আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ‘যত দিন লাগে’ হামলা চালিয়ে যাবে। ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি দুর্বল করা এবং দেশটির সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করা। তবে এই লক্ষ্য অর্জিত হবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।
ইরানও এরই মধ্যে ইসরায়েলে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। দেশটির হাতে প্রতিশোধ নেওয়ার আরও কিছু সীমিত পাল্টা পদক্ষেপের বিকল্প আছে। যদিও আরও রক্তপাত সম্ভবত অনিবার্য, তবে এখনই যুদ্ধ বন্ধ করার এবং এটি কীভাবে শেষ হতে পারে, তা নিয়ে ভাবা দরকার। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিকল্প আছে, যেভাবে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শেষ হতে পারে।
প্রথমত, ইরান ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি বড় আকারের সামরিক হামলা চালাবে। এরপর নিজ জনগণের কাছে দাবি করবে যে তারা পাল্টা জবাব দিয়েছে এবং ইসরায়েলিদের ক্ষতি করেছে। এরপর দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় তারা সম্মতি দেবে। সংক্ষেপে, এটি হবে মুখ বাঁচানোর লক্ষ্যে ‘একটি কৌশলগত আত্মসমর্পণ’।
মূলত, লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের অভিযানের পর একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। ইসরায়েলের বর্তমান ইরান হামলা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে চালানো প্রচেষ্টার সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ—সামরিক অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা এবং অসংখ্য গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া। এই বিষয়টি ইরানের নিরাপত্তা পরিষেবায় ইসরায়েলের গভীর অনুপ্রবেশের প্রমাণ দেয়।
হিজবুল্লাহর কাছে রকেটের বিশাল মজুত এবং হাজার হাজার যোদ্ধা থাকার পরও তারা ইসরায়েলের শর্তেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে বাধ্য হয়েছে কোনো কার্যকর পাল্টা আক্রমণ ছাড়াই। ইরানও এবারে হিজবুল্লাহর মতো একই পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। ইসরায়েলে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি (অন্তত পশ্চিমা গণমাধ্যমের দাবি এমনটাই)।
এ ছাড়া, হিজবুল্লাহর মতো ইরানের প্রধান মিত্ররাও এখন আগের অবস্থার চেয়ে দুর্বল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ইরানের একসময়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ডিটারেন্ট) এখন অকার্যকর। ইরানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চালানো বিধ্বংসী হামলা ইরানের নেতৃত্বকে বিশৃঙ্খল করে দিতে পারে। এতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো বা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তেহরান দ্রুত শীর্ষ কমান্ডারদের পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেও চলমান সংঘাতে এই নতুন নেতৃত্বের কার্যকারিতা এখনো স্পষ্ট নয়। ইসরায়েল সম্ভবত নতুন কমান্ডার এবং তাদের স্থলাভিষিক্তদের ওপরও হামলা চালাবে। ইরান অবশ্যই যুদ্ধের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে চায় না, কিন্তু তারা হয়তো ক্রমাগত হামলা সহ্য না করে ভবিষ্যতের জন্য টিকে থাকার পথ বেছে নেবে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো, ইরান টিকে থাকবে এবং ইসরায়েলের ওপর কিছু আঘাত হানবে। এটি প্রক্সি গোষ্ঠী ব্যবহার করে গেরিলা কৌশলে আঘাত হানা, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা বা অন্য কোনো উপায়েও হতে পারে। একই সময়ে, ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকবে। ইরানের নাতাঞ্জ ও অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইরান তুলনামূলকভাবে দ্রুত তা মেরামত করতে পারবে।
সাধারণত, ইসরায়েল যখন ‘শত্রুদের’ ওপর হামলা চালায় তখন প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রধান ইউরোপীয় মিত্রদের সমর্থন পায়। কিন্তু ইসরায়েল যখন হামলা চালিয়ে যেতে চায়, তখন এই দেশগুলো দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানায়। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েল হয়তো ইউরোপীয়দের মতামতকে তেমন গুরুত্ব দেবে না। কারণ, ইউরোপ কয়েক মাস ধরে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরায়েল কর্ণপাত করেনি। কিন্তু ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের মতামত, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতামতের বিষয়ে বেশি চিন্তিত। যদি ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ওপর সত্যিকারের চাপ সৃষ্টি করেন, তাহলে ইসরায়েল তাদের অভিযান সংক্ষিপ্ত করতে পারে।
এই চাপ দুই দেশতে ফলপ্রসূ কূটনীতির দিকে নিয়ে যাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি আলোচনার চুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই প্রস্তাবিত চুক্তিটি ২০১৫ সালের জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনের মতোই। তবে ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন। ট্রাম্প নতুন করে প্রস্তাব দেওয়ার পর ইরান এই আলোচনাকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছিল। দেশটির নেতৃত্বের আপাত সমর্থন ছিল, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উত্তেজনাও ছিল। যা-ই হোক, ট্রাম্প হামলার পর ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ইরানকে একটি চুক্তি করতেই হবে। এর আগে আর কিছুই থাকবে না এবং যা একসময় ইরানের সাম্রাজ্য নামে পরিচিত ছিল, তা রক্ষা করতে হবে। আর মৃত্যু নয়, আর ধ্বংস নয়, শুধু এটা করুন, খুব দেরি হওয়ার আগে।’
এই ধরনের আলোচনা তেহরানের জন্য আকর্ষণীয়—দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং নিষেধাজ্ঞা কমানোর প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে লোভনীয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর আলোচনার টেবিলে ইরানকে কম ছাড় দিতে হবে। তবে ইসরায়েলি হামলার মুখে এটি রাজনৈতিকভাবে আরও কঠিন। ট্রাম্প যেকোনো ছাড়কে নিজের বিজয় বলে ঘোষণা করবেন এবং ইরানকে চাপের মুখে নতি স্বীকার করা হয়েছে বলে মনে হবে।
তবে এমন ইতিবাচক পরিস্থিতির বিপরীতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতিও সম্ভব এবং সম্ভবত এটিই ঘটার আশঙ্কা বেশি। বিপর্যয়কর পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে একটি হলো ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ইসরায়েলি হামলার আগে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছিল। এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যেত। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং আকাশ প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলকে সমর্থন ইরানকে এই ধারণা দিতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে, তারপরও ইরান ওয়াশিংটনকে জড়িত বলে মনে করতে পারে। তাদের কাছে মনে হতে পারে, আলোচনার আড়ালে মূলত ইসরায়েলকে সামরিক প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন, ইরান যদি চুক্তিতে রাজি না হয়, তাহলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু অভিযানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং হামলা আসন্ন নয়। যদি তেহরান আলোচনাকে আড়াল হিসেবে দেখে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্থাপনাগুলো ইরানের ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রও নিজ কারণে উত্তেজনা বাড়াতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করতে পারেন, ইসরায়েল হামলার মাধ্যমে অর্ধেক কাজ করে ফেলেছে এবং এখন যুক্তরাষ্ট্র বাকি কাজ শেষ করতে পারে। আর তারা ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে ভারী বাংকার বাস্টার দিয়ে হামলা চালাতে পারে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবেশে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ঘোরতর।
ইরান সম্ভবত ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন এবং অন্যান্য স্থানে তাদের প্রক্সিদের ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য যা যা করা সম্ভব, করতে বলবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তারাও মার্কিন স্থাপনাকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। এভাবে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন, ইরাক এবং অন্যান্য স্থানে ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে।
বর্তমানে অসম্ভাব্য মনে হলেও এই সংঘাতে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা জড়িত হতে পারে। জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনী এরই মধ্যে তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আটকের খবর জানিয়েছে। জর্ডানের এই পদক্ষেপকে আত্মরক্ষা হিসেবে দেখানো হলেও যদি যুক্তরাষ্ট্র জড়িত হয়, তাহলে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত তাদের ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারে অথবা তাদের ওপর নির্ভর করতে পারে।
একটি চূড়ান্ত সম্ভাবনা হলো, যুদ্ধ কখনোই শেষ হবে না। অন্তত আনুষ্ঠানিক অর্থে নয়। যদিও ইসরায়েলের বিশাল আকারের হামলার ঢেউ হয়তো একসময় থামবে, কিন্তু নিম্নস্তরের সংঘাত আরও কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। ইসরায়েল হয়তো মাঝেমধ্যে ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা চালাবে, পাশাপাশি ইরানে গুপ্তহত্যা ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড চালাবে। ইরানও মাঝেমধ্যে ইসরায়েলের দিকে হামলা চালাবে, সঙ্গে অন্যান্য উপায়েও পাল্টা আঘাতের চেষ্টা করবে। এটি সর্বাত্মক যুদ্ধ না হলেও কোনো স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিও নয়।
ক্রমাগত পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে, ইরান হয়তো পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শন ছাড়াই গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরি করতে পারে এবং ইসরায়েলি হামলাকে এর ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ইসরায়েল যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের তিনটি সংরক্ষণাগারেই আঘাত না করে, তাহলে তেহরানের জন্য এই কাজটি কঠিন হবে না।
আবার, বিভিন্ন সম্ভাবনার সমন্বয়ও সম্ভব। মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি একটি বৃহত্তর পারমাণবিক চুক্তির প্রথম ধাপ হতে পারে। ইরান হয়তো স্বল্প মেয়াদে ছাড় দেবে, কিন্তু বিশ্বাস করবে যে—প্রতিশোধ ঠান্ডা মাথায় নিতে হয় এবং আগামী মাসগুলোতে প্রক্সি হামলা চালাবে এবং প্রতিশোধের একটি রূপ হবে এটি। এভাবেই এটি একটি চিরস্থায়ী পাল্টাপাল্টি হামলার যুদ্ধে পরিণত হবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ‘যত দিন লাগে’ হামলা চালিয়ে যাবে। ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি দুর্বল করা এবং দেশটির সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করা। তবে এই লক্ষ্য অর্জিত হবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।
ইরানও এরই মধ্যে ইসরায়েলে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। দেশটির হাতে প্রতিশোধ নেওয়ার আরও কিছু সীমিত পাল্টা পদক্ষেপের বিকল্প আছে। যদিও আরও রক্তপাত সম্ভবত অনিবার্য, তবে এখনই যুদ্ধ বন্ধ করার এবং এটি কীভাবে শেষ হতে পারে, তা নিয়ে ভাবা দরকার। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিকল্প আছে, যেভাবে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শেষ হতে পারে।
প্রথমত, ইরান ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি বড় আকারের সামরিক হামলা চালাবে। এরপর নিজ জনগণের কাছে দাবি করবে যে তারা পাল্টা জবাব দিয়েছে এবং ইসরায়েলিদের ক্ষতি করেছে। এরপর দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় তারা সম্মতি দেবে। সংক্ষেপে, এটি হবে মুখ বাঁচানোর লক্ষ্যে ‘একটি কৌশলগত আত্মসমর্পণ’।
মূলত, লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের অভিযানের পর একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। ইসরায়েলের বর্তমান ইরান হামলা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে চালানো প্রচেষ্টার সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ—সামরিক অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা এবং অসংখ্য গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া। এই বিষয়টি ইরানের নিরাপত্তা পরিষেবায় ইসরায়েলের গভীর অনুপ্রবেশের প্রমাণ দেয়।
হিজবুল্লাহর কাছে রকেটের বিশাল মজুত এবং হাজার হাজার যোদ্ধা থাকার পরও তারা ইসরায়েলের শর্তেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে বাধ্য হয়েছে কোনো কার্যকর পাল্টা আক্রমণ ছাড়াই। ইরানও এবারে হিজবুল্লাহর মতো একই পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। ইসরায়েলে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি (অন্তত পশ্চিমা গণমাধ্যমের দাবি এমনটাই)।
এ ছাড়া, হিজবুল্লাহর মতো ইরানের প্রধান মিত্ররাও এখন আগের অবস্থার চেয়ে দুর্বল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ইরানের একসময়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ডিটারেন্ট) এখন অকার্যকর। ইরানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চালানো বিধ্বংসী হামলা ইরানের নেতৃত্বকে বিশৃঙ্খল করে দিতে পারে। এতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো বা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তেহরান দ্রুত শীর্ষ কমান্ডারদের পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেও চলমান সংঘাতে এই নতুন নেতৃত্বের কার্যকারিতা এখনো স্পষ্ট নয়। ইসরায়েল সম্ভবত নতুন কমান্ডার এবং তাদের স্থলাভিষিক্তদের ওপরও হামলা চালাবে। ইরান অবশ্যই যুদ্ধের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে চায় না, কিন্তু তারা হয়তো ক্রমাগত হামলা সহ্য না করে ভবিষ্যতের জন্য টিকে থাকার পথ বেছে নেবে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো, ইরান টিকে থাকবে এবং ইসরায়েলের ওপর কিছু আঘাত হানবে। এটি প্রক্সি গোষ্ঠী ব্যবহার করে গেরিলা কৌশলে আঘাত হানা, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা বা অন্য কোনো উপায়েও হতে পারে। একই সময়ে, ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকবে। ইরানের নাতাঞ্জ ও অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইরান তুলনামূলকভাবে দ্রুত তা মেরামত করতে পারবে।
সাধারণত, ইসরায়েল যখন ‘শত্রুদের’ ওপর হামলা চালায় তখন প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রধান ইউরোপীয় মিত্রদের সমর্থন পায়। কিন্তু ইসরায়েল যখন হামলা চালিয়ে যেতে চায়, তখন এই দেশগুলো দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানায়। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েল হয়তো ইউরোপীয়দের মতামতকে তেমন গুরুত্ব দেবে না। কারণ, ইউরোপ কয়েক মাস ধরে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরায়েল কর্ণপাত করেনি। কিন্তু ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের মতামত, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতামতের বিষয়ে বেশি চিন্তিত। যদি ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ওপর সত্যিকারের চাপ সৃষ্টি করেন, তাহলে ইসরায়েল তাদের অভিযান সংক্ষিপ্ত করতে পারে।
এই চাপ দুই দেশতে ফলপ্রসূ কূটনীতির দিকে নিয়ে যাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি আলোচনার চুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই প্রস্তাবিত চুক্তিটি ২০১৫ সালের জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনের মতোই। তবে ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন। ট্রাম্প নতুন করে প্রস্তাব দেওয়ার পর ইরান এই আলোচনাকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছিল। দেশটির নেতৃত্বের আপাত সমর্থন ছিল, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উত্তেজনাও ছিল। যা-ই হোক, ট্রাম্প হামলার পর ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ইরানকে একটি চুক্তি করতেই হবে। এর আগে আর কিছুই থাকবে না এবং যা একসময় ইরানের সাম্রাজ্য নামে পরিচিত ছিল, তা রক্ষা করতে হবে। আর মৃত্যু নয়, আর ধ্বংস নয়, শুধু এটা করুন, খুব দেরি হওয়ার আগে।’
এই ধরনের আলোচনা তেহরানের জন্য আকর্ষণীয়—দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং নিষেধাজ্ঞা কমানোর প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে লোভনীয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর আলোচনার টেবিলে ইরানকে কম ছাড় দিতে হবে। তবে ইসরায়েলি হামলার মুখে এটি রাজনৈতিকভাবে আরও কঠিন। ট্রাম্প যেকোনো ছাড়কে নিজের বিজয় বলে ঘোষণা করবেন এবং ইরানকে চাপের মুখে নতি স্বীকার করা হয়েছে বলে মনে হবে।
তবে এমন ইতিবাচক পরিস্থিতির বিপরীতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতিও সম্ভব এবং সম্ভবত এটিই ঘটার আশঙ্কা বেশি। বিপর্যয়কর পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে একটি হলো ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ইসরায়েলি হামলার আগে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছিল। এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যেত। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং আকাশ প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলকে সমর্থন ইরানকে এই ধারণা দিতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে, তারপরও ইরান ওয়াশিংটনকে জড়িত বলে মনে করতে পারে। তাদের কাছে মনে হতে পারে, আলোচনার আড়ালে মূলত ইসরায়েলকে সামরিক প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন, ইরান যদি চুক্তিতে রাজি না হয়, তাহলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু অভিযানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং হামলা আসন্ন নয়। যদি তেহরান আলোচনাকে আড়াল হিসেবে দেখে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্থাপনাগুলো ইরানের ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রও নিজ কারণে উত্তেজনা বাড়াতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করতে পারেন, ইসরায়েল হামলার মাধ্যমে অর্ধেক কাজ করে ফেলেছে এবং এখন যুক্তরাষ্ট্র বাকি কাজ শেষ করতে পারে। আর তারা ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে ভারী বাংকার বাস্টার দিয়ে হামলা চালাতে পারে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবেশে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ঘোরতর।
ইরান সম্ভবত ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন এবং অন্যান্য স্থানে তাদের প্রক্সিদের ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য যা যা করা সম্ভব, করতে বলবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তারাও মার্কিন স্থাপনাকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। এভাবে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন, ইরাক এবং অন্যান্য স্থানে ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে।
বর্তমানে অসম্ভাব্য মনে হলেও এই সংঘাতে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা জড়িত হতে পারে। জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনী এরই মধ্যে তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আটকের খবর জানিয়েছে। জর্ডানের এই পদক্ষেপকে আত্মরক্ষা হিসেবে দেখানো হলেও যদি যুক্তরাষ্ট্র জড়িত হয়, তাহলে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত তাদের ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারে অথবা তাদের ওপর নির্ভর করতে পারে।
একটি চূড়ান্ত সম্ভাবনা হলো, যুদ্ধ কখনোই শেষ হবে না। অন্তত আনুষ্ঠানিক অর্থে নয়। যদিও ইসরায়েলের বিশাল আকারের হামলার ঢেউ হয়তো একসময় থামবে, কিন্তু নিম্নস্তরের সংঘাত আরও কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। ইসরায়েল হয়তো মাঝেমধ্যে ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা চালাবে, পাশাপাশি ইরানে গুপ্তহত্যা ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড চালাবে। ইরানও মাঝেমধ্যে ইসরায়েলের দিকে হামলা চালাবে, সঙ্গে অন্যান্য উপায়েও পাল্টা আঘাতের চেষ্টা করবে। এটি সর্বাত্মক যুদ্ধ না হলেও কোনো স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিও নয়।
ক্রমাগত পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে, ইরান হয়তো পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শন ছাড়াই গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরি করতে পারে এবং ইসরায়েলি হামলাকে এর ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ইসরায়েল যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের তিনটি সংরক্ষণাগারেই আঘাত না করে, তাহলে তেহরানের জন্য এই কাজটি কঠিন হবে না।
আবার, বিভিন্ন সম্ভাবনার সমন্বয়ও সম্ভব। মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি একটি বৃহত্তর পারমাণবিক চুক্তির প্রথম ধাপ হতে পারে। ইরান হয়তো স্বল্প মেয়াদে ছাড় দেবে, কিন্তু বিশ্বাস করবে যে—প্রতিশোধ ঠান্ডা মাথায় নিতে হয় এবং আগামী মাসগুলোতে প্রক্সি হামলা চালাবে এবং প্রতিশোধের একটি রূপ হবে এটি। এভাবেই এটি একটি চিরস্থায়ী পাল্টাপাল্টি হামলার যুদ্ধে পরিণত হবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
৪ ঘণ্টা আগে
গত কয়েক বছরে ভারতের আলোচনা ও বিশ্লেষণে প্রাধান্য পেয়েছে দেশটির বৈশ্বিক ভূমিকা ও পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষ। ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব, মহাকাশ অভিযান, বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান এবং দশকের শেষে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা—এসব বিষয়ই অভ্যন্তরীণ..
৯ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টির হুমকির মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়। ফলাফল বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা। গত আগস্টেও একই নাটক দেখা গিয়েছিল। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন
১০ ঘণ্টা আগে
এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১ দিন আগেশশী থারুরের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত সভ্যতার প্রতিধ্বনি। কূটনীতির জয়গাথা হিসেবে জন্ম নেওয়া এই প্রতিষ্ঠান আজ অস্তিত্বসংকটে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, আর ঠিক তখনই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেই পিছিয়ে আসতে চাইছে।
লক্ষণগুলো স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরে এসেছে। জাতিসংঘের অনেক সংস্থায় অর্থায়নও বন্ধ বা ব্যাপকভাবে কমিয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের অনুদান কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্র গাজা প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ভিসা বাতিল করেছে। অধিবেশনের প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নজিরবিহীন বক্তব্যে মাল্টিল্যাটারালিজম বা বহুপাক্ষিকতার মৌলিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিনিধি সুসান রাইস সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা এখন আর সেই জায়গাগুলোতে খেলছি না, যেখানে একসময় বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছি।’
বহুপাক্ষিকতার এই ক্ষয় এমন একসময়ে ঘটছে, যখন পৃথিবীর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দরকার সম্মিলিত পদক্ষেপের। ইউক্রেন, সুদানসহ নানা সংঘাতের আগুন জ্বলছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শান্তির কোনো ইঙ্গিত নেই। ট্রাম্প প্রশাসন গাজা শান্তিচুক্তির আয়োজন করেছে, কিন্তু তা জাতিসংঘের কাঠামোর বাইরে।
জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের গতি শাসনব্যবস্থার সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে বলেছেন, ‘বৈশ্বিক সংকট।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক বিভাজন আমাদের সেই ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে, যা দিয়ে আমরা কার্যকরভাবে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি।’
তাহলে কি বহুপাক্ষিকতা ভাঙনের পথে? জাতিসংঘ কি টিকে থাকতে পারবে ক্রমবর্ধমান এই ‘অপ্রাসঙ্গিকতার’ অভিযোগের ভেতর? এর উত্তর খুঁজতে হলে আগে বুঝতে হবে, বহুপাক্ষিকতা আসলে কী ছিল—আর এখন তা কী হয়ে উঠেছে। মূলত বহুপাক্ষিকতা মানে, এমন বিশ্বাস যে বৈশ্বিক সমস্যা (যা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান একসময় বলেছিলেন—সীমানাহীন সমস্যা) সমাধানও হতে হবে বৈশ্বিক পরিসরে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেখানে ছোট-বড় সব রাষ্ট্রেরই সমান কণ্ঠস্বর থাকবে। এটি সার্বভৌম সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আইনের শাসনের ওপর দাঁড়ানো এক ব্যবস্থা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, যেখানে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকেরই এক ভোট, এখনো সেই আদর্শের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতীক।
কিন্তু বাস্তবতা সব সময়ই আদর্শকে ছায়ায় ফেলে রেখেছে। জাতিসংঘের কাঠামো, বিশেষ করে—নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা, বৈষম্যকে স্থায়ী করে রেখেছে। জাতিসংঘের অনেক প্রস্তাব বাধ্যতামূলক নয়, বাস্তবায়নের ব্যবস্থাও দুর্বল। সাধারণ পরিষদ অনেক সময়ই পরিণত হয় বাস্তব সমাধানের বদলে রাজনৈতিক বক্তব্যের মঞ্চে। আর নিরাপত্তা পরিষদ নিজেও এখনো ১৯৪৫ সালের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতাকে বহন করছে, যখন আমরা দাঁড়িয়ে ২০২৫-এর শেষ অংশে।
তবু জাতিসংঘ অনেক কিছু অর্জন করেছে। মানবাধিকার-সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), প্যারিস জলবায়ু চুক্তি—সবই এসেছে বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা সমন্বয় করেছে, সফল শান্তিরক্ষা মিশন চালিয়েছে, অসংখ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে ভূমিকা রেখেছে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া গড়ে তুলেছে। এটি ছোট দেশগুলোর জন্য দিয়েছে বলার জায়গা, আর বড় দেশগুলোর জন্য শোনার বাধ্যবাধকতা। যদিও অনেক সময় তা কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
কিন্তু আজ সেই ব্যবস্থাও ভাঙনের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়েছে, আঞ্চলিক জোটগুলোর উত্থান ঘটেছে, কূটনৈতিক নীতিমালার ঐক্য ভেঙে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গোটা ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘ কালো ছায়া ফেলেছে। উভয় পক্ষই এখন নিজেদের মতো করে সীমিত গোষ্ঠীগত বা দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় ঝুঁকছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং গাজায় ইসরায়েলের অটল অবস্থান আন্তর্জাতিক নিয়মের প্রতি আস্থা আরও দুর্বল করেছে। এমনকি যে ইউরোপে একসময় বহুপাক্ষিকতার প্রতি গভীর অঙ্গীকার ছিল, সেখানে এখন জাতীয়তাবাদের ঢেউ সেই ঐকমত্যকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপট মহৎ উদ্দেশ্যে, কিন্তু সীমিত প্রভাবের প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ এখন ঝুঁকির মুখে। তবে পতন অনিবার্য নয়। বহুপাক্ষিকতা হয়তো আঘাতপ্রাপ্ত, কিন্তু এখনো মারা যায়নি। বিশ্বনেতারা এখনো নিউইয়র্কে একত্র হন, কথা বলেন, আলোচনা করেন, তর্ক করেন—এই ঘটনাই প্রমাণ করে, বৈশ্বিক সংলাপের প্রয়োজন এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান।
চলতি বছর শুরু হওয়া ‘ইউএন-৮০’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো জাতিসংঘের দায়িত্বের ভার কমানো, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং জন-আস্থা পুনরুদ্ধার। প্রতিষ্ঠান সংস্কার এখন বিলাসিতা নয়—অস্তিত্বের শর্ত। তবে বহুপাক্ষিকতার সংকট কেবল প্রাতিষ্ঠানিক নয়, তা দার্শনিকও বটে। এই সংকট এক গভীর টানাপোড়েন উন্মোচন করেছে। আর সেটি হলো—বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক নির্ভরতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের আওতায় থাকা ‘যেকোনো জায়গার মানুষ’ আর ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষ’-এর আত্মপরিচয়ের মধ্যে।
ডেভিড গুডহার্টের বিশ্লেষণ এখানে প্রাসঙ্গিক। ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষেরা’ ধর্ম, সংস্কৃতি ও স্থানীয় পরিচয়ে প্রোথিত, তারা বৈশ্বিক অভিজাত শ্রেণি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রমশ সন্দিহান। তাদের রাজনৈতিক উত্থান—ব্রেক্সিট থেকে ট্রাম্পবাদ পর্যন্ত—বদলে দিয়েছে সেই প্রেক্ষাপট। আর এ কারণেই বহুপাক্ষিকতা টিকে থাকার লড়াই করছে।
অতএব, বহুপাক্ষিকতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু প্রতিষ্ঠান সংস্কারের ওপর নয়, বৈধতা পুনর্গঠনের ওপরও। এই সংস্কারে কেবল কূটনীতিকদের নয়, সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগের প্রতিফলনও ঘটাতে হবে। প্রমাণ করতে হবে, বৈশ্বিক সহযোগিতা বাস্তব সুফল দিতে পারে—চাকরি, নিরাপত্তা, মর্যাদা সবকিছুর। এগুলো শুধু নীতিগত উচ্চারণ নয়। বহুপাক্ষিকতাকে হতে হবে কম প্রযুক্তিনির্ভর, বেশি মানবিক।
আশ্চর্যের বিষয়, যে দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসন ও বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করেছে—যেমন জাপান ও হাঙ্গেরি তারা হয়তো এই প্রতিক্রিয়ার ঝড় থেকে তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত। জাপানের সতর্ক কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক সমরূপতা দেশটিকে পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোর মতো জনতুষ্টির চাপে পড়তে দেয়নি। অন্যদিকে ভিক্টর অরবানের নেতৃত্বে হাঙ্গেরি গ্রহণ করেছে এক উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান, যা বহুপক্ষীয় নিয়ন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করে।
এগুলো স্বল্প মেয়াদে স্থিতিশীলতা দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বহন করে। চ্যালেঞ্জ তাই এক মধ্যপথ খুঁজে পাওয়া। একটি বহুপাক্ষিকতা, যা নীতিনিষ্ঠ কিন্তু বাস্তববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক কিন্তু কার্যকর। এর জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের নেতৃত্ব নয়, প্রয়োজন উদীয়মান শক্তিগুলোর, আঞ্চলিক জোটগুলোর, এমনকি নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকারও। উদাহরণস্বরূপ, ভারত একটি ন্যায়সংগত বৈশ্বিক শৃঙ্খলার পক্ষে নেতৃত্ব দিতে পারে—যেখানে সার্বভৌমত্ব, সংহতি ও টেকসই উন্নয়ন হবে মূল মূল্যবোধ।
জাতিসংঘের ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন যত সামনে বাড়ছে, তত স্পষ্ট হচ্ছে ঝুঁকি। বর্তমান পৃথিবী সংকটহীন নয়, সহযোগিতাহীন। জাতিসংঘ নিখুঁত নয়। তবুও দাগ হ্যামারশোল্ড যেমন বলেছিলেন, জাতিসংঘ ‘মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছাতে নয়, নরক থেকে রক্ষা করতে’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—সেটাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
এ উদ্দেশ্য পূরণে জাতিসংঘ হয়তো কখনো কখনো ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু এখনো এটাই একমাত্র মঞ্চ, যেখানে সব দেশ একত্র হয়ে বিশ্বের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে পারে। এটিকে ত্যাগ করা মানে আমাদের সাধারণ মানবতার ধারণাকেই ত্যাগ করা।
বহুপাক্ষিকতা হয়তো ছিন্নভিন্ন, কিন্তু একই সঙ্গে নবজন্মের পথেও আছে। এর টিকে থাকা নির্ভর করছে স্মৃতিচারণা নয়, পুনর্জাগরণের ওপর। আর সেই পুনর্জাগরণ শুরু হয় এই উপলব্ধি থেকে যে এই বিশ্বে যতক্ষণ না সব দেশ স্বাধীন, ততক্ষণ কোনো দেশই প্রকৃত সার্বভৌম নয়।

জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত সভ্যতার প্রতিধ্বনি। কূটনীতির জয়গাথা হিসেবে জন্ম নেওয়া এই প্রতিষ্ঠান আজ অস্তিত্বসংকটে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, আর ঠিক তখনই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেই পিছিয়ে আসতে চাইছে।
লক্ষণগুলো স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরে এসেছে। জাতিসংঘের অনেক সংস্থায় অর্থায়নও বন্ধ বা ব্যাপকভাবে কমিয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের অনুদান কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্র গাজা প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ভিসা বাতিল করেছে। অধিবেশনের প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নজিরবিহীন বক্তব্যে মাল্টিল্যাটারালিজম বা বহুপাক্ষিকতার মৌলিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিনিধি সুসান রাইস সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা এখন আর সেই জায়গাগুলোতে খেলছি না, যেখানে একসময় বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছি।’
বহুপাক্ষিকতার এই ক্ষয় এমন একসময়ে ঘটছে, যখন পৃথিবীর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দরকার সম্মিলিত পদক্ষেপের। ইউক্রেন, সুদানসহ নানা সংঘাতের আগুন জ্বলছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শান্তির কোনো ইঙ্গিত নেই। ট্রাম্প প্রশাসন গাজা শান্তিচুক্তির আয়োজন করেছে, কিন্তু তা জাতিসংঘের কাঠামোর বাইরে।
জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের গতি শাসনব্যবস্থার সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে বলেছেন, ‘বৈশ্বিক সংকট।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক বিভাজন আমাদের সেই ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে, যা দিয়ে আমরা কার্যকরভাবে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি।’
তাহলে কি বহুপাক্ষিকতা ভাঙনের পথে? জাতিসংঘ কি টিকে থাকতে পারবে ক্রমবর্ধমান এই ‘অপ্রাসঙ্গিকতার’ অভিযোগের ভেতর? এর উত্তর খুঁজতে হলে আগে বুঝতে হবে, বহুপাক্ষিকতা আসলে কী ছিল—আর এখন তা কী হয়ে উঠেছে। মূলত বহুপাক্ষিকতা মানে, এমন বিশ্বাস যে বৈশ্বিক সমস্যা (যা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান একসময় বলেছিলেন—সীমানাহীন সমস্যা) সমাধানও হতে হবে বৈশ্বিক পরিসরে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেখানে ছোট-বড় সব রাষ্ট্রেরই সমান কণ্ঠস্বর থাকবে। এটি সার্বভৌম সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আইনের শাসনের ওপর দাঁড়ানো এক ব্যবস্থা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, যেখানে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকেরই এক ভোট, এখনো সেই আদর্শের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতীক।
কিন্তু বাস্তবতা সব সময়ই আদর্শকে ছায়ায় ফেলে রেখেছে। জাতিসংঘের কাঠামো, বিশেষ করে—নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা, বৈষম্যকে স্থায়ী করে রেখেছে। জাতিসংঘের অনেক প্রস্তাব বাধ্যতামূলক নয়, বাস্তবায়নের ব্যবস্থাও দুর্বল। সাধারণ পরিষদ অনেক সময়ই পরিণত হয় বাস্তব সমাধানের বদলে রাজনৈতিক বক্তব্যের মঞ্চে। আর নিরাপত্তা পরিষদ নিজেও এখনো ১৯৪৫ সালের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতাকে বহন করছে, যখন আমরা দাঁড়িয়ে ২০২৫-এর শেষ অংশে।
তবু জাতিসংঘ অনেক কিছু অর্জন করেছে। মানবাধিকার-সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), প্যারিস জলবায়ু চুক্তি—সবই এসেছে বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা সমন্বয় করেছে, সফল শান্তিরক্ষা মিশন চালিয়েছে, অসংখ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে ভূমিকা রেখেছে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া গড়ে তুলেছে। এটি ছোট দেশগুলোর জন্য দিয়েছে বলার জায়গা, আর বড় দেশগুলোর জন্য শোনার বাধ্যবাধকতা। যদিও অনেক সময় তা কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
কিন্তু আজ সেই ব্যবস্থাও ভাঙনের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়েছে, আঞ্চলিক জোটগুলোর উত্থান ঘটেছে, কূটনৈতিক নীতিমালার ঐক্য ভেঙে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গোটা ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘ কালো ছায়া ফেলেছে। উভয় পক্ষই এখন নিজেদের মতো করে সীমিত গোষ্ঠীগত বা দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় ঝুঁকছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং গাজায় ইসরায়েলের অটল অবস্থান আন্তর্জাতিক নিয়মের প্রতি আস্থা আরও দুর্বল করেছে। এমনকি যে ইউরোপে একসময় বহুপাক্ষিকতার প্রতি গভীর অঙ্গীকার ছিল, সেখানে এখন জাতীয়তাবাদের ঢেউ সেই ঐকমত্যকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপট মহৎ উদ্দেশ্যে, কিন্তু সীমিত প্রভাবের প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ এখন ঝুঁকির মুখে। তবে পতন অনিবার্য নয়। বহুপাক্ষিকতা হয়তো আঘাতপ্রাপ্ত, কিন্তু এখনো মারা যায়নি। বিশ্বনেতারা এখনো নিউইয়র্কে একত্র হন, কথা বলেন, আলোচনা করেন, তর্ক করেন—এই ঘটনাই প্রমাণ করে, বৈশ্বিক সংলাপের প্রয়োজন এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান।
চলতি বছর শুরু হওয়া ‘ইউএন-৮০’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো জাতিসংঘের দায়িত্বের ভার কমানো, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং জন-আস্থা পুনরুদ্ধার। প্রতিষ্ঠান সংস্কার এখন বিলাসিতা নয়—অস্তিত্বের শর্ত। তবে বহুপাক্ষিকতার সংকট কেবল প্রাতিষ্ঠানিক নয়, তা দার্শনিকও বটে। এই সংকট এক গভীর টানাপোড়েন উন্মোচন করেছে। আর সেটি হলো—বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক নির্ভরতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের আওতায় থাকা ‘যেকোনো জায়গার মানুষ’ আর ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষ’-এর আত্মপরিচয়ের মধ্যে।
ডেভিড গুডহার্টের বিশ্লেষণ এখানে প্রাসঙ্গিক। ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষেরা’ ধর্ম, সংস্কৃতি ও স্থানীয় পরিচয়ে প্রোথিত, তারা বৈশ্বিক অভিজাত শ্রেণি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রমশ সন্দিহান। তাদের রাজনৈতিক উত্থান—ব্রেক্সিট থেকে ট্রাম্পবাদ পর্যন্ত—বদলে দিয়েছে সেই প্রেক্ষাপট। আর এ কারণেই বহুপাক্ষিকতা টিকে থাকার লড়াই করছে।
অতএব, বহুপাক্ষিকতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু প্রতিষ্ঠান সংস্কারের ওপর নয়, বৈধতা পুনর্গঠনের ওপরও। এই সংস্কারে কেবল কূটনীতিকদের নয়, সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগের প্রতিফলনও ঘটাতে হবে। প্রমাণ করতে হবে, বৈশ্বিক সহযোগিতা বাস্তব সুফল দিতে পারে—চাকরি, নিরাপত্তা, মর্যাদা সবকিছুর। এগুলো শুধু নীতিগত উচ্চারণ নয়। বহুপাক্ষিকতাকে হতে হবে কম প্রযুক্তিনির্ভর, বেশি মানবিক।
আশ্চর্যের বিষয়, যে দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসন ও বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করেছে—যেমন জাপান ও হাঙ্গেরি তারা হয়তো এই প্রতিক্রিয়ার ঝড় থেকে তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত। জাপানের সতর্ক কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক সমরূপতা দেশটিকে পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোর মতো জনতুষ্টির চাপে পড়তে দেয়নি। অন্যদিকে ভিক্টর অরবানের নেতৃত্বে হাঙ্গেরি গ্রহণ করেছে এক উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান, যা বহুপক্ষীয় নিয়ন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করে।
এগুলো স্বল্প মেয়াদে স্থিতিশীলতা দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বহন করে। চ্যালেঞ্জ তাই এক মধ্যপথ খুঁজে পাওয়া। একটি বহুপাক্ষিকতা, যা নীতিনিষ্ঠ কিন্তু বাস্তববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক কিন্তু কার্যকর। এর জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের নেতৃত্ব নয়, প্রয়োজন উদীয়মান শক্তিগুলোর, আঞ্চলিক জোটগুলোর, এমনকি নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকারও। উদাহরণস্বরূপ, ভারত একটি ন্যায়সংগত বৈশ্বিক শৃঙ্খলার পক্ষে নেতৃত্ব দিতে পারে—যেখানে সার্বভৌমত্ব, সংহতি ও টেকসই উন্নয়ন হবে মূল মূল্যবোধ।
জাতিসংঘের ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন যত সামনে বাড়ছে, তত স্পষ্ট হচ্ছে ঝুঁকি। বর্তমান পৃথিবী সংকটহীন নয়, সহযোগিতাহীন। জাতিসংঘ নিখুঁত নয়। তবুও দাগ হ্যামারশোল্ড যেমন বলেছিলেন, জাতিসংঘ ‘মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছাতে নয়, নরক থেকে রক্ষা করতে’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—সেটাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
এ উদ্দেশ্য পূরণে জাতিসংঘ হয়তো কখনো কখনো ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু এখনো এটাই একমাত্র মঞ্চ, যেখানে সব দেশ একত্র হয়ে বিশ্বের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে পারে। এটিকে ত্যাগ করা মানে আমাদের সাধারণ মানবতার ধারণাকেই ত্যাগ করা।
বহুপাক্ষিকতা হয়তো ছিন্নভিন্ন, কিন্তু একই সঙ্গে নবজন্মের পথেও আছে। এর টিকে থাকা নির্ভর করছে স্মৃতিচারণা নয়, পুনর্জাগরণের ওপর। আর সেই পুনর্জাগরণ শুরু হয় এই উপলব্ধি থেকে যে এই বিশ্বে যতক্ষণ না সব দেশ স্বাধীন, ততক্ষণ কোনো দেশই প্রকৃত সার্বভৌম নয়।

এই ধরনের আলোচনা তেহরানের জন্য আকর্ষণীয়—দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং নিষেধাজ্ঞা কমানোর প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে লোভনীয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর আলোচনার টেবিলে ইরানকে কম ছাড় দিতে হবে। তবে ইসরায়েলি হামলার মুখে এটি রাজনৈতিকভাবে আরও কঠিন। ট্রাম্প যেকোনো ছাড়কে নিজের বিজয় বলে ঘোষণা করবেন এবং
১৪ জুন ২০২৫
গত কয়েক বছরে ভারতের আলোচনা ও বিশ্লেষণে প্রাধান্য পেয়েছে দেশটির বৈশ্বিক ভূমিকা ও পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষ। ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব, মহাকাশ অভিযান, বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান এবং দশকের শেষে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা—এসব বিষয়ই অভ্যন্তরীণ..
৯ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টির হুমকির মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়। ফলাফল বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা। গত আগস্টেও একই নাটক দেখা গিয়েছিল। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন
১০ ঘণ্টা আগে
এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে একধরনের অদ্ভুত মিল দেখা যাচ্ছে। জেনারেশন-জেড বা জেন-জি বিক্ষোভে গত সেপ্টেম্বরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এটি অনেকটা গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া ‘মনসুন রেভল্যুশন’-এর মতো। সে সময় শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে, তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। আবার ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার ‘আরাগালায়া বা সংগ্রাম’ আন্দোলনও একই ধারায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে পদত্যাগে বাধ্য করে।
এ ধরনের একের পর এক গণ-আন্দোলন ইঙ্গিত দেয়, রাজনৈতিক অচলাবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও জনসংখ্যাগত চাপের মতো মৌলিক সংকটে ভুগছে গোটা দক্ষিণ এশিয়া। নেপালের কথাই ধরা যাক—রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর ২০০৮ থেকে গত ১৭ বছরে দেশটিতে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগের সঙ্গে সর্বশেষ যোগ হয়েছিল ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা। যার ফলে তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নামে। নেপালের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশির বয়স ১৫ বছরের নিচে, দেশের জনগণের গড় বয়স মাত্র ২৫ বছর, আর প্রতি পাঁচজন তরুণের একজন বেকার।
এই ঘটনাগুলো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের চারপাশে যেন এক অস্থিরতার বৃত্ত তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মতো নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তায় চলছে। আফগানিস্তান ও মিয়ানমার কার্যত ব্যর্থ বা প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আর চীন ও পাকিস্তান—দুই প্রতিবেশীই ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধে জড়িত, তাদের বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ এবং দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দুর্বল অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ হয় পরস্পরের সঙ্গে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৪ সালে।
গত কয়েক বছরে ভারতের আলোচনা ও বিশ্লেষণে প্রাধান্য পেয়েছে দেশটির বৈশ্বিক ভূমিকা ও পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষ। ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব, মহাকাশ অভিযান, বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান এবং দশকের শেষে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা—এসব বিষয়ই অভ্যন্তরীণ আলোচনায় এসেছে বেশি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের মতো শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। কিন্তু ভারতের মধ্যে এই আলোচনায় নিকট প্রতিবেশীরা যেন ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
এটার একটা কারণ, নয়াদিল্লির নিজস্ব প্রবণতা—বিশ্বশক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা এবং পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পুরো অঞ্চলকে আলাদা নজরে দেখা। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে সব দক্ষিণ এশীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং প্রথম দফায় তিনি ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি ঘোষণা করেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সরকার ভারতকে আঞ্চলিক পরিসর ছাড়িয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে তুলতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
এই প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে চলতি বছরের ‘রাইসিনা ডায়ালগে’। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রধান কূটনৈতিক সম্মেলনে ইউক্রেন ও গাজা সংঘাত থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মহাকাশে আধিপত্য—সব বিষয়ই সেখানে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কারণ, মাত্র ছয় মাস আগে বাংলাদেশের মনসুন রেভল্যুশনে ক্ষমতাচ্যুত হয় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র সরকারগুলোর একটি।
রাইসিনা ডায়ালগের ঠিক এক মাস পর চলতি বছরের এপ্রিলে কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলা হয়। এ হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দুই দশকের বেশি সময় পর বড় ধরনের যুদ্ধ হয়। ডায়ালগে ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ভারতীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনা করলেও আফগানিস্তান বা মিয়ানমারকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা কী হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। এটিই ইঙ্গিত দেয় যে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি একধরনের ‘উদাসীনতা’ ধীরে ধীরে নীতি-কৌশলে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়ার ভারতীয় সংসদ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার আলোচনায় এক সদস্য বলেন, ভারত তার প্রতিবেশীকে ভৌগোলিক দূরত্বে নয়, বরং ‘পারস্পরিক স্বার্থ’ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করে। যদিও সত্য এই যে কোয়াড বা ব্রিকসের মতো ‘সমভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলোর’ জোট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গতি পেয়েছে, কিন্তু এসব উদ্যোগ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পৃক্ততার বিকল্প হতে পারে না।
ভারতের অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার সংকটের দায় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনকে দেন। পাকিস্তান সার্কের সদস্যদেশ—এটি হয়তো সার্কের অচলাবস্থা ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু এতে ব্যাখ্যা মেলে না, কেন অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনও প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বঙ্গোপসাগর-ভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন ‘বিমসটেক’-এর কথা। পাকিস্তান এর সদস্য নয়, তবু ১৯৯৭ সালে গঠনের পর থেকে সংগঠনটি মাত্র ছয়বার শীর্ষ সম্মেলন করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিরতার সঙ্গে আঞ্চলিক ঘটনাবলিকে নয়াদিল্লির গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা—গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কিন্তু ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির আলোচনায় এমন বিশ্লেষণ প্রায় অনুপস্থিত। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের বাইরের নিরাপত্তা হুমকি আসে তাদের সীমান্ত বা আশপাশের অঞ্চল থেকেই; যেমন ইউরোপের জন্য রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন এক অস্তিত্বের হুমকি বা স্নায়ুযুদ্ধকালে কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় হুমকি এসেছিল নিজের ‘পেছনের উঠান’ থেকেই। আবার অনুপ্রবেশের মতো বিষয়ও বহু দেশের রাজনীতিতে তীব্র আবেগের সৃষ্টি করে। তাই ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যদি নিজেকে কেবল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরে, কিন্তু আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজের দায়িত্বকে উপেক্ষা করে—তাহলে তা দীর্ঘ মেয়াদে টিকবে না।
এই ‘উদাসীনতা’ ভারতের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতেও স্পষ্ট। সম্প্রতি লাদাখ (যা চীন ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী বিতর্কিত অঞ্চল) ও মণিপুরে অস্থিরতার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। মণিপুর রাজ্যটি মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত। দুই ক্ষেত্রেই কেন্দ্র সরকার ধীর প্রতিক্রিয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মণিপুরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার দুই বছরের বেশি সময় পর নরেন্দ্র মোদি সেখানে সফরে যান।
নয়াদিল্লির দক্ষিণ এশিয়া নীতি ভারতের সামগ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। পূর্বমুখী নীতি বা ‘লুক ইস্ট’ নীতি মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নামে নতুনভাবে প্রচারে আনে, যা আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও বাংলাদেশে ভারতের প্রতি কম সহানুভূতিশীল সরকার ক্ষমতায় থাকায় ওই উদ্যোগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে স্থলপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে।
ভারতের পশ্চিমমুখী নীতিও (যা নয়াদিল্লি ‘ওয়েস্ট এশিয়া’ বলে উল্লেখ করে) জটিল। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক ও আফগানিস্তানে চলমান অস্থিরতা এতে বাধা সৃষ্টি করেছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির যোগাযোগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে, যা এই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে এক নতুন উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
ভারত এই অঞ্চলের (পাকিস্তানের পর পশ্চিম দিকে) সঙ্গে যোগাযোগ জোরদারের মাধ্যমে নানা বাধা কাটিয়ে উঠেছে। আকাশপথ, নৌপথ এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বাড়াতে দেশটি উদ্যোগ নিয়েছে ইরানে নয়াদিল্লি পরিচালিত চাবাহার বন্দর এবং ২০২৩ সালে জি-২০ সভাপতিত্বের সময় ঘোষিত ‘ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডর’-এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে। পাশাপাশি কাবুলের তালেবান সরকারের সঙ্গেও সাম্প্রতিক সময়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে নয়াদিল্লি। তবে মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের সম্পৃক্ততা এখনো নড়বড়ে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ঘোষিত প্রতিরক্ষা চুক্তি বিবেচনায় নিলে সেই পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও আঞ্চলিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখা দরকার, চীন বৈশ্বিক শক্তি হয়ে ওঠার আগে আঞ্চলিকভাবে নিজেদের অর্থনীতি ও অবকাঠামোকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একীভূত করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ও আন্তর্দেশীয় উৎপাদন নেটওয়ার্কে নিজেদের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। ভারতকেও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে, যদি দেশটি বৈশ্বিক উৎপাদনকেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়।
পশ্চিমা দেশগুলোও অনেক সময় ভারতকে একা একটি দেশ হিসেবে দেখে—দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে নয়। এর পেছনে আংশিক কারণ প্রশাসনিক জটিলতা; যেমন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ওশান ডিরেক্টরেট’ আলাদা বিভাগ, আর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ে কাজ করে আরেকটি বিভাগ— ‘আফগানিস্তান অ্যান্ড পাকিস্তান ডিরেক্টরেট।’
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরে (ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স) ভারত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড’-এর অধীনে, আর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ‘সেন্ট্রাল কমান্ড’-এর অধীনে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত সার্জিও গরকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নয়াদিল্লিতে নিয়োগ দেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ। যদিও ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এই নিয়োগ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ভারত-পাকিস্তানকে একসঙ্গে বিবেচনা করতে উৎসাহিত করবে এবং ভারতকে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি হিসেবেই দেখবে।
সর্বোপরি প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর ভারতনীতি আরও নিবিড়ভাবে দক্ষিণ এশিয়া নীতির সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারতকে বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পশ্চিমা দেশগুলোও এই অঞ্চলের অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় আরও কার্যকরভাবে এগোতে পারবে।
এই সংকটগুলোর মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার চাপ—দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের বয়স এখনো ১৮ বছরের নিচে। রয়েছে জলবায়ু ঝুঁকি—এই অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জলবায়ু বিপর্যয়-সংবেদনশীল এলাকার একটি। আছে অভিবাসন সংকটও—অনেক পশ্চিমা দেশে অবৈধ অভিবাসীর বড় অংশ দক্ষিণ এশীয়।
এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোরও ভাবতে হবে—কীভাবে তারা এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে সাজাবে। কারণ, এখন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসছে। দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার ও গোষ্ঠীকে সরিয়ে জনগণের শক্তিতে নতুন প্রজন্মের নেতারা উঠে আসছেন।
এটি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে শ্রীলঙ্কায়। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে পরাজিত হয়েছেন পুরোনো রাজনৈতিক পরিবারের প্রার্থীরা। বিজয়ী হয়েছেন বামপন্থী জোটের নেতা অনুড়া কুমারা দিসানায়েকে, যার দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা একসময় দেশজুড়ে সশস্ত্র আন্দোলন করেছিল। এই অপ্রত্যাশিত নির্বাচনী ফল শ্রীলঙ্কার অস্থির রাজনীতিকে যেমন তুলে ধরেছে, তেমনি দেশের মূলধারার রাজনীতির প্রতি জনগণের গভীর হতাশাও স্পষ্ট করেছে।
বাংলাদেশ ও নেপালে একই ধরনের কিছু রাজনৈতিক প্রবণতা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। দুই দেশই বর্তমানে সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আছে। বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস এবং নেপালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। ছাত্র ও যুবা নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে—বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং নেপালের হামি নেপাল-এর মতো সংগঠনগুলো এখন প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
এই প্রবণতা দুই দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণির প্রভাবকে দুর্বল করার সম্ভাবনা তৈরি করছে। ‘ব্যাটলিং বেগমস’-এর যুগে বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল হতো এবং নেপালের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলে (নেপালি কংগ্রেস ও দুটি কমিউনিস্ট পার্টি) ছিল পুরুষ নেতাদের আধিপত্য।
এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি। এই অঞ্চলের দেশগুলো প্রায়ই চীন ও ভারতের প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের চাহিদা পূরণের জন্য উভয় রাষ্ট্র থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে, পাশাপাশি তাদের স্বাধীনতাও রক্ষা করে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ছে—দেশটি এই অঞ্চলের দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, বৈদেশিক বিনিয়োগের উৎস এবং দেশগুলোর জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অন্যদিকে এই অঞ্চলের দেশগুলো ভারতের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক বজায় রাখে। যেখানে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা প্রায়ই নির্বাচনে ভারতবিরোধী অবস্থান জানান দেওয়ার প্রতিযোগিতা করেন। এটি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশে, যেখানে সাম্প্রতিক নির্বাচনের প্রচারে ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
তবে বাস্তবতা হলো, প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারত এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। নয়াদিল্লির কার্যক্রম; যেমন শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপকে সাম্প্রতিক আর্থিক সংকটের সময় অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া—ভারতকে ‘শেষ আশ্রয়’ হিসেবেই উপস্থাপন করেছে।
যা হোক, এখন এমন এক সময় যখন বৈশ্বিক নীতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো চাপের মুখে—ঠিক তখনই আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলো নতুন করে গতি পাচ্ছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংহতি ও সহযোগিতা শক্তিশালী করার তাগিদ আরও বাড়িয়ে দেয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে এই নিবন্ধের লেখক এই প্রস্তাব ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে তুলে ধরেন। সে সময় জয়শঙ্কর উদাহরণ দেন ভারত কীভাবে আঞ্চলিক সংযোগ শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে—অবকাঠামোগত প্রকল্প, আর্থিক সহায়তা, টিকা বিতরণ এবং খাদ্যশস্য সরবরাহের মাধ্যমে। তবে তিনি ব্যাখ্যা করেননি যে কেন ভারতের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর আঞ্চলিক সংহতি ও আস্থা এখনো দুর্বল।
এটি পশ্চিমাদের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অভিবাসন, জলবায়ু ও চীনের বৈশ্বিক ভূমিকা সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। যা হোক, এই অঞ্চলের দেশগুলো আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করতে না পারলেও সমমনা দেশগুলো তাদের শক্তি ও সংযুক্তি সক্ষমতা ব্যবহার করে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সহজতর করতে পারে; যেমন জলবায়ু সহনশীলতা, অভিবাসন এবং শারীরিক ও ডিজিটাল সংযোগের উন্নতি।
তবে ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে না। কারণ, বৈশ্বিক উন্নয়ন সহায়তা কমছে, বৈদেশিক নীতি এখন ‘অগ্রাধিকার’ নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে এবং আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবু দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশের আবাসস্থল। তাই এই অঞ্চলে যা ঘটে, তার প্রভাব গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে একধরনের অদ্ভুত মিল দেখা যাচ্ছে। জেনারেশন-জেড বা জেন-জি বিক্ষোভে গত সেপ্টেম্বরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এটি অনেকটা গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া ‘মনসুন রেভল্যুশন’-এর মতো। সে সময় শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে, তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। আবার ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার ‘আরাগালায়া বা সংগ্রাম’ আন্দোলনও একই ধারায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে পদত্যাগে বাধ্য করে।
এ ধরনের একের পর এক গণ-আন্দোলন ইঙ্গিত দেয়, রাজনৈতিক অচলাবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও জনসংখ্যাগত চাপের মতো মৌলিক সংকটে ভুগছে গোটা দক্ষিণ এশিয়া। নেপালের কথাই ধরা যাক—রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর ২০০৮ থেকে গত ১৭ বছরে দেশটিতে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগের সঙ্গে সর্বশেষ যোগ হয়েছিল ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা। যার ফলে তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নামে। নেপালের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশির বয়স ১৫ বছরের নিচে, দেশের জনগণের গড় বয়স মাত্র ২৫ বছর, আর প্রতি পাঁচজন তরুণের একজন বেকার।
এই ঘটনাগুলো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের চারপাশে যেন এক অস্থিরতার বৃত্ত তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মতো নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তায় চলছে। আফগানিস্তান ও মিয়ানমার কার্যত ব্যর্থ বা প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আর চীন ও পাকিস্তান—দুই প্রতিবেশীই ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধে জড়িত, তাদের বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ এবং দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দুর্বল অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ হয় পরস্পরের সঙ্গে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৪ সালে।
গত কয়েক বছরে ভারতের আলোচনা ও বিশ্লেষণে প্রাধান্য পেয়েছে দেশটির বৈশ্বিক ভূমিকা ও পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষ। ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব, মহাকাশ অভিযান, বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান এবং দশকের শেষে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা—এসব বিষয়ই অভ্যন্তরীণ আলোচনায় এসেছে বেশি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের মতো শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। কিন্তু ভারতের মধ্যে এই আলোচনায় নিকট প্রতিবেশীরা যেন ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
এটার একটা কারণ, নয়াদিল্লির নিজস্ব প্রবণতা—বিশ্বশক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা এবং পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পুরো অঞ্চলকে আলাদা নজরে দেখা। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে সব দক্ষিণ এশীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং প্রথম দফায় তিনি ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি ঘোষণা করেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সরকার ভারতকে আঞ্চলিক পরিসর ছাড়িয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে তুলতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
এই প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে চলতি বছরের ‘রাইসিনা ডায়ালগে’। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রধান কূটনৈতিক সম্মেলনে ইউক্রেন ও গাজা সংঘাত থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মহাকাশে আধিপত্য—সব বিষয়ই সেখানে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কারণ, মাত্র ছয় মাস আগে বাংলাদেশের মনসুন রেভল্যুশনে ক্ষমতাচ্যুত হয় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র সরকারগুলোর একটি।
রাইসিনা ডায়ালগের ঠিক এক মাস পর চলতি বছরের এপ্রিলে কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলা হয়। এ হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দুই দশকের বেশি সময় পর বড় ধরনের যুদ্ধ হয়। ডায়ালগে ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ভারতীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনা করলেও আফগানিস্তান বা মিয়ানমারকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা কী হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। এটিই ইঙ্গিত দেয় যে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি একধরনের ‘উদাসীনতা’ ধীরে ধীরে নীতি-কৌশলে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়ার ভারতীয় সংসদ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার আলোচনায় এক সদস্য বলেন, ভারত তার প্রতিবেশীকে ভৌগোলিক দূরত্বে নয়, বরং ‘পারস্পরিক স্বার্থ’ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করে। যদিও সত্য এই যে কোয়াড বা ব্রিকসের মতো ‘সমভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলোর’ জোট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গতি পেয়েছে, কিন্তু এসব উদ্যোগ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পৃক্ততার বিকল্প হতে পারে না।
ভারতের অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার সংকটের দায় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনকে দেন। পাকিস্তান সার্কের সদস্যদেশ—এটি হয়তো সার্কের অচলাবস্থা ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু এতে ব্যাখ্যা মেলে না, কেন অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনও প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বঙ্গোপসাগর-ভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন ‘বিমসটেক’-এর কথা। পাকিস্তান এর সদস্য নয়, তবু ১৯৯৭ সালে গঠনের পর থেকে সংগঠনটি মাত্র ছয়বার শীর্ষ সম্মেলন করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিরতার সঙ্গে আঞ্চলিক ঘটনাবলিকে নয়াদিল্লির গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা—গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কিন্তু ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির আলোচনায় এমন বিশ্লেষণ প্রায় অনুপস্থিত। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের বাইরের নিরাপত্তা হুমকি আসে তাদের সীমান্ত বা আশপাশের অঞ্চল থেকেই; যেমন ইউরোপের জন্য রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন এক অস্তিত্বের হুমকি বা স্নায়ুযুদ্ধকালে কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় হুমকি এসেছিল নিজের ‘পেছনের উঠান’ থেকেই। আবার অনুপ্রবেশের মতো বিষয়ও বহু দেশের রাজনীতিতে তীব্র আবেগের সৃষ্টি করে। তাই ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যদি নিজেকে কেবল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরে, কিন্তু আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজের দায়িত্বকে উপেক্ষা করে—তাহলে তা দীর্ঘ মেয়াদে টিকবে না।
এই ‘উদাসীনতা’ ভারতের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতেও স্পষ্ট। সম্প্রতি লাদাখ (যা চীন ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী বিতর্কিত অঞ্চল) ও মণিপুরে অস্থিরতার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। মণিপুর রাজ্যটি মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত। দুই ক্ষেত্রেই কেন্দ্র সরকার ধীর প্রতিক্রিয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মণিপুরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার দুই বছরের বেশি সময় পর নরেন্দ্র মোদি সেখানে সফরে যান।
নয়াদিল্লির দক্ষিণ এশিয়া নীতি ভারতের সামগ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। পূর্বমুখী নীতি বা ‘লুক ইস্ট’ নীতি মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নামে নতুনভাবে প্রচারে আনে, যা আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও বাংলাদেশে ভারতের প্রতি কম সহানুভূতিশীল সরকার ক্ষমতায় থাকায় ওই উদ্যোগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে স্থলপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে।
ভারতের পশ্চিমমুখী নীতিও (যা নয়াদিল্লি ‘ওয়েস্ট এশিয়া’ বলে উল্লেখ করে) জটিল। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক ও আফগানিস্তানে চলমান অস্থিরতা এতে বাধা সৃষ্টি করেছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির যোগাযোগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে, যা এই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে এক নতুন উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
ভারত এই অঞ্চলের (পাকিস্তানের পর পশ্চিম দিকে) সঙ্গে যোগাযোগ জোরদারের মাধ্যমে নানা বাধা কাটিয়ে উঠেছে। আকাশপথ, নৌপথ এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বাড়াতে দেশটি উদ্যোগ নিয়েছে ইরানে নয়াদিল্লি পরিচালিত চাবাহার বন্দর এবং ২০২৩ সালে জি-২০ সভাপতিত্বের সময় ঘোষিত ‘ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডর’-এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে। পাশাপাশি কাবুলের তালেবান সরকারের সঙ্গেও সাম্প্রতিক সময়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে নয়াদিল্লি। তবে মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের সম্পৃক্ততা এখনো নড়বড়ে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ঘোষিত প্রতিরক্ষা চুক্তি বিবেচনায় নিলে সেই পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও আঞ্চলিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখা দরকার, চীন বৈশ্বিক শক্তি হয়ে ওঠার আগে আঞ্চলিকভাবে নিজেদের অর্থনীতি ও অবকাঠামোকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একীভূত করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ও আন্তর্দেশীয় উৎপাদন নেটওয়ার্কে নিজেদের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। ভারতকেও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে, যদি দেশটি বৈশ্বিক উৎপাদনকেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়।
পশ্চিমা দেশগুলোও অনেক সময় ভারতকে একা একটি দেশ হিসেবে দেখে—দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে নয়। এর পেছনে আংশিক কারণ প্রশাসনিক জটিলতা; যেমন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ওশান ডিরেক্টরেট’ আলাদা বিভাগ, আর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ে কাজ করে আরেকটি বিভাগ— ‘আফগানিস্তান অ্যান্ড পাকিস্তান ডিরেক্টরেট।’
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরে (ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স) ভারত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড’-এর অধীনে, আর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ‘সেন্ট্রাল কমান্ড’-এর অধীনে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত সার্জিও গরকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নয়াদিল্লিতে নিয়োগ দেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ। যদিও ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এই নিয়োগ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ভারত-পাকিস্তানকে একসঙ্গে বিবেচনা করতে উৎসাহিত করবে এবং ভারতকে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি হিসেবেই দেখবে।
সর্বোপরি প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর ভারতনীতি আরও নিবিড়ভাবে দক্ষিণ এশিয়া নীতির সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারতকে বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পশ্চিমা দেশগুলোও এই অঞ্চলের অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় আরও কার্যকরভাবে এগোতে পারবে।
এই সংকটগুলোর মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার চাপ—দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের বয়স এখনো ১৮ বছরের নিচে। রয়েছে জলবায়ু ঝুঁকি—এই অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জলবায়ু বিপর্যয়-সংবেদনশীল এলাকার একটি। আছে অভিবাসন সংকটও—অনেক পশ্চিমা দেশে অবৈধ অভিবাসীর বড় অংশ দক্ষিণ এশীয়।
এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোরও ভাবতে হবে—কীভাবে তারা এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে সাজাবে। কারণ, এখন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসছে। দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার ও গোষ্ঠীকে সরিয়ে জনগণের শক্তিতে নতুন প্রজন্মের নেতারা উঠে আসছেন।
এটি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে শ্রীলঙ্কায়। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে পরাজিত হয়েছেন পুরোনো রাজনৈতিক পরিবারের প্রার্থীরা। বিজয়ী হয়েছেন বামপন্থী জোটের নেতা অনুড়া কুমারা দিসানায়েকে, যার দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা একসময় দেশজুড়ে সশস্ত্র আন্দোলন করেছিল। এই অপ্রত্যাশিত নির্বাচনী ফল শ্রীলঙ্কার অস্থির রাজনীতিকে যেমন তুলে ধরেছে, তেমনি দেশের মূলধারার রাজনীতির প্রতি জনগণের গভীর হতাশাও স্পষ্ট করেছে।
বাংলাদেশ ও নেপালে একই ধরনের কিছু রাজনৈতিক প্রবণতা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। দুই দেশই বর্তমানে সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আছে। বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস এবং নেপালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। ছাত্র ও যুবা নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে—বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং নেপালের হামি নেপাল-এর মতো সংগঠনগুলো এখন প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
এই প্রবণতা দুই দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণির প্রভাবকে দুর্বল করার সম্ভাবনা তৈরি করছে। ‘ব্যাটলিং বেগমস’-এর যুগে বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল হতো এবং নেপালের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলে (নেপালি কংগ্রেস ও দুটি কমিউনিস্ট পার্টি) ছিল পুরুষ নেতাদের আধিপত্য।
এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি। এই অঞ্চলের দেশগুলো প্রায়ই চীন ও ভারতের প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের চাহিদা পূরণের জন্য উভয় রাষ্ট্র থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে, পাশাপাশি তাদের স্বাধীনতাও রক্ষা করে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ছে—দেশটি এই অঞ্চলের দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, বৈদেশিক বিনিয়োগের উৎস এবং দেশগুলোর জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অন্যদিকে এই অঞ্চলের দেশগুলো ভারতের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক বজায় রাখে। যেখানে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা প্রায়ই নির্বাচনে ভারতবিরোধী অবস্থান জানান দেওয়ার প্রতিযোগিতা করেন। এটি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশে, যেখানে সাম্প্রতিক নির্বাচনের প্রচারে ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
তবে বাস্তবতা হলো, প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারত এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। নয়াদিল্লির কার্যক্রম; যেমন শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপকে সাম্প্রতিক আর্থিক সংকটের সময় অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া—ভারতকে ‘শেষ আশ্রয়’ হিসেবেই উপস্থাপন করেছে।
যা হোক, এখন এমন এক সময় যখন বৈশ্বিক নীতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো চাপের মুখে—ঠিক তখনই আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলো নতুন করে গতি পাচ্ছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংহতি ও সহযোগিতা শক্তিশালী করার তাগিদ আরও বাড়িয়ে দেয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে এই নিবন্ধের লেখক এই প্রস্তাব ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে তুলে ধরেন। সে সময় জয়শঙ্কর উদাহরণ দেন ভারত কীভাবে আঞ্চলিক সংযোগ শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে—অবকাঠামোগত প্রকল্প, আর্থিক সহায়তা, টিকা বিতরণ এবং খাদ্যশস্য সরবরাহের মাধ্যমে। তবে তিনি ব্যাখ্যা করেননি যে কেন ভারতের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর আঞ্চলিক সংহতি ও আস্থা এখনো দুর্বল।
এটি পশ্চিমাদের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অভিবাসন, জলবায়ু ও চীনের বৈশ্বিক ভূমিকা সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। যা হোক, এই অঞ্চলের দেশগুলো আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করতে না পারলেও সমমনা দেশগুলো তাদের শক্তি ও সংযুক্তি সক্ষমতা ব্যবহার করে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সহজতর করতে পারে; যেমন জলবায়ু সহনশীলতা, অভিবাসন এবং শারীরিক ও ডিজিটাল সংযোগের উন্নতি।
তবে ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে না। কারণ, বৈশ্বিক উন্নয়ন সহায়তা কমছে, বৈদেশিক নীতি এখন ‘অগ্রাধিকার’ নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে এবং আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবু দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশের আবাসস্থল। তাই এই অঞ্চলে যা ঘটে, তার প্রভাব গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

এই ধরনের আলোচনা তেহরানের জন্য আকর্ষণীয়—দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং নিষেধাজ্ঞা কমানোর প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে লোভনীয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর আলোচনার টেবিলে ইরানকে কম ছাড় দিতে হবে। তবে ইসরায়েলি হামলার মুখে এটি রাজনৈতিকভাবে আরও কঠিন। ট্রাম্প যেকোনো ছাড়কে নিজের বিজয় বলে ঘোষণা করবেন এবং
১৪ জুন ২০২৫
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
৪ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টির হুমকির মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়। ফলাফল বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা। গত আগস্টেও একই নাটক দেখা গিয়েছিল। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন
১০ ঘণ্টা আগে
এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টির হুমকির মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়। ফলাফল বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা। গত আগস্টেও একই নাটক দেখা গিয়েছিল। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় পুতিন সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে। ফলাফল আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণা।
এ যেন একধরনের ‘দেজাভ্যু’। তবে এবার মনে হচ্ছে পুনরাবৃত্তির দিন শেষ। কারণ, ন্যূনতম প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠিত আলাস্কার বৈঠকটি ছিল ফলশূন্য। অন্যদিকে বুদাপেস্ট সম্মেলন বাতিল। বলা ভালো, এটি কার্যত ‘চালু’ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাম্প নিজেই তা বাতিল করেছেন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের যেখানে পৌঁছানোর কথা, সেখানে পৌঁছাতে পারব বলে আমার মনে হচ্ছিল না।’ তবে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। এর আগে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর হুমকি দিয়েও ট্রাম্প কখনো তা বাস্তবায়ন করেননি। বরং তিনি কূটনীতিতে ‘গাজর’ তথা প্রলুব্ধ করার কৌশল ব্যবহার করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।
তবে এবার তিনি সেই গাজর সরিয়ে রেখেছেন। রাশিয়ার দুই বড় তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই পদক্ষেপ পুতিনকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে না। তবে এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প ক্রেমলিনের অনমনীয় অবস্থানে ক্ষুব্ধ। ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানের জন্য রাশিয়া কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।
কিন্তু আবার রুশরা ‘লাঠির রাজনীতি’ও পছন্দ করে না। বৃহস্পতিবার পুতিন সাংবাদিকদের বললেন, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা একটি ‘অবন্ধুত্বসুলভ পদক্ষেপ’ এবং রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা। তিনি বলেন, ‘কোনো আত্মসম্মান বোধবিশিষ্ট দেশ বা জনগণ কখনো চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না।’
তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ভাষা ছিল আরও কড়া। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শত্রু, আর তাদের বাচাল শান্তির দূত (ট্রাম্প) এখন পুরোপুরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পথে নেমেছে। এই সিদ্ধান্তগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণারই সমান।’
তাহলে কী বদলেছে? প্রথম সম্মেলনের সময় যেমন হঠাৎ করে আলাস্কায় উড়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প, এবার তিনি কিছুটা সতর্ক ছিলেন। বুদাপেস্ট বৈঠকের আগে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নির্দেশ দেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করতে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় এই শীর্ষ বৈঠকে সত্যিই কোনো সুফল আসবে কি না।
শিগগির স্পষ্ট হয়, কোনো ফল আসবে না। তাই বুদাপেস্টে নতুন বৈঠকের পরিকল্পনা বাতিল হয়। রাশিয়া ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি বা বর্তমান ফ্রন্টলাইন বা যুদ্ধ রেখা ‘ফ্রিজ বা স্থগিত’ করার ভাবনায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। ক্রেমলিন পুরো দোনবাস অঞ্চল দখলে নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে তারা এর বড় অংশ দখল করেছে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অটল—ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের অংশে রাশিয়াকে ছাড় দেবেন না। মস্কো অবশ্য দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্মেলনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিল। আলাস্কার প্রথম বৈঠকটি ক্রেমলিনের জন্য ছিল এক বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। অ্যাঙ্কোরেজে পুতিনকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা রাশিয়ার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুনরাবির্ভাবের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এবং রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে পশ্চিমা প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বুদাপেস্টে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে টেবিলের বাইরে রেখে ইউরোপে এই বৈঠককে তারা ব্রাসেলসের মুখে চপেটাঘাত হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। তবে বেশির ভাগ রাশিয়ান বিশ্লেষক বিশ্বাস করছিলেন না যে বুদাপেস্ট সম্মেলন বাস্তবায়িত হলেও রাশিয়া কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে।
রাশিয়ার কিছু পত্রিকা সরাসরি বলেছে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। মস্কভস্কি কোমসোমোলেতস লিখেছে, ‘মস্কোর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার মতো একটি কারণও নেই।’ তবে এর মানে এই নয় যে ক্রেমলিন শান্তি চায় না। চায়, কিন্তু তাদের নিজস্ব শর্তে। আর সেই শর্তগুলো এখন কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের কাছে অগ্রহণযোগ্য।
রাশিয়ার দাবিগুলো কেবল ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা দাবি করছে যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ সমাধান করতে হবে। এসব শব্দগুচ্ছের আড়ালে রাশিয়া কার্যত ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। আরও গভীরভাবে ভাবলে বলা যায়, মস্কো এখনো ইউক্রেনকে নিজের প্রভাববলয়ে টেনে আনার লক্ষ্য ত্যাগ করেনি। তাহলে, ট্রাম্প কি রাশিয়ার ওপর আরও চাপ বাড়াতে প্রস্তুত? সম্ভবত। তবে আবারও সেই পুরোনো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখতে হতে পারে।
বুদাপেস্ট সম্মেলন ঘোষণা হওয়ার পর মস্কভস্কি কোমসোমোলেতস লিখেছিল, ‘ট্রাম্পের রশি টানাটানির খেলায় এখন আবার রাশিয়াই এগিয়ে। বৈঠকের আগের কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোর ফোনকল ও সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প কিছুটা রাশি নিজের দিকে টেনে নেবেন, তারপর পুতিন আবার তাকে নিজের দিকে টেনে নেবেন।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টির হুমকির মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়। ফলাফল বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা। গত আগস্টেও একই নাটক দেখা গিয়েছিল। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় পুতিন সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে। ফলাফল আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণা।
এ যেন একধরনের ‘দেজাভ্যু’। তবে এবার মনে হচ্ছে পুনরাবৃত্তির দিন শেষ। কারণ, ন্যূনতম প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠিত আলাস্কার বৈঠকটি ছিল ফলশূন্য। অন্যদিকে বুদাপেস্ট সম্মেলন বাতিল। বলা ভালো, এটি কার্যত ‘চালু’ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাম্প নিজেই তা বাতিল করেছেন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের যেখানে পৌঁছানোর কথা, সেখানে পৌঁছাতে পারব বলে আমার মনে হচ্ছিল না।’ তবে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। এর আগে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর হুমকি দিয়েও ট্রাম্প কখনো তা বাস্তবায়ন করেননি। বরং তিনি কূটনীতিতে ‘গাজর’ তথা প্রলুব্ধ করার কৌশল ব্যবহার করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।
তবে এবার তিনি সেই গাজর সরিয়ে রেখেছেন। রাশিয়ার দুই বড় তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই পদক্ষেপ পুতিনকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে না। তবে এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প ক্রেমলিনের অনমনীয় অবস্থানে ক্ষুব্ধ। ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানের জন্য রাশিয়া কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।
কিন্তু আবার রুশরা ‘লাঠির রাজনীতি’ও পছন্দ করে না। বৃহস্পতিবার পুতিন সাংবাদিকদের বললেন, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা একটি ‘অবন্ধুত্বসুলভ পদক্ষেপ’ এবং রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা। তিনি বলেন, ‘কোনো আত্মসম্মান বোধবিশিষ্ট দেশ বা জনগণ কখনো চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না।’
তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ভাষা ছিল আরও কড়া। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শত্রু, আর তাদের বাচাল শান্তির দূত (ট্রাম্প) এখন পুরোপুরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পথে নেমেছে। এই সিদ্ধান্তগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণারই সমান।’
তাহলে কী বদলেছে? প্রথম সম্মেলনের সময় যেমন হঠাৎ করে আলাস্কায় উড়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প, এবার তিনি কিছুটা সতর্ক ছিলেন। বুদাপেস্ট বৈঠকের আগে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নির্দেশ দেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করতে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় এই শীর্ষ বৈঠকে সত্যিই কোনো সুফল আসবে কি না।
শিগগির স্পষ্ট হয়, কোনো ফল আসবে না। তাই বুদাপেস্টে নতুন বৈঠকের পরিকল্পনা বাতিল হয়। রাশিয়া ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি বা বর্তমান ফ্রন্টলাইন বা যুদ্ধ রেখা ‘ফ্রিজ বা স্থগিত’ করার ভাবনায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। ক্রেমলিন পুরো দোনবাস অঞ্চল দখলে নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে তারা এর বড় অংশ দখল করেছে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অটল—ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের অংশে রাশিয়াকে ছাড় দেবেন না। মস্কো অবশ্য দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্মেলনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিল। আলাস্কার প্রথম বৈঠকটি ক্রেমলিনের জন্য ছিল এক বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। অ্যাঙ্কোরেজে পুতিনকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা রাশিয়ার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুনরাবির্ভাবের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এবং রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে পশ্চিমা প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বুদাপেস্টে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে টেবিলের বাইরে রেখে ইউরোপে এই বৈঠককে তারা ব্রাসেলসের মুখে চপেটাঘাত হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। তবে বেশির ভাগ রাশিয়ান বিশ্লেষক বিশ্বাস করছিলেন না যে বুদাপেস্ট সম্মেলন বাস্তবায়িত হলেও রাশিয়া কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে।
রাশিয়ার কিছু পত্রিকা সরাসরি বলেছে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। মস্কভস্কি কোমসোমোলেতস লিখেছে, ‘মস্কোর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার মতো একটি কারণও নেই।’ তবে এর মানে এই নয় যে ক্রেমলিন শান্তি চায় না। চায়, কিন্তু তাদের নিজস্ব শর্তে। আর সেই শর্তগুলো এখন কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের কাছে অগ্রহণযোগ্য।
রাশিয়ার দাবিগুলো কেবল ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা দাবি করছে যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ সমাধান করতে হবে। এসব শব্দগুচ্ছের আড়ালে রাশিয়া কার্যত ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। আরও গভীরভাবে ভাবলে বলা যায়, মস্কো এখনো ইউক্রেনকে নিজের প্রভাববলয়ে টেনে আনার লক্ষ্য ত্যাগ করেনি। তাহলে, ট্রাম্প কি রাশিয়ার ওপর আরও চাপ বাড়াতে প্রস্তুত? সম্ভবত। তবে আবারও সেই পুরোনো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখতে হতে পারে।
বুদাপেস্ট সম্মেলন ঘোষণা হওয়ার পর মস্কভস্কি কোমসোমোলেতস লিখেছিল, ‘ট্রাম্পের রশি টানাটানির খেলায় এখন আবার রাশিয়াই এগিয়ে। বৈঠকের আগের কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোর ফোনকল ও সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প কিছুটা রাশি নিজের দিকে টেনে নেবেন, তারপর পুতিন আবার তাকে নিজের দিকে টেনে নেবেন।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

এই ধরনের আলোচনা তেহরানের জন্য আকর্ষণীয়—দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং নিষেধাজ্ঞা কমানোর প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে লোভনীয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর আলোচনার টেবিলে ইরানকে কম ছাড় দিতে হবে। তবে ইসরায়েলি হামলার মুখে এটি রাজনৈতিকভাবে আরও কঠিন। ট্রাম্প যেকোনো ছাড়কে নিজের বিজয় বলে ঘোষণা করবেন এবং
১৪ জুন ২০২৫
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
৪ ঘণ্টা আগে
গত কয়েক বছরে ভারতের আলোচনা ও বিশ্লেষণে প্রাধান্য পেয়েছে দেশটির বৈশ্বিক ভূমিকা ও পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষ। ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব, মহাকাশ অভিযান, বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান এবং দশকের শেষে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা—এসব বিষয়ই অভ্যন্তরীণ..
৯ ঘণ্টা আগে
এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ।
এর পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। যেখানে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এলএনজি রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উৎস বলে বিবেচিত।
তবে রুশ বিশ্লেষকদের মতে, এ পদক্ষেপ পুতিনের যুদ্ধনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনবে না। রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলছেন, রুশ কোম্পানিগুলো অনেক আগেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাঁর ভাষায়, পুতিন যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের ক্ষতিও মেনে নিতে প্রস্তুত, আর ট্রাম্পের অবস্থানও সময়ের সঙ্গে বদলে যেতে পারে।
রুশ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্তানোভায়া বলেন, রাশিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবে, ঠিক আছে, তিন মাস পর ট্রাম্প নিজেই নরম হয়ে যাবে। আর পুতিনের কাছে এই যুদ্ধ অস্তিত্বের প্রশ্ন, তাই তিনি সহ্য করেই যাবেন।
গতকাল বুধবার তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, যা নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রভাব শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত। তবে এর কার্যকারিতা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন এবং জ্বালানি ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুক অয়েল এবং সারা বিশ্বে তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ওপর আরোপ করেছে।
রাশিয়ার মোট বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি থেকে। তবে ইউক্রেনের উন্নত ড্রোন ও দীর্ঘপাল্লার হামলায় তেল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিল্প খাত এরই মধ্যে চাপে রয়েছে। তবুও রুশ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সীমিতই থাকবে।
তাঁরা উল্লেখ করেন, রাশিয়া এরই মধ্যে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে যাওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছে। দেশটি শত শত পুরোনো জাহাজ ব্যবহার করে, যেগুলোর কোনো পশ্চিমা বিমা নেই এবং তৃতীয় দেশের ছদ্ম কোম্পানির মাধ্যমে লেনদেন চালায়। তা ছাড়া বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজারের প্রায় ৯ শতাংশ রাশিয়ার। ফলে রুশ তেল বিশ্ববাজারে রপ্তানি না হলে সরবরাহও কমবে এবং দাম বাড়বে। এতে নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়বে।
কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সের্গেই ভাকুলেনকো বলেন, লুকওয়েল সমস্যায় পড়বে বটে, কিন্তু সেটি লুকওয়েলের সমস্যা, রাশিয়ার নয়।
পুতিন প্রশাসন বহু আগেই জানত নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই রাশিয়া এখন বিকল্প রুট, পুরোনো জাহাজ বহর ও ফাটকা কোম্পানির জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও রাশিয়া তার প্রভাব আংশিকভাবে অকার্যকর করে দিতে পারবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ।
এর পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। যেখানে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এলএনজি রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উৎস বলে বিবেচিত।
তবে রুশ বিশ্লেষকদের মতে, এ পদক্ষেপ পুতিনের যুদ্ধনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনবে না। রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলছেন, রুশ কোম্পানিগুলো অনেক আগেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাঁর ভাষায়, পুতিন যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের ক্ষতিও মেনে নিতে প্রস্তুত, আর ট্রাম্পের অবস্থানও সময়ের সঙ্গে বদলে যেতে পারে।
রুশ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্তানোভায়া বলেন, রাশিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবে, ঠিক আছে, তিন মাস পর ট্রাম্প নিজেই নরম হয়ে যাবে। আর পুতিনের কাছে এই যুদ্ধ অস্তিত্বের প্রশ্ন, তাই তিনি সহ্য করেই যাবেন।
গতকাল বুধবার তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, যা নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রভাব শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত। তবে এর কার্যকারিতা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন এবং জ্বালানি ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুক অয়েল এবং সারা বিশ্বে তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ওপর আরোপ করেছে।
রাশিয়ার মোট বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি থেকে। তবে ইউক্রেনের উন্নত ড্রোন ও দীর্ঘপাল্লার হামলায় তেল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিল্প খাত এরই মধ্যে চাপে রয়েছে। তবুও রুশ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সীমিতই থাকবে।
তাঁরা উল্লেখ করেন, রাশিয়া এরই মধ্যে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে যাওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছে। দেশটি শত শত পুরোনো জাহাজ ব্যবহার করে, যেগুলোর কোনো পশ্চিমা বিমা নেই এবং তৃতীয় দেশের ছদ্ম কোম্পানির মাধ্যমে লেনদেন চালায়। তা ছাড়া বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজারের প্রায় ৯ শতাংশ রাশিয়ার। ফলে রুশ তেল বিশ্ববাজারে রপ্তানি না হলে সরবরাহও কমবে এবং দাম বাড়বে। এতে নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়বে।
কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সের্গেই ভাকুলেনকো বলেন, লুকওয়েল সমস্যায় পড়বে বটে, কিন্তু সেটি লুকওয়েলের সমস্যা, রাশিয়ার নয়।
পুতিন প্রশাসন বহু আগেই জানত নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই রাশিয়া এখন বিকল্প রুট, পুরোনো জাহাজ বহর ও ফাটকা কোম্পানির জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও রাশিয়া তার প্রভাব আংশিকভাবে অকার্যকর করে দিতে পারবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এই ধরনের আলোচনা তেহরানের জন্য আকর্ষণীয়—দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং নিষেধাজ্ঞা কমানোর প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে লোভনীয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর আলোচনার টেবিলে ইরানকে কম ছাড় দিতে হবে। তবে ইসরায়েলি হামলার মুখে এটি রাজনৈতিকভাবে আরও কঠিন। ট্রাম্প যেকোনো ছাড়কে নিজের বিজয় বলে ঘোষণা করবেন এবং
১৪ জুন ২০২৫
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
৪ ঘণ্টা আগে
গত কয়েক বছরে ভারতের আলোচনা ও বিশ্লেষণে প্রাধান্য পেয়েছে দেশটির বৈশ্বিক ভূমিকা ও পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষ। ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব, মহাকাশ অভিযান, বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান এবং দশকের শেষে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা—এসব বিষয়ই অভ্যন্তরীণ..
৯ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টির হুমকির মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়। ফলাফল বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা। গত আগস্টেও একই নাটক দেখা গিয়েছিল। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন
১০ ঘণ্টা আগে