জাহাঙ্গীর আলম
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
জাহাঙ্গীর আলম
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:

নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী এই যুবকের ঐতিহাসিক জয়ে যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ তাঁর ক্যারিশমা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতির দিকে, তখন পর্দার আড়ালে থাকা এক কৌশলীর কথা উঠে আসছে
৮ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তপারের রাজনীতি খুব কম সময়ই শান্ত থেকেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের বড় নদীগুলোকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তাল, অস্থির হয়ে উঠেছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে আফগানিস্তান কাবুল নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই মাসে হাজারো
২ দিন আগে
পরবর্তী দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ‘অ্যালগরিদমের ভয়’ নয়, বরং বিদ্যুতের টানাপোড়েন। হাইপারস্কেলার নামে পরিচিত বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখনই এমন গিগাওয়াটের বিদ্যুৎ আগাম কিনছে, যা এখনো বাস্তবে পাওয়া যায়নি। দেশগুলো তড়িঘড়ি করে সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন করিডর অনুমোদন দিচ্ছে। আর এই বিশৃঙ্খল
২ দিন আগে
এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী এই যুবকের ঐতিহাসিক জয়ে যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ তাঁর ক্যারিশমা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতির দিকে, তখন পর্দার আড়ালে থাকা এক কৌশলীর কথা উঠে আসছে—যিনি এই বিজয়ের রণনীতি তৈরি করেছিলেন। তিনি হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জারা রহিম। এই বিজয়ের মাধ্যমে মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় এবং এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
৩৫ বছর বয়সী জারা রহিম এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং ডিজিটাল কৌশলের এক মিথস্ক্রিয়ার মহাযজ্ঞে কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মামদানির সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া জারাই প্রচারের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। তাঁর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাটি ছিল— ‘রাজনৈতিক কৌশলবিদদের তৈরি নিউইয়র্ককে ভুলে যান। বরং প্রকৃত নিউইয়র্ক সিটি নিয়ে প্রচার শুরু করুন।’
এই মন্ত্রই মামদানির প্রচারকে একটি জনমুখী প্রচারাভিযানে পরিণত করে। জারা যুক্তি দেন, নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক এলিটরা যেই ভোটারদের দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করেছেন, তাদেরই এখানে যুক্ত করতে হবে। এই কৌশল অবলম্বন করে ৯০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে একত্র করা সম্ভব হয়। নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মুসলিম বাসিন্দা রয়েছে এবং এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই জয়ের মূল শক্তি হয়ে ওঠে।
জারা রহিম বলেন, বহু ‘বাংলাদেশি চাচা এবং পশ্চিম আফ্রিকার খালা’ রয়েছেন, যাঁরা আগে কখনো মেয়রের প্রাথমিক নির্বাচনে ভোট দেননি। তিনি বলেন, ‘তারা এমন একজনকে দেখছেন, যিনি তাঁদের মসজিদে যাচ্ছেন এবং তাঁদের এলাকাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
জারা রহিমের কর্মজীবন রাজনীতি, ডিজিটাল কৌশল এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক দশকের বেশি সময় ধরে বিস্তৃত।
প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশি আমেরিকান জারা রহিম ফ্লোরিডায় বেড়ে ওঠেন। ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা (ইউসিএফ) থেকে যোগাযোগ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি ডিজিটাল প্রচার এবং জনসম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় ২০১২ সালে বারাক ওবামার পুনর্নির্বাচন প্রচারণার মাধ্যমে। তিনি প্রচারণায় ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দিলেও দ্রুতই ফ্লোরিডার ডিজিটাল কনটেন্ট ডিরেক্টর পদে উন্নীত হন। এই ভূমিকায় তিনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভোটারদের নিবন্ধন করানো এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করে তোলার কৌশল আয়ত্ত করেন।
ওবামা প্রচারণার সাফল্যের পর জারা ওবামা প্রশাসনের হোয়াইট হাউস অফিস অব ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম ডিজিটাল উদ্ভাবনী প্রেসিডেন্সির অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করেন।
হোয়াইট হাউসের পর জারা উবারে যোগ দেন। এখানে তিনি রাইড শেয়ারিং-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে সহায়তা করেন। গল্প বলার মতো করে কীভাবে জননীতি তৈরি করা যায়, সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এখানে।
এরপর ২০১৬ সালে তিনি হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও কাজ করেন।
২০১৬ সালের প্রচারণার পরে জারা রাজনীতি থেকে সরে এসে ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করেন। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি বিখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এটি তাঁর কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এখানে তিনি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া থেকে সাংস্কৃতিক গল্প বলার দিকে মনোযোগ দেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘রাজনীতিই সংস্কৃতি।’ ভোগে কাজ করার মাধ্যমে শিল্প, ফ্যাশন ও রাজনীতির সংযোগস্থলে কীভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করতে হয় এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা করতে হয়, সেটি ভালো করে শেখেন জারা।
ভোগ ছাড়ার পর জারা রহিম স্বাধীন যোগাযোগ পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন।
তাঁর ক্লায়েন্টদের মধ্যে ছিল এ২৪ (A24), গায়িকা মারিয়া কেরি এবং নেটফ্লিক্সের মতো প্রতিষ্ঠান ও তারকারা।
তাঁর মূল নীতি ছিল—বাহ্যিক চাকচিক্যের চেয়ে ‘খাঁটি বিশ্বাসযোগ্যতা’ (অথেনটিক) দিয়ে যেকোনো কিছুর সূচনা করা।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জারা জোহরান মামদানির ‘সিনিয়র উপদেষ্টা’ হিসেবে তাঁর মেয়র নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে যোগ দেন। বলতে গেলে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সাফল্যটিও অর্জন করেন এই প্রকল্পেই।
এই নির্বাচনী প্রচারে তাঁর দেওয়া নির্দেশনাটি ছিল—‘রাজনৈতিক কৌশলবিদদের তৈরি নিউইয়র্ককে ভুলে যান। বরং প্রকৃত নিউইয়র্ক সিটি নিয়ে প্রচার শুরু করুন।’ তিনি সব সময় নিশ্চিত করতে চেয়েছেন যেন ডিজিটাল প্রচারের সাফল্যের সঙ্গে তৃণমূলে সত্যিকারের জনসম্পৃক্ততা বজায় থাকে। এই কৌশলের মাধ্যমে মামদানি বাংলা, স্প্যানিশ এবং হিন্দি ভাষার মতো বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে—এমন প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছান। যা নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিতে উপেক্ষিত ছিল।
জারার কৌশল ও নির্দেশনার ফলস্বরূপ মামদানির দল ১৬ লাখ বার মানুষের দরজায় কড়া নেড়েছে এবং ৯০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে কাজে লাগাতে সমর্থ হয়।
জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয়ের পরে, জারা সাবেক ফেডারেল ট্রেড কমিশন চেয়ার লিনা খানের পাশাপাশি ‘ট্রানজিশন দলের’ সদস্য হিসেবে প্রশাসনকে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। এই ট্রানজিশনের টিমের সবাই নারী। যেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লিনা খান একজন অ্যান্টিট্রাস্ট বিশেষজ্ঞ। বাইডেন প্রশাসনে তাঁর নেতৃত্বেই বাজারের একাধিপত্যের আইন লঙ্ঘনের জন্য অ্যামাজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
মাঠপর্যায়ের কর্মীরা জানান, এই প্রচারে চিরাচরিত ভোট সংগ্রহের ‘সংস্কৃতিকে ব্যবহারের’ (Culture of Extraction) পরিবর্তে ‘যোগাযোগের সংস্কৃতি’ তৈরি করা হয়েছিল। প্রাথমিক নির্বাচনের সময়ই স্বেচ্ছাসেবকেরা ১৬ লাখবার মানুষের দরজায় কড়া নেড়েছিলেন এবং ভোটারদের সঙ্গে ২ লাখ ৪৭ হাজারেরও বেশিবার কথোপকথন করেছিলেন। এই সংখ্যা সাধারণ নির্বাচনী প্রচারের চেয়ে অনেক বেশি।
যখন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, সেটিকে মামদানির সমর্থকেরা ইসলাম বিদ্বেষ বলে মনে করেন। তখন জারা রহিম দ্রুত কুমোর কৌশলের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘তিনি (কুমো) কেবল একজন খারাপ মুসলমানকে দেখিয়ে মুসলিমদের সমর্থন পেতে চেয়েছেন—এটাকে বলা যায় একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের মরিয়া কৌশল, যার মুসলিমদের কাছে বলার মতো আর কিছুই নেই।’
এই জয়ের পেছনে জারা রহিমের পাশাপাশি মায়া হান্দা, ফিল্ড ডিরেক্টর তাসচা ভ্যান অকেন এবং ফাইজা আলীসহ আরও কয়েকজন নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভ্যান অকেন একাই প্রাইমারিতে অভূতপূর্ব এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব দেন।
৪ নভেম্বর বিজয়ী হওয়ার পর জোহরান মামদানি জারা রহিমকে অন্তর্ভুক্ত করে শুধু নারীদের নিয়ে একটি ট্রানজিশন টিম ঘোষণা করেছেন। এই দলে আরও রয়েছেন সাবেক ফেডারেল ট্রেড কমিশন চেয়ার লিনা খান, সাবেক ডেপুটি মেয়র মারিয়া টরেস-স্প্রিঙ্গার, ইউনাইটেড ওয়ে প্রেসিডেন্ট গ্রেস বোনিল্লা এবং সাবেক ডেপুটি মেয়র মেলানি হার্টজোগ। এই দলটি মামদানি প্রশাসনকে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করবে।

নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী এই যুবকের ঐতিহাসিক জয়ে যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ তাঁর ক্যারিশমা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতির দিকে, তখন পর্দার আড়ালে থাকা এক কৌশলীর কথা উঠে আসছে—যিনি এই বিজয়ের রণনীতি তৈরি করেছিলেন। তিনি হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জারা রহিম। এই বিজয়ের মাধ্যমে মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় এবং এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
৩৫ বছর বয়সী জারা রহিম এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং ডিজিটাল কৌশলের এক মিথস্ক্রিয়ার মহাযজ্ঞে কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মামদানির সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া জারাই প্রচারের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। তাঁর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাটি ছিল— ‘রাজনৈতিক কৌশলবিদদের তৈরি নিউইয়র্ককে ভুলে যান। বরং প্রকৃত নিউইয়র্ক সিটি নিয়ে প্রচার শুরু করুন।’
এই মন্ত্রই মামদানির প্রচারকে একটি জনমুখী প্রচারাভিযানে পরিণত করে। জারা যুক্তি দেন, নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক এলিটরা যেই ভোটারদের দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করেছেন, তাদেরই এখানে যুক্ত করতে হবে। এই কৌশল অবলম্বন করে ৯০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে একত্র করা সম্ভব হয়। নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মুসলিম বাসিন্দা রয়েছে এবং এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই জয়ের মূল শক্তি হয়ে ওঠে।
জারা রহিম বলেন, বহু ‘বাংলাদেশি চাচা এবং পশ্চিম আফ্রিকার খালা’ রয়েছেন, যাঁরা আগে কখনো মেয়রের প্রাথমিক নির্বাচনে ভোট দেননি। তিনি বলেন, ‘তারা এমন একজনকে দেখছেন, যিনি তাঁদের মসজিদে যাচ্ছেন এবং তাঁদের এলাকাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
জারা রহিমের কর্মজীবন রাজনীতি, ডিজিটাল কৌশল এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক দশকের বেশি সময় ধরে বিস্তৃত।
প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশি আমেরিকান জারা রহিম ফ্লোরিডায় বেড়ে ওঠেন। ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা (ইউসিএফ) থেকে যোগাযোগ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি ডিজিটাল প্রচার এবং জনসম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় ২০১২ সালে বারাক ওবামার পুনর্নির্বাচন প্রচারণার মাধ্যমে। তিনি প্রচারণায় ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দিলেও দ্রুতই ফ্লোরিডার ডিজিটাল কনটেন্ট ডিরেক্টর পদে উন্নীত হন। এই ভূমিকায় তিনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভোটারদের নিবন্ধন করানো এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করে তোলার কৌশল আয়ত্ত করেন।
ওবামা প্রচারণার সাফল্যের পর জারা ওবামা প্রশাসনের হোয়াইট হাউস অফিস অব ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম ডিজিটাল উদ্ভাবনী প্রেসিডেন্সির অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করেন।
হোয়াইট হাউসের পর জারা উবারে যোগ দেন। এখানে তিনি রাইড শেয়ারিং-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে সহায়তা করেন। গল্প বলার মতো করে কীভাবে জননীতি তৈরি করা যায়, সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এখানে।
এরপর ২০১৬ সালে তিনি হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও কাজ করেন।
২০১৬ সালের প্রচারণার পরে জারা রাজনীতি থেকে সরে এসে ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করেন। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি বিখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এটি তাঁর কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এখানে তিনি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া থেকে সাংস্কৃতিক গল্প বলার দিকে মনোযোগ দেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘রাজনীতিই সংস্কৃতি।’ ভোগে কাজ করার মাধ্যমে শিল্প, ফ্যাশন ও রাজনীতির সংযোগস্থলে কীভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করতে হয় এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা করতে হয়, সেটি ভালো করে শেখেন জারা।
ভোগ ছাড়ার পর জারা রহিম স্বাধীন যোগাযোগ পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন।
তাঁর ক্লায়েন্টদের মধ্যে ছিল এ২৪ (A24), গায়িকা মারিয়া কেরি এবং নেটফ্লিক্সের মতো প্রতিষ্ঠান ও তারকারা।
তাঁর মূল নীতি ছিল—বাহ্যিক চাকচিক্যের চেয়ে ‘খাঁটি বিশ্বাসযোগ্যতা’ (অথেনটিক) দিয়ে যেকোনো কিছুর সূচনা করা।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জারা জোহরান মামদানির ‘সিনিয়র উপদেষ্টা’ হিসেবে তাঁর মেয়র নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে যোগ দেন। বলতে গেলে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সাফল্যটিও অর্জন করেন এই প্রকল্পেই।
এই নির্বাচনী প্রচারে তাঁর দেওয়া নির্দেশনাটি ছিল—‘রাজনৈতিক কৌশলবিদদের তৈরি নিউইয়র্ককে ভুলে যান। বরং প্রকৃত নিউইয়র্ক সিটি নিয়ে প্রচার শুরু করুন।’ তিনি সব সময় নিশ্চিত করতে চেয়েছেন যেন ডিজিটাল প্রচারের সাফল্যের সঙ্গে তৃণমূলে সত্যিকারের জনসম্পৃক্ততা বজায় থাকে। এই কৌশলের মাধ্যমে মামদানি বাংলা, স্প্যানিশ এবং হিন্দি ভাষার মতো বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে—এমন প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছান। যা নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিতে উপেক্ষিত ছিল।
জারার কৌশল ও নির্দেশনার ফলস্বরূপ মামদানির দল ১৬ লাখ বার মানুষের দরজায় কড়া নেড়েছে এবং ৯০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে কাজে লাগাতে সমর্থ হয়।
জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয়ের পরে, জারা সাবেক ফেডারেল ট্রেড কমিশন চেয়ার লিনা খানের পাশাপাশি ‘ট্রানজিশন দলের’ সদস্য হিসেবে প্রশাসনকে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। এই ট্রানজিশনের টিমের সবাই নারী। যেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লিনা খান একজন অ্যান্টিট্রাস্ট বিশেষজ্ঞ। বাইডেন প্রশাসনে তাঁর নেতৃত্বেই বাজারের একাধিপত্যের আইন লঙ্ঘনের জন্য অ্যামাজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
মাঠপর্যায়ের কর্মীরা জানান, এই প্রচারে চিরাচরিত ভোট সংগ্রহের ‘সংস্কৃতিকে ব্যবহারের’ (Culture of Extraction) পরিবর্তে ‘যোগাযোগের সংস্কৃতি’ তৈরি করা হয়েছিল। প্রাথমিক নির্বাচনের সময়ই স্বেচ্ছাসেবকেরা ১৬ লাখবার মানুষের দরজায় কড়া নেড়েছিলেন এবং ভোটারদের সঙ্গে ২ লাখ ৪৭ হাজারেরও বেশিবার কথোপকথন করেছিলেন। এই সংখ্যা সাধারণ নির্বাচনী প্রচারের চেয়ে অনেক বেশি।
যখন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, সেটিকে মামদানির সমর্থকেরা ইসলাম বিদ্বেষ বলে মনে করেন। তখন জারা রহিম দ্রুত কুমোর কৌশলের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘তিনি (কুমো) কেবল একজন খারাপ মুসলমানকে দেখিয়ে মুসলিমদের সমর্থন পেতে চেয়েছেন—এটাকে বলা যায় একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের মরিয়া কৌশল, যার মুসলিমদের কাছে বলার মতো আর কিছুই নেই।’
এই জয়ের পেছনে জারা রহিমের পাশাপাশি মায়া হান্দা, ফিল্ড ডিরেক্টর তাসচা ভ্যান অকেন এবং ফাইজা আলীসহ আরও কয়েকজন নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভ্যান অকেন একাই প্রাইমারিতে অভূতপূর্ব এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব দেন।
৪ নভেম্বর বিজয়ী হওয়ার পর জোহরান মামদানি জারা রহিমকে অন্তর্ভুক্ত করে শুধু নারীদের নিয়ে একটি ট্রানজিশন টিম ঘোষণা করেছেন। এই দলে আরও রয়েছেন সাবেক ফেডারেল ট্রেড কমিশন চেয়ার লিনা খান, সাবেক ডেপুটি মেয়র মারিয়া টরেস-স্প্রিঙ্গার, ইউনাইটেড ওয়ে প্রেসিডেন্ট গ্রেস বোনিল্লা এবং সাবেক ডেপুটি মেয়র মেলানি হার্টজোগ। এই দলটি মামদানি প্রশাসনকে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করবে।
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তপারের রাজনীতি খুব কম সময়ই শান্ত থেকেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের বড় নদীগুলোকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তাল, অস্থির হয়ে উঠেছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে আফগানিস্তান কাবুল নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই মাসে হাজারো
২ দিন আগে
পরবর্তী দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ‘অ্যালগরিদমের ভয়’ নয়, বরং বিদ্যুতের টানাপোড়েন। হাইপারস্কেলার নামে পরিচিত বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখনই এমন গিগাওয়াটের বিদ্যুৎ আগাম কিনছে, যা এখনো বাস্তবে পাওয়া যায়নি। দেশগুলো তড়িঘড়ি করে সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন করিডর অনুমোদন দিচ্ছে। আর এই বিশৃঙ্খল
২ দিন আগে
এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তপারের রাজনীতি খুব কম সময়ই শান্ত থেকেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের বড় নদীগুলোকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তাল, অস্থির হয়ে উঠেছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে আফগানিস্তান কাবুল নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই মাসে হাজারো বাংলাদেশি তিস্তা নদীর প্রবাহে ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তিস্তা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্রের (যা ভাটিতে যমুনা নামেও পরিচিত) উপনদী।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি এখনো পুনর্বহাল করেনি নয়াদিল্লি। ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর এই চুক্তি গত এপ্রিলে কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে একতরফাভাবে বাতিল করে ভারত। আবার এই ভারতই সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার উজানে ব্রহ্মপুত্র (যা তিব্বতে ইয়ারলুন সাংপো নামে পরিচিত) নদের ওপর চীনের পরিকল্পিত বাঁধের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ১৬৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এই বাঁধ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ হিসেবে পরিগণিত হবে। নদীর অববাহিকা অঞ্চলটি জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই বাঁধের নেতিবাচক প্রভাব হবে বিশাল।
সব মিলিয়ে বোঝা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় পানিকে ঘিরে রাজনীতি আরও জটিল ও বিপজ্জনক হচ্ছে। সবুজ জ্বালানির চাহিদা বাড়ায় অঞ্চলজুড়ে দেশগুলো এখন জলবিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমবাহ দ্রুত গলছে, আবহাওয়া হচ্ছে অনিয়মিত। ফলে নদীর পানির স্তর ও প্রবাহ এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায়। এই ঝুঁকি সামলাতে ও সম্ভাব্য সংঘাত ঠেকাতে দেশগুলোর মধ্যে আরও বেশি আলোচনা ও সহযোগিতা দরকার। তবে সেই পথে রয়েছে অনেক বাধা।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির রাজনীতি বহুদিন ধরেই জটিল। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় তিন নদী—সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র হিমালয়ের হিমবাহ থেকে উৎসারিত। সিন্ধু নদ চীনে উৎপত্তি হয়ে ভারতের লাদাখ ও বিতর্কিত কাশ্মীর পেরিয়ে পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে। ব্রহ্মপুত্রও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অপর দিকে, নেপালের বড় অংশ বিশাল গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মধ্যে অবস্থিত।

এসব নদীর পানিবণ্টন সহজ নয়। কারণ, এই অঞ্চলটি অবিশ্বাসে বিভক্ত। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনেরও সংঘাত চলছে। বাংলাদেশ ও নেপাল উভয়েরই আশঙ্কা—ভারত কিংবা চীনের অতি প্রভাব তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দেশগুলো প্রায়ই পানিকে চাপ সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রলোভনে পড়ে। ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় পানিসংক্রান্ত ১৯১টি বিরোধ দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বাদ দিলে, বিশ্বের আর কোনো অঞ্চলেই পানিকে ঘিরে এতটা উত্তেজনা নেই।
পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের সোনিপতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির হরি গোদারা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এখন অনেক দেশ বাঁধ নির্মাণকে শক্তি প্রদর্শন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবেশী দেশকে চাপে রাখার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তিব্বতে চীনের তৈরি বাঁধগুলো দেশটির কর্তৃত্ব বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান যে অংশের কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে তারা (চীনের সহায়তায়) নতুন নতুন বাঁধ তৈরি করছে—এতে তাদের ভূখণ্ড দাবি আরও জোরালো হচ্ছে এবং এতে ভারতের বিরক্তি বাড়ছে।
চীন যখন ব্রহ্মপুত্র নদে নতুন একটি বাঁধ নির্মাণ শুরু করে, তার জবাবে ভারতও সিদ্ধান্ত নেয়—তারা ওই প্রকল্পের নিচের অংশে আরও বড় একটি বাঁধ তৈরি করবে। এমনিতেই বাংলাদেশের মানুষের অভিযোগ, ভারত আগাম কোনো সতর্কতা না দিয়েই হঠাৎ বাঁধের দরজা খুলে দেয়। এতে নিচের দিকে প্রবল স্রোতে পানি নেমে এসে বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে। ফলে পানিকে ঘিরে এ অঞ্চলে সংঘাত প্রায়ই অন্য রাজনৈতিক বিরোধের সঙ্গে মিশে যায়।
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে পানি-সংকটাপন্ন অঞ্চলের একটি। বছরের অনেক সময়েই এ অঞ্চলের বড় অংশে পানি ঘাটতি দেখা যায়। চীনের লুডং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় পানির সংকট তীব্র, সেসব অঞ্চলে বিরোধ ও সংঘাতের আশঙ্কাও তুলনামূলক বেশি।
জ্বালানির বাড়তি চাহিদা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে। উন্নয়ন, নগরায়ণ আর ডেটা সেন্টারের বিস্তার নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের প্রয়োজন বাড়িয়েছে। সৌর ও বায়ুশক্তির মতো অনিয়মিত নয় বলে জলবিদ্যুৎ এখন এক আকর্ষণীয় নবায়নযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই তার মোট বিদ্যুতের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জলবিদ্যুৎ থেকে পাচ্ছে এবং এই অংশ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ভারত বর্তমানে ৪২ গিগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং ২০৩২ সালের মধ্যে এই ক্ষমতা ৫০ শতাংশের বেশি বাড়াতে চায়। আগামী কয়েক দশকে দেশটি হয়তো আরও ২০০টি নতুন বাঁধ নির্মাণ করবে।
নেপাল বর্তমানে নিজস্ব চাহিদার চেয়ে বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে। দেশটি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়েছে। বহুদিন ধরে তারা ভারতকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে এবং সম্প্রতি ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু করেছে—যদিও এ বিষয়ে সব পক্ষের সম্মতিতে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে। স্পষ্ট সংঘাত এড়াতে বাঁধগুলোর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে কূটনৈতিক যোগাযোগ খুব জরুরি। আমেরিকার ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির সীমান্তবর্তী জলসম্পদ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যারন উলফের মতে, কোনো চুক্তি ছাড়া যখন একটি দেশ বাঁধ নির্মাণ করে, তখন সেটিই সাধারণত পানিভিত্তিক বিরোধের সবচেয়ে স্পষ্ট পূর্বাভাস।
পরিবেশগত উদ্বেগও আছে। বাঁধ নদীকে খণ্ডিত করে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে এবং মানববসতির উচ্ছেদ ঘটায়। হিমালয়ের ভঙ্গুর ভূপ্রকৃতিতে এসব ক্ষয়ক্ষতি আরও ব্যাপক হয়। এ কারণেই ভারতের পরিকল্পিত বিশাল বাঁধ প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ দ্রুত ভঙ্গুর হয়ে পড়ায় কূটনৈতিক সহযোগিতা এখন আরও জরুরি। হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলছে, ফলে নদীর প্রবাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, পাহাড়ের গঠন দুর্বল হচ্ছে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। বর্ষাকালের বিষয়ে এখন আর কোনো পূর্বানুমান খাটছে না। তাই পানিসম্পদ নিয়ে বিদ্যমান চুক্তিগুলো স্থগিত বা পরিত্যাগ না করে দেশগুলোর উচিত সেগুলো আরও শক্তিশালী ও হালনাগাদ করা—সময় ও প্রকৃতির পরিবর্তন অনুযায়ী।
কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা থেকে বোঝা যায় দেশগুলো বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন। এপ্রিল মাসে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পরও ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে বন্যার পূর্বাভাস-সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করেছে। গবেষক উলফের তথ্যমতে, গত এক শ বছরে পানিকে কেন্দ্র করে কোনো যুদ্ধ হয়নি। তবু এই অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনা এখনো জটিল ও খণ্ডিত চিত্রের মতো। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির জালে বাঁধা এই ব্যবস্থায় দেশগুলো নদীকে একে অপরের সঙ্গে দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, যেন নদী কোনো যৌথ পরিবেশব্যবস্থার অংশ নয়। দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে উঠলে নদীর প্রবাহ বজায় রাখা এবং শান্তি রক্ষা—দুই-ই আরও নিশ্চিতভাবে সম্ভব হতো।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তপারের রাজনীতি খুব কম সময়ই শান্ত থেকেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের বড় নদীগুলোকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তাল, অস্থির হয়ে উঠেছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে আফগানিস্তান কাবুল নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই মাসে হাজারো বাংলাদেশি তিস্তা নদীর প্রবাহে ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তিস্তা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্রের (যা ভাটিতে যমুনা নামেও পরিচিত) উপনদী।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি এখনো পুনর্বহাল করেনি নয়াদিল্লি। ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর এই চুক্তি গত এপ্রিলে কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে একতরফাভাবে বাতিল করে ভারত। আবার এই ভারতই সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার উজানে ব্রহ্মপুত্র (যা তিব্বতে ইয়ারলুন সাংপো নামে পরিচিত) নদের ওপর চীনের পরিকল্পিত বাঁধের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ১৬৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এই বাঁধ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ হিসেবে পরিগণিত হবে। নদীর অববাহিকা অঞ্চলটি জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই বাঁধের নেতিবাচক প্রভাব হবে বিশাল।
সব মিলিয়ে বোঝা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় পানিকে ঘিরে রাজনীতি আরও জটিল ও বিপজ্জনক হচ্ছে। সবুজ জ্বালানির চাহিদা বাড়ায় অঞ্চলজুড়ে দেশগুলো এখন জলবিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমবাহ দ্রুত গলছে, আবহাওয়া হচ্ছে অনিয়মিত। ফলে নদীর পানির স্তর ও প্রবাহ এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায়। এই ঝুঁকি সামলাতে ও সম্ভাব্য সংঘাত ঠেকাতে দেশগুলোর মধ্যে আরও বেশি আলোচনা ও সহযোগিতা দরকার। তবে সেই পথে রয়েছে অনেক বাধা।
দক্ষিণ এশিয়ায় পানির রাজনীতি বহুদিন ধরেই জটিল। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় তিন নদী—সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র হিমালয়ের হিমবাহ থেকে উৎসারিত। সিন্ধু নদ চীনে উৎপত্তি হয়ে ভারতের লাদাখ ও বিতর্কিত কাশ্মীর পেরিয়ে পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে। ব্রহ্মপুত্রও চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অপর দিকে, নেপালের বড় অংশ বিশাল গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মধ্যে অবস্থিত।

এসব নদীর পানিবণ্টন সহজ নয়। কারণ, এই অঞ্চলটি অবিশ্বাসে বিভক্ত। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনেরও সংঘাত চলছে। বাংলাদেশ ও নেপাল উভয়েরই আশঙ্কা—ভারত কিংবা চীনের অতি প্রভাব তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দেশগুলো প্রায়ই পানিকে চাপ সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রলোভনে পড়ে। ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় পানিসংক্রান্ত ১৯১টি বিরোধ দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বাদ দিলে, বিশ্বের আর কোনো অঞ্চলেই পানিকে ঘিরে এতটা উত্তেজনা নেই।
পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের সোনিপতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির হরি গোদারা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এখন অনেক দেশ বাঁধ নির্মাণকে শক্তি প্রদর্শন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবেশী দেশকে চাপে রাখার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তিব্বতে চীনের তৈরি বাঁধগুলো দেশটির কর্তৃত্ব বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান যে অংশের কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে তারা (চীনের সহায়তায়) নতুন নতুন বাঁধ তৈরি করছে—এতে তাদের ভূখণ্ড দাবি আরও জোরালো হচ্ছে এবং এতে ভারতের বিরক্তি বাড়ছে।
চীন যখন ব্রহ্মপুত্র নদে নতুন একটি বাঁধ নির্মাণ শুরু করে, তার জবাবে ভারতও সিদ্ধান্ত নেয়—তারা ওই প্রকল্পের নিচের অংশে আরও বড় একটি বাঁধ তৈরি করবে। এমনিতেই বাংলাদেশের মানুষের অভিযোগ, ভারত আগাম কোনো সতর্কতা না দিয়েই হঠাৎ বাঁধের দরজা খুলে দেয়। এতে নিচের দিকে প্রবল স্রোতে পানি নেমে এসে বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে। ফলে পানিকে ঘিরে এ অঞ্চলে সংঘাত প্রায়ই অন্য রাজনৈতিক বিরোধের সঙ্গে মিশে যায়।
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে পানি-সংকটাপন্ন অঞ্চলের একটি। বছরের অনেক সময়েই এ অঞ্চলের বড় অংশে পানি ঘাটতি দেখা যায়। চীনের লুডং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় পানির সংকট তীব্র, সেসব অঞ্চলে বিরোধ ও সংঘাতের আশঙ্কাও তুলনামূলক বেশি।
জ্বালানির বাড়তি চাহিদা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে। উন্নয়ন, নগরায়ণ আর ডেটা সেন্টারের বিস্তার নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের প্রয়োজন বাড়িয়েছে। সৌর ও বায়ুশক্তির মতো অনিয়মিত নয় বলে জলবিদ্যুৎ এখন এক আকর্ষণীয় নবায়নযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই তার মোট বিদ্যুতের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জলবিদ্যুৎ থেকে পাচ্ছে এবং এই অংশ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ভারত বর্তমানে ৪২ গিগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং ২০৩২ সালের মধ্যে এই ক্ষমতা ৫০ শতাংশের বেশি বাড়াতে চায়। আগামী কয়েক দশকে দেশটি হয়তো আরও ২০০টি নতুন বাঁধ নির্মাণ করবে।
নেপাল বর্তমানে নিজস্ব চাহিদার চেয়ে বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে। দেশটি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়েছে। বহুদিন ধরে তারা ভারতকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে এবং সম্প্রতি ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু করেছে—যদিও এ বিষয়ে সব পক্ষের সম্মতিতে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে। স্পষ্ট সংঘাত এড়াতে বাঁধগুলোর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে কূটনৈতিক যোগাযোগ খুব জরুরি। আমেরিকার ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির সীমান্তবর্তী জলসম্পদ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যারন উলফের মতে, কোনো চুক্তি ছাড়া যখন একটি দেশ বাঁধ নির্মাণ করে, তখন সেটিই সাধারণত পানিভিত্তিক বিরোধের সবচেয়ে স্পষ্ট পূর্বাভাস।
পরিবেশগত উদ্বেগও আছে। বাঁধ নদীকে খণ্ডিত করে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে এবং মানববসতির উচ্ছেদ ঘটায়। হিমালয়ের ভঙ্গুর ভূপ্রকৃতিতে এসব ক্ষয়ক্ষতি আরও ব্যাপক হয়। এ কারণেই ভারতের পরিকল্পিত বিশাল বাঁধ প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ দ্রুত ভঙ্গুর হয়ে পড়ায় কূটনৈতিক সহযোগিতা এখন আরও জরুরি। হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলছে, ফলে নদীর প্রবাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, পাহাড়ের গঠন দুর্বল হচ্ছে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। বর্ষাকালের বিষয়ে এখন আর কোনো পূর্বানুমান খাটছে না। তাই পানিসম্পদ নিয়ে বিদ্যমান চুক্তিগুলো স্থগিত বা পরিত্যাগ না করে দেশগুলোর উচিত সেগুলো আরও শক্তিশালী ও হালনাগাদ করা—সময় ও প্রকৃতির পরিবর্তন অনুযায়ী।
কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা থেকে বোঝা যায় দেশগুলো বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন। এপ্রিল মাসে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পরও ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে বন্যার পূর্বাভাস-সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করেছে। গবেষক উলফের তথ্যমতে, গত এক শ বছরে পানিকে কেন্দ্র করে কোনো যুদ্ধ হয়নি। তবু এই অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনা এখনো জটিল ও খণ্ডিত চিত্রের মতো। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির জালে বাঁধা এই ব্যবস্থায় দেশগুলো নদীকে একে অপরের সঙ্গে দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, যেন নদী কোনো যৌথ পরিবেশব্যবস্থার অংশ নয়। দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে উঠলে নদীর প্রবাহ বজায় রাখা এবং শান্তি রক্ষা—দুই-ই আরও নিশ্চিতভাবে সম্ভব হতো।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী এই যুবকের ঐতিহাসিক জয়ে যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ তাঁর ক্যারিশমা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতির দিকে, তখন পর্দার আড়ালে থাকা এক কৌশলীর কথা উঠে আসছে
৮ ঘণ্টা আগে
পরবর্তী দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ‘অ্যালগরিদমের ভয়’ নয়, বরং বিদ্যুতের টানাপোড়েন। হাইপারস্কেলার নামে পরিচিত বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখনই এমন গিগাওয়াটের বিদ্যুৎ আগাম কিনছে, যা এখনো বাস্তবে পাওয়া যায়নি। দেশগুলো তড়িঘড়ি করে সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন করিডর অনুমোদন দিচ্ছে। আর এই বিশৃঙ্খল
২ দিন আগে
এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পরবর্তী দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ‘অ্যালগরিদমের ভয়’ নয়, বরং বিদ্যুতের টানাপোড়েন। হাইপারস্কেলার নামে পরিচিত বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখনই এমন গিগাওয়াটের বিদ্যুৎ আগাম কিনছে, যা এখনো বাস্তবে পাওয়া যায়নি। দেশগুলো তড়িঘড়ি করে সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন করিডর অনুমোদন দিচ্ছে। আর এই বিশৃঙ্খলার ভেতরেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে এক পুরোনো শক্তির নাম—পারমাণবিক শক্তি।
পঞ্চাশ বছর ধরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আতঙ্কের মাঝামাঝি এক অসীম সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু খরচ আর বিতর্ক এর সম্ভাবনার নিত্যসঙ্গী। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই–এর উত্থান সেই সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে। বিশাল, বিদ্যুৎখেকো ডেটা সেন্টারগুলোর চাহিদা নির্ভরযোগ্য, কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎকে শুধু পরিবেশগত লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক প্রয়োজনেও পরিণত করেছে। শিল্পযুগের বিদ্যুৎব্যবস্থার ওপর ভর করে যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে নেতৃত্ব দিতে পারবে না।
রাজনীতিবিদরা এখন জিপিইউ, মডেলের আকার, আর কম্পিউটিং সার্বভৌমত্ব নিয়ে তর্কে ব্যস্ত। কিন্তু এআই–এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে মাইক্রোচিপ নয়, মেগাওয়াট। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা আইইএ জানিয়েছে, ২০২৮ সালের মধ্যেই বৈশ্বিক ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎচাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কয়েক বছরের মধ্যে নতুন করে আরও কয়েক ডজন গিগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে, যা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মোট বিদ্যুতের চাহিদার মতো। এই চাপের মূল কারণ এআই আর ক্লাউড কম্পিউটিং।
যে পারমাণবিক শক্তিকে এত দিন ধীর, ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে খারিজ করা হতো, এখন সেটিই ডেটা সেন্টারের বিশাল চাহিদা মেটানোর অন্যতম কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব উপায় হিসেবে ফিরে আসছে। কিন্তু আসল পরিবর্তনটা প্রযুক্তিগত নয়, মানসিক। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার, পারমাণবিক শক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে সরকার নয়, সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ‘রিস্টার্ট বিপ্লব।’ ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া আইওয়ার ডুয়েন আর্নল্ড এনার্জি সেন্টার গুগল ও নেক্সটএরার চুক্তিতে আবার চালু হতে যাচ্ছে। মিশিগানের পালিসেডস প্লান্ট ২০২৫ সালের মধ্যেই পুনরায় সচল হতে পারে। মাইক্রোসফট থ্রি মাইল আইল্যান্ড প্লান্ট পুনরায় চালু করে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেছে, আর মেটা ইলিনয়ে ১.১ গিগাওয়াট ক্ষমতার একটি প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যা বন্ধ হওয়ার পথে ছিল। এসব প্রকল্পের সাফল্যের ভরসা কোনো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নয়—ভরসা সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাঠামো ও অভিজ্ঞ কর্মীদের ওপর, যারা এখনো জানে কীভাবে সেটা চালাতে হয়।
তবে বাধা প্রযুক্তিগত নয়, নীতিগত। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এনআরসি) এখনো কোনো কাঠামো নেই, যা বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো প্লান্টকে জনস্বার্থে পুনরায় চালু করা অনুমতি দেয়। অনুমোদনের নিয়মগুলো নতুন নির্মাণের জন্য তৈরি, পুনরুজ্জীবনের জন্য নয়। এতে সময় পরিণত হচ্ছে কৌশলগত দুর্বলতায়।
এদিকে নতুন প্রজন্মের উন্নত রিঅ্যাক্টর আসছে—টেনেসির কাইরোস পাওয়ার থেকে ওয়োমিংয়ের টেরাপাওয়ার পর্যন্ত—যেগুলো ছোট, মডুলার এবং ডেটা সেন্টার ও শিল্পকেন্দ্রের পাশে বসানোর উপযোগী। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নিউক্লিয়ার কোম্পানি ওকলো ডেটা সেন্টার কোম্পানি সুইচের সঙ্গে ১২ গিগাওয়াটের বিশাল চুক্তি করেছে। ক্রুসো ব্লু এনার্জির সঙ্গে টেক্সাসে ১.৫ গিগাওয়াট পারমাণবিক-চালিত ডেটা সেন্টার গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এখানেও সময়ই সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। একটি ডেটা সেন্টার তৈরি হয় দেড় বছরে, কিন্তু একটি রিঅ্যাক্টর বানাতে লাগে দশ বছর। তাই পারমাণবিক শক্তিকে এখন ডিজিটাল গতিতে চলতে শিখতে হবে—মানসম্পন্ন মডুলার নির্মাণ, পূর্বনির্ধারিত অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং এমন অর্থায়নের মাধ্যমে যা রিঅ্যাক্টরকে পরীক্ষামূলক নয়, অবকাঠামো হিসেবে গণ্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নীতি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। মার্কিন জ্বালানি বিভাগ নতুন প্রযুক্তিতে অর্থ দেয়, কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর অনুমতি দেয় না। এনআরসি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, কিন্তু সময়সীমা নয়। ফেডারেল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (এফইআরসি) ট্রান্সমিশন পরিচালনা করে, কিন্তু কম্পিউটিংয়ের পরিকল্পনা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আছে এবং তা দিয়ে দেশটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগের এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে—এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নেই কোনো সংস্থারই।
এই বিচ্ছিন্নতা শুধু প্রশাসনিক নয়, অস্তিত্বেরও প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্র এখন স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শিল্পায়ন ঘটাচ্ছে, কিন্তু এর জন্য জাতীয় বিদ্যুৎ পরিকল্পনা নেই। যখন বেসরকারি টেক কোম্পানিগুলো পুরো রিঅ্যাক্টরের সমান বিদ্যুৎ একাই কিনছে, তখন তদারকির ফাঁক আরও বাড়ছে। গুগল–নেক্সটএরার চুক্তি, আমাজনের সাসকুহানার কাছে বিনিয়োগ, মাইক্রোসফট–ওকলোর অংশীদারত্ব—এসব কিছুই প্রচলিত নিয়ন্ত্রক কাঠামোর বাইরে। এফইআরসি বেসরকারি বিদ্যুৎচুক্তির ওপর কর্তৃত্ব রাখে না। এনআরসি ভৌত নিরাপত্তা দেখে, সাইবার নিরাপত্তা নয়। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের পারমাণবিক শক্তিচালিত ডেটা সেন্টারকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কাঠামো নেই।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ভগল পারমাণবিক ইউনিটের সমাপ্তি দেখায় পরিকল্পনা থাকলে কী হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র একটানা, কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে স্থিতিশীলভাবে ধরে রাখে। এই পারমাণবিক ভিত্তিই রাজ্যটিকে দ্রুত বাড়তে থাকা ডেটা সেন্টারের চাহিদা সামলাতে সাহায্য করছে। এটি কাকতালীয় নয়, নীতিগত সাফল্য।
অন্যদিকে সতর্ক সংকেত বাজতে শুরু করেছে। যদি সংস্কার না হয়, এআইয়ের বিদ্যুৎ চাহিদার বোঝা পড়বে সাধারণ মানুষের কাঁধে, আর লাভ যাবে বেসরকারি চুক্তির পকেটে। মেরিল্যান্ডের ট্রান্সমিশন জট, টেক্সাসের বিদ্যুৎ অস্থিরতা আর ক্যালিফোর্নিয়ার ঘাটতি—সবই ইঙ্গিত দেয়, ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি যদি গ্রিড নীতির চেয়ে দ্রুত হয়, বিপদ আসবেই।
তবে সুসংবাদ হলো—যুক্তরাষ্ট্রকে ফিউশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এক দশকের মধ্যেই বন্ধ প্লান্ট পুনরায় চালু, মডুলার রিঅ্যাক্টর স্থাপন ও স্মার্ট নীতির মাধ্যমে আরও কয়েক ডজন গিগাওয়াট পরিষ্কার, স্থিতিশীল বিদ্যুৎ যোগ করা সম্ভব—যে সময়ের মধ্যে এআই চাহিদা দ্বিগুণ হবে। ফিউশন একদিন আসবেই, তাতে বিনিয়োগ করা উচিত। কিন্তু এখন যে কম্পিউটিং বিপ্লব চলছে, তার জন্য বিশ বছর অপেক্ষা করা যাবে না। পারমাণবিক শক্তি হয়তো জিপিইউর মতো ঝকঝকে নয়, কিন্তু এর আছে এক অনন্য সুবিধা—এটি ঘুমায় না।
যদি ওয়াশিংটন চায় যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী এআই সমৃদ্ধির যুগে নেতৃত্ব দিক, তবে তাকে পরিষ্কার ও স্থিতিশীল বিদ্যুৎকে একই গুরুত্ব দিতে হবে, যেমনটা সে চিপস ও কোডকে দেয়। ডেটা সেন্টারই এখন নতুন কারখানা। পারমাণবিক শক্তি প্রস্তুত, সেগুলো চালানোর জন্য।
তথ্যসূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

পরবর্তী দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ‘অ্যালগরিদমের ভয়’ নয়, বরং বিদ্যুতের টানাপোড়েন। হাইপারস্কেলার নামে পরিচিত বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখনই এমন গিগাওয়াটের বিদ্যুৎ আগাম কিনছে, যা এখনো বাস্তবে পাওয়া যায়নি। দেশগুলো তড়িঘড়ি করে সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন করিডর অনুমোদন দিচ্ছে। আর এই বিশৃঙ্খলার ভেতরেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে এক পুরোনো শক্তির নাম—পারমাণবিক শক্তি।
পঞ্চাশ বছর ধরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আতঙ্কের মাঝামাঝি এক অসীম সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু খরচ আর বিতর্ক এর সম্ভাবনার নিত্যসঙ্গী। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই–এর উত্থান সেই সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে। বিশাল, বিদ্যুৎখেকো ডেটা সেন্টারগুলোর চাহিদা নির্ভরযোগ্য, কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎকে শুধু পরিবেশগত লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক প্রয়োজনেও পরিণত করেছে। শিল্পযুগের বিদ্যুৎব্যবস্থার ওপর ভর করে যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে নেতৃত্ব দিতে পারবে না।
রাজনীতিবিদরা এখন জিপিইউ, মডেলের আকার, আর কম্পিউটিং সার্বভৌমত্ব নিয়ে তর্কে ব্যস্ত। কিন্তু এআই–এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে মাইক্রোচিপ নয়, মেগাওয়াট। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা আইইএ জানিয়েছে, ২০২৮ সালের মধ্যেই বৈশ্বিক ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎচাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কয়েক বছরের মধ্যে নতুন করে আরও কয়েক ডজন গিগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে, যা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মোট বিদ্যুতের চাহিদার মতো। এই চাপের মূল কারণ এআই আর ক্লাউড কম্পিউটিং।
যে পারমাণবিক শক্তিকে এত দিন ধীর, ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে খারিজ করা হতো, এখন সেটিই ডেটা সেন্টারের বিশাল চাহিদা মেটানোর অন্যতম কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব উপায় হিসেবে ফিরে আসছে। কিন্তু আসল পরিবর্তনটা প্রযুক্তিগত নয়, মানসিক। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার, পারমাণবিক শক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে সরকার নয়, সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ‘রিস্টার্ট বিপ্লব।’ ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া আইওয়ার ডুয়েন আর্নল্ড এনার্জি সেন্টার গুগল ও নেক্সটএরার চুক্তিতে আবার চালু হতে যাচ্ছে। মিশিগানের পালিসেডস প্লান্ট ২০২৫ সালের মধ্যেই পুনরায় সচল হতে পারে। মাইক্রোসফট থ্রি মাইল আইল্যান্ড প্লান্ট পুনরায় চালু করে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেছে, আর মেটা ইলিনয়ে ১.১ গিগাওয়াট ক্ষমতার একটি প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যা বন্ধ হওয়ার পথে ছিল। এসব প্রকল্পের সাফল্যের ভরসা কোনো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নয়—ভরসা সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাঠামো ও অভিজ্ঞ কর্মীদের ওপর, যারা এখনো জানে কীভাবে সেটা চালাতে হয়।
তবে বাধা প্রযুক্তিগত নয়, নীতিগত। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এনআরসি) এখনো কোনো কাঠামো নেই, যা বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো প্লান্টকে জনস্বার্থে পুনরায় চালু করা অনুমতি দেয়। অনুমোদনের নিয়মগুলো নতুন নির্মাণের জন্য তৈরি, পুনরুজ্জীবনের জন্য নয়। এতে সময় পরিণত হচ্ছে কৌশলগত দুর্বলতায়।
এদিকে নতুন প্রজন্মের উন্নত রিঅ্যাক্টর আসছে—টেনেসির কাইরোস পাওয়ার থেকে ওয়োমিংয়ের টেরাপাওয়ার পর্যন্ত—যেগুলো ছোট, মডুলার এবং ডেটা সেন্টার ও শিল্পকেন্দ্রের পাশে বসানোর উপযোগী। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নিউক্লিয়ার কোম্পানি ওকলো ডেটা সেন্টার কোম্পানি সুইচের সঙ্গে ১২ গিগাওয়াটের বিশাল চুক্তি করেছে। ক্রুসো ব্লু এনার্জির সঙ্গে টেক্সাসে ১.৫ গিগাওয়াট পারমাণবিক-চালিত ডেটা সেন্টার গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এখানেও সময়ই সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। একটি ডেটা সেন্টার তৈরি হয় দেড় বছরে, কিন্তু একটি রিঅ্যাক্টর বানাতে লাগে দশ বছর। তাই পারমাণবিক শক্তিকে এখন ডিজিটাল গতিতে চলতে শিখতে হবে—মানসম্পন্ন মডুলার নির্মাণ, পূর্বনির্ধারিত অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং এমন অর্থায়নের মাধ্যমে যা রিঅ্যাক্টরকে পরীক্ষামূলক নয়, অবকাঠামো হিসেবে গণ্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নীতি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। মার্কিন জ্বালানি বিভাগ নতুন প্রযুক্তিতে অর্থ দেয়, কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর অনুমতি দেয় না। এনআরসি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, কিন্তু সময়সীমা নয়। ফেডারেল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (এফইআরসি) ট্রান্সমিশন পরিচালনা করে, কিন্তু কম্পিউটিংয়ের পরিকল্পনা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আছে এবং তা দিয়ে দেশটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগের এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে—এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নেই কোনো সংস্থারই।
এই বিচ্ছিন্নতা শুধু প্রশাসনিক নয়, অস্তিত্বেরও প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্র এখন স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শিল্পায়ন ঘটাচ্ছে, কিন্তু এর জন্য জাতীয় বিদ্যুৎ পরিকল্পনা নেই। যখন বেসরকারি টেক কোম্পানিগুলো পুরো রিঅ্যাক্টরের সমান বিদ্যুৎ একাই কিনছে, তখন তদারকির ফাঁক আরও বাড়ছে। গুগল–নেক্সটএরার চুক্তি, আমাজনের সাসকুহানার কাছে বিনিয়োগ, মাইক্রোসফট–ওকলোর অংশীদারত্ব—এসব কিছুই প্রচলিত নিয়ন্ত্রক কাঠামোর বাইরে। এফইআরসি বেসরকারি বিদ্যুৎচুক্তির ওপর কর্তৃত্ব রাখে না। এনআরসি ভৌত নিরাপত্তা দেখে, সাইবার নিরাপত্তা নয়। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের পারমাণবিক শক্তিচালিত ডেটা সেন্টারকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কাঠামো নেই।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ভগল পারমাণবিক ইউনিটের সমাপ্তি দেখায় পরিকল্পনা থাকলে কী হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র একটানা, কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে স্থিতিশীলভাবে ধরে রাখে। এই পারমাণবিক ভিত্তিই রাজ্যটিকে দ্রুত বাড়তে থাকা ডেটা সেন্টারের চাহিদা সামলাতে সাহায্য করছে। এটি কাকতালীয় নয়, নীতিগত সাফল্য।
অন্যদিকে সতর্ক সংকেত বাজতে শুরু করেছে। যদি সংস্কার না হয়, এআইয়ের বিদ্যুৎ চাহিদার বোঝা পড়বে সাধারণ মানুষের কাঁধে, আর লাভ যাবে বেসরকারি চুক্তির পকেটে। মেরিল্যান্ডের ট্রান্সমিশন জট, টেক্সাসের বিদ্যুৎ অস্থিরতা আর ক্যালিফোর্নিয়ার ঘাটতি—সবই ইঙ্গিত দেয়, ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি যদি গ্রিড নীতির চেয়ে দ্রুত হয়, বিপদ আসবেই।
তবে সুসংবাদ হলো—যুক্তরাষ্ট্রকে ফিউশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এক দশকের মধ্যেই বন্ধ প্লান্ট পুনরায় চালু, মডুলার রিঅ্যাক্টর স্থাপন ও স্মার্ট নীতির মাধ্যমে আরও কয়েক ডজন গিগাওয়াট পরিষ্কার, স্থিতিশীল বিদ্যুৎ যোগ করা সম্ভব—যে সময়ের মধ্যে এআই চাহিদা দ্বিগুণ হবে। ফিউশন একদিন আসবেই, তাতে বিনিয়োগ করা উচিত। কিন্তু এখন যে কম্পিউটিং বিপ্লব চলছে, তার জন্য বিশ বছর অপেক্ষা করা যাবে না। পারমাণবিক শক্তি হয়তো জিপিইউর মতো ঝকঝকে নয়, কিন্তু এর আছে এক অনন্য সুবিধা—এটি ঘুমায় না।
যদি ওয়াশিংটন চায় যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী এআই সমৃদ্ধির যুগে নেতৃত্ব দিক, তবে তাকে পরিষ্কার ও স্থিতিশীল বিদ্যুৎকে একই গুরুত্ব দিতে হবে, যেমনটা সে চিপস ও কোডকে দেয়। ডেটা সেন্টারই এখন নতুন কারখানা। পারমাণবিক শক্তি প্রস্তুত, সেগুলো চালানোর জন্য।
তথ্যসূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী এই যুবকের ঐতিহাসিক জয়ে যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ তাঁর ক্যারিশমা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতির দিকে, তখন পর্দার আড়ালে থাকা এক কৌশলীর কথা উঠে আসছে
৮ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তপারের রাজনীতি খুব কম সময়ই শান্ত থেকেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের বড় নদীগুলোকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তাল, অস্থির হয়ে উঠেছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে আফগানিস্তান কাবুল নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই মাসে হাজারো
২ দিন আগে
এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দারফুরে এল-ফাশের শহর আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখলে যাওয়ার বিষয়টিকে মিসর শুধু সুদানের গৃহযুদ্ধের আরেকটি লড়াই হিসেবে দেখেনি; দেশটি তাদের নিজ নিরাপত্তার সীমানায় ফাটল ধরার আশঙ্কা হিসেবে দেখেছে। এল-ফাশেরে আরএসএফের স্থানীয় মানুষদের ওপর নির্যাতনকে কায়রো দক্ষিণ সীমান্তের প্রতিরক্ষার প্রথম সারির ওপর আঘাত হিসেবে ভাবছে।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশেরের পতন স্থানীয় ভূরাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মিসর বরাবরই এই যুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর (এসএএফ) সঙ্গে মিসরের সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধের পুরো সময়ে কায়রো এই বাহিনীকে সহায়তা করেছে।
কিন্তু এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয়, তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র নতুন করে আঁকছে। সামরিক সমন্বয়ের পাশাপাশি কূটনীতিক তৎপরতা বাড়িয়ে তারা যুদ্ধের প্রভাব ঠেকাতে চাইছে।
অন্যদিকে আরএসএফের উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তির কাছে এল-ফাশেরে হেরে যাওয়া এসএএফ ও তাদের যৌথ মিত্রবাহিনী এখন নতুন সহায়তার খোঁজে আছে। সুদানি কূটনীতিকেরা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) জানিয়েছেন, এসব অস্ত্র এসেছে মিসরের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
সুদানি বিশ্লেষক ও কনফ্লুয়েন্স অ্যাডভাইজরি থিংকট্যাংকের পরিচালক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এল-ফাশের পতনের পর এসএএফ এখন মিসর ও তুরস্কের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার আশা করছে। বিশেষ করে মিসরের নিজস্ব স্বার্থ জড়িত আছে দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তার সঙ্গে। তারা আরএসএফের সীমান্তবর্তী অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
এই প্রেক্ষাপটে মিসর চুপিসারে সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে অবস্থান শক্তিশালী করছে। বিপদকে নিজ দোরগোড়ায় না পৌঁছাতে তারা সুদানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যাতে হুমকিটা আগেভাগেই ঠেকানো যায়। মিসরের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা চলছে। আরএসএফ ও সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি যৌথ কমান্ড ফোর্স গঠনের কাজ এগোচ্ছে।’
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মিসরের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ ফাতিহি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সফর করেছেন। একটি সৌদি আরবে, আরেকটি পোর্ট সুদান, যা বর্তমানে সুদান সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সৌদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসএএফকেই সমর্থন দেয় বলে ধারণা করা হয়। রিয়াদে ফাতিহি মিসর-সৌদি সামরিক সহযোগিতা কমিটির যৌথ সভা পরিচালনা করেন। এরপর পোর্ট সুদানে গিয়ে তিনি সুদানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় যৌথ অভিযান পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
একই মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, এই সফরের ফলে উত্তর করদোফানে একটি যৌথ অপারেশন রুম ও নতুন আগাম সতর্কীকরণ রাডার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ খুলেছে। এর আগে আরএসএফ এল-ফাশের দখলের সময় উত্তর করদোফানের বারা শহরটিও দখলে নেয়। এই অঞ্চল তেলসমৃদ্ধ। তবে বারা রাজধানী খার্তুম ও এর টুইন সিটি ওমদুরমান থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে। আরএসএফ যুদ্ধের শুরুতে রাজধানী অঞ্চল দখল করলেও এ বছরের মার্চে এসএএফের কাছে খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ হারায়। বাহিনীটি এখন ওমদুরমানের দিকে আবার হামলার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোলুদ খায়ের বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরএসএফ যদি ওমদুরমানে হামলা চালায়, তা হলে মিসরের সরাসরি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। কারণ (সুদানের) রাজধানী সব সময়ই মিসরের কাছে রেড লাইন হিসেবে বিবেচিত।’ মিসরের ওই সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘করদোফানের যৌথ অপারেশন রুমের মাধ্যমে মিসর সুদানি সেনাবাহিনীকে আরএসএফ দখলকৃত এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। দারফুরের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মাঠপর্যায়ে মিসর এখন সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। আকাশে টহল দিচ্ছে যুদ্ধবিমান। এক সূত্র বলেছে, ‘মিসরীয় বিমানবাহিনী সুদানের আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢোকে না। কারণ, আরএসএফের কাছে ভ্রাম্যমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে। মিসরের বিমান টহল শুধু নিজেদের আকাশসীমায় নজরদারি চালায়, সুদানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে না।’
অন্য এক সরকারি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছে, ‘মিসর সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে। তাদের যুদ্ধকৌশল, অস্ত্র, আর সৈন্যদের অবস্থান সমন্বয়ে সাহায্য করছে, যেন আরএসএফের অগ্রগতি ঠেকানো যায়।’ তবে সেই সূত্র সতর্ক করে বলেছে, ‘আরএসএফের নড়াচড়ায় দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানালে বা কোনো ভুল হলে, মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।’
মিসরের জন্য এল-ফাশেরের পতন শুধু সুদানের সেনাবাহিনীর পরাজয় নয়, বরং পুরো অঞ্চলের ভঙ্গুর স্থিতিশীলতার এক ভয়াবহ সংকেত। এল-ফাশের ছিল দারফুরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের সংযোগস্থল। শহরটি হারানোর পর পশ্চিম দারফুর কার্যত দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যা আবারও সুদান ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
আরএসএফ এখন সুদানের ত্রিভুজ অঞ্চল ও এল-ফাশেরের দখল নিয়ে লিবিয়া ও চাদের দিকে যাওয়া বাণিজ্য ও চোরাচালান পথের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে এই রুট দিয়েই সুদানের সোনা পাচার হয়ে মিসরে গেছে। মিসর এখন চায় না যে এসব রুট কোনো অনিয়ন্ত্রিত শক্তির হাতে চলে যাক।
কায়রোভিত্তিক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আরএসএফের শক্তি যত বাড়ছে, ততই এমন এক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, যেখানে অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মিসরের জন্য এটা কেবল সুদানের প্রতি সংহতির বিষয় নয়, বরং নিজের দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষার লড়াই।’
আরএসএফের উত্থান ও এল-ফাশেরে তাদের নৃশংসতা আমিরাতের ভূমিকাকে আবার আলোচনায় এনেছে। আমিরাত অস্বীকার করলেও মিডল ইস্ট আইয়ের স্যাটেলাইট চিত্র, ফ্লাইট ও জাহাজ চলাচলের তথ্য, ভিডিও প্রমাণ, অস্ত্রের সিরিয়াল নম্বর এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে প্রমাণ মেলে—যুদ্ধের পুরো সময়জুড়েই আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আমিরাত এই সরবরাহে ব্যবহার করেছে সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড অঞ্চলের বোসাসো বন্দর, লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে জেনারেল খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটি, চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও উগান্ডার বিমানঘাঁটি। এসব রুট হয়ে তারা সরবরাহ পাঠিয়েছে সুদানের দুই ঘাঁটিতে—দারফুরের নিয়ালা ও এল-ফাশের থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের আল-মালহায়।
এক দশক আগে ইয়েমেনে আমিরাতের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিল আরএসএফ। আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালোর—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—সঙ্গে আমিরাতের আর্থিক সম্পর্ক তাঁকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক করেছে। এই আর্থিক সম্পর্ক মূলত সোনা ও কৃষিজমি ঘিরে।
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই দারফুরে গণহত্যার অভিযোগে আরএসএফের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে মিসরের দুর্বল অর্থনীতি আমিরাতের ‘অবিশ্বাস্য নগদ টাকার’ ওপর নির্ভরশীল। এ কারণেই মিসর এখন কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সীমান্তে ক্রমেই সামরিক পদক্ষেপ বাড়াচ্ছে।
এদিকে সুদান ইস্যুতে সরাসরি সহযোগিতা শুরু করেছে মিসর ও তুরস্কের সেনাবাহিনী। দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এমন সমন্বয় খুবই বিরল ঘটনা। এক উচ্চপদস্থ মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সমন্বয়ের মূল লক্ষ্য হলো সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা, যাতে তারা আরএসএফের দখলকৃত এলাকাগুলো পুনর্দখল করতে পারে এবং দারফুর অঞ্চল স্থিতিশীল রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এল-ফাশের ও আশপাশ এলাকা পুনরুদ্ধারের জন্য সম্ভাব্য এক সামরিক অভিযান নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি আরএসএফ ইউনিটগুলোর কাছে যেন কোনো বিদেশি বিমান সহায়তা না পৌঁছায়, সে জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তুরস্কের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনীকে আরও সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তুরস্ক। সূত্রটি বলেছে, ‘আমরা আগে থেকেই আরও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু এল-ফাশেরে সংঘটিত গণহত্যা আমাদের সেই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করেছে।’
গত বছর থেকেই তুরস্ক সুদানের সেনাবাহিনীকে ড্রোন, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও কমান্ড সেন্টার সরবরাহ করছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এমনকি তুর্কি ড্রোনচালকেরাও বর্তমানে সুদানের ভেতরে কাজ করছে। তুর্কি সূত্র আরও জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহের সক্ষমতা এখনো তুরস্কের সীমিত। কারণ, এমন সরঞ্জামের সংখ্যা দেশটিতে কম।
মিসরীয় ও সুদানি সূত্রের তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে তুর্কি সূত্রগুলোও বলছে, যুদ্ধের শুরু থেকেই মিসর গোপনে সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে আসছে। তাদের একজন বলেন, ‘এখন মিসর প্রকাশ্যে সহায়তা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, কারণ আরএসএফ ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক আলোচনাগুলো ভন্ডুল করেছে।’
ওয়াশিংটনে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সুদানি পক্ষগুলো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে একই সময়ে এল-ফাশেরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আরএসএফ। আলোচনায় আরএসএফের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন আলগনি দাগালো। তাঁর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি দেশটির মাটিতে ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া হোটেলে অবস্থান করছেন। তিনি আরএসএফ প্রধান হেমেদতির ভাই।
বিশ্লেষক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এখন প্রায় নিশ্চিত যে সুদানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা মিসরের জন্য বিব্রতকর। কারণ, ট্রাম্প আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমেরিকান পরিকল্পনায় সুদানের সেনাবাহিনীকে রাজি করাতে। এখন মিসরকে তার আগের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে এসে সুদানের যুদ্ধে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।’
আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুর ও সুদানের আরও কিছু অংশ বের হয়ে নতুন দেশ গড়া ঠেকাতে মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনী উত্তর করদোফানের এল-ওবেইদে আরেকটি যৌথ কমান্ড সেন্টার গঠন করছে। এর লক্ষ্য হলো আরএসএফের অগ্রযাত্রা থামানো ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পুনর্দখল করা। মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো যাবে সেসব এলাকায়, যেগুলো সম্প্রতি আরএসএফের দখলে গেছে। এতে পুরো অঞ্চল আরও স্থিতিশীল হবে।’
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দারফুরে এল-ফাশের শহর আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখলে যাওয়ার বিষয়টিকে মিসর শুধু সুদানের গৃহযুদ্ধের আরেকটি লড়াই হিসেবে দেখেনি; দেশটি তাদের নিজ নিরাপত্তার সীমানায় ফাটল ধরার আশঙ্কা হিসেবে দেখেছে। এল-ফাশেরে আরএসএফের স্থানীয় মানুষদের ওপর নির্যাতনকে কায়রো দক্ষিণ সীমান্তের প্রতিরক্ষার প্রথম সারির ওপর আঘাত হিসেবে ভাবছে।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশেরের পতন স্থানীয় ভূরাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মিসর বরাবরই এই যুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর (এসএএফ) সঙ্গে মিসরের সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধের পুরো সময়ে কায়রো এই বাহিনীকে সহায়তা করেছে।
কিন্তু এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয়, তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র নতুন করে আঁকছে। সামরিক সমন্বয়ের পাশাপাশি কূটনীতিক তৎপরতা বাড়িয়ে তারা যুদ্ধের প্রভাব ঠেকাতে চাইছে।
অন্যদিকে আরএসএফের উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তির কাছে এল-ফাশেরে হেরে যাওয়া এসএএফ ও তাদের যৌথ মিত্রবাহিনী এখন নতুন সহায়তার খোঁজে আছে। সুদানি কূটনীতিকেরা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) জানিয়েছেন, এসব অস্ত্র এসেছে মিসরের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
সুদানি বিশ্লেষক ও কনফ্লুয়েন্স অ্যাডভাইজরি থিংকট্যাংকের পরিচালক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এল-ফাশের পতনের পর এসএএফ এখন মিসর ও তুরস্কের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার আশা করছে। বিশেষ করে মিসরের নিজস্ব স্বার্থ জড়িত আছে দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তার সঙ্গে। তারা আরএসএফের সীমান্তবর্তী অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
এই প্রেক্ষাপটে মিসর চুপিসারে সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে অবস্থান শক্তিশালী করছে। বিপদকে নিজ দোরগোড়ায় না পৌঁছাতে তারা সুদানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যাতে হুমকিটা আগেভাগেই ঠেকানো যায়। মিসরের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা চলছে। আরএসএফ ও সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি যৌথ কমান্ড ফোর্স গঠনের কাজ এগোচ্ছে।’
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মিসরের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ ফাতিহি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সফর করেছেন। একটি সৌদি আরবে, আরেকটি পোর্ট সুদান, যা বর্তমানে সুদান সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সৌদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসএএফকেই সমর্থন দেয় বলে ধারণা করা হয়। রিয়াদে ফাতিহি মিসর-সৌদি সামরিক সহযোগিতা কমিটির যৌথ সভা পরিচালনা করেন। এরপর পোর্ট সুদানে গিয়ে তিনি সুদানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় যৌথ অভিযান পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
একই মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, এই সফরের ফলে উত্তর করদোফানে একটি যৌথ অপারেশন রুম ও নতুন আগাম সতর্কীকরণ রাডার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ খুলেছে। এর আগে আরএসএফ এল-ফাশের দখলের সময় উত্তর করদোফানের বারা শহরটিও দখলে নেয়। এই অঞ্চল তেলসমৃদ্ধ। তবে বারা রাজধানী খার্তুম ও এর টুইন সিটি ওমদুরমান থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে। আরএসএফ যুদ্ধের শুরুতে রাজধানী অঞ্চল দখল করলেও এ বছরের মার্চে এসএএফের কাছে খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ হারায়। বাহিনীটি এখন ওমদুরমানের দিকে আবার হামলার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোলুদ খায়ের বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরএসএফ যদি ওমদুরমানে হামলা চালায়, তা হলে মিসরের সরাসরি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। কারণ (সুদানের) রাজধানী সব সময়ই মিসরের কাছে রেড লাইন হিসেবে বিবেচিত।’ মিসরের ওই সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘করদোফানের যৌথ অপারেশন রুমের মাধ্যমে মিসর সুদানি সেনাবাহিনীকে আরএসএফ দখলকৃত এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। দারফুরের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মাঠপর্যায়ে মিসর এখন সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। আকাশে টহল দিচ্ছে যুদ্ধবিমান। এক সূত্র বলেছে, ‘মিসরীয় বিমানবাহিনী সুদানের আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢোকে না। কারণ, আরএসএফের কাছে ভ্রাম্যমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে। মিসরের বিমান টহল শুধু নিজেদের আকাশসীমায় নজরদারি চালায়, সুদানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে না।’
অন্য এক সরকারি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছে, ‘মিসর সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে। তাদের যুদ্ধকৌশল, অস্ত্র, আর সৈন্যদের অবস্থান সমন্বয়ে সাহায্য করছে, যেন আরএসএফের অগ্রগতি ঠেকানো যায়।’ তবে সেই সূত্র সতর্ক করে বলেছে, ‘আরএসএফের নড়াচড়ায় দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানালে বা কোনো ভুল হলে, মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।’
মিসরের জন্য এল-ফাশেরের পতন শুধু সুদানের সেনাবাহিনীর পরাজয় নয়, বরং পুরো অঞ্চলের ভঙ্গুর স্থিতিশীলতার এক ভয়াবহ সংকেত। এল-ফাশের ছিল দারফুরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের সংযোগস্থল। শহরটি হারানোর পর পশ্চিম দারফুর কার্যত দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যা আবারও সুদান ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
আরএসএফ এখন সুদানের ত্রিভুজ অঞ্চল ও এল-ফাশেরের দখল নিয়ে লিবিয়া ও চাদের দিকে যাওয়া বাণিজ্য ও চোরাচালান পথের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে এই রুট দিয়েই সুদানের সোনা পাচার হয়ে মিসরে গেছে। মিসর এখন চায় না যে এসব রুট কোনো অনিয়ন্ত্রিত শক্তির হাতে চলে যাক।
কায়রোভিত্তিক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আরএসএফের শক্তি যত বাড়ছে, ততই এমন এক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, যেখানে অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মিসরের জন্য এটা কেবল সুদানের প্রতি সংহতির বিষয় নয়, বরং নিজের দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষার লড়াই।’
আরএসএফের উত্থান ও এল-ফাশেরে তাদের নৃশংসতা আমিরাতের ভূমিকাকে আবার আলোচনায় এনেছে। আমিরাত অস্বীকার করলেও মিডল ইস্ট আইয়ের স্যাটেলাইট চিত্র, ফ্লাইট ও জাহাজ চলাচলের তথ্য, ভিডিও প্রমাণ, অস্ত্রের সিরিয়াল নম্বর এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে প্রমাণ মেলে—যুদ্ধের পুরো সময়জুড়েই আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আমিরাত এই সরবরাহে ব্যবহার করেছে সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড অঞ্চলের বোসাসো বন্দর, লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে জেনারেল খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটি, চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও উগান্ডার বিমানঘাঁটি। এসব রুট হয়ে তারা সরবরাহ পাঠিয়েছে সুদানের দুই ঘাঁটিতে—দারফুরের নিয়ালা ও এল-ফাশের থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের আল-মালহায়।
এক দশক আগে ইয়েমেনে আমিরাতের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিল আরএসএফ। আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালোর—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—সঙ্গে আমিরাতের আর্থিক সম্পর্ক তাঁকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক করেছে। এই আর্থিক সম্পর্ক মূলত সোনা ও কৃষিজমি ঘিরে।
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই দারফুরে গণহত্যার অভিযোগে আরএসএফের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে মিসরের দুর্বল অর্থনীতি আমিরাতের ‘অবিশ্বাস্য নগদ টাকার’ ওপর নির্ভরশীল। এ কারণেই মিসর এখন কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সীমান্তে ক্রমেই সামরিক পদক্ষেপ বাড়াচ্ছে।
এদিকে সুদান ইস্যুতে সরাসরি সহযোগিতা শুরু করেছে মিসর ও তুরস্কের সেনাবাহিনী। দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এমন সমন্বয় খুবই বিরল ঘটনা। এক উচ্চপদস্থ মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সমন্বয়ের মূল লক্ষ্য হলো সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা, যাতে তারা আরএসএফের দখলকৃত এলাকাগুলো পুনর্দখল করতে পারে এবং দারফুর অঞ্চল স্থিতিশীল রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এল-ফাশের ও আশপাশ এলাকা পুনরুদ্ধারের জন্য সম্ভাব্য এক সামরিক অভিযান নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি আরএসএফ ইউনিটগুলোর কাছে যেন কোনো বিদেশি বিমান সহায়তা না পৌঁছায়, সে জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তুরস্কের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনীকে আরও সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তুরস্ক। সূত্রটি বলেছে, ‘আমরা আগে থেকেই আরও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু এল-ফাশেরে সংঘটিত গণহত্যা আমাদের সেই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করেছে।’
গত বছর থেকেই তুরস্ক সুদানের সেনাবাহিনীকে ড্রোন, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও কমান্ড সেন্টার সরবরাহ করছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এমনকি তুর্কি ড্রোনচালকেরাও বর্তমানে সুদানের ভেতরে কাজ করছে। তুর্কি সূত্র আরও জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহের সক্ষমতা এখনো তুরস্কের সীমিত। কারণ, এমন সরঞ্জামের সংখ্যা দেশটিতে কম।
মিসরীয় ও সুদানি সূত্রের তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে তুর্কি সূত্রগুলোও বলছে, যুদ্ধের শুরু থেকেই মিসর গোপনে সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে আসছে। তাদের একজন বলেন, ‘এখন মিসর প্রকাশ্যে সহায়তা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, কারণ আরএসএফ ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক আলোচনাগুলো ভন্ডুল করেছে।’
ওয়াশিংটনে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সুদানি পক্ষগুলো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে একই সময়ে এল-ফাশেরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আরএসএফ। আলোচনায় আরএসএফের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন আলগনি দাগালো। তাঁর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি দেশটির মাটিতে ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া হোটেলে অবস্থান করছেন। তিনি আরএসএফ প্রধান হেমেদতির ভাই।
বিশ্লেষক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এখন প্রায় নিশ্চিত যে সুদানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা মিসরের জন্য বিব্রতকর। কারণ, ট্রাম্প আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমেরিকান পরিকল্পনায় সুদানের সেনাবাহিনীকে রাজি করাতে। এখন মিসরকে তার আগের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে এসে সুদানের যুদ্ধে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।’
আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুর ও সুদানের আরও কিছু অংশ বের হয়ে নতুন দেশ গড়া ঠেকাতে মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনী উত্তর করদোফানের এল-ওবেইদে আরেকটি যৌথ কমান্ড সেন্টার গঠন করছে। এর লক্ষ্য হলো আরএসএফের অগ্রযাত্রা থামানো ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পুনর্দখল করা। মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো যাবে সেসব এলাকায়, যেগুলো সম্প্রতি আরএসএফের দখলে গেছে। এতে পুরো অঞ্চল আরও স্থিতিশীল হবে।’
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী এই যুবকের ঐতিহাসিক জয়ে যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ তাঁর ক্যারিশমা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতির দিকে, তখন পর্দার আড়ালে থাকা এক কৌশলীর কথা উঠে আসছে
৮ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তপারের রাজনীতি খুব কম সময়ই শান্ত থেকেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলের বড় নদীগুলোকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তাল, অস্থির হয়ে উঠেছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে আফগানিস্তান কাবুল নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই মাসে হাজারো
২ দিন আগে
পরবর্তী দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ‘অ্যালগরিদমের ভয়’ নয়, বরং বিদ্যুতের টানাপোড়েন। হাইপারস্কেলার নামে পরিচিত বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এখনই এমন গিগাওয়াটের বিদ্যুৎ আগাম কিনছে, যা এখনো বাস্তবে পাওয়া যায়নি। দেশগুলো তড়িঘড়ি করে সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন করিডর অনুমোদন দিচ্ছে। আর এই বিশৃঙ্খল
২ দিন আগে