভূমি অঞ্চলের তরুণেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তারা প্রতিরোধ ইউনিট গঠন করে এবং সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলোর বড় একটি অংশ একসঙ্গে কাজ শুরু করে। এসব গোষ্ঠীর বেশির ভাগ স্বাধীন হলেও কিছু দল সামরিক শাসনবিরোধী এবং বিদেশে বা জাতিগত সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় থাকা নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
শুরুতে প্রতিরোধে যোগ দেওয়া অনেক গোষ্ঠীই জান্তার পাশাপাশি চীনের প্রতি বিরূপ ছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে, চীনের সমর্থনের কারণেই অভ্যুত্থান ঘটাতে পেরেছে জান্তা। কারণ ১৯৮৮-২০১১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা পূর্ববর্তী সামরিক সরকারকেও চীন সমর্থন দিয়েছিল। তাই এই সংঘাতের প্রথম দিকে চীনা পাইপলাইন বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের সরকার বা এনইউজি তাদের থামতে নির্দেশ দেয়। এই সরকারের ভয় ছিল যে, পাইপলাইনে হামলা হলে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে চীন এবং বিশ্বের কাছে তাদের পরিচিতি লাভের প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
তারপরও পাইপলাইন হামলার শিকার হয়েছে। মান্দালয়ের ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাতোগির কাছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৩ সালের মে মাসে (দুইবার) গেরিলারা পাইপলাইনে হামলা চালায়। তবে, দুর্বল অস্ত্রে সজ্জিত এই দলগুলো তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। পরবর্তী দিনগুলোতে সেনাবাহিনী তাদের কয়েক ডজন বেসামরিক সমর্থককে আটক করে এবং চীনকে বোঝাতে চায় যে, তারা বেইজিংয়ের বিনিয়োগকে কঠোর সুরক্ষা দেবে।
কিছুদিন আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরোধ কমান্ডার দ্য ইকোনমিস্টকে জানান, পাইপলাইনে হামলা না করার জন্য এখন তাদের আর বলে দিতে হয় না। তিনি বলেন, এটি তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রক্সিদের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ—এবং মাঝে মাঝে ভারী সামরিক সরঞ্জাম—সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন প্রতিরোধ বাহিনী চীনকে ক্ষুব্ধ করে, তখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কখনো কখনো কয়েক মাসের জন্য।
প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গ্রাম বা শহর দখল করে রাখতে হিমশিম খেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে তারা মাত্র একদিনের জন্য নাতোগি দখল করেছিল, তাৎমাদাওয়ের শক্তিবৃদ্ধি হলে তারা পিছু হটে। তবে, গ্রামাঞ্চলে এই দলগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী। সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত পরিচালনা করছে।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো—শুষ্ক সমভূমি অঞ্চল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাগাইন শহরের কাছে। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৬০০ জন আহত হন। কিন্তু উদ্ধার ও সহায়তাকর্মীরা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পৌঁছাতে সংগ্রাম করেছে এবং জান্তা সরকার ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে রাখায় দুর্ভোগ বা প্রয়োজনের কোনো খবর বাইরে আসতে দেরি হচ্ছে।
ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি হয়েও থাকে তাহলে চীনা প্রকৌশলীরা কোনো পক্ষের বাধার মুখে না পড়েই ত্রাণ প্রচেষ্টার চেয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন। মান্দালয়ের কাছে পাইপলাইনটি শুষ্ক অঞ্চল থেকে একটি খাঁড়া ঢাল বেয়ে শান পাহাড়ের দিকে উঠে গেছে। এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর নামে। জাতিগত সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকার পাইপলাইন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই তারা পাইপলাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পথে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছিল। শান রাজ্যে চীনা পাইপলাইনের বেশির ভাগ অংশ তখনো জান্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত।
এই ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য জান্তা চীন, প্রতারক এবং নিজেকেই দায়ী করতে পারে। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত মানবপাচারের সব কেন্দ্র থেকে প্রতারক-দালালেরা চীনা সঞ্চয়কারীদের ঠকাত। প্রায়শই তারা চীনাদের জোর করে ধরে এনে এই প্রতারণামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করত। ২০২৩ সালে এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা চীনের জন্য মিয়ানমারে এক নতুন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, যারা আবার পুরোনো জাতিগত মিলিশিয়া—তারা তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে ক্ষমতা ও রাজস্ব ভাগ করে নেওয়ার চুক্তিতে সীমান্ত পাহারা দিত। তারা প্রতারকদের কাছ থেকে ঘুষ নিত এবং তাদের অবাধে কাজ করার সুযোগ দিত। ২০২৩ সালে চীনের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও জান্তা সরকার এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারেনি বা চায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিরক্ত হয়ে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সকে সীমান্ত শহর লাউকাং দখল করে স্ক্যাম সেন্টারগুলো সাফ করার অনুমতি দেয়। এই জোটটি আরাকান আর্মিসহ আরও দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ব্রাদারহুড শান রাজ্যের শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাৎমাদাওয়ের অবস্থানে আক্রমণ করে। এটি ছিল এক শোচনীয় পরাজয়। হাজার হাজার তাৎমাদাও সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। অপারেশন ১০২৭ (তারিখের নামে নামকরণ করা) ব্রাদারহুড গোষ্ঠীগুলোকে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী শক্তিতে পরিণত করে।
বিদ্রোহীরা লাউকাং দখলের পর চীন দ্রুত গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু একবার যা শুরু হয়েছিল, তা আর থামানো যায়নি। ২০২৪ সালের জুনে ব্রাদারহুড যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই জোটের একটি গোষ্ঠী শান রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১ লাখ জনসংখ্যার শহর লাশিও দখল করে নেয়। এটি মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়া সবচেয়ে বড় শহর। ব্রাদারহুডের তৃতীয় সদস্য মান্দালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে। আগস্টের মধ্যে তারা প্রায় পিন উ লুইনে পৌঁছে গিয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোতে চীন অসন্তুষ্ট হয়। মিয়ানমারের যেকোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও, ব্রাদারহুডের অগ্রগতির কারণে জান্তা ভেঙে পড়তে পারে এবং বিদ্রোহের দাবানল এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা তারা নেভাতে পারবে না—এমন আশঙ্কায় চীন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিং ব্রাদারহুডের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। দেশটির একটি গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে অপহরণও করে। ২২ এপ্রিল ব্রাদারহুড লাশিও থেকে সরে আসে। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের হতবাক করে দিয়ে চীনা কূটনীতিকেরা শহরে জান্তার ফিরে আসার তত্ত্বাবধান করেন। তবে নতুন ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এসব ঘটনা পাইপলাইনকেও তীব্র যুদ্ধের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে সিপাও এবং নওংখিও টাউনশিপে। সেখানকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দা আশঙ্কা করেন যে, তাৎমাদাওয়ের বিমানবাহিনীর পাইলটেরা হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে পাইপলাইনে বোমা ফেলতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছে যে গৃহযুদ্ধের কোনো পক্ষই চীনা রোষানল এড়াতে পারবে না। এখন বেসামরিকেরা এই পাইপলাইনের কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। কারণ তারা জানে, এটি এমন কিছু যা থেকে উভয় পক্ষই দূরে থাকতে চায়।
মিয়ানমারে কী ঘটছে সেদিকে চীনের সব সময়ই গভীর নজর ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা চীনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করার পর, হাজার হাজার পরাজিত জাতীয়তাবাদী বা কুওমিনতাং শান পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত পেরিয়ে কমিউনিস্ট ইউনানে অভিযান চালায়। কুওমিনতাং বহু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি এড়াতে চীন মিয়ানমারে বন্দুকধারী যে কারও সঙ্গে কাজ করে। জান্তা ও সেই সব জাতিগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যারা আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের জন্য আদর্শকে ত্যাগ করে। তবে তারা পরোক্ষভাবে হলেও গণতন্ত্রপন্থী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। এই পদ্ধতি চীনকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের এই ভয়াবহ নাটকে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলোতে মিয়ানমারের বিপ্লবীরা পশ্চিমা সহায়তার জন্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। এটি দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখে একটি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারত। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে পশ্চিমা সহায়তার প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই থেকে যায় এবং এই গোষ্ঠীগুলোও চীনের দিকে তাকাতে শুরু করে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এনইউজি (জাতীয় ঐক্য সরকার) চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দশ-দফা নীতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা মিয়ানমারে চীনের স্বার্থ, যেমন পাইপলাইনে বিনিয়োগ সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনইউজির প্রতিশ্রুতির বিশদ বিবরণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের একটি শব্দ ব্যবহার, যা চীন খুঁজছিল—‘পাউক-ফাউ।’ এটি দুই দেশের সম্পর্ক বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি বর্মিজ ভাষায় বিশেষ শব্দ। এটি বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝায়। মিয়ানমার যে-ই শাসন করুক না কেন, তার বড় চীন ভাই নজর রাখছে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
পুতিন যখন যুদ্ধে জয় নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী মনোভাব দেখাচ্ছেন, ঠিক তখনই রাশিয়ার ভেতরে ড্রোন হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০টি বোমারু বিমান ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন। এগুলোর মধ্যে কিছু পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমানও ছিল।
৩ ঘণ্টা আগেবিশ্বের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও ‘রুশ আগ্রাসনের নতুন যুগে’ প্রতিরক্ষা খাতে বড় পরিসরে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। গত সোমবার (২ জুন) প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় (এসডিআর) উঠে এসেছে পারমাণবিক অস্ত্র, সাবমেরিন ও গোলাবারুদ তৈরির নতুন কারখানায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা।
৬ ঘণ্টা আগেসত্য কী? অধিকাংশ মানুষের কাছে সত্য মানে হলো, যা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে মিলে। অবশ্য আজকাল ‘বিকল্প সত্য’ নামে নতুন এক ধারণা অনেকে হাজির করছেন। সে যাই হোক, অভিজ্ঞতা বলে, সত্য শুধু বস্তুনিষ্ঠ হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সত্য প্রকাশের উপযুক্ত লগ্ন, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই জরুরি।
১০ ঘণ্টা আগেভারত-মিয়ানমার সীমান্তে প্রস্তাবিত ১ হাজার মাইল দীর্ঘ বেড়া সেখানকার সাপ্তাহিক আয়োজন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অভিবাসন, ঐতিহাসিক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ব্যাহত করার হুমকি দিচ্ছে। এসবই করা হচ্ছে নিরাপত্তার নামে। ভারত সরকার মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়াই এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
১২ ঘণ্টা আগে