অনলাইন ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দুদিন পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে যে ভঙ্গিতে কথা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে, তিনি মস্ত বড় বিজয় হাসিল করেছেন। তাঁর ভাষণে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ১২ মের ভাষণে মোদি বলেছেন, কাশ্মীরে গত মাসের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের চার দিনের সামরিক অভিযান এক ‘নিউ নরমাল’ বা ‘নয়া স্বাভাবিকতা’ নির্মাণ করেছে। ওই অভিযান আপাতত স্থগিত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তানের আচরণে নজর রাখা হবে।
মোদি আরও বলেন, ভবিষ্যতে ভারত সন্ত্রাসবাদী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য করবে না। ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের’ কাছে আত্মসমর্পণ করবে না ভারত। মোদির এই বক্তব্য একদিকে যেমন পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেওয়া, অন্যদিকে যুদ্ধবিরতিতে ক্ষুব্ধ জাতীয়তাবাদীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা। তবে এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার ভূমিকায় ভারতের অসন্তোষও ফুটে ওঠে। কারণ, আমেরিকাই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ থামানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
মোদি তাঁর ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতার দাবি নিয়ে একটি কথাও বলেননি; বরং দাবি করেছেন, পাকিস্তানই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছে। কারণ, তারা ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির’ মুখে পড়েছে। মোদি এটাও স্পষ্ট করে দেন যে আমেরিকা যতই বড় শান্তি আলোচনা প্রস্তাব দিক না কেন, ভারত আলোচনার বিষয় হিসেবে কেবল সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভবিষ্যৎকেই বিবেচনায় নেবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানকে এই ফলাফলে সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে। দেশটিও দাবি করছে, তারা বিজয়ী। তারা যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আমেরিকাসহ অন্য মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে পাকিস্তান বড় পরিসরের আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে দেশটি চায়, আলোচনায় ভারতের দখলে থাকা কাশ্মীর, ভারতের স্থগিত করা পানিবণ্টন চুক্তি এবং পাকিস্তানের মাটিতে ভারত-সমর্থিত বিদ্রোহীদের ইস্যু অন্তর্ভুক্ত থাকুক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘শান্তির প্রতি আন্তরিক অবস্থান’ থেকেই তাঁরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন। তবে যদি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে তাঁর দেশ সেটি মেনে নেবে না।
এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে বলেই মনে হচ্ছে। ১১ মে দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। পরদিন দুই দেশের সেনাবাহিনীর অপারেশনস প্রধানেরা হটলাইনে কথা বলেন এবং সীমান্তবর্তী ও ফ্রন্টিয়ার এলাকাগুলোতে সৈন্যসংখ্যা কমাতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করেন।
তবে এই মুহূর্তে কে কার চেয়ে বেশি সফল—এই ইস্যুতে প্রচারণায় লিপ্ত দুই দেশ। ২০১৯ সালের সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন লিসা কার্টিস। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার হস্তক্ষেপ দুই দেশকেই ‘বিজয়ী দাবি করে যুদ্ধ-পরিস্থিতি থেকে সরে আসার’ সুযোগ করে দিয়েছে।
লিসা কার্টিস মনে করেন, ‘যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে।’ তবে এটাও বলেন, মোদি প্রশাসন ট্রাম্পের কিছু মন্তব্যে বিরক্ত। যদি আমেরিকা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়, তাহলে পাকিস্তান-ভারত সংঘাত নিয়ে বড় পরিসরের আলোচনার অঙ্গীকার থেকে সরে আসতে হতে পারে।
মোদির ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণও অবশ্য রয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম আমলে তিনি নিজ দেশে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে বড় কৃতিত্ব হিসেবে দেখান। চীনের উত্থান নিয়ে দুই দেশের যে যৌথ শঙ্কা, তার ভিত্তিতেই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। পাকিস্তান যেখানে নতুন চীনা যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধার পরীক্ষা করেছে এবং দাবি করছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে (যদিও ভারত তা স্বীকার করেনি), সেখানে ভারত আমেরিকার কাছ থেকে দৃশ্যমান তেমন কোনো সমর্থন পায়নি।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা তাদের আগেভাগে জানানো হয়নি। এতে ভারত প্রথমে যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে ‘পাকিস্তানের অনুরোধে হওয়া’ বলে উপস্থাপন করতে পারছে না। যাহোক, যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার পর ট্রাম্প ১১ মে কাশ্মীর ইস্যুতেও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভারত কাশ্মীর ইস্যুতে বহুদিন ধরে এ ধরনের তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মেনে নিতে নারাজ। ভারতীয় কর্মকর্তারা আরও দাবি করছেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময় বাণিজ্য নিয়ে কোনো কথা হয়নি। যদিও ট্রাম্প ১২ মে বলেন, তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, যদি যুদ্ধ না থামে, তাহলে কোনো পক্ষের সঙ্গেই ব্যবসা করবেন না।
ভারতের দৃষ্টিতে, প্রথমে আমেরিকা এই সংকট উপেক্ষা করেছে এবং পরে পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকির কাছে মাথা নত করেছে। আমেরিকার কর্মকর্তারা বলছেন, ৯ মে রাতে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার পর উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে তাঁরা হস্তক্ষেপ করেন। যদিও ওয়াশিংটন বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ১০ মে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি নোটিশ পাঠিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে জানায়, তাদের ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি বৈঠকে বসছে। এই সংস্থা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। পরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অবশ্য তা অস্বীকার করেন। কিন্তু ভারত বিষয়টি দেখেছে এভাবে যে কম শক্তিশালী দেশ হিসেবে পাকিস্তান আবারও তাড়াতাড়ি পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকির আশ্রয় নিয়েছে, যেমনটা তারা ১৯৯০ ও ১৯৯৯ সালেও করেছিল।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের আরও আশঙ্কা, আমেরিকার এই মধ্যস্থতার প্রস্তাব কাশ্মীরের দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি ফেরাচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসূত্রের দিকে নয়। ট্রাম্প ২০১৯ সালেও কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে ভারতকে বিরক্ত করেছিলেন। এবারও তিনি ভারতের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কি তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার দরজা খুলে দিয়েছি?’
ভারতের সামরিক নেতৃত্বও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় ভারতের সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল ভিপি মালিক। তিনি ভারতের বাহিনীর প্রশংসা করলেও টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন তুলেছেন, ভারত যে ভবিষ্যতের সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে চেয়েছিল, সেটা কি আদৌ হয়েছে?
ভিপি মালিক আরও বলেন, আমেরিকাকে হস্তক্ষেপের সুযোগ দিয়ে ভারত দীর্ঘদিনের লালিত ‘কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ নীতি বিসর্জন দিয়েছে এবং আবারও পাকিস্তানের সঙ্গে এক কাতারে নামিয়েছে। অথচ ভারত নিজেকে আলাদা এক উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে তাড়াহুড়া করে ফেলেছি?’
ভারতের অনেকে মনে করছেন, আমেরিকা দুই দেশের নেতাদের প্রশংসা করে সমান চোখে দেখছেন বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, অথচ ভারত তার সামরিক পদক্ষেপকে কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের হামলার বৈধ জবাব হিসেবেই দেখছে। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী টেলিভিশন উপস্থাপক অর্ণব গোস্বামী এক ভাইরাল ভিডিওতে বলেন, ‘ট্রাম্প কীভাবে পেহেলগামের ঘটনার সঙ্গে পরবর্তী ঘটনাগুলোর তুলনা করতে পারেন? এটা একেবারেই অযৌক্তিক।’
যুদ্ধের ফলাফলের বয়ান নিয়েও ভারতের ভেতর প্রশ্ন উঠেছে। ভারত স্যাটেলাইট চিত্র দেখিয়ে বলেছে, তারা পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। দাবি করেছে, ১০০ জনের বেশি তথাকথিত ‘জঙ্গি’ ও ৩৫ থেকে ৪০ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। তারা বলছে, কয়েকটি ‘উচ্চ প্রযুক্তির’ পাকিস্তানি বিমানও ভূপাতিত করা হয়েছে। অথচ ওপেন সোর্স প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, ভারতও কিছু বিমান হারিয়েছে। পাকিস্তান যে ৩টি রাফাল ও ২টি রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে, সেটি ভারত স্বীকার করেনি, অস্বীকারও করেনি।
অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে, তাদের কেবল একটি বিমান সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা দাবি করেছে, ভারতের ২৬টি সামরিক স্থাপনার বড় ক্ষতি করেছে, ড্রোন পাঠিয়েছে দিল্লি পর্যন্ত এবং ৪০ থেকে ৫০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে। তবে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিরোধে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কতটা সফল ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
দুই পক্ষের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি যা-ই হোক না, এই সংকট থেকে একটা শিক্ষা পাওয়া গেল—ভারত চাইলে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে, এবং সেটি যুদ্ধ বা পারমাণবিক উত্তেজনা ছাড়াই। তবে এর বিপজ্জনক দিক হলো, ভবিষ্যতে ভারত হয়তো আরও জোরালোভাবে আঘাত করবে এবং পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি দিলেও পিছু হটবে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দুদিন পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে যে ভঙ্গিতে কথা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে, তিনি মস্ত বড় বিজয় হাসিল করেছেন। তাঁর ভাষণে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ১২ মের ভাষণে মোদি বলেছেন, কাশ্মীরে গত মাসের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের চার দিনের সামরিক অভিযান এক ‘নিউ নরমাল’ বা ‘নয়া স্বাভাবিকতা’ নির্মাণ করেছে। ওই অভিযান আপাতত স্থগিত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তানের আচরণে নজর রাখা হবে।
মোদি আরও বলেন, ভবিষ্যতে ভারত সন্ত্রাসবাদী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য করবে না। ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের’ কাছে আত্মসমর্পণ করবে না ভারত। মোদির এই বক্তব্য একদিকে যেমন পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেওয়া, অন্যদিকে যুদ্ধবিরতিতে ক্ষুব্ধ জাতীয়তাবাদীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা। তবে এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার ভূমিকায় ভারতের অসন্তোষও ফুটে ওঠে। কারণ, আমেরিকাই পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ থামানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
মোদি তাঁর ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতার দাবি নিয়ে একটি কথাও বলেননি; বরং দাবি করেছেন, পাকিস্তানই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছে। কারণ, তারা ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির’ মুখে পড়েছে। মোদি এটাও স্পষ্ট করে দেন যে আমেরিকা যতই বড় শান্তি আলোচনা প্রস্তাব দিক না কেন, ভারত আলোচনার বিষয় হিসেবে কেবল সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভবিষ্যৎকেই বিবেচনায় নেবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানকে এই ফলাফলে সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে। দেশটিও দাবি করছে, তারা বিজয়ী। তারা যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আমেরিকাসহ অন্য মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে পাকিস্তান বড় পরিসরের আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে দেশটি চায়, আলোচনায় ভারতের দখলে থাকা কাশ্মীর, ভারতের স্থগিত করা পানিবণ্টন চুক্তি এবং পাকিস্তানের মাটিতে ভারত-সমর্থিত বিদ্রোহীদের ইস্যু অন্তর্ভুক্ত থাকুক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘শান্তির প্রতি আন্তরিক অবস্থান’ থেকেই তাঁরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন। তবে যদি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে তাঁর দেশ সেটি মেনে নেবে না।
এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে বলেই মনে হচ্ছে। ১১ মে দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। পরদিন দুই দেশের সেনাবাহিনীর অপারেশনস প্রধানেরা হটলাইনে কথা বলেন এবং সীমান্তবর্তী ও ফ্রন্টিয়ার এলাকাগুলোতে সৈন্যসংখ্যা কমাতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করেন।
তবে এই মুহূর্তে কে কার চেয়ে বেশি সফল—এই ইস্যুতে প্রচারণায় লিপ্ত দুই দেশ। ২০১৯ সালের সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন লিসা কার্টিস। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার হস্তক্ষেপ দুই দেশকেই ‘বিজয়ী দাবি করে যুদ্ধ-পরিস্থিতি থেকে সরে আসার’ সুযোগ করে দিয়েছে।
লিসা কার্টিস মনে করেন, ‘যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে।’ তবে এটাও বলেন, মোদি প্রশাসন ট্রাম্পের কিছু মন্তব্যে বিরক্ত। যদি আমেরিকা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়, তাহলে পাকিস্তান-ভারত সংঘাত নিয়ে বড় পরিসরের আলোচনার অঙ্গীকার থেকে সরে আসতে হতে পারে।
মোদির ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণও অবশ্য রয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম আমলে তিনি নিজ দেশে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে বড় কৃতিত্ব হিসেবে দেখান। চীনের উত্থান নিয়ে দুই দেশের যে যৌথ শঙ্কা, তার ভিত্তিতেই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। পাকিস্তান যেখানে নতুন চীনা যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধার পরীক্ষা করেছে এবং দাবি করছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে (যদিও ভারত তা স্বীকার করেনি), সেখানে ভারত আমেরিকার কাছ থেকে দৃশ্যমান তেমন কোনো সমর্থন পায়নি।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা তাদের আগেভাগে জানানো হয়নি। এতে ভারত প্রথমে যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে ‘পাকিস্তানের অনুরোধে হওয়া’ বলে উপস্থাপন করতে পারছে না। যাহোক, যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার পর ট্রাম্প ১১ মে কাশ্মীর ইস্যুতেও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভারত কাশ্মীর ইস্যুতে বহুদিন ধরে এ ধরনের তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মেনে নিতে নারাজ। ভারতীয় কর্মকর্তারা আরও দাবি করছেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময় বাণিজ্য নিয়ে কোনো কথা হয়নি। যদিও ট্রাম্প ১২ মে বলেন, তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, যদি যুদ্ধ না থামে, তাহলে কোনো পক্ষের সঙ্গেই ব্যবসা করবেন না।
ভারতের দৃষ্টিতে, প্রথমে আমেরিকা এই সংকট উপেক্ষা করেছে এবং পরে পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকির কাছে মাথা নত করেছে। আমেরিকার কর্মকর্তারা বলছেন, ৯ মে রাতে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার পর উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে তাঁরা হস্তক্ষেপ করেন। যদিও ওয়াশিংটন বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ১০ মে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি নোটিশ পাঠিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে জানায়, তাদের ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি বৈঠকে বসছে। এই সংস্থা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। পরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অবশ্য তা অস্বীকার করেন। কিন্তু ভারত বিষয়টি দেখেছে এভাবে যে কম শক্তিশালী দেশ হিসেবে পাকিস্তান আবারও তাড়াতাড়ি পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকির আশ্রয় নিয়েছে, যেমনটা তারা ১৯৯০ ও ১৯৯৯ সালেও করেছিল।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের আরও আশঙ্কা, আমেরিকার এই মধ্যস্থতার প্রস্তাব কাশ্মীরের দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি ফেরাচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসূত্রের দিকে নয়। ট্রাম্প ২০১৯ সালেও কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে ভারতকে বিরক্ত করেছিলেন। এবারও তিনি ভারতের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কি তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার দরজা খুলে দিয়েছি?’
ভারতের সামরিক নেতৃত্বও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় ভারতের সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল ভিপি মালিক। তিনি ভারতের বাহিনীর প্রশংসা করলেও টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন তুলেছেন, ভারত যে ভবিষ্যতের সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে চেয়েছিল, সেটা কি আদৌ হয়েছে?
ভিপি মালিক আরও বলেন, আমেরিকাকে হস্তক্ষেপের সুযোগ দিয়ে ভারত দীর্ঘদিনের লালিত ‘কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ নীতি বিসর্জন দিয়েছে এবং আবারও পাকিস্তানের সঙ্গে এক কাতারে নামিয়েছে। অথচ ভারত নিজেকে আলাদা এক উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে তাড়াহুড়া করে ফেলেছি?’
ভারতের অনেকে মনে করছেন, আমেরিকা দুই দেশের নেতাদের প্রশংসা করে সমান চোখে দেখছেন বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, অথচ ভারত তার সামরিক পদক্ষেপকে কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের হামলার বৈধ জবাব হিসেবেই দেখছে। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী টেলিভিশন উপস্থাপক অর্ণব গোস্বামী এক ভাইরাল ভিডিওতে বলেন, ‘ট্রাম্প কীভাবে পেহেলগামের ঘটনার সঙ্গে পরবর্তী ঘটনাগুলোর তুলনা করতে পারেন? এটা একেবারেই অযৌক্তিক।’
যুদ্ধের ফলাফলের বয়ান নিয়েও ভারতের ভেতর প্রশ্ন উঠেছে। ভারত স্যাটেলাইট চিত্র দেখিয়ে বলেছে, তারা পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। দাবি করেছে, ১০০ জনের বেশি তথাকথিত ‘জঙ্গি’ ও ৩৫ থেকে ৪০ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। তারা বলছে, কয়েকটি ‘উচ্চ প্রযুক্তির’ পাকিস্তানি বিমানও ভূপাতিত করা হয়েছে। অথচ ওপেন সোর্স প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, ভারতও কিছু বিমান হারিয়েছে। পাকিস্তান যে ৩টি রাফাল ও ২টি রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে, সেটি ভারত স্বীকার করেনি, অস্বীকারও করেনি।
অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে, তাদের কেবল একটি বিমান সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা দাবি করেছে, ভারতের ২৬টি সামরিক স্থাপনার বড় ক্ষতি করেছে, ড্রোন পাঠিয়েছে দিল্লি পর্যন্ত এবং ৪০ থেকে ৫০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে। তবে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিরোধে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কতটা সফল ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
দুই পক্ষের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি যা-ই হোক না, এই সংকট থেকে একটা শিক্ষা পাওয়া গেল—ভারত চাইলে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে, এবং সেটি যুদ্ধ বা পারমাণবিক উত্তেজনা ছাড়াই। তবে এর বিপজ্জনক দিক হলো, ভবিষ্যতে ভারত হয়তো আরও জোরালোভাবে আঘাত করবে এবং পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি দিলেও পিছু হটবে না।
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলার ছিল ২০২৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। মোদির সরকার বর্তমানে শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। দিল্লিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব গ্রহণ করতে দিল্লি নারাজ হবে।
১ দিন আগেভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত প্রায়ই দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে যায়। যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলেই উভয় দেশের জনগণ তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। এমনকি কিছু সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার রীতিমতো উসকানিমূলক প্রচার প্রচারণা চালায়।
১ দিন আগেবিজেপির আদর্শগত অবস্থান শুরু থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালে জয়ের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি ২০১৪-এর পর হারিয়ে গেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি সবচেয়ে বড় মিথ্যা। ২০২৩ সালে সংসদে সংবিধানের যে কপি
২ দিন আগে