আব্দুর রহমান

১.
২০ জুন, ২০১৭। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদ। দেশটির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের বাসভবন। প্রাসাদের একটি কামরায় বন্দী দেশটির তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ওরফে এমবিএন। একটি বৈঠকের কথা বলে তাঁকে ডেকে এনে সারা রাত ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে তুর্কি আল-শেখের কামরায়। হুমকি দেওয়া হয়েছে তিনি যুবরাজের পদ না ছাড়লে তাঁর পরিবারের নারী সদস্যদের ধর্ষণ করা হবে। বন্ধ করে দেওয়া হবে তাঁর যাবতীয় ওষুধ। সৌদি আরবের বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বা এমবিএসের উপ-যুবরাজ থেকে যুবরাজ হয়ে ওঠার প্রাসাদ অভ্যুত্থানের শুরু এভাবেই।
দ্বন্দ্বের শুরু আরও আগে। সে বছরেরই ৫ জুন। প্রতিবেশী কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে এমবিএস এবং মোহাম্মদ বিন নায়েফের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। এমবিএস ও তাঁর মিত্ররা কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে হলেও এমবিএন বিষয়টি আলোচনার টেবিলে মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এমবিএস এতে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না। এ ছাড়া আরও অন্যান্য কারণ তো রয়েছেই।
কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেই আল-ইয়ামামায় ডেকে আনা হয় এমবিএনকে। কিন্তু তখনো তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর এই আসাই ইয়ামামায় শেষ আসা। যুবরাজ হিসেবে তিনি আর কখনো এই প্রাসাদে আসতে পারবেন না। প্রাসাদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা মাত্র এমবিএনের নিরাপত্তারক্ষীদের বলা হয় বাইরে অপেক্ষা করতে। এমবিএনের নিরাপত্তারক্ষীসহ প্রাসাদের নিরাপত্তারক্ষীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এমবিএসের নিরাপত্তারক্ষীরা। এমবিএনকে নিয়ে যাওয়া হয় এমবিএসের প্রিয়পাত্র তুর্কি আল-শেখের কামরায়।
সেখানে সারা রাত ধরে বন্দী করে রেখে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে চাপ দেওয়া হয় পদত্যাগ করার জন্য। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও পরে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় তাঁর পরিবারের নারী সদস্যদের ধর্ষণ করা হবে এবং তাঁকে হাসপাতালে বন্দী করা হবে। এমবিএন ধারণা করেছিলেন, তাঁকে বিষ খাওয়ানোও হতে পারে। তাই তিনি এমনকি পানি পান করতেও অস্বীকৃতি জানান। এমবিএসের লোকেদের চাপে অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এমবিএন। সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে এমন কমিটির দুই সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে যান যে, ওই দুই সদস্য আগে থেকেই এমবিএসের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন।
পরে এমবিএনকে প্রাসাদের আরেকটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে এমবিএস সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীসহ টেলিভিশন ক্যামেরা নিয়ে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। সেখান থেকে সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের জন্য মোহাম্মদ বিন নায়েফের পদত্যাগের ঘোষণা রেকর্ড করা হয়। পরে রেকর্ডিং শেষ হয়ে যাওয়া মাত্র এমবিএস তাঁর চাচাতো ভাইয়ের কাছে গিয়ে তাঁর সামনে বসে তাঁর হাত এবং হাঁটু চুম্বন করেন। তবে সেখানে কৃতজ্ঞতার কোনো বহিঃপ্রকাশ ছিল না। পরে এমবিএন তাঁর উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক খুদে বার্তায় লিখেছিলেন—‘আমি যখন বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলাম তারপরও আমার পিঠে বন্দুক ধরে রাখা হয়েছিল।’
এভাবেই এক রাতের প্রাসাদ-অভ্যুত্থানে নীরবে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে সৌদি রাজপ্রাসাদে। এক সময়ের মার্কিন প্রশাসনের প্রিয়ভাজন এমবিএন রাতারাতি গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। আর মাত্র ৩১ বছর বয়সে সৌদির ডি ফ্যাক্টো শাসক হয়ে ওঠেন এমবিএস। তবে এখানেই শেষ নয়। ভোরে যখন মোহাম্মদ বিন নায়েফ জেদ্দায় তাঁর নিজের বাসভবনে ফিরে যান, তখন দেখতে পান রাতারাতি তাঁর বাসভবনের সব নিরাপত্তারক্ষী পাল্টে গেছে। তাঁর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, তিনি গৃহবন্দী।
তবে এসব ঘটনার সবই ঘটেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। রাষ্ট্রায়ত্ত টিভিতে বলা হয় এমবিএন জাতীয় স্বার্থে তাঁর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কোনো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই এই বিষয়ে কোনো কিছু জানত না। এমনকি ওয়াশিংটন ও লন্ডনের সৌদি দূতাবাসও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে।
২.
সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর কয়েক যুগ ধরে দেশটির সিংহাসনের দখল প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ ও তাঁর ছেলেদের মধ্যেই ছিল। মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ মনোনীত করার মধ্য দিয়ে ভাবা হচ্ছিল ক্ষমতা এবার তৃতীয় প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে এমবিএসের অভ্যুত্থান সেই বিষয়টিকেই ভেস্তে দেয়। সৌদি রাজ পরিবারে প্রচলিত জ্যেষ্ঠতাভিত্তিক সিংহাসন বণ্টনের বিষয়টি এই অভ্যুত্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
যুবরাজ এমবিএস কেবল এমবিএনকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করেই বসে থাকেননি। নায়েফের পুরোনো মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পরিবর্তে তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ারও লক্ষ্য স্থির করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ট্রাম্পের জামাতা ও হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। এই যোগাযোগ এমবিএসকে ওয়াশিংটনে বিন নায়েফের ক্ষমতার জায়গাকে টলিয়ে দেয়। একই সঙ্গে এমবিএস মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও আস্থায় চলে আসেন।
সৌদিতে মোহাম্মদ বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সাদ আল-জাবরি। তিনি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমবিএনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতেন। অভ্যুত্থানের আগে এমবিএনের হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে নিজের অনুকূলে নিতে ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একটি লবিস্ট ফার্ম নিযুক্ত করেছিলেন আল-জাবরি। এমবিএস ক্ষমতা পাওয়ার পরপরই তাঁর লোকজন বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠদের ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এ পর্যায়ে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় এবং বিষয়টি জানা মাত্র আল-জাবরি তুরস্কে পালিয়ে যান।
তুরস্ক থেকে কিছুদিন আল-জাবরি সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আব্দুলাজিজ হাওয়ারিনিকে একটি কোডেড বার্তা পাঠান। বার্তায় লেখা ছিল, ‘প্রবল ঠান্ডায় না খেয়ে বেঁচে আছি’—এর অর্থ ছিল, তাঁকে তুরস্কে থেকে যেতে হবে কিনা। হাওয়ারিনি ফিরতি বার্তায় লিখেন, তাঁর দেশে না ফেরাই উচিত। পরে সেবার অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১৭ জুন হাওয়ারিনি আল-জাবরির কাছে আরেকটি বার্তা পাঠান। যেখানে লেখা ছিল, এমবিএসের লোকেরা তাঁকে ধরার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছে। বিষয়টি এখানেই থেকে থাকেনি। এমবিএস নিজে আল-জাবরিকে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেন। তিনি এক বার্তায় বিন নায়েফ এবং এমবিএসের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আল-জাবরিকে দেশে ফেরার অনুরোধ করেন। ১৮ জুন আল-জাবরিকে পাঠানো এক বার্তায় এমবিএস লেখেন, ‘আমি মনে করি না যে, এমন কেউ আছে যে নায়েফকে আপনার চেয়ে ভালো বোঝে।’
আল-জাবরির সঙ্গে এমবিএসের সম্পর্ক ২০১৫ সাল থেকেই খারাপ ছিল। সে সময় এমবিএস বাদশাহ সালমানকে আল-জাবরিকে বরখাস্ত করার অনুরোধ করেছিলেন। আল-জাবরির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—তিনি তৎকালীন সিআইএ পরিচালক জন ব্রেনান এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব ফিলিপ হ্যামন্ডের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন এবং বৈঠকের বিষয়ে সরকারকে অবহিত করেননি। তবে বাদশাহ তা করেননি। যাই হোক, এমবিএস ওই বার্তায় আরও নমনীয় সুরে লিখেছিলেন, ‘আসুন আমরা অতীতের কথা ভুলে যাই। আমরা কি এখনো শিশু রয়ে গেছি? আমার ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করুন। আপনি ফিরে আসুন।’ তবে আল-জাবরি এমবিএসের কথায় কান দেননি। তিনি চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে তাঁর নির্বাসিত জীবনকে দীর্ঘায়িত করার পথ বেছে নেন।
এই বার্তা বিনিময়ের মাত্র দুদিন পর অভ্যুত্থান ঘটান মোহাম্মদ বিন সালমান।
৩.
অভ্যুত্থানের কয়েক মাসের মধ্যেই সৌদি আরবের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন এমবিএস। বিন নায়েফের লোকদের সরিয়ে দেওয়া হয় সব পদ থেকেই। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা এমবিএসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী বুদ্ধিজীবী, অধিকারকর্মীদের ওপর খড়গহস্ত হন এমবিএস। দেশজুড়ে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও ধর-পাকড় চালানো হয়।
এই অবস্থায় আল-জাবরি সপরিবারে তুরস্কে বসবাস করতে থাকলেও তাঁর দুই সন্তান রয়ে যায় রিয়াদেই। তাদের ওপর এমবিএসের গোয়েন্দারা নজর রাখছিল। ওই দুজন অভ্যুত্থানের রাতে সৌদি ছাড়ার চেষ্টা করলে তাদের বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। পরে এমবিএস আল-জাবরির সন্তানদের সৌদি ছাড়ার অনুমতি দেন। তবে এমবিএস দাবি করেন, আল-জাবরি যেন, সৌদিতে ফিরে এসে বিন নায়েফের বিষয়ে একটি ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ ফাইল’ নিয়ে আলোচনা করেন। এমবিএস আল-জাবরিকে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘ডাক্তার, আপনাকে আনার জন্য আমরা বিমান কোথায় পাঠাব?’ —এবারও আল-জাবরি জানান, তাঁর দেশে ফেরার কোনো ইচ্ছা নেই।
আল-জাবরি এই পর্যায়ে এমবিএসকে জানান, তিনি প্রতিজ্ঞা করছেন যে, এমবিএসের প্রতি অনুগত থাকবেন এবং তাঁর কোনো ক্ষতির কারণ হবেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি এমবিএসকে লেখেন, ‘আমার কাছে অনেক সংবেদনশীল রাষ্ট্রীয় তথ্য আছে, কিন্তু তারপরও আমি আমি কখনো কিছু ফাঁস করিনি।’ তিনি আরও লিখেন, ‘আমি ফিরে গেলে আমার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে তা আমার জানা নেই। তাই আমার পক্ষে বাইরে থাকাই কি ভালো নয়? যেখানে আমি আপনার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব, ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকব এবং সর্বসাধারণের উপকার করে এমন সবকিছুতে আপনাকে সহযোগিতা করব?’
আল-জাবরির এই কথায় চিড়ে ভেজেনি। এমবিএস তাঁকে হুমকি দেন, যেকোনো মূল্যে তাঁকে খুঁজে বের করে পাকড়াও করা হবে। এই হুমকির পরপরই ২০১৭ সালের শেষ দিকে আল-জাবরি তুরস্ক থেকে কানাডায় পালিয়ে যান। তারপরও সৌদি আরব আল-জাবরিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায় ইন্টারপোলের সহায়তায়। কানাডাকে অনুরোধ করে তাঁকে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু উভয় চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে আল-জাবরি সৌদির একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বার্তা থেকে জানতে পারেন যে, তাঁকে হত্যার জন্য আততায়ী পাঠানো হতে পারে। ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি আল-জাবরিকে কানাডার সৌদি দূতাবাসের আশপাশে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়।
যাই হোক, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কানাডার বর্ডার এজেন্টরা পর্যটন ভিসায় দেশে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত হিটম্যান গ্রুপ টাইগার স্কোয়াডের সদস্যদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানানো হয়। তবে রিয়াদ এই বিষয়ে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। কানাডা জানিয়েছে, টাইগার স্কোয়াডের পরিকল্পনার সঙ্গে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসের ভেতরে সেই মাসেই ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে যেভাবে হত্যা করেছিল তার যথেষ্ট মিল রয়েছে।
আল-জাবরির সঙ্গে কাজ করা মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি স্পষ্ট যে—এমবিএস আল-জাবরিকে হুমকি হিসেবে দেখছিলেন। এই বিষয়ে সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আল-জাবরি এমন একজন, যাকে সৌদির রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো অপছন্দ করে। কারণ তিনি সৌদি রাজপরিবারের প্রতিটি ভুল এবং ভুল পদক্ষেপ সম্পর্কে জানেন।’
৪.
গত বছরের শীতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আল-জাবরির সাক্ষাৎ হয়েছিল। সে সময় আল-জাবরি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা এতটাই ভীত ছিলেন যে, কারও সঙ্গেই দেখা করতেন না। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প এমবিএসের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় আল-জাবরি ওয়াশিংটনেও খুব একটা আসতেন না। যদিও দেশটির বেশ কয়েকজন সিনেটর, হোয়াইট হাউসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। আল-জাবরি সৌদি সরকারের ‘লম্বা হাত’ সম্পর্কে এতটাই ভীত ছিলেন যে, এতসব ক্ষমতাবান শুভাকাঙ্ক্ষী থাকার পরও তিনি দেশটিতে যেতে চাননি।
স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়া আল-জাবরি সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি শুরু করেন ১৯৯০-এর দশকে। মাঝে তিনি একবার চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিন নায়েফ তাঁকে তা করতে দেননি। এর পর দীর্ঘ সময় বিন নায়েফের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তার মূল্য এখনো তাঁকে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রাসাদ-অভ্যুত্থানের পরপরই তাঁর লোকেরা আল-জাবরির পরিবারের ৪০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তাঁর দুই সন্তান সারা (২৪) এবং ওমর (২২) ছিল। সৌদি আদালত অর্থ পাচার ও অবৈধভাবে সৌদি আরব ত্যাগের অভিযোগ এনে ২০২০ সালের আগস্টে কারাদণ্ড দেয়। কারাদণ্ডের পরপরই ভেঙে পড়েন আল-জাবরি। তিনি এমবিএসের কাছে আবেদন জানান যে, এমবিএস যা চান তার বিনিময়ে সারা এবং ওমরকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এমবিএস সেই পথে হাঁটেননি।
জবাবে আল-জাবরিও এক হাত দেখে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এমবিএস। ওয়াশিংটনের একটি আদালতে—এমবিএস তাঁকে হত্যার জন্য ডেথ স্কোয়াড পাঠিয়েছিল, এমন অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। যদিও আল-জাবরি জানতেন তিনি এমবিএসের মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারবেন না। তারপরও এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাঁকে শিগগিরই নতুন হুমকির মুখোমুখি হতে হয়।
২০২১ সালের শুরুতে কানাডার অন্টারিও এবং যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে আল-জাবরির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ করা হয়, আল-জাবরি সৌদি সরকারের সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল তছরুপ করেছেন। এই মামলাগুলো দায়ের করে এমন ১০টি ফার্ম যেগুলো বিন নায়েফ যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় নিজের প্রভাব তৈরির জন্য গঠন করেছিলেন। কিন্তু এমবিএস ক্ষমতায় আসার পরপরই সেসব ফার্মের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং চেয়ারম্যান বনে যান।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, মামলাগুলোর বিষয়ে আদালতে না লড়ে বাইরে আলোচনার টেবিলে কোনোভাবে সেরে নেওয়া যায় কিনা। তাদের এই উদ্যোগের কারণ ছিল, বিন নায়েফের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস হয়ে না যায়। রিয়াদে নিযুক্ত এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এমবিএসের লোকজন আসলে নিশ্চিত হতে পারছিল না যে, আল-জাবরি চিরতরে মুখ বন্ধ রাখবেন কিনা। তাই তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় উৎসাহী ছিল না।’ তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমবিএসের সঙ্গে সমঝোতার নতুন উদ্যোগ নেন আল-জাবরি। তিনি এমবিএসের সঙ্গে বিষয়টি আইনি উভয়ভাবেই সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে এমবিএস বিষয়টি নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখাননি। এদিকে, গত সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটন আদালত এমবিএসের বিরুদ্ধে আল-জাবরির মামলা খারিজ করে দেয়। তবে আল-জাবরি আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছেন। তবে বিষয়টি আল-জাবরিকে আবারও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।
এদিকে, আল-জাবরির বিরুদ্ধে মামলা চললেও তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে। কারণ মামলাগুলোর যিনি রাজসাক্ষী হতে পারেন—সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কাজে সেসব অর্থ ছাড় করেছিলেন সেই ব্যক্তি বিন নায়েফ: গুম হয়ে গেছেন।
৫.
২০১৭ সালের শেষ দিকে বিন নায়েফের গৃহবন্দীত্ব দশা খানিকটা শিথিল করা হয়। কিন্তু তাঁকে কোনোভাবেই নিজের বাস ভাবনের বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। বিন নায়েফে প্রিয় শখ ছিল আলজেরিয়ার মরুতে ইগল শিকার করা। তাঁকে সেটি করতে দেওয়া হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে তাঁকে সৌদির মরুতে শিকারের সুযোগ দেওয়া হতো—অবশ্যই এমবিএস কর্তৃক নিয়োগ করা নিরাপত্তারক্ষীসহ। এভাবে বিন নায়েফের গতিবিধি সীমাবদ্ধ করে ফেলার পরও তিনি আশা করছিলেন যে, তাঁকে পদচ্যুত করা হলেও তাঁকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। তবে তাঁর আশা পূর্ণ হয়নি।
বিন নায়েফের আশা ছিল, তিনি তাঁর পূর্বসূরি যুবরাজ মুকরিন বিন আব্দুলাজিজের মতোই কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। মুকরিনকে যখন বাদশাহ সালমান যুবরাজের পদ থেকে অব্যাহতি দেন তখন বাদশাহ মুকরিনকে এককালীন ৮০ কোটি ডলার এবং একটি দামি ইয়টসহ বিভিন্ন দামি উপহার দিয়েছিলেন।
বিপরীতে, দেশে থাকা বিন নায়েফের সম্পদের বড় একটি অংশই বাজেয়াপ্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বিন নায়েফ জেনেভার এইচএসবিসি ব্যাংককে ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড এবং ডলারে যে পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে তা সৌদির একটি ব্যাংকে স্থানান্তর করতে বলে। তবে বিন নায়েফের সম্পদ সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, জেনেভায় বিন নায়েফের ব্যাংকার এবং আইনজীবীরা এই অনুরোধ উপেক্ষা করেন। তাঁদের সন্দেহ ছিল যে, বিন নায়েফকে দিয়ে জোর করে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে।
বিদেশে বিন নায়েফের কি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা অস্পষ্ট। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বলছেন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা রয়েছে বিন নায়েফের। তারপরও বিন নায়েফের অভ্যন্তরীণ সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হাতছাড়া হয়েছিল। বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, জব্দ করা মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫২২ কোটি ডলার। তবে ঘনিষ্ঠ আরেকটি পৃথক সূত্র জানিয়েছে—বাজেয়াপ্ত করা সম্পদের মোট মূল্য ৪৭৫ কোটি ডলার।
বিন নায়েফ ২০১৮ ও ১৯ সালে এসে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। রাজকীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হতে দেখা যায় তাঁকে। তবে ভাগ্য বিপর্যয় শুরু হয় এর পরে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে সৌদি সরকার রিয়াদের উপকণ্ঠে অবস্থিত বিন নায়েফের বাসস্থানে অভিযান চালায় এবং তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৬ মাস তাঁকে একটি নির্জন কারাগারে বন্দী করে রাখা হয় এবং তাঁর সঙ্গে ব্যাপক দুর্ব্যবহার করা হয়। এমনকি নির্যাতনও করা হয়। নির্যাতনের মাত্রা এতই বেশি ছিল যে, বিন নায়েফ মারাত্মকভাবে আহত হন। বিষয়টি নিয়ে একটি সূত্র বলেছে, ‘নির্যাতনের ফলে তাঁর গোড়ালিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়েছে এবং তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ওজন হারিয়েছেন।’
পরে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ বিন নায়েফকে সেই নির্জন কারাগার থেকে রিয়াদের ইয়ামামা প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ছোট্ট একটি ইউনিটে তাঁকে থাকতে দেওয়া এবং তাঁর ওপর সার্বক্ষণিকভাবে ক্যামেরার সাহায্যে নজরদারি করা হয়। পরিবারের কয়েকজন সদস্য বাদে তাঁর সঙ্গে আর কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় না। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আইনজীবীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় না।
এরপর ২০২১ সালের বসন্তে ইউরোপে নায়েফের ব্যাংকার ও আইনজীবীরা সম্পদ স্থানান্তরের নতুন আরেকটি অনুরোধ পান। একটি সূত্র জানিয়েছে, যে আইনজীবীকে নায়েফ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছিলেন তিনি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর মক্কেল চাপের মধ্যে ছিলেন। পরে বিন নায়েফ তাঁর আইনজীবীকে সৌদি আরব সফর করে নিজ চোখে পরিস্থিতি যাচাই করার আমন্ত্রণ জানান। নায়েফ তাঁকে লেখেন, ‘আমি মুক্ত, আপনি রিয়াদে এলে আমরা একসঙ্গে রাতের খাবার খাব।’ তবে সেই আইনজীবী তাতে না টলে জোর দিয়ে বলেন, স্থানান্তর অনুমোদনের জন্য বিন নায়েফ এবং তাঁর পরিবারকে সুইজারল্যান্ডে যেতে হবে। ফলে ইউরোপ থেকে বিন নায়েফের সম্পদ আর সৌদিতে স্থানান্তর করা হয়নি।
৬.
ক্ষমতা সংহত করার পর মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটিতে ব্যাপক সংস্থার কাজ চালান। বিশেষ করে সামাজিক সংস্কারে উদ্যোগী হন। এমবিএস নারীদের গাড়ি চালানো, সিনেমা হল পরিচালনার ওপর থেকে কয়েক দশক পুরোনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন। সংগীত কনসার্টের অনুমতি দিয়েছিলেন এবং ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।
এক সময় বৈশ্বিক গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছিল এমবিএস কর্তৃক বিন নায়েফ ও অন্যান্যদের বন্দী করার কারণ ছিল—তাঁরা এমবিএস ও তাঁর বাবা বাদশাহ সালমানকে অপসারণের ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি সেরকম নয়। মূল কারণ ছিল, প্রাসাদে এমবিএসের নিজের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা। তবে সৌদি রাজ পরিবার এবং প্রশাসনে এমবিএসের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলেও বিন নায়েফ এবং অন্যান্যরা মুক্তি পাননি। বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন বিন নায়েফকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানালেও মোহাম্মদ বিন সালমান এই বিষয়ে ছিলেন অটল।
সৌদি সিংহাসন দখলের ক্ষেত্রে এমবিএসের এখন আর কোনো দৃশ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বাদশাহ হিসেবে পিতার উত্তরাধিকারী হতে তাঁকে বাধা দেবে এমন কেউ নেই। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন কিছুই তাঁকে নিজ লক্ষ্য হাসিলের পথ থেকে টলাতে পারেনি। স্বৈরশাসকের সঙ্গে ব্যবসা করার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরা সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল সমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহী। ফলে এমবিএসের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহী রাষ্ট্রের অভাব নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র নিজেও এই তালিকায় রয়েছে।
যাই হোক, মোহাম্মদ বিন সালমান ইয়ামামা প্রাসাদ এবং সৌদি আরবসহ বিশ্বে নিজের অবস্থান এমনভাবে পোক্ত করেছেন যা তাঁকে প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। তাই কোনো দিন যদি বিন নায়েফ জনসমক্ষে হাজির হয়ে মোহাম্মদ বিন সালমানকে আশীর্বাদ দেন তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে সেটা হবে ২০১৭ সালে বিন নায়েফকে বন্দীর পর যে ভিডিও বার্তা জোর করে রেকর্ড করে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল—তার মতোই। এবং তা হয়ে থাকবে এমবিএসের সহিংস উত্থানের এক অনন্য নজির।
(দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত অঞ্জু চোপড়ার নিবন্ধ থেকে অনূদিত)

১.
২০ জুন, ২০১৭। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদ। দেশটির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের বাসভবন। প্রাসাদের একটি কামরায় বন্দী দেশটির তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ওরফে এমবিএন। একটি বৈঠকের কথা বলে তাঁকে ডেকে এনে সারা রাত ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে তুর্কি আল-শেখের কামরায়। হুমকি দেওয়া হয়েছে তিনি যুবরাজের পদ না ছাড়লে তাঁর পরিবারের নারী সদস্যদের ধর্ষণ করা হবে। বন্ধ করে দেওয়া হবে তাঁর যাবতীয় ওষুধ। সৌদি আরবের বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বা এমবিএসের উপ-যুবরাজ থেকে যুবরাজ হয়ে ওঠার প্রাসাদ অভ্যুত্থানের শুরু এভাবেই।
দ্বন্দ্বের শুরু আরও আগে। সে বছরেরই ৫ জুন। প্রতিবেশী কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে এমবিএস এবং মোহাম্মদ বিন নায়েফের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। এমবিএস ও তাঁর মিত্ররা কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে হলেও এমবিএন বিষয়টি আলোচনার টেবিলে মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এমবিএস এতে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না। এ ছাড়া আরও অন্যান্য কারণ তো রয়েছেই।
কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেই আল-ইয়ামামায় ডেকে আনা হয় এমবিএনকে। কিন্তু তখনো তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর এই আসাই ইয়ামামায় শেষ আসা। যুবরাজ হিসেবে তিনি আর কখনো এই প্রাসাদে আসতে পারবেন না। প্রাসাদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা মাত্র এমবিএনের নিরাপত্তারক্ষীদের বলা হয় বাইরে অপেক্ষা করতে। এমবিএনের নিরাপত্তারক্ষীসহ প্রাসাদের নিরাপত্তারক্ষীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এমবিএসের নিরাপত্তারক্ষীরা। এমবিএনকে নিয়ে যাওয়া হয় এমবিএসের প্রিয়পাত্র তুর্কি আল-শেখের কামরায়।
সেখানে সারা রাত ধরে বন্দী করে রেখে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে চাপ দেওয়া হয় পদত্যাগ করার জন্য। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও পরে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় তাঁর পরিবারের নারী সদস্যদের ধর্ষণ করা হবে এবং তাঁকে হাসপাতালে বন্দী করা হবে। এমবিএন ধারণা করেছিলেন, তাঁকে বিষ খাওয়ানোও হতে পারে। তাই তিনি এমনকি পানি পান করতেও অস্বীকৃতি জানান। এমবিএসের লোকেদের চাপে অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এমবিএন। সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে এমন কমিটির দুই সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে যান যে, ওই দুই সদস্য আগে থেকেই এমবিএসের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন।
পরে এমবিএনকে প্রাসাদের আরেকটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে এমবিএস সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীসহ টেলিভিশন ক্যামেরা নিয়ে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। সেখান থেকে সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের জন্য মোহাম্মদ বিন নায়েফের পদত্যাগের ঘোষণা রেকর্ড করা হয়। পরে রেকর্ডিং শেষ হয়ে যাওয়া মাত্র এমবিএস তাঁর চাচাতো ভাইয়ের কাছে গিয়ে তাঁর সামনে বসে তাঁর হাত এবং হাঁটু চুম্বন করেন। তবে সেখানে কৃতজ্ঞতার কোনো বহিঃপ্রকাশ ছিল না। পরে এমবিএন তাঁর উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক খুদে বার্তায় লিখেছিলেন—‘আমি যখন বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলাম তারপরও আমার পিঠে বন্দুক ধরে রাখা হয়েছিল।’
এভাবেই এক রাতের প্রাসাদ-অভ্যুত্থানে নীরবে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে সৌদি রাজপ্রাসাদে। এক সময়ের মার্কিন প্রশাসনের প্রিয়ভাজন এমবিএন রাতারাতি গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। আর মাত্র ৩১ বছর বয়সে সৌদির ডি ফ্যাক্টো শাসক হয়ে ওঠেন এমবিএস। তবে এখানেই শেষ নয়। ভোরে যখন মোহাম্মদ বিন নায়েফ জেদ্দায় তাঁর নিজের বাসভবনে ফিরে যান, তখন দেখতে পান রাতারাতি তাঁর বাসভবনের সব নিরাপত্তারক্ষী পাল্টে গেছে। তাঁর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, তিনি গৃহবন্দী।
তবে এসব ঘটনার সবই ঘটেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। রাষ্ট্রায়ত্ত টিভিতে বলা হয় এমবিএন জাতীয় স্বার্থে তাঁর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কোনো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই এই বিষয়ে কোনো কিছু জানত না। এমনকি ওয়াশিংটন ও লন্ডনের সৌদি দূতাবাসও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে।
২.
সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর কয়েক যুগ ধরে দেশটির সিংহাসনের দখল প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ ও তাঁর ছেলেদের মধ্যেই ছিল। মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ মনোনীত করার মধ্য দিয়ে ভাবা হচ্ছিল ক্ষমতা এবার তৃতীয় প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে এমবিএসের অভ্যুত্থান সেই বিষয়টিকেই ভেস্তে দেয়। সৌদি রাজ পরিবারে প্রচলিত জ্যেষ্ঠতাভিত্তিক সিংহাসন বণ্টনের বিষয়টি এই অভ্যুত্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
যুবরাজ এমবিএস কেবল এমবিএনকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করেই বসে থাকেননি। নায়েফের পুরোনো মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পরিবর্তে তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ারও লক্ষ্য স্থির করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ট্রাম্পের জামাতা ও হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। এই যোগাযোগ এমবিএসকে ওয়াশিংটনে বিন নায়েফের ক্ষমতার জায়গাকে টলিয়ে দেয়। একই সঙ্গে এমবিএস মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও আস্থায় চলে আসেন।
সৌদিতে মোহাম্মদ বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সাদ আল-জাবরি। তিনি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমবিএনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতেন। অভ্যুত্থানের আগে এমবিএনের হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে নিজের অনুকূলে নিতে ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একটি লবিস্ট ফার্ম নিযুক্ত করেছিলেন আল-জাবরি। এমবিএস ক্ষমতা পাওয়ার পরপরই তাঁর লোকজন বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠদের ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এ পর্যায়ে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় এবং বিষয়টি জানা মাত্র আল-জাবরি তুরস্কে পালিয়ে যান।
তুরস্ক থেকে কিছুদিন আল-জাবরি সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আব্দুলাজিজ হাওয়ারিনিকে একটি কোডেড বার্তা পাঠান। বার্তায় লেখা ছিল, ‘প্রবল ঠান্ডায় না খেয়ে বেঁচে আছি’—এর অর্থ ছিল, তাঁকে তুরস্কে থেকে যেতে হবে কিনা। হাওয়ারিনি ফিরতি বার্তায় লিখেন, তাঁর দেশে না ফেরাই উচিত। পরে সেবার অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১৭ জুন হাওয়ারিনি আল-জাবরির কাছে আরেকটি বার্তা পাঠান। যেখানে লেখা ছিল, এমবিএসের লোকেরা তাঁকে ধরার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছে। বিষয়টি এখানেই থেকে থাকেনি। এমবিএস নিজে আল-জাবরিকে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেন। তিনি এক বার্তায় বিন নায়েফ এবং এমবিএসের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আল-জাবরিকে দেশে ফেরার অনুরোধ করেন। ১৮ জুন আল-জাবরিকে পাঠানো এক বার্তায় এমবিএস লেখেন, ‘আমি মনে করি না যে, এমন কেউ আছে যে নায়েফকে আপনার চেয়ে ভালো বোঝে।’
আল-জাবরির সঙ্গে এমবিএসের সম্পর্ক ২০১৫ সাল থেকেই খারাপ ছিল। সে সময় এমবিএস বাদশাহ সালমানকে আল-জাবরিকে বরখাস্ত করার অনুরোধ করেছিলেন। আল-জাবরির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—তিনি তৎকালীন সিআইএ পরিচালক জন ব্রেনান এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব ফিলিপ হ্যামন্ডের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন এবং বৈঠকের বিষয়ে সরকারকে অবহিত করেননি। তবে বাদশাহ তা করেননি। যাই হোক, এমবিএস ওই বার্তায় আরও নমনীয় সুরে লিখেছিলেন, ‘আসুন আমরা অতীতের কথা ভুলে যাই। আমরা কি এখনো শিশু রয়ে গেছি? আমার ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করুন। আপনি ফিরে আসুন।’ তবে আল-জাবরি এমবিএসের কথায় কান দেননি। তিনি চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে তাঁর নির্বাসিত জীবনকে দীর্ঘায়িত করার পথ বেছে নেন।
এই বার্তা বিনিময়ের মাত্র দুদিন পর অভ্যুত্থান ঘটান মোহাম্মদ বিন সালমান।
৩.
অভ্যুত্থানের কয়েক মাসের মধ্যেই সৌদি আরবের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন এমবিএস। বিন নায়েফের লোকদের সরিয়ে দেওয়া হয় সব পদ থেকেই। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা এমবিএসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী বুদ্ধিজীবী, অধিকারকর্মীদের ওপর খড়গহস্ত হন এমবিএস। দেশজুড়ে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও ধর-পাকড় চালানো হয়।
এই অবস্থায় আল-জাবরি সপরিবারে তুরস্কে বসবাস করতে থাকলেও তাঁর দুই সন্তান রয়ে যায় রিয়াদেই। তাদের ওপর এমবিএসের গোয়েন্দারা নজর রাখছিল। ওই দুজন অভ্যুত্থানের রাতে সৌদি ছাড়ার চেষ্টা করলে তাদের বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। পরে এমবিএস আল-জাবরির সন্তানদের সৌদি ছাড়ার অনুমতি দেন। তবে এমবিএস দাবি করেন, আল-জাবরি যেন, সৌদিতে ফিরে এসে বিন নায়েফের বিষয়ে একটি ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ ফাইল’ নিয়ে আলোচনা করেন। এমবিএস আল-জাবরিকে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘ডাক্তার, আপনাকে আনার জন্য আমরা বিমান কোথায় পাঠাব?’ —এবারও আল-জাবরি জানান, তাঁর দেশে ফেরার কোনো ইচ্ছা নেই।
আল-জাবরি এই পর্যায়ে এমবিএসকে জানান, তিনি প্রতিজ্ঞা করছেন যে, এমবিএসের প্রতি অনুগত থাকবেন এবং তাঁর কোনো ক্ষতির কারণ হবেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি এমবিএসকে লেখেন, ‘আমার কাছে অনেক সংবেদনশীল রাষ্ট্রীয় তথ্য আছে, কিন্তু তারপরও আমি আমি কখনো কিছু ফাঁস করিনি।’ তিনি আরও লিখেন, ‘আমি ফিরে গেলে আমার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে তা আমার জানা নেই। তাই আমার পক্ষে বাইরে থাকাই কি ভালো নয়? যেখানে আমি আপনার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব, ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকব এবং সর্বসাধারণের উপকার করে এমন সবকিছুতে আপনাকে সহযোগিতা করব?’
আল-জাবরির এই কথায় চিড়ে ভেজেনি। এমবিএস তাঁকে হুমকি দেন, যেকোনো মূল্যে তাঁকে খুঁজে বের করে পাকড়াও করা হবে। এই হুমকির পরপরই ২০১৭ সালের শেষ দিকে আল-জাবরি তুরস্ক থেকে কানাডায় পালিয়ে যান। তারপরও সৌদি আরব আল-জাবরিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায় ইন্টারপোলের সহায়তায়। কানাডাকে অনুরোধ করে তাঁকে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু উভয় চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে আল-জাবরি সৌদির একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বার্তা থেকে জানতে পারেন যে, তাঁকে হত্যার জন্য আততায়ী পাঠানো হতে পারে। ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি আল-জাবরিকে কানাডার সৌদি দূতাবাসের আশপাশে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়।
যাই হোক, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কানাডার বর্ডার এজেন্টরা পর্যটন ভিসায় দেশে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত হিটম্যান গ্রুপ টাইগার স্কোয়াডের সদস্যদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানানো হয়। তবে রিয়াদ এই বিষয়ে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। কানাডা জানিয়েছে, টাইগার স্কোয়াডের পরিকল্পনার সঙ্গে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসের ভেতরে সেই মাসেই ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে যেভাবে হত্যা করেছিল তার যথেষ্ট মিল রয়েছে।
আল-জাবরির সঙ্গে কাজ করা মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি স্পষ্ট যে—এমবিএস আল-জাবরিকে হুমকি হিসেবে দেখছিলেন। এই বিষয়ে সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আল-জাবরি এমন একজন, যাকে সৌদির রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো অপছন্দ করে। কারণ তিনি সৌদি রাজপরিবারের প্রতিটি ভুল এবং ভুল পদক্ষেপ সম্পর্কে জানেন।’
৪.
গত বছরের শীতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আল-জাবরির সাক্ষাৎ হয়েছিল। সে সময় আল-জাবরি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা এতটাই ভীত ছিলেন যে, কারও সঙ্গেই দেখা করতেন না। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প এমবিএসের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় আল-জাবরি ওয়াশিংটনেও খুব একটা আসতেন না। যদিও দেশটির বেশ কয়েকজন সিনেটর, হোয়াইট হাউসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। আল-জাবরি সৌদি সরকারের ‘লম্বা হাত’ সম্পর্কে এতটাই ভীত ছিলেন যে, এতসব ক্ষমতাবান শুভাকাঙ্ক্ষী থাকার পরও তিনি দেশটিতে যেতে চাননি।
স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়া আল-জাবরি সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি শুরু করেন ১৯৯০-এর দশকে। মাঝে তিনি একবার চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিন নায়েফ তাঁকে তা করতে দেননি। এর পর দীর্ঘ সময় বিন নায়েফের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তার মূল্য এখনো তাঁকে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রাসাদ-অভ্যুত্থানের পরপরই তাঁর লোকেরা আল-জাবরির পরিবারের ৪০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তাঁর দুই সন্তান সারা (২৪) এবং ওমর (২২) ছিল। সৌদি আদালত অর্থ পাচার ও অবৈধভাবে সৌদি আরব ত্যাগের অভিযোগ এনে ২০২০ সালের আগস্টে কারাদণ্ড দেয়। কারাদণ্ডের পরপরই ভেঙে পড়েন আল-জাবরি। তিনি এমবিএসের কাছে আবেদন জানান যে, এমবিএস যা চান তার বিনিময়ে সারা এবং ওমরকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এমবিএস সেই পথে হাঁটেননি।
জবাবে আল-জাবরিও এক হাত দেখে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এমবিএস। ওয়াশিংটনের একটি আদালতে—এমবিএস তাঁকে হত্যার জন্য ডেথ স্কোয়াড পাঠিয়েছিল, এমন অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। যদিও আল-জাবরি জানতেন তিনি এমবিএসের মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারবেন না। তারপরও এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাঁকে শিগগিরই নতুন হুমকির মুখোমুখি হতে হয়।
২০২১ সালের শুরুতে কানাডার অন্টারিও এবং যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে আল-জাবরির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ করা হয়, আল-জাবরি সৌদি সরকারের সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল তছরুপ করেছেন। এই মামলাগুলো দায়ের করে এমন ১০টি ফার্ম যেগুলো বিন নায়েফ যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় নিজের প্রভাব তৈরির জন্য গঠন করেছিলেন। কিন্তু এমবিএস ক্ষমতায় আসার পরপরই সেসব ফার্মের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং চেয়ারম্যান বনে যান।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, মামলাগুলোর বিষয়ে আদালতে না লড়ে বাইরে আলোচনার টেবিলে কোনোভাবে সেরে নেওয়া যায় কিনা। তাদের এই উদ্যোগের কারণ ছিল, বিন নায়েফের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস হয়ে না যায়। রিয়াদে নিযুক্ত এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এমবিএসের লোকজন আসলে নিশ্চিত হতে পারছিল না যে, আল-জাবরি চিরতরে মুখ বন্ধ রাখবেন কিনা। তাই তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় উৎসাহী ছিল না।’ তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমবিএসের সঙ্গে সমঝোতার নতুন উদ্যোগ নেন আল-জাবরি। তিনি এমবিএসের সঙ্গে বিষয়টি আইনি উভয়ভাবেই সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে এমবিএস বিষয়টি নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখাননি। এদিকে, গত সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটন আদালত এমবিএসের বিরুদ্ধে আল-জাবরির মামলা খারিজ করে দেয়। তবে আল-জাবরি আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছেন। তবে বিষয়টি আল-জাবরিকে আবারও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।
এদিকে, আল-জাবরির বিরুদ্ধে মামলা চললেও তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে। কারণ মামলাগুলোর যিনি রাজসাক্ষী হতে পারেন—সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কাজে সেসব অর্থ ছাড় করেছিলেন সেই ব্যক্তি বিন নায়েফ: গুম হয়ে গেছেন।
৫.
২০১৭ সালের শেষ দিকে বিন নায়েফের গৃহবন্দীত্ব দশা খানিকটা শিথিল করা হয়। কিন্তু তাঁকে কোনোভাবেই নিজের বাস ভাবনের বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। বিন নায়েফে প্রিয় শখ ছিল আলজেরিয়ার মরুতে ইগল শিকার করা। তাঁকে সেটি করতে দেওয়া হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে তাঁকে সৌদির মরুতে শিকারের সুযোগ দেওয়া হতো—অবশ্যই এমবিএস কর্তৃক নিয়োগ করা নিরাপত্তারক্ষীসহ। এভাবে বিন নায়েফের গতিবিধি সীমাবদ্ধ করে ফেলার পরও তিনি আশা করছিলেন যে, তাঁকে পদচ্যুত করা হলেও তাঁকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। তবে তাঁর আশা পূর্ণ হয়নি।
বিন নায়েফের আশা ছিল, তিনি তাঁর পূর্বসূরি যুবরাজ মুকরিন বিন আব্দুলাজিজের মতোই কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। মুকরিনকে যখন বাদশাহ সালমান যুবরাজের পদ থেকে অব্যাহতি দেন তখন বাদশাহ মুকরিনকে এককালীন ৮০ কোটি ডলার এবং একটি দামি ইয়টসহ বিভিন্ন দামি উপহার দিয়েছিলেন।
বিপরীতে, দেশে থাকা বিন নায়েফের সম্পদের বড় একটি অংশই বাজেয়াপ্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বিন নায়েফ জেনেভার এইচএসবিসি ব্যাংককে ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড এবং ডলারে যে পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে তা সৌদির একটি ব্যাংকে স্থানান্তর করতে বলে। তবে বিন নায়েফের সম্পদ সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, জেনেভায় বিন নায়েফের ব্যাংকার এবং আইনজীবীরা এই অনুরোধ উপেক্ষা করেন। তাঁদের সন্দেহ ছিল যে, বিন নায়েফকে দিয়ে জোর করে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে।
বিদেশে বিন নায়েফের কি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা অস্পষ্ট। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বলছেন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা রয়েছে বিন নায়েফের। তারপরও বিন নায়েফের অভ্যন্তরীণ সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হাতছাড়া হয়েছিল। বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, জব্দ করা মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫২২ কোটি ডলার। তবে ঘনিষ্ঠ আরেকটি পৃথক সূত্র জানিয়েছে—বাজেয়াপ্ত করা সম্পদের মোট মূল্য ৪৭৫ কোটি ডলার।
বিন নায়েফ ২০১৮ ও ১৯ সালে এসে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। রাজকীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হতে দেখা যায় তাঁকে। তবে ভাগ্য বিপর্যয় শুরু হয় এর পরে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে সৌদি সরকার রিয়াদের উপকণ্ঠে অবস্থিত বিন নায়েফের বাসস্থানে অভিযান চালায় এবং তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৬ মাস তাঁকে একটি নির্জন কারাগারে বন্দী করে রাখা হয় এবং তাঁর সঙ্গে ব্যাপক দুর্ব্যবহার করা হয়। এমনকি নির্যাতনও করা হয়। নির্যাতনের মাত্রা এতই বেশি ছিল যে, বিন নায়েফ মারাত্মকভাবে আহত হন। বিষয়টি নিয়ে একটি সূত্র বলেছে, ‘নির্যাতনের ফলে তাঁর গোড়ালিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়েছে এবং তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ওজন হারিয়েছেন।’
পরে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ বিন নায়েফকে সেই নির্জন কারাগার থেকে রিয়াদের ইয়ামামা প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ছোট্ট একটি ইউনিটে তাঁকে থাকতে দেওয়া এবং তাঁর ওপর সার্বক্ষণিকভাবে ক্যামেরার সাহায্যে নজরদারি করা হয়। পরিবারের কয়েকজন সদস্য বাদে তাঁর সঙ্গে আর কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় না। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আইনজীবীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় না।
এরপর ২০২১ সালের বসন্তে ইউরোপে নায়েফের ব্যাংকার ও আইনজীবীরা সম্পদ স্থানান্তরের নতুন আরেকটি অনুরোধ পান। একটি সূত্র জানিয়েছে, যে আইনজীবীকে নায়েফ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছিলেন তিনি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর মক্কেল চাপের মধ্যে ছিলেন। পরে বিন নায়েফ তাঁর আইনজীবীকে সৌদি আরব সফর করে নিজ চোখে পরিস্থিতি যাচাই করার আমন্ত্রণ জানান। নায়েফ তাঁকে লেখেন, ‘আমি মুক্ত, আপনি রিয়াদে এলে আমরা একসঙ্গে রাতের খাবার খাব।’ তবে সেই আইনজীবী তাতে না টলে জোর দিয়ে বলেন, স্থানান্তর অনুমোদনের জন্য বিন নায়েফ এবং তাঁর পরিবারকে সুইজারল্যান্ডে যেতে হবে। ফলে ইউরোপ থেকে বিন নায়েফের সম্পদ আর সৌদিতে স্থানান্তর করা হয়নি।
৬.
ক্ষমতা সংহত করার পর মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটিতে ব্যাপক সংস্থার কাজ চালান। বিশেষ করে সামাজিক সংস্কারে উদ্যোগী হন। এমবিএস নারীদের গাড়ি চালানো, সিনেমা হল পরিচালনার ওপর থেকে কয়েক দশক পুরোনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন। সংগীত কনসার্টের অনুমতি দিয়েছিলেন এবং ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।
এক সময় বৈশ্বিক গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছিল এমবিএস কর্তৃক বিন নায়েফ ও অন্যান্যদের বন্দী করার কারণ ছিল—তাঁরা এমবিএস ও তাঁর বাবা বাদশাহ সালমানকে অপসারণের ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি সেরকম নয়। মূল কারণ ছিল, প্রাসাদে এমবিএসের নিজের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা। তবে সৌদি রাজ পরিবার এবং প্রশাসনে এমবিএসের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলেও বিন নায়েফ এবং অন্যান্যরা মুক্তি পাননি। বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন বিন নায়েফকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানালেও মোহাম্মদ বিন সালমান এই বিষয়ে ছিলেন অটল।
সৌদি সিংহাসন দখলের ক্ষেত্রে এমবিএসের এখন আর কোনো দৃশ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বাদশাহ হিসেবে পিতার উত্তরাধিকারী হতে তাঁকে বাধা দেবে এমন কেউ নেই। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন কিছুই তাঁকে নিজ লক্ষ্য হাসিলের পথ থেকে টলাতে পারেনি। স্বৈরশাসকের সঙ্গে ব্যবসা করার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরা সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল সমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহী। ফলে এমবিএসের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহী রাষ্ট্রের অভাব নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র নিজেও এই তালিকায় রয়েছে।
যাই হোক, মোহাম্মদ বিন সালমান ইয়ামামা প্রাসাদ এবং সৌদি আরবসহ বিশ্বে নিজের অবস্থান এমনভাবে পোক্ত করেছেন যা তাঁকে প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। তাই কোনো দিন যদি বিন নায়েফ জনসমক্ষে হাজির হয়ে মোহাম্মদ বিন সালমানকে আশীর্বাদ দেন তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে সেটা হবে ২০১৭ সালে বিন নায়েফকে বন্দীর পর যে ভিডিও বার্তা জোর করে রেকর্ড করে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল—তার মতোই। এবং তা হয়ে থাকবে এমবিএসের সহিংস উত্থানের এক অনন্য নজির।
(দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত অঞ্জু চোপড়ার নিবন্ধ থেকে অনূদিত)

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

২০ জুন, ২০১৭। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদ। দেশটির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের বাসভবন। প্রাসাদের একটি কামরায় বন্দী দেশটির তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ওরফে এমবিএন। একটি বৈঠকের কথা বলে তাঁকে ডেকে এনে সারা রাত ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে তুর্কি আল-শেখের কামরায়। হুমকি দেওয়া হয়েছে
০২ ডিসেম্বর ২০২২
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

২০ জুন, ২০১৭। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদ। দেশটির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের বাসভবন। প্রাসাদের একটি কামরায় বন্দী দেশটির তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ওরফে এমবিএন। একটি বৈঠকের কথা বলে তাঁকে ডেকে এনে সারা রাত ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে তুর্কি আল-শেখের কামরায়। হুমকি দেওয়া হয়েছে
০২ ডিসেম্বর ২০২২
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

২০ জুন, ২০১৭। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদ। দেশটির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের বাসভবন। প্রাসাদের একটি কামরায় বন্দী দেশটির তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ওরফে এমবিএন। একটি বৈঠকের কথা বলে তাঁকে ডেকে এনে সারা রাত ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে তুর্কি আল-শেখের কামরায়। হুমকি দেওয়া হয়েছে
০২ ডিসেম্বর ২০২২
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

২০ জুন, ২০১৭। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদ। দেশটির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের বাসভবন। প্রাসাদের একটি কামরায় বন্দী দেশটির তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ওরফে এমবিএন। একটি বৈঠকের কথা বলে তাঁকে ডেকে এনে সারা রাত ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে তুর্কি আল-শেখের কামরায়। হুমকি দেওয়া হয়েছে
০২ ডিসেম্বর ২০২২
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে