Ajker Patrika

নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলেই গ্রেপ্তার করতে চান মামদানি, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানি ও ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানি ও ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে গেলে তাঁকে গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জোহরান মামদানি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে মামদানি এই মন্তব্য করেছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে আইসিসি তাঁর বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন।

তবে মামদানির হুমকির তোয়াক্কা না করে ৩ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক সফরের ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। যেকোনো সময় তিনি নিউইয়র্ক সফর করতে পারেন বলে জানা গেছে। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে—আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিটি মেয়রের কি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আছে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমে জানতে হবে আইসিসির রোম সংবিধি সম্পর্কে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কেউই রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র নয়। ইসরায়েল প্রথমে স্বাক্ষর করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে রোম সংবিধি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির পরোয়ানা কার্যকর করতে আইনত বাধ্য নয়।

তবে ফিলিস্তিন ২০১৫ সালে রোম সংবিধিতে যুক্ত হয় এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার নিশ্চিত করে যে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সংঘটিত অপরাধের ওপর আদালতের এখতিয়ার রয়েছে। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে মার্কিন এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধাপরাধ তদন্তে বাধা দিতে আইসিসির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে পরোয়ানা কার্যকরে বাধা সৃষ্টি হলেও আন্তর্জাতিক আইনে ‘সর্বজনীন এখতিয়ার’ নামে একটি বিকল্প পথ খোলা আছে।

এই আইন অনুযায়ী, যেকোনো রাষ্ট্র গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ—যেমন গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার করতে পারে, অপরাধটি যেখানেই ঘটুক বা অপরাধীর জাতীয়তা যা-ই হোক না কেন।

আন্তর্জাতিক বিচার-সংক্রান্ত সংস্থাগুলো মনে করে, যিনি এ ধরনের গুরুতর অপরাধ করেন, তাঁর রাজনৈতিক পদমর্যাদার কারণে তিনি ডিপ্লোমেটিক ইমিউনিটি বা কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা বা আইনি সুরক্ষা পাবেন না। কারণ, এই অপরাধগুলো বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

সর্বজনীন এখতিয়ারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের কিছু নজিরও আছে। যেমন—১৯৫০-এর দশকে নাৎসি হলোকাস্টের জন্য দায়ী অ্যাডলফ আইখম্যানকে ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ আর্জেন্টিনা থেকে অপহরণ করে জেরুজালেমে নিয়ে আসে। এরপর বিচার করে ফাঁসি দেয়। ইসরায়েল সে সময় এই কাজের যৌক্তিকতা দিতে সর্বজনীন এখতিয়ারের নীতি ব্যবহার করেছিল।

গণহত্যা, গুম, খুন ও নির্যাতনের অভিযোগে চিলির সাবেক সামরিক একনায়ক জেনারেল অগাস্টো পিনোশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল স্পেন। এর ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে লন্ডনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাঁকে।

গাম্বিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উসমান সোনকোকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সুইজারল্যান্ডের একটি আদালত দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

আইখম্যান ও পিনোশের গ্রেপ্তারের নজির দেখিয়ে আইনি বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ও ডিপ্লোমেটিক ইমিউনিটি বা কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা তাঁকে সর্বজনীন এখতিয়ারের আওতায় গ্রেপ্তার হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে না।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার একচেটিয়া ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত। ফলে স্থানীয় পুলিশ বা সিটি মেয়রের এমন একটি আন্তর্জাতিক পরোয়ানা কার্যকর করার ক্ষমতা আইনগতভাবে নেই। থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকার সেটি প্রত্যাখ্যান করবে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুলও বলছেন, মেয়রের এই ক্ষমতা নেই।

কেউ কেউ যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বজনীন এখতিয়ার প্রয়োগের জন্য যুদ্ধাপরাধ আইনের (War Crimes Act-18 U.S.C.§ 2441) অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন, যা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

তবে অপর পক্ষের আইনি বিশ্লেষকেরা মনে করেন, যেহেতু এ ধরনের গুরুতর অপরাধ মোকাবিলার নীতিগুলো আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইনের সর্বোচ্চ মানদণ্ড (Jus cogens) দ্বারা সমর্থিত, তাই সর্বজনীন এখতিয়ার প্রয়োগের জন্য পূর্ব অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

অর্থাৎ মামদানির হাতে স্থানীয়ভাবে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের আইনি ক্ষমতা আছে। কিন্তু এ নিয়ে গুরুতর সাংবিধানিক ও আইনি বিতর্কও রয়েছে। আর আন্তর্জাতিক আইন ও এর ঐতিহাসিক নজিরগুলো দেখায়, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান-নির্বিশেষে আন্তর্জাতিক বিচার থেকে সুরক্ষা পান না।

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। ছবি: নিক্কেই এশিয়া
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। ছবি: নিক্কেই এশিয়া

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।

তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।

২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।

বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন দেশে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক, বাংলাদেশের চিত্র কেমন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫২
গ্রাম ও শহরে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য দিন দিন বাড়ছেই। ছবি: সংগৃহীত
গ্রাম ও শহরে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য দিন দিন বাড়ছেই। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদ এবং আয়ের ব্যবধান অভূতপূর্ব মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই নয়, বরং সামাজিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেও হুমকির মুখে ফেলছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্বের মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মোট সম্পদের প্রায় অর্ধেক বা তারও বেশি অংশ। কিন্তু এই চরম বৈষম্য বিশ্বের কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রকট এবং এর গভীর কারণ কী? আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বিশ্লেষণে সেই ভৌগোলিক চিত্রটি বিশদভাবে উঠে এসেছে।

সম্পদ-এর সংজ্ঞা:

সম্পদ বলতে একজন ব্যক্তির সম্পদের মোট মূল্য বোঝায়— যেমন সঞ্চয়, বিনিয়োগ বা সম্পত্তি, তবে ঋণ বাদ দেওয়ার পর যা থাকে সেটি। চলতি ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তি বিশ্বব্যাপী সম্পদের ৭৫ শতাংশের মালিক, ঠিক এর নিচের শ্রেণির— ৪০ শতাংশের মালিকানায় ২৩ শতাংশ এবং বাকি অর্ধেক মানুষের নিয়ন্ত্রণে মাত্র ২ শতাংশ সম্পদ।

১৯৯০ সাল থেকে, বিলিয়নিয়ার এবং কোটিপতিদের সম্পদ প্রতি বছর প্রায় ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকের (যারা মাত্র ২ শতাংশ সম্পদের মালিক) সম্পদ বৃদ্ধির হারের প্রায় দ্বিগুণ।

অতিধনী যাদের সংখ্যা মোট বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক ০০১ শতাংশ এবং যাদের সংখ্যা কোটিপতি বা মাল্টি মিলিয়নিয়ারের (৬০ হাজার) চেয়ে কম— তারা এখন মানবজাতির অর্ধেকের মালিকানায় যে সম্পত্তি রয়েছে, তার তিনগুণ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের সম্পদের হিস্যা ১৯৯৫ সালে প্রায় ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬ শতাংশেরও বেশি হয়েছে।

দরিদ্রতম ব্যক্তিদের সামান্য উন্নতি হয়েছে, কিন্তু শীর্ষ স্তরে দ্রুত সঞ্চয় বৃদ্ধির ফলে এই উন্নতি অনুল্লেখযোগ্যই রয়ে গেছে, যার ফলে এমন একটি বিশ্ব তৈরি হয়েছে যেখানে একটি ক্ষুদ্র গ্রুপের হাতে অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে, যেখানে কোটি কোটি মানুষ এখনো মৌলিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য লড়ে যাচ্ছে।

আয়-এর সংজ্ঞা:

আয় হিসাব করা হয় কর কর্তনের আগে উপার্জনের পরিমাণ দিয়ে। পেনশন এবং বেকারত্ব বিমা অবদানের হিসাবও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ ব্যক্তি বিশ্বব্যাপী আয়ের ৫৩ শতাংশ, মধ্যম পর্যায়ের ৪০ শতাংশ ব্যক্তি ৩৮ শতাংশ এবং নিচের স্তরের ৫০ শতাংশ মানুষ মাত্র ৮ শতাংশ আয় করেন।

উদাহরণস্বরূপ, যদি বিশ্বে ১০ জন লোক থাকে এবং মোট বৈশ্বিক আয় ১০০ ডলার হয়, তাহলে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আয় করছেন ৫৩ ডলার, পরবর্তী চারজন ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে ৩৮ ডলার এবং বাকি পাঁচজন ব্যক্তি অর্থাৎ অর্ধেক মানুষ নিজেদের মধ্যে ৮ ডলার ভাগ করে নিচ্ছেন।

অর্থনীতিতে বৈষম্যের হিসাব নির্ণয়ে গিনি সহগ বা গিনি সূচক ব্যবহার করা হয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিমাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মেট্রিক এটি। এই সহগের মান ০ (শূন্য) থেকে ১ (এক) পর্যন্ত হতে পারে। ‘শূন্য’ নির্দেশ করে পূর্ণ সমতা অর্থাৎ সমাজের প্রত্যেকের আয় বা সম্পদ সমান। আর ‘এক’ নির্দেশ করে পূর্ণ বৈষম্য, অর্থাৎ সমাজের সমস্ত আয় বা সম্পদ মাত্র একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত।

wealth and income most unequal

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ দেশেই আয়ের বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য অনেক বেশি। গিনি সহগ যখন ০.৪-এর বেশি হয়, তখন সেই সমাজকে উচ্চ বৈষম্যপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবে এবং কাঠামোগত কারণেই চরম বৈষম্যপূর্ণ এলাকা। নিচে এসব অঞ্চলের একটি চিত্র তুলে ধরা হলো—

১. লাতিন আমেরিকা: বৈষম্য যেখানে ঐতিহ্য

লাতিন আমেরিকা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি বৈষম্যপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেক্সিকো, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া এবং হন্ডুরাসের মতো দেশগুলোতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত শক্তিশালী।

কারণ হিসেবে যেসব বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছিল সেগুলো হলো:

ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার: দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে ভূমি ও উৎপাদনশীল সম্পদের ওপর একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই ব্যবস্থা আজও জিইয়ে রয়েছে।

কর ফাঁকি এবং দুর্বল কর ব্যবস্থা: এই অঞ্চলে উচ্চ কর ফাঁকির হার, সেই সঙ্গে দুর্বল কর ব্যবস্থা ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ: কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে অর্জিত আয় সমাজের বৃহত্তর অংশে না ছড়িয়ে মুষ্টিমেয় কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়।

সম্পদের বৈষম্যের দিক থেকে এই অঞ্চলের গিনি সহগ প্রায়শই ০.৫ এর ওপরে থাকে।

২. মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (মেনা): সম্পদ কেন্দ্রীভূত

তেল ও গ্যাস সম্পদ-সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশে সম্পদের বণ্টন অত্যন্ত অসম। এখানে খুবই নগণ্য সংখ্যক মানুষের হাতে বিপুল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

বৈষম্যের কারণ:

‘উপস্বত্বজীবী রাষ্ট্র’ মডেল: অনেক দেশই হাইড্রোকার্বন (তেল/গ্যাস) বিক্রির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এই আয় প্রায়শই রাষ্ট্রীয় বা রাজকীয় পরিবারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, যেখানে সাধারণ জনগণের সামাজিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত থাকে।

উপাত্তের দুর্বলতা: এই অঞ্চলের অনেক সরকার বৈষম্য সম্পর্কিত ডেটা প্রকাশ করতে চায় না, যার ফলে প্রকৃত বৈষম্য অনুমিত পরিমাণের চেয়েও বেশি হতে পারে।

সামাজিক প্রগতির অভাব: ধনী পরিবারের বাইরের মানুষের জন্য উচ্চ-স্তরের সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবসায় প্রবেশ করা কঠিন হওয়ায় সম্পদের কেন্দ্রীকরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে।

ধারণা করা হয়, সম্পদ বৈষম্যের দিক থেকে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকতে পারে।

দেশে দেশে সম্পদ বৈষম্যের চিত্র। ছবি: আল-জাজিরা
দেশে দেশে সম্পদ বৈষম্যের চিত্র। ছবি: আল-জাজিরা

৩. সাব-সাহারান আফ্রিকা: দারিদ্র্য ও বৈষম্যের দ্বৈত সংকট

সাব-সাহারান আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, কেনিয়া এবং নাইজেরিয়া চরম বৈষম্যের শিকার।

বৈষম্যের কারণ:

বর্ণবাদী শাসনের প্রভাব: দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশে দীর্ঘদিনের বর্ণবাদী শাসনের ফলস্বরূপ ভূমি ও সম্পদের মালিকানা এখনো জাতিগত বিভাজনের ওপর ভিত্তি করে টিকে আছে।

সম্পদের অভিশাপ: খনিজ সম্পদ-সমৃদ্ধ দেশগুলোতে এই সম্পদ সমাজের বৃহত্তর উন্নয়নে না লেগে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীকে ধনী করে তোলে।

গ্রাম-শহর বৈষম্য: শহুরে কেন্দ্রগুলোতে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রীভবন এবং দুর্বল গ্রামীণ অবকাঠামো গ্রামের মানুষের জন্য সুযোগের তীব্র সংকট তৈরি করে।

এই অঞ্চলে একদিকে যেমন চরম দারিদ্র্য রয়েছে, তেমনি অন্যদিকে নব্য ধনীরা বিপুল সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে।

৪. এশিয়া ও ইউরোপ: মিশ্র ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের চিত্র

এশিয়া এবং ইউরোপের চিত্রটি মিশ্র। ইউরোপের বেশির ভাগ উন্নত দেশে বৈষম্য কম হলেও এশিয়ায় তা দ্রুত বাড়ছে।

এশিয়া: চীন এবং ভারত গত কয়েক দশকে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও, মুক্তবাজার নীতির কারণে সেখানে আঞ্চলিক ও ব্যক্তিগত বৈষম্য তীব্রভাবে বেড়েছে। ভারতের মতো দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোগত সুযোগের অসম বণ্টন বৈষম্যকে আরও গভীর করেছে।

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ (উন্নত অংশ) : সামাজিক নিরাপত্তা জাল, শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন এবং প্রগতিশীল কর ব্যবস্থার কারণে উত্তর আমেরিকা (কানাডা) এবং বিশেষত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে (যেমন নরওয়ে, সুইডেন) বৈষম্য তুলনামূলকভাবে কম। এই দেশগুলো বৈষম্য কমাতে কার্যকর কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদাহরণ স্থাপন করেছে। তবে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর হ্রাসের প্রবণতা এবং শ্রম বাজারের নমনীয়তার কারণে বৈষম্য ধীরে ধীরে বাড়ছে।

দেশে দেশে আয় বৈষম্যের চিত্র। ছবি: আল-জাজিরা
দেশে দেশে আয় বৈষম্যের চিত্র। ছবি: আল-জাজিরা

বৈষম্যের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও সমাধান

সম্পদ ও আয়ের এই চরম বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি সমাজের কাঠামোতেই গুরুতর ফাটল সৃষ্টি করে, যেমন:

সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক মেরুকরণ: বৈষম্য সমাজে ঘৃণা, বিভেদ এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়িয়ে দেয়, যা বিক্ষোভ, অপরাধ এবং জন-অসন্তোষের জন্ম দেয়।

অর্থনৈতিক স্থবিরতা: যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়, তখন বাজারের সামগ্রিক চাহিদা কমে যায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।

সুযোগের অভাব: দরিদ্র পরিবারের শিশুরা মানসম্পন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুঁজি সংগ্রহের মতো মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, যা বৈষম্যের চক্রকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে টেনে নিয়ে যায়।

এই বৈষম্য নিরসনের কিছু সমাধান প্রস্তাব করেছেন বিশ্লেষকেরা:

১. প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা: ধনীদের ওপর সম্পত্তি কর, উত্তরাধিকার কর এবং উচ্চ আয়ের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করা।

২. ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি: জীবনধারণের উপযোগী ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের দর-কষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

৩. জনকল্যাণমূলক খাতে বিনিয়োগ: শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আবাসন এর মতো মৌলিক জনকল্যাণমূলক পরিষেবাগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।

৪. কর ফাঁকি রোধ: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর ফাঁকি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং কর স্বর্গ ব্যবহার বন্ধ করা।

৫. ঋণখেলাপি ও মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণ: ঋণখেলাপি এবং অপ্রদর্শিত বা অবৈধ সম্পদের মালিকদের (মাফিয়া) রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা দক্ষ ইতালির জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার টাইফুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১১
ইতালির প্রতিষ্ঠান লিওনার্দোর সঙ্গে ইউরো ফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারে লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ছবি: লিওনার্দোর সৌজন্যে
ইতালির প্রতিষ্ঠান লিওনার্দোর সঙ্গে ইউরো ফাইটার টাইফুন কেনার ব্যাপারে লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ছবি: লিওনার্দোর সৌজন্যে

ইউরো ফাইটার টাইফুনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা অঙ্গনে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মাল্টিরোল জঙ্গি বিমানটি তৈরি করে যৌথভাবে ইউরোপের তিন প্রতিষ্ঠান—এয়ারবাস, বিএই সিস্টেমস ও লিওনার্দো। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারও লিওনার্দোর সঙ্গে চতুর্থ প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানটি কেনার জন্য লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষর করেছে।

চার দশক পুরোনো মৌলিক নকশার ওপর দাঁড়ানো হলেও এর পরিমার্জিত সংস্করণ এখনো বহু দেশের আকাশ–রক্ষণে নির্ভরযোগ্য শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিমানটি মূলত চতুর্থ প্রজন্মের, তবে উন্নত রাডার, শক্তিশালী ইঞ্জিন, সুপার ক্রুজ ক্ষমতা এবং আধুনিক অ্যাভিওনিক্স যোগ হওয়ায় সামরিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে অনেক ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫ প্রজন্মের জঙ্গি বিমান হিসেবেও চিহ্নিত করেন।

টাইফুনের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কেন্দ্রে রয়েছে অত্যন্ত হালকা কিন্তু শক্তিশালী ডিজাইন। প্রায় ১৫ দশমিক ৯৬ মিটার লম্বা আর ১০ দশমিক ৯৫ মিটার উইংসপ্যানের এই বিমানটি জ্বালানি ও অস্ত্রশূন্য অবস্থায় ওজন প্রায় ১১ হাজার কেজি। এই যুদ্ধবিমানটির সর্বোচ্চ টেকঅফ ওজন ২৩ হাজার ৫০০ কেজির কাছাকাছি।

দুটি ইউরোজেট ইজে–২০০ টার্বোফ্যান ইঞ্জিন এর মূল শক্তি। প্রতিটি ইঞ্জিন প্রায় ৯০ কিলোনিউটন থ্রাস্ট তৈরি করতে সক্ষম। ফলে উচ্চগতির উড্ডয়ন থেকে শুরু করে ব্যতিক্রমী গতিবেগে চড়াই—সব ক্ষেত্রেই এটি স্থিতিশীল। সর্বোচ্চ গতি পাওয়া যায় মাক ২, অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। দীর্ঘ সময় উচ্চগতিতে উড়তে সক্ষম হওয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে টাইফুন বিশেষভাবে আস্থাভাজন। জ্বালানি ধারণক্ষমতা ও ড্রপ ট্যাংক যোগ করলে কার্যকরী পরিসর প্রায় ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এর সর্বোচ্চ উড্ডয়ন উচ্চতা প্রায় ৫৫ হাজার ফুট।

আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে সেন্সরশক্তিই মূল পার্থক্য তৈরি করে। এই বাস্তবতায় টাইফুনের উন্নত অ্যাভিওনিক্স বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সক্রিয় ইলেক্ট্রনিকালি স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ) রাডার লক্ষ্য শনাক্তকরণ ও ট্র্যাকিংয়ে উচ্চ কার্যকারিতা দেয়। পাশাপাশি ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক (আইআরএসটি) সেন্সর রাডার জ্যামিংয়ের পরিস্থিতিতেও শত্রু বিমানের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম। ককপিট পুরোপুরি পাইলটবান্ধব, হেড-আপ ডিসপ্লে, হেলমেট-মাউন্টেড ডিসপ্লে, হ্যান্ডস-অন-থ্রটল-অ্যান্ড-স্টিক সিস্টেম মিলিয়ে পাইলটের কাজে চাপ কমায় এবং প্রতিক্রিয়া সময়ও দ্রুততর হয়।

ইউরো ফাইটার টাইফুনে অন্তত ১৩টি হার্ডপয়েন্ট আছে, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা ও বাড়তি জ্বালানি ট্যাংকসহ বিভিন্ন অস্ত্র বহন করা যায়। ছবি: লিওনার্দোর সৌজন্যে
ইউরো ফাইটার টাইফুনে অন্তত ১৩টি হার্ডপয়েন্ট আছে, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা ও বাড়তি জ্বালানি ট্যাংকসহ বিভিন্ন অস্ত্র বহন করা যায়। ছবি: লিওনার্দোর সৌজন্যে

টাইফুনের সবচেয়ে বড় শক্তি এর অস্ত্রবহন ক্ষমতা। ১৩টি হার্ডপয়েন্টে সংযোজন করা যায় ভিন্নধর্মী অস্ত্র ও জ্বালানি ট্যাংক। আকাশযুদ্ধে ব্যবহার করা হয় এমবিডিএ মিটিওর, আইআরআইএস-টি বা এআইএম-১২০ এএমআরএএম এর মতো আধুনিক মিসাইল। এগুলো দূরপাল্লার বিয়ন্ড-ভিজ্যুয়াল-রেঞ্জ যুদ্ধেও উচ্চ কার্যকারিতা দেখায়। একই সঙ্গে ভূ-লক্ষ্যে আঘাত হানতে ব্যবহৃত হতে পারে স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ মিসাইল, ব্রিমস্টোন, জেডিএএম বা পেভওয়ে সিরিজের লেজার-গাইডেড বোমা। এই বহুমুখী ক্ষমতা টাইফুনকে শুধু এয়ার সুপিরিয়রিটি নয়, ব্যাপক হামলা ও প্রতিরক্ষামূলক মিশনেও কার্যকর করে তোলে।

তবে সীমাবদ্ধতা নেই তা নয়। পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ বিমানের তুলনায় টাইফুনের রাডার-ক্রস সেকশন বেশি। অ্যান্টি-অ্যাক্সেস এলাকায় স্টেলথের প্রয়োজনীয়তা যেখানে বাড়ছে, সেখানে টাইফুনকে প্রায়শই সহায়ক প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করে কাজ করতে হয়। সেন্সর-ফিউশন ও ডেটালিংক ক্ষমতা তুলনামূলক উন্নত হলেও এফ–৩৫ এর মতো ব্যাপক নেটওয়ার্ককেন্দ্রিক যুদ্ধক্ষেত্রে টাইফুন সেই মাত্রার সুবিধা দিতে পারে না।

তবুও এই যুদ্ধবিমান আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে এখনো গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেনের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ টাইফুন ব্যবহার করছে। সম্প্রতি তুরস্কের ৪০টি টাইফুন কেনার পরিকল্পনা আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে, যা ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের কৌশলগত প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। টাইফুনকে কেন্দ্র করে ন্যাটো সদস্যদের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিও আরও শৃঙ্খলিত হচ্ছে। এর বহুমুখী যুদ্ধক্ষমতা ন্যাটোর দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা (কিউআরএ) পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে স্টেলথ ও নেটওয়ার্কিং-নির্ভর ব্যবস্থা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তবে এর অর্থ এই নয় যে চতুর্থ বা ৪ দশমিক ৫ প্রজন্মের বিমানগুলো অচল হয়ে যাবে। বরং কম ব্যয়ে, উচ্চ নির্ভরযোগ্যতায় এবং উন্নত অস্ত্রের সমন্বয়ে টাইফুনের মতো প্ল্যাটফর্ম বহু দেশের কাছে ব্যবহারযোগ্য সমাধান হিসেবেই থাকবে। ইউরোপীয় নির্মাতাদের মতে, টাইফুনের ভবিষ্যৎ সংস্করণে স্টেলথ-সক্ষম প্রযুক্তি, উন্নত ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা এবং নতুন সেন্সর যুক্ত করে এটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

সামরিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ইউরো ফাইটার টাইফুন এখনো এমন একটি যুদ্ধবিমান, যা নিজের প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম নির্ভরযোগ্য এবং বহুমুখী প্ল্যাটফর্ম। এর গতি, অস্ত্র, সেন্সর ও প্রতিরক্ষা ক্ষমতার সমন্বয় বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে কৌশলগত মূল্য যোগ করে। যদিও পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা কঠিন, তবুও আকাশযুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা ও বহুমুখী মিশনে টাইফুন এখনো দেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এক সহায়ক অস্ত্র হিসেবেই বিবেচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামেনি, ট্রাম্প ‘থামিয়েছেন’ দাবি করা অন্য যুদ্ধগুলোর কী অবস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়ায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে নতুন করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল সোমবার দুই দেশের সেনাদের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন এবং উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো লড়াই চলতে থাকায় ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তি কার্যত ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের সময় প্রায় ৫০ জন নিহত এবং তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সে সময় ট্রাম্প দুই দেশকে চাপ দিয়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করান। এ ঘটনাকে তিনি ‘যুদ্ধ থামানোর’ সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি কমপক্ষে আটটি যুদ্ধ থামিয়েছেন। তাঁর এমন দাবি নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে। অনেকে বলেছেন, এতগুলো যুদ্ধ থামানোর পর তিনি হয়তো শান্তিতে নোবেল পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এসব সংঘাত অনেক ক্ষেত্রেই চলমান।

গাজায় বহু ধাপের যুদ্ধবিরতির পরও অক্টোবর থেকে ইসরায়েল চুক্তি ভেঙে ৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) ও রুয়ান্ডার মধ্যকার যে চুক্তিতে ট্রাম্প মধ্যস্থতা করেছিলেন, সেটিও লড়াই থামাতে পারেনি।

কুয়ালালামপুরে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তার কী অবস্থা

গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া প্রথম যুদ্ধবিরতি হয় আর অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপস্থিতিতে কুয়ালালামপুরে এর বিস্তৃত সংস্করণে দুই দেশ সম্মত হয়। ট্রাম্প সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের অংশগ্রহণের পর দুই দেশ যুদ্ধবিরতি ও শান্তিতে পৌঁছেছে। হাজারো প্রাণ বাঁচানো গেল!’

ওই চুক্তির মূল বিষয়গুলো ছিল—মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশ সামরিক উত্তেজনা কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মধ্যে ভারী অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া, সীমান্ত থেকে ল্যান্ডমাইন অপসারণ—সবই আসিয়ানের তত্ত্বাবধানে করার কথা ছিল। সংঘাত বাড়ানোর অন্যতম কারণ অনলাইন ‘ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ার’ বন্ধে দুই দেশ সম্মত হয়। কিন্তু অক্টোবরের পর থেকে নতুন সংঘর্ষ, পারস্পরিক অভিযোগ ও উত্তেজনা এই চুক্তিকে টালমাটাল করে দেয়।

গত মাসে থাইল্যান্ড জানায়, তাদের এক সেনা ল্যান্ডমাইনে আহত হওয়ায় তারা চুক্তি বাস্তবায়ন স্থগিত করছে।

কম্বোডিয়ার থিঙ্কট্যাঙ্ক ফিউচার ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ভিরাক ওউ আল-জাজিরাকে বলেন, চুক্তিটি কার্যত ‘চাপের মুখে’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাঁর দাবি, ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য শুল্কের হুমকি ছিল মুখ্য বিষয়।

থাই সামরিক নেতৃত্ব দেশটির রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। ভিরাক ওউ বলেন, থাই সামরিক নেতৃত্ব ‘ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে’ খুশি হয়নি। তাঁর মতে, আসিয়ানের পর্যবেক্ষকদের যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়নি এবং দুই দেশের জাতীয়তাবাদ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমি আশঙ্কা করছি, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘর্ষ আরও দীর্ঘ ও গভীর হতে পারে। এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে।’

ট্রাম্প যেসব যুদ্ধ ‘বন্ধ’ করার দাবি করেন, সেগুলোর বাস্তবতা কী

ট্রাম্প অনেকগুলো সংঘাত বা যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব দাবি করেন। এর মধ্যে রয়েছে—থাই-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাত, রুয়ান্ডা-ডিআরসি সংঘর্ষ, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, মিসর-ইথিওপিয়া উত্তেজনা ও সার্বিয়া-কসোভো বিরোধ। এগুলোর কিছুতে ট্রাম্প সরাসরি জড়িত ছিলেন, কিছুতে তাঁর ভূমিকা বিতর্কিত আর কিছু সংঘাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষরা তাঁর মধ্যস্থতার প্রভাব স্বীকার করে।

ট্রাম্প দাবি করেন, এতগুলো যুদ্ধ থামিয়ে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে, এসব যুদ্ধের কোনোটিই থামেনি, বরং চলছে।

ইসরায়েল-গাজা ও ইরান যুদ্ধ এখনো চলছে

ট্রাম্প প্রশাসন গাজায় গণহত্যা থামানোর দাবি করলেও ইসরায়েলে তাদের অস্ত্র সহায়তা ও কূটনৈতিক সুরক্ষা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্প অবশ্য স্বীকার করেন, তিনি আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় ইসরায়েলকে যুদ্ধ থামাতে বেশি চাপ দিয়েছেন।

গত জুনে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, এ সময় ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, বিজ্ঞানী ও আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। পরে তা শেষ হয় ট্রাম্পের চাপে।

কিন্তু এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এরপর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত বন্ধে কার কৃতিত্ব

মে মাসে ভারত ও পাকিস্তান আকাশযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। টানা চার দিনের এই সংঘাতে তারা একে অন্যের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ভারত দাবি করে—তারা পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে জঙ্গি আস্তানায় আঘাত করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান বলে, ভারতের হামলায় বহু সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।

চার দিনের লড়াইয়ের পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। পাকিস্তান ট্রাম্পের ভূমিকা স্বীকার করলেও ভারত বলেছে, ট্রাম্প কোনো ভূমিকাই রাখেননি।

কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সংঘাত বন্ধে ট্রাম্পের ভূমিকা

ট্রাম্প ছাড়াও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও চীনা আলোচক দল এই চুক্তি বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছিল। তবে এখন পর্যন্ত কেবল কম্বোডিয়াই ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

সার্বিয়া-কসোভো যুদ্ধ নেই, কিন্তু উত্তেজনা আছে

সার্বিয়া-কসোভোর মধ্যে উত্তেজনা বহুদিনের। ২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এক চুক্তি হয়। উত্তেজনা বজায় থাকলেও ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দুই দেশ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়ায়নি।

মিসর-ইথিওপিয়ায় যুদ্ধ নয়, বরং রাজনৈতিক উত্তেজনা

ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি মিসর-ইথিওপিয়ার মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তারা কখনো যুদ্ধেই জড়ায়নি। মূল উত্তেজনা ছিল নীল নদের ওপর নির্মিত ইথিওপিয়ার বিশাল জলবিদ্যুৎ বাঁধকে ঘিরে।

রুয়ান্ডা-ডিআরসি শান্তিচুক্তি হলেও উত্তেজনা স্থায়ী

জুন মাসে রুয়ান্ডা-ডিআরসির মধ্যে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তি হয়। কিন্তু উত্তেজনা এখনো তীব্র। ২ ডিসেম্বর ডিআরসি অভিযোগ করেছে, রুয়ান্ডা চুক্তি লঙ্ঘন করছে।

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান চুক্তি হলেও দেশগুলোর নাম গুলিয়ে ফেলেন ট্রাম্প

গত আগস্টে হোয়াইট হাউসে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়। এর মাধ্যমে দুই দেশ ১৯৯১ সাল থেকে চলমান ঘন ঘন সংঘাত বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে পরে ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি আজারবাইজান ও আলবেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছেন, যা বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি অসংগত। কারণ, চুক্তি হয়েছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে আর ট্রাম্প বলেন, আজারবাইজান ও আলবেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছেন!

সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প অনেক ক্ষেত্রে শুধু অস্থায়ী সমাধান করেছেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী শান্তির ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেননি। কসোভো-সার্বিয়া, মিসর-ইথিওপিয়া কিংবা রুয়ান্ডা-কঙ্গোর মতো জায়গায় এখনো গভীর সমস্যা রয়ে গেছে। ইউক্রেনের দিকে তাকালেই এর প্রমাণ মেলে। পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার পরেও এই যুদ্ধ বন্ধে এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান আনতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত