বিশ্বের বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ইউএস ডলার সঞ্চয় করে। তাই দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ ‘রিজার্ভ কারেন্সি’ হিসেবে এর অবস্থান ছিল শীর্ষে। ২০২২ সালেও যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাটি এই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিল। স্বর্ণ, সুইস ফ্রাঁ, জাপানি ইয়েন ও বিটকয়েন একে ছুঁতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার? এই প্রশ্ন এখন অনেকের।
করোনা মহামারি থেকে ঘুরে না দাঁড়াতেই বিশ্ব এক যুদ্ধের মধ্যে পড়ে মূল্যস্ফীতির হার হঠাৎ উচ্চ হয়ে যায়। আর এই মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ যখন সুদের হার বাড়াল, তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফার আশায় ডলার মজুত করতে উঠে পড়ে লাগেন। চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়ে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় উঠে আসে ডলার।
কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করে ফেডারেল রিজার্ভ কখন সুদের হার কমাবে, সে জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ সুদের হার কমলে ঋণ নেওয়া ও বিনিয়োগ করা সহজ হয়। তখন তাঁরা নিরাপদ সঞ্চয়ের মাধ্যম বন্ড ছেড়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
এমন সময়ে প্রধান কয়েকটি বিদেশি মুদ্রার গড় মূল্যের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার তুলনার সূচক বা ইউএস ডলার ইনডেক্স আগের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ১০ শতাংশ কমে যায়। ব্যাংক খাতে সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কায় পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি হলেও ফের ডলারের দরপতন হয়।
ইন্টারেক্টিভ ইনভেস্টরের বিনিয়োগ বিষয়ক প্রধান ভিক্টোরিয়া স্কলার বলেন, ‘গত বছরের আধিপত্যের পর দুর্বল ডলারকে অনেকেই স্বাগত জানাবেন। কারণ ডলার দুর্বল হলে বিদেশিদের কাছে আমেরিকান পণ্য সস্তা হবে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারকে চাঙা করতে পারে। তাছাড়া গ্রিনব্যাক নামে পরিচিত ডলারের সাফল্যকে মুনাফার পথের কাঁটা মনে করে অ্যাপল, আমাজন, টেসলা, নাইকিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ ডলার শক্তিশালী হলে এদের পণ্যের চাহিদা কমে যায়।’
মিস স্কলার আরও বলেন, ‘গ্রিনব্যাকের ঔজ্জ্বল্য কমলে জ্বালানি তেল, স্বর্ণ ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কারণ বিদেশিরা কম দামে এসব পণ্য কিনতে পারবেন। তখন ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো রপ্তানিনির্ভর উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো এসব পণ্য কিনতে উৎসাহিত হবে। তাছাড়া ডলার শক্তিশালী থাকলে এসব দেশের ঋণ পরিশোধের খরচও বেড়ে যায়। যদি ডলার এভাবে দুর্বল হতে থাকে, তবে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মূল্যস্ফীতির হারও কমবে। কারণ ডলারের বিপরীতে তাদের নিজস্ব মুদ্রা শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
মুদ্রার দাম সব সময়ই ওঠা-নামা করে। কিন্তু রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা ধরে রাখতে ডলার দীর্ঘমেয়াদি বাধার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাছাড়া সবাই মার্কিন নিয়মে খেলতে পছন্দ করে না। ডলারের আধিপত্য থামাতে চায় রাশিয়া ও চীন। শুধু তারাই নয়, ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ পূর্ব এশিয়ার জন্য স্বর্ণের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে অভিন্ন মুদ্রার ধারণার প্রস্তাব করেছিলেন।
এ শতাব্দীর শুরুতে সারা বিশ্বে ৭৫ শতাংশ অর্থনীতি ডলারকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএফএফ) বলছে, এখন তা ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে এবং তা কমতে থাকবে।
ডলারের এই ‘রিজার্ভ মুদ্রার’ মর্যাদা যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক শক্তিও জোগায়। প্রায়ই এ শক্তির ব্যবহার করতে দেখা যায় দেশটিকে। যেমন ইউক্রেনে আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো গত বছর রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার জব্দ করেছে। দেশটিকে শায়েস্তা করতে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সুইফ্ট থেকে রুশ ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগ বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম বেস্টইনভেস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেসন হল্যান্ডস বলেছেন, ‘এভাবে ডলারকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা শুধু রাশিয়াকে নয়, আরও অনেক দেশকে বিচলিত করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক দেশগুলো এখন ডলারের ব্যবহার বন্ধ করতে শুরু করেছে- যেমন ভারত ও চীন। তারা ডলারের পরিবর্তে রুপি ও চীনা মুদ্রা ইউয়ান রেনমিনবি দিয়ে বাণিজ্য করছে রাশিয়ার সঙ্গে। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এখন শুরু হয়েছে ‘ডি-ডলারাইজেশন’ নিয়ে আলোচনা। এক হিসেবে বলা যায় আস্তে আস্তে আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার।
হল্যান্ডস আরও বলেন, ব্রাজিল ও চীন এখন পারস্পরিক বাণিজ্য ইউয়ান দিয়ে করছে, যা চীনের মুদ্রার রেনমিনবিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে সাহায্য করছে।
সেঞ্চুরি ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিজয় ভালেচা বলেছেন, ‘চীন ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইউয়ানের গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলছে। কারণ তারা রেনমিনবি ব্যবহার করে আরও নির্দিষ্ট হারে বাণিজ্য করতে পারছে।’
ভ্যালেচা আরও বলেন, কথিত এই ‘পেট্রোয়ুয়ান’ ডলারের আধিপত্যে বড় বাধা হয়ে উঠবে। এমনকি জি-১০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো ডলার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’
ট্রেড নেশনের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক ডেভিড মরিসন বলেছেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে ডলারের মৃত্যুঘণ্টা নিয়ে কত রকমের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি। তবে চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব ও ইরান জ্বালানি বাণিজ্য থেকে এবং ডলার ব্যবহার থেকে দূরে সরে এসেছে। এতে ডলার কিছুটা দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।’
এইচওয়াইসিএমের প্রধান বাজার বিশ্লেষক গাইলস কোঘলান বলেছেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে ডলারের রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা হারাবে- এমনটা ভাবা কঠিন। তবুও কতক অর্থনীতিবিদের ভবিষ্যদ্বাণী, চীনের জিডিপি ২০৩০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। তাই পরবর্তী দশকটি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
কোঘলান আরও বলেন, ‘ইউয়ানের কাছে যদি রিজার্ভ স্ট্যাটাস হারায়, তাহলে গ্রিনব্যাকের চাহিদা অনেক কমে যাবে এবং ইউরোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রাগুলোর চাহিদা বাড়িয়ে তুলবে।’
কোঘলানের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি বন্ডের চাহিদা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণ নেওয়ার খরচ বেড়ে যাবে। তখন দেশটির ঋণও উল্লেখযোগ্য গতিতে বাড়বে। এর রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেশি হবে। চীন তখন বিশ্বে প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পদ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামরিক শক্তি, আইনের শাসন, সম্পত্তির অধিকার ও অত্যাধুনিক আর্থিক ব্যবস্থা—এ সবকিছুর ওপর ভিত্তি করেই ডলারের শক্তি গড়ে উঠেছে। এসবের কোনোটিই রাতারাতি বিলীন হবে না। তবে বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের মাত্র ৭ শতাংশ ইউয়ানে হলেও তা খুব দ্রুত বাড়ছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো মার্কিন ডলারের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু চীনের প্রভাব ও শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও দেশ ইউয়ান ব্যবহার শুরু করবে। তবে কি সকল ‘মুদ্রার রাজা’র আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার? সেই সময় কবে আসবে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে রাজমুকুট হারানোর মতো পরিস্থিতি বহু দূরে- এক শতাব্দী পর এমনটি ঘটতে পারে।
সূত্র: সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল
অনুবাদ: তুষার পাল
আরও খবর পড়ুন:
বিশ্বের বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ইউএস ডলার সঞ্চয় করে। তাই দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ ‘রিজার্ভ কারেন্সি’ হিসেবে এর অবস্থান ছিল শীর্ষে। ২০২২ সালেও যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাটি এই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিল। স্বর্ণ, সুইস ফ্রাঁ, জাপানি ইয়েন ও বিটকয়েন একে ছুঁতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার? এই প্রশ্ন এখন অনেকের।
করোনা মহামারি থেকে ঘুরে না দাঁড়াতেই বিশ্ব এক যুদ্ধের মধ্যে পড়ে মূল্যস্ফীতির হার হঠাৎ উচ্চ হয়ে যায়। আর এই মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ যখন সুদের হার বাড়াল, তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফার আশায় ডলার মজুত করতে উঠে পড়ে লাগেন। চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়ে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় উঠে আসে ডলার।
কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করে ফেডারেল রিজার্ভ কখন সুদের হার কমাবে, সে জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ সুদের হার কমলে ঋণ নেওয়া ও বিনিয়োগ করা সহজ হয়। তখন তাঁরা নিরাপদ সঞ্চয়ের মাধ্যম বন্ড ছেড়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
এমন সময়ে প্রধান কয়েকটি বিদেশি মুদ্রার গড় মূল্যের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার তুলনার সূচক বা ইউএস ডলার ইনডেক্স আগের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ১০ শতাংশ কমে যায়। ব্যাংক খাতে সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কায় পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি হলেও ফের ডলারের দরপতন হয়।
ইন্টারেক্টিভ ইনভেস্টরের বিনিয়োগ বিষয়ক প্রধান ভিক্টোরিয়া স্কলার বলেন, ‘গত বছরের আধিপত্যের পর দুর্বল ডলারকে অনেকেই স্বাগত জানাবেন। কারণ ডলার দুর্বল হলে বিদেশিদের কাছে আমেরিকান পণ্য সস্তা হবে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারকে চাঙা করতে পারে। তাছাড়া গ্রিনব্যাক নামে পরিচিত ডলারের সাফল্যকে মুনাফার পথের কাঁটা মনে করে অ্যাপল, আমাজন, টেসলা, নাইকিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ ডলার শক্তিশালী হলে এদের পণ্যের চাহিদা কমে যায়।’
মিস স্কলার আরও বলেন, ‘গ্রিনব্যাকের ঔজ্জ্বল্য কমলে জ্বালানি তেল, স্বর্ণ ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কারণ বিদেশিরা কম দামে এসব পণ্য কিনতে পারবেন। তখন ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো রপ্তানিনির্ভর উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো এসব পণ্য কিনতে উৎসাহিত হবে। তাছাড়া ডলার শক্তিশালী থাকলে এসব দেশের ঋণ পরিশোধের খরচও বেড়ে যায়। যদি ডলার এভাবে দুর্বল হতে থাকে, তবে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মূল্যস্ফীতির হারও কমবে। কারণ ডলারের বিপরীতে তাদের নিজস্ব মুদ্রা শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
মুদ্রার দাম সব সময়ই ওঠা-নামা করে। কিন্তু রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা ধরে রাখতে ডলার দীর্ঘমেয়াদি বাধার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাছাড়া সবাই মার্কিন নিয়মে খেলতে পছন্দ করে না। ডলারের আধিপত্য থামাতে চায় রাশিয়া ও চীন। শুধু তারাই নয়, ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ পূর্ব এশিয়ার জন্য স্বর্ণের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে অভিন্ন মুদ্রার ধারণার প্রস্তাব করেছিলেন।
এ শতাব্দীর শুরুতে সারা বিশ্বে ৭৫ শতাংশ অর্থনীতি ডলারকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএফএফ) বলছে, এখন তা ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে এবং তা কমতে থাকবে।
ডলারের এই ‘রিজার্ভ মুদ্রার’ মর্যাদা যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক শক্তিও জোগায়। প্রায়ই এ শক্তির ব্যবহার করতে দেখা যায় দেশটিকে। যেমন ইউক্রেনে আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো গত বছর রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার জব্দ করেছে। দেশটিকে শায়েস্তা করতে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সুইফ্ট থেকে রুশ ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগ বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম বেস্টইনভেস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেসন হল্যান্ডস বলেছেন, ‘এভাবে ডলারকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা শুধু রাশিয়াকে নয়, আরও অনেক দেশকে বিচলিত করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক দেশগুলো এখন ডলারের ব্যবহার বন্ধ করতে শুরু করেছে- যেমন ভারত ও চীন। তারা ডলারের পরিবর্তে রুপি ও চীনা মুদ্রা ইউয়ান রেনমিনবি দিয়ে বাণিজ্য করছে রাশিয়ার সঙ্গে। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এখন শুরু হয়েছে ‘ডি-ডলারাইজেশন’ নিয়ে আলোচনা। এক হিসেবে বলা যায় আস্তে আস্তে আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার।
হল্যান্ডস আরও বলেন, ব্রাজিল ও চীন এখন পারস্পরিক বাণিজ্য ইউয়ান দিয়ে করছে, যা চীনের মুদ্রার রেনমিনবিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে সাহায্য করছে।
সেঞ্চুরি ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিজয় ভালেচা বলেছেন, ‘চীন ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইউয়ানের গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলছে। কারণ তারা রেনমিনবি ব্যবহার করে আরও নির্দিষ্ট হারে বাণিজ্য করতে পারছে।’
ভ্যালেচা আরও বলেন, কথিত এই ‘পেট্রোয়ুয়ান’ ডলারের আধিপত্যে বড় বাধা হয়ে উঠবে। এমনকি জি-১০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো ডলার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’
ট্রেড নেশনের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক ডেভিড মরিসন বলেছেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে ডলারের মৃত্যুঘণ্টা নিয়ে কত রকমের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি। তবে চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব ও ইরান জ্বালানি বাণিজ্য থেকে এবং ডলার ব্যবহার থেকে দূরে সরে এসেছে। এতে ডলার কিছুটা দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।’
এইচওয়াইসিএমের প্রধান বাজার বিশ্লেষক গাইলস কোঘলান বলেছেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে ডলারের রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা হারাবে- এমনটা ভাবা কঠিন। তবুও কতক অর্থনীতিবিদের ভবিষ্যদ্বাণী, চীনের জিডিপি ২০৩০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। তাই পরবর্তী দশকটি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
কোঘলান আরও বলেন, ‘ইউয়ানের কাছে যদি রিজার্ভ স্ট্যাটাস হারায়, তাহলে গ্রিনব্যাকের চাহিদা অনেক কমে যাবে এবং ইউরোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রাগুলোর চাহিদা বাড়িয়ে তুলবে।’
কোঘলানের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি বন্ডের চাহিদা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণ নেওয়ার খরচ বেড়ে যাবে। তখন দেশটির ঋণও উল্লেখযোগ্য গতিতে বাড়বে। এর রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেশি হবে। চীন তখন বিশ্বে প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পদ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামরিক শক্তি, আইনের শাসন, সম্পত্তির অধিকার ও অত্যাধুনিক আর্থিক ব্যবস্থা—এ সবকিছুর ওপর ভিত্তি করেই ডলারের শক্তি গড়ে উঠেছে। এসবের কোনোটিই রাতারাতি বিলীন হবে না। তবে বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের মাত্র ৭ শতাংশ ইউয়ানে হলেও তা খুব দ্রুত বাড়ছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো মার্কিন ডলারের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু চীনের প্রভাব ও শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও দেশ ইউয়ান ব্যবহার শুরু করবে। তবে কি সকল ‘মুদ্রার রাজা’র আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার? সেই সময় কবে আসবে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে রাজমুকুট হারানোর মতো পরিস্থিতি বহু দূরে- এক শতাব্দী পর এমনটি ঘটতে পারে।
সূত্র: সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল
অনুবাদ: তুষার পাল
আরও খবর পড়ুন:
শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে কূটনৈতিক পর্যায়ে বাগ্যুদ্ধের পর প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশ সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৭ ঘণ্টা আগেআব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই ‘পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে এবং পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূল
১ দিন আগেএই ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালায়। তবে এই ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে
১ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সেলেম স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কানিষ্কম সাতাশিভম নিউজউইককে বলেন, জনসংখ্যা এবং জিডিপির ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা থাকলেও দুই দেশের সামরিক শক্তি ‘ততটা ভিন্ন নয়।’ তিনি জানান, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে যে তাদের সক্ষমতা ‘অন্তত ভারতের
১ দিন আগে