Ajker Patrika

যেখানে মিলেছে ‘কামসূত্র’ নির্মাতা মীরা নায়ার ও তাঁর পুত্র মামদানির সংগ্রাম

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ২১: ৩০
চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার ও মার্কিন রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার ও মার্কিন রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

এই বছরের নভেম্বরে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। ২৪ জুন অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বের নির্বাচনে তিনি নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোসহ প্রায় এক ডজন প্রার্থীকে পরাজিত করে রীতিমতো ইতিহাস গড়েছেন।

বলাবাহুল্য, চূড়ান্তভাবে মেয়র হওয়ার আগেই মামদানিকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এই মাতামাতির পেছনে তাঁর ‘মুসলিম’ পরিচয়টি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তবে মামদানির সমৃদ্ধ অবস্থানের পেছনে তাঁর পরিবারের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই। বাবা উগান্ডার এক অধ্যাপক হলেও মামদানির মা হলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার।

১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কামসূত্র: অ্যা টেল অব লাভ’ চলচ্চিত্রটি মীরা নায়ারকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিল। সাহসী ও দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনায় নির্মিত এই সিনেমা পরে কামনার, প্রেমের ও নারীর আত্ম-অন্বেষণের এক বিপুল অনুরণন হয়ে ওঠে। সেই সময় ভারতীয় সমাজের প্রচলিত নৈতিক ধ্যানধারণায় একটি বড়সড় ধাক্কা দিয়েছিল এই সিনেমা। মীরা নায়ার নিজের ভেতরের ভারতকে তুলে ধরেছিলেন সেই চোখ দিয়ে—যা যৌনতা, শরীর ও সম্পর্ককে নিষিদ্ধ নয়, বরং জীবনের স্বাভাবিক ও কাব্যময় উপাদান হিসেবে দেখে।

বিশ্লেষকদের মতে, মীরার সিনেমায় যে রাজনৈতিকতা রয়েছে, তা কখনোই স্লোগানে বন্দী নয়—বরং তা চুপচাপ নারী চরিত্রের চোখে, শরীরী ভাষায় এবং শ্রেণি ও সংস্কৃতির সংঘাতে ফুটে ওঠে। ‘কামসূত্র’ চলচ্চিত্রের দুই নায়িকা মায়া ও তারা। তাদের একজন দাসী, অন্যজন রাজকন্যা। তাদের সম্পর্ক, কামনা ও ক্ষমতার যাত্রাপথে খুঁজে পাওয়া যায় এক অন্তর্গত বিপ্লবের আভাস। এ ছবি শুধু কামনার নয়, বরং প্রতিরোধের, শরীরের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ দাবি করার এক রাজনৈতিক ভাষ্যও।

নির্মাতা মীরা নায়ার একসময় হার্ভার্ডে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন। বিয়ে করেছেন আফ্রিকান এক অধ্যাপককে। আফ্রিকা ও ভারত দুই মহাদেশেই জীবনের শেকড় ছড়িয়ে তিনি তাঁর পুত্র জোহরান মামদানিকে গড়ে তুলেছেন এক আলাদা রাজনৈতিক ভাবনায়। নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন। শ্রেণিবৈষম্য, বর্ণবাদ ও আবাসন-সংকটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনিও একধরনের ক্ষমতার কাঠামো ভাঙার রাজনীতি করেন।

এই মা-পুত্রের একজন শরীরী স্বাধীনতার গল্প বলেন ক্যামেরার ভাষায়, আরেকজন নগরের দরিদ্র মানুষের পক্ষে কথা বলেন রাজনৈতিক সভায়। সেই অর্থে তাঁরা দুজনই রাজনীতিক, তবে তাঁদের ভাষা ও মঞ্চ আলাদা। কিন্তু মূল সুর একটাই—অধিকারের প্রশ্নে আপস নয়।

মীরা নায়ার যখন কামসূত্র নির্মাণ করছিলেন, তখন হয়তো ভাবেননি তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সাহসের এই ধারাকে রাজনৈতিক বাস্তবতায় রূপ দেবে। সিনেমা নির্মাতা মা আর রাজনীতিবিদ পুত্রের আদর্শিক সংগ্রাম যেন তাই উভয়ের ভেতরেই বিদ্রোহ, কামনা ও মানবিক মর্যাদার এক গভীর সেতুবন্ধ রচনা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত