দ্য ইকোনমিস্ট
ব্রিটেনে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে লেবার পার্টির ক্ষমতায় ফিরছে কি না— তা আগামী ৪ জুলাইয়ের জাতীয় নির্বাচনের প্রায় নিরুত্তাপ প্রচারণা থেকে বোঝা কঠিন। এবারের নির্বাচনে অর্থনীতিই নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে দুই দলের কেউই ভোটের প্রচারে অর্থনীতি নিয়ে তেমন একটা কথা বলছে না।
এক সময় উদারনৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা ব্রিটেনের অর্থনীতি পরিচালিত হত। মুক্ত বাণিজ্য, ব্যক্তি স্বাধীনতার মতো বিষয় সেখানে প্রাধান্য পেত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় এমনটা আর নেই। ব্রিটেনের উদারনৈতিক অর্থনীতি এখন নিয়ন্ত্রিত। হর-হামেশাই রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ হয় এখানে। তবে আগামী দিনে ব্রিটেনের অর্থনীতি কোন পথে চলবে তা নির্বাচনের মাধ্যমেই যে নির্ধারিত হবে— সেটি মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। ৪ জুলাই যদি আমাদের ভোট হতো, তাহলে আমরা লেবার পার্টিকেই বেছে নিতাম। কারণ, সংকটাপন্ন ব্রিটিশ অর্থনীতির জন্য লেবার পার্টিই সবচেয়ে ভালো পথ বেছে নিতে পারবে।
লেবার পার্টি কেন এগিয়ে থাকবে, তা ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রথমেই বিকল্পগুলো বিবেচনা করা দরকার। কিছু বিকল্প শুরুতেই বাদ দিতে পারেন। যেমন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। এই দল ব্রিটেনকে শাসনের চেয়ে ভেঙে ফেলতেই বেশি আগ্রহী। আর গ্রিন পার্টি দেশের ছাত্র রাজনীতিকে উগ্রবাদী করে তুলছে। নাইজেল ফারাজের ‘রিফর্ম ইউকে’র স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি ব্রিটেনের পতনকেই ত্বরান্বিত করবে। যদিও তাদের দাবি, তাঁরা ব্রিটেনকে রক্ষা করতে চায়।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক (লিব ডেম) পার্টি ইতিবাচক ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেনি। অন্তত ২০১৯ সালের নির্বাচনে জনগণ যেসব কারণে দলটিকে সমর্থন করেছিল, সেগুলো এখন আর নেই। তখন বরিস জনসনের নেতৃত্বে টোরি তথা কনজারভেটিভ পার্টি ও জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি ব্রিটিশ রাজনীতিতে শূন্যস্থান তৈরি করেছিল এবং তা পূরণে সবচেয়ে ভালো বিকল্প ছিল লিব ডেম।
লিব ডেমে ভালো কিছু নীতি এখনও বহাল আছে। যেমন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাজের সুযোগ দেওয়া, নতুন করে ভূমি-মূল্য কর আরোপের পরিকল্পনা ইত্যাদি। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিকল্পনা ও অন্যান্য ইস্যুতে দলটি অনেক বেশি দ্বিধাগ্রস্ত। এই অবস্থায় সরকার পরিচালনার জন্য কোনোভাবেই দলটি উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে, উদারনৈতিক দল হিসেবেই এখন তাদের সন্দেহ করার অবকাশ আছে।
ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির অবস্থা অনেকটা সেই শিক্ষকের মতো, যিনি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে ভালো কিছু বলার জন্য খাবি খাচ্ছেন, কিন্তু বলতে পারছেন না। শিক্ষার মান, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর ছাড়সহ নানা বিষয়ে দলটি ভালো করেছে। ৪৫ দিনের টোরি প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের চেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যথেষ্ট ভালো। সব মিলিয়ে বিগত এক যুগ ধরে দলটি ভালো করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুসহ নানা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এই দল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্থায়ী কাউকে না পাওয়া দলটিকে অনেক ভুগিয়েছে।
তবে টোরি পার্টির এই ভালো পৃষ্ঠা উল্টালে যা দেখা যায়, তার তালিকা খুবই দীর্ঘ ও নিষ্প্রভ— জনপরিসর সংকুচিত হয়েছে; কারাগার ভর্তি হয়ে আছে; স্থানীয় সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তহবিল নেই। এছাড়া জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা খাত সরকারের জন্য আর্থিকভাবে ইতিবাচক হলেও সেবা পাওয়াই দুষ্কর।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতি টোরি সরকার খুবই কঠোর ও এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্ষম। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মতো ইস্যুতে এই সরকার খুব বেশি ইতিবাচক আচরণ করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা, অবকাঠামো নির্মাণ খাতেও টোরি সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রয়োজনীয় আবাসন সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ সঞ্চালনে জাতীয় গ্রিডের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে।
টোরি সরকারই সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ব্রিটেন। ব্রেক্সিটের ফলাফল ইতিবাচক হলেও এর ফলে দলটিতে বিভাজন দেখা দিয়েছে। যে কারণে, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ের প্রধানমন্ত্রীরা তাঁর আগের প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে হয় বাতিল, নয় সংশোধন করেছেন। ব্রিটেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভোটারদের উপেক্ষা করেছে টোরি। সব মিলিয়ে টোরিদের সাফল্যের বিপরীতে ব্যর্থতা বা শঙ্কার পাল্লা নেহাত কম নয়।
এত কিছুর পরও টোরি পার্টির বিলুপ্তি কামনা অন্যায়ই হবে। ব্রিটিশ ভোটারেরা অধৈর্য-অস্থির হয়ে উঠেছেন। এখন লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলেও পাঁচ বছর পর ভোটারেরা ফের বিকল্প সন্ধান করতে পারেন। আর ব্রিটেনের রাজনীতিতে সব সময়ই শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি দরকার। ফলে টোরি পার্টি বিপর্যয়ের মুখে পড়লে চরম জনতুষ্টির রাজনীতির দিকে ধাবিত হবে, সেটা তাকে অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দেবে। এর ফলে ব্রিটেনের স্বার্থেই টোরি পার্টির পুনরুত্থান জরুরি। যে দলটির বাজারের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।
বিরোধী দল লেবার পার্টির যে নেতিবাচক দিক নেই, তা নয়। তারপরও তুলনামূলকভাবে দলটির অনেক কিছুই অন্যদের চেয়ে ইতিবাচক। প্রথমটিই হলো— দলটি অনেক রূপান্তরের ভেতর দিয়ে গেছে। গত জাতীয় নির্বাচনের পর দলের প্রধান কিয়ের স্টারমার জেরেমি করবিনকে বহিষ্কার করেছেন। তাঁর অনেক সহকর্মীকেই ছুড়ে ফেলেছেন এবং দলকে কট্টর সমাজবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে বের করে এনেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গঠনের পরিকল্পনাসহ লেবার পার্টির অনেক নীতির বিরোধিতা করে দ্য ইকোনমিস্ট। কিন্তু ভোটারেরা যদি লেবার পার্টিকে বেছে নিতে চায়, ইকোনমিস্ট সেটাও সমর্থন করে।
দ্বিতীয় আরেকটি ইতিবাচক কারণে ভোটারেরা লেবার পার্টিকে সমর্থন করতে পারেন। সেটি হলো— দলটি জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগী হয়েছে। ব্রিটেনের স্থবির উৎপাদনশীলতাকে গতিশীল করা ছাড়া আর কোনো কাজই যে এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়— দলটি তা বুঝে গেছে। এক্ষেত্রে টোরির তরুণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও শহুরে সমর্থকেরা তাদের মদদ করবে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— আরও বেশি বেশি বাড়ি ও অবকাঠামো তৈরি করা এবং ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা। কিন্তু রক্ষণশীল তথা টোরি পার্টি এই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
এখন লেবার পার্টির মাথার ওপর যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো— প্রবৃদ্ধি অর্জনে দলটি কতটা কট্টর অবস্থান নেবে। একপ্রকার খ্যাপাটে ও সতর্ক নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে দলটি। তবে প্রচারণার ধরন দেখে মনে হয়েছে, তারা বড় ধরনের পরিবর্তন আনার জন্য জনগণের ম্যান্ডেটের চেয়ে ভোটারদের আস্থায় আনায় জোর দিয়েছে বেশি। তবে এই কৌশল কিয়ের স্টারমারকে খুব বেশি সাহায্য করেছে বলে মনে হচ্ছে না। এছাড়া করহার বাড়ানোর বিষয়টি নির্বাচনী প্রচারণায় সামনে না রাখলেও ক্ষমতায় এলে এ কাজটিই লেবার পার্টিকে করতে হতে পারে।
সব মিলিয়ে এসব দুর্বলতার কারণে স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হলেও তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা সহজ হয়ে হতে পারে। বিশেষ করে, শ্রমিক অধিকার, কর বৃদ্ধি, শিল্প খাতে ভর্তুকি হ্রাসসহ নানা কারণে তাঁর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। তবে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে নিজের ও দলের বিরুদ্ধে এসব সমালোচনার কড়া জবাব দিতে পারেন কিয়ের স্টারমার।
কোনো বিষয়ে লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার ইতিহাস কিয়ের স্টারমারের আছে। ব্রিটেনের স্বার্থে, নিজ দলের স্বার্থে ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের অস্থির মতাদর্শিক সময়ে এমনভাবে কাজ করে যাওয়া তাঁর জন্য জরুরিও। সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিকল্পনা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার, স্থানীয় সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় কোষাগার বৃদ্ধি এবং কর ব্যবস্থা যুক্তিযুক্ত করতে সফল হয় লেবার সরকার তাহলেই ইতিহাসের পাতায় কিয়ের স্টারমারের নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে এবং ব্রিটেনও আরও ভালো হবে। কিয়ের স্টারমার ও তাঁর দল সেই সুযোগ পেয়েছেন।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ব্রিটেনে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে লেবার পার্টির ক্ষমতায় ফিরছে কি না— তা আগামী ৪ জুলাইয়ের জাতীয় নির্বাচনের প্রায় নিরুত্তাপ প্রচারণা থেকে বোঝা কঠিন। এবারের নির্বাচনে অর্থনীতিই নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে দুই দলের কেউই ভোটের প্রচারে অর্থনীতি নিয়ে তেমন একটা কথা বলছে না।
এক সময় উদারনৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা ব্রিটেনের অর্থনীতি পরিচালিত হত। মুক্ত বাণিজ্য, ব্যক্তি স্বাধীনতার মতো বিষয় সেখানে প্রাধান্য পেত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় এমনটা আর নেই। ব্রিটেনের উদারনৈতিক অর্থনীতি এখন নিয়ন্ত্রিত। হর-হামেশাই রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ হয় এখানে। তবে আগামী দিনে ব্রিটেনের অর্থনীতি কোন পথে চলবে তা নির্বাচনের মাধ্যমেই যে নির্ধারিত হবে— সেটি মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। ৪ জুলাই যদি আমাদের ভোট হতো, তাহলে আমরা লেবার পার্টিকেই বেছে নিতাম। কারণ, সংকটাপন্ন ব্রিটিশ অর্থনীতির জন্য লেবার পার্টিই সবচেয়ে ভালো পথ বেছে নিতে পারবে।
লেবার পার্টি কেন এগিয়ে থাকবে, তা ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রথমেই বিকল্পগুলো বিবেচনা করা দরকার। কিছু বিকল্প শুরুতেই বাদ দিতে পারেন। যেমন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। এই দল ব্রিটেনকে শাসনের চেয়ে ভেঙে ফেলতেই বেশি আগ্রহী। আর গ্রিন পার্টি দেশের ছাত্র রাজনীতিকে উগ্রবাদী করে তুলছে। নাইজেল ফারাজের ‘রিফর্ম ইউকে’র স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি ব্রিটেনের পতনকেই ত্বরান্বিত করবে। যদিও তাদের দাবি, তাঁরা ব্রিটেনকে রক্ষা করতে চায়।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক (লিব ডেম) পার্টি ইতিবাচক ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেনি। অন্তত ২০১৯ সালের নির্বাচনে জনগণ যেসব কারণে দলটিকে সমর্থন করেছিল, সেগুলো এখন আর নেই। তখন বরিস জনসনের নেতৃত্বে টোরি তথা কনজারভেটিভ পার্টি ও জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি ব্রিটিশ রাজনীতিতে শূন্যস্থান তৈরি করেছিল এবং তা পূরণে সবচেয়ে ভালো বিকল্প ছিল লিব ডেম।
লিব ডেমে ভালো কিছু নীতি এখনও বহাল আছে। যেমন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাজের সুযোগ দেওয়া, নতুন করে ভূমি-মূল্য কর আরোপের পরিকল্পনা ইত্যাদি। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিকল্পনা ও অন্যান্য ইস্যুতে দলটি অনেক বেশি দ্বিধাগ্রস্ত। এই অবস্থায় সরকার পরিচালনার জন্য কোনোভাবেই দলটি উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে, উদারনৈতিক দল হিসেবেই এখন তাদের সন্দেহ করার অবকাশ আছে।
ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির অবস্থা অনেকটা সেই শিক্ষকের মতো, যিনি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে ভালো কিছু বলার জন্য খাবি খাচ্ছেন, কিন্তু বলতে পারছেন না। শিক্ষার মান, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর ছাড়সহ নানা বিষয়ে দলটি ভালো করেছে। ৪৫ দিনের টোরি প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের চেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যথেষ্ট ভালো। সব মিলিয়ে বিগত এক যুগ ধরে দলটি ভালো করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুসহ নানা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এই দল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্থায়ী কাউকে না পাওয়া দলটিকে অনেক ভুগিয়েছে।
তবে টোরি পার্টির এই ভালো পৃষ্ঠা উল্টালে যা দেখা যায়, তার তালিকা খুবই দীর্ঘ ও নিষ্প্রভ— জনপরিসর সংকুচিত হয়েছে; কারাগার ভর্তি হয়ে আছে; স্থানীয় সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তহবিল নেই। এছাড়া জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা খাত সরকারের জন্য আর্থিকভাবে ইতিবাচক হলেও সেবা পাওয়াই দুষ্কর।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতি টোরি সরকার খুবই কঠোর ও এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্ষম। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মতো ইস্যুতে এই সরকার খুব বেশি ইতিবাচক আচরণ করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা, অবকাঠামো নির্মাণ খাতেও টোরি সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রয়োজনীয় আবাসন সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ সঞ্চালনে জাতীয় গ্রিডের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে।
টোরি সরকারই সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ব্রিটেন। ব্রেক্সিটের ফলাফল ইতিবাচক হলেও এর ফলে দলটিতে বিভাজন দেখা দিয়েছে। যে কারণে, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ের প্রধানমন্ত্রীরা তাঁর আগের প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে হয় বাতিল, নয় সংশোধন করেছেন। ব্রিটেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভোটারদের উপেক্ষা করেছে টোরি। সব মিলিয়ে টোরিদের সাফল্যের বিপরীতে ব্যর্থতা বা শঙ্কার পাল্লা নেহাত কম নয়।
এত কিছুর পরও টোরি পার্টির বিলুপ্তি কামনা অন্যায়ই হবে। ব্রিটিশ ভোটারেরা অধৈর্য-অস্থির হয়ে উঠেছেন। এখন লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলেও পাঁচ বছর পর ভোটারেরা ফের বিকল্প সন্ধান করতে পারেন। আর ব্রিটেনের রাজনীতিতে সব সময়ই শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি দরকার। ফলে টোরি পার্টি বিপর্যয়ের মুখে পড়লে চরম জনতুষ্টির রাজনীতির দিকে ধাবিত হবে, সেটা তাকে অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দেবে। এর ফলে ব্রিটেনের স্বার্থেই টোরি পার্টির পুনরুত্থান জরুরি। যে দলটির বাজারের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।
বিরোধী দল লেবার পার্টির যে নেতিবাচক দিক নেই, তা নয়। তারপরও তুলনামূলকভাবে দলটির অনেক কিছুই অন্যদের চেয়ে ইতিবাচক। প্রথমটিই হলো— দলটি অনেক রূপান্তরের ভেতর দিয়ে গেছে। গত জাতীয় নির্বাচনের পর দলের প্রধান কিয়ের স্টারমার জেরেমি করবিনকে বহিষ্কার করেছেন। তাঁর অনেক সহকর্মীকেই ছুড়ে ফেলেছেন এবং দলকে কট্টর সমাজবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে বের করে এনেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গঠনের পরিকল্পনাসহ লেবার পার্টির অনেক নীতির বিরোধিতা করে দ্য ইকোনমিস্ট। কিন্তু ভোটারেরা যদি লেবার পার্টিকে বেছে নিতে চায়, ইকোনমিস্ট সেটাও সমর্থন করে।
দ্বিতীয় আরেকটি ইতিবাচক কারণে ভোটারেরা লেবার পার্টিকে সমর্থন করতে পারেন। সেটি হলো— দলটি জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগী হয়েছে। ব্রিটেনের স্থবির উৎপাদনশীলতাকে গতিশীল করা ছাড়া আর কোনো কাজই যে এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়— দলটি তা বুঝে গেছে। এক্ষেত্রে টোরির তরুণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও শহুরে সমর্থকেরা তাদের মদদ করবে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— আরও বেশি বেশি বাড়ি ও অবকাঠামো তৈরি করা এবং ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা। কিন্তু রক্ষণশীল তথা টোরি পার্টি এই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
এখন লেবার পার্টির মাথার ওপর যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো— প্রবৃদ্ধি অর্জনে দলটি কতটা কট্টর অবস্থান নেবে। একপ্রকার খ্যাপাটে ও সতর্ক নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে দলটি। তবে প্রচারণার ধরন দেখে মনে হয়েছে, তারা বড় ধরনের পরিবর্তন আনার জন্য জনগণের ম্যান্ডেটের চেয়ে ভোটারদের আস্থায় আনায় জোর দিয়েছে বেশি। তবে এই কৌশল কিয়ের স্টারমারকে খুব বেশি সাহায্য করেছে বলে মনে হচ্ছে না। এছাড়া করহার বাড়ানোর বিষয়টি নির্বাচনী প্রচারণায় সামনে না রাখলেও ক্ষমতায় এলে এ কাজটিই লেবার পার্টিকে করতে হতে পারে।
সব মিলিয়ে এসব দুর্বলতার কারণে স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হলেও তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা সহজ হয়ে হতে পারে। বিশেষ করে, শ্রমিক অধিকার, কর বৃদ্ধি, শিল্প খাতে ভর্তুকি হ্রাসসহ নানা কারণে তাঁর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। তবে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে নিজের ও দলের বিরুদ্ধে এসব সমালোচনার কড়া জবাব দিতে পারেন কিয়ের স্টারমার।
কোনো বিষয়ে লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার ইতিহাস কিয়ের স্টারমারের আছে। ব্রিটেনের স্বার্থে, নিজ দলের স্বার্থে ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের অস্থির মতাদর্শিক সময়ে এমনভাবে কাজ করে যাওয়া তাঁর জন্য জরুরিও। সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিকল্পনা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার, স্থানীয় সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় কোষাগার বৃদ্ধি এবং কর ব্যবস্থা যুক্তিযুক্ত করতে সফল হয় লেবার সরকার তাহলেই ইতিহাসের পাতায় কিয়ের স্টারমারের নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে এবং ব্রিটেনও আরও ভালো হবে। কিয়ের স্টারমার ও তাঁর দল সেই সুযোগ পেয়েছেন।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই বিশ্ব চালাচ্ছেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। কিন্তু এটি বিপজ্জনক ঔদ্ধত্যেরও ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলে—এই বিশৃঙ্খল ও প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? দ্য আটলান্টিককে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য...
৮ ঘণ্টা আগেবড় প্রশ্ন হলো, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না? ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ ভারতীয় পুলিশ নিহত হয়। এরপর পেহেলগামের হামলাই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এমনকি এটি ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার
১৫ ঘণ্টা আগেবিশ্লেষকদের মতে, ভারত হয়তো কিছুটা সংযত আচরণই করবে। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী এখনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, তাদের প্রকাশ্যে এনে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে দেশের ৬৮ শতাংশ সামরিক সরঞ্জামকে ‘পুরোনো মডেলের’, ২৪ শতাংশকে...
২ দিন আগেসংবাদ বা তথ্যের সংলাপমূলক উপস্থাপন চর্চার উত্থানের পাশাপাশি, পাঠকেরা এখন চ্যাটবটকে ফলোআপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন, চাহিদামতো সারসংক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেন, এমনকি বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যাও এআই–এর কাছে চাওয়া হয়। ফলে পাঠকেরা সংবাদ পাঠে চিরাচরিত নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীতে রূপান্তরিত হচ্ছে
৩ দিন আগে