Ajker Patrika

পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পরিণতি ভয়ংকর, কিন্তু থামানোর কেউ নেই

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের মিসাইল হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের করাচিতে পিপলস পার্টির বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
ভারতের মিসাইল হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের করাচিতে পিপলস পার্টির বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

ভারত ও পাকিস্তান—দুই প্রতিবেশী পারমাণবিক শক্তিধর দেশ বর্তমানে এমন এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি, যা সহজে ভয়াবহ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। ভারতের কাশ্মীরে গত মাসে (এপ্রিল) ঘটে যাওয়া নৃশংস হামলায় ২৫ জন ভারতীয় পর্যটক এবং এক গাইড নিহত হওয়ার পর থেকে অঞ্চলটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। এ ঘটনার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ভারত।

কাশ্মীরের ঘটনায় ভারতের জনগণও ক্ষোভে ফেটে পড়ে। হিন্দু পরিচয়ের কারণে পর্যটকদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে—জাতীয় গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার দাবি ওঠে। তবে দুই সপ্তাহ পার হলেও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা না যাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন জাগে—ভারত কি আদৌ কিছু করবে।

এই প্রশ্নের জবাব আসে বুধবার (৭ মে) ভোররাতে। ভারতের সমন্বিত ড্রোন ও বিমান হামলায় পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাঞ্জাব প্রদেশের নয়টি স্থাপনায় মিসাইল হামলা চালানো হয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম ভারত পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে এমন হামলা চালিয়েছে। ভারত দাবি করেছে, তারা শুধু জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবা ও জইশ-ই-মুহাম্মদের ঘাঁটি ও মাদ্রাসাগুলোকেই নিশানা করেছে, কোনো সামরিক ঘাঁটি নয়।

এই হামলা পাকিস্তানের কাছে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য। পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে—যদিও ভারত এই তথ্য নিয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু বলেনি। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলাকে ‘আগুনে ঘি ঢালা’ বলেছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হামলার জবাবে পাল্টা সামরিক হামলার অনুমতি দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ভার পড়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের ওপর। কট্টর ভারতবিদ্বেষী মতাদর্শী হিসেবে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুনির কূটনীতির চেয়ে সামরিক শক্তির প্রদর্শনকেই বেশি প্রাধান্য দেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ভারতীয় মিসাইল হামলার একটি লক্ষ্য ছিল পাঞ্জাবের একটি মসজিদ। এই অঞ্চল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাণকেন্দ্র। সেখানে পাকিস্তানের অধিকাংশ সেনা ও শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব অবস্থান করেন। এই অঞ্চলে গত ৫০ বছরেও কোনো মিসাইল হামলা হয়নি। তাই সেখানে ভারতের মিসাইল হামলাকে অত্যন্ত উসকানিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, অতীতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র অনেকবার মধ্যস্থতার ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তারা তো বহু বছর ধরেই লড়ছে। আমি শুধু চাই, এটি দ্রুত শেষ হোক।’ ট্রাম্পের এমন বক্তব্য মার্কিন নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততার ইঙ্গিত দেয় বলে মত দিয়েছেন গার্ডিয়ানের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রতিবেদক হান্নাহ ইলিস-পিটারসেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকার মতে, এই প্রথম ভারত ও পাকিস্তান একা হয়ে পড়েছে। কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ না থাকলে দ্বিপক্ষীয় সংঘর্ষ অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, এই দুই দেশকে সংঘাতের পথ থেকে থামাবে কে? সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, আর প্রতিটি ঘণ্টা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

পাকিস্তানে হামলার ব্রিফিংয়ে নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়ালেন ২ নারী কর্মকর্তা

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লাভবান চীন, নাজুক অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত