
চীনে সি চিন পিংয়ের টানা এক দশকের শাসনে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী গড়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনের দিকে এবং প্রতিপক্ষের কপালে ভাঁজ ধরাতে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক অস্ত্রের বিশাল সংগ্রহও নিশ্চিত করেছে। চীনের এমন সমরসজ্জা প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য করেছে। ফলে সি চিন পিংয়ের পরবর্তী পাঁচ বছরের শাসনামলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা দ্রুত বাড়তে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের পরপরই গভীর সমুদ্র উপযোগী নৌবাহিনী তৈরি করছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন কিনছে অস্ট্রেলিয়া। কেবল এ দুটি দেশই নয়, চীনের প্রতিবেশী অনেক দেশই সমর ব্যয় বাড়িয়েছে। লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ জানিয়েছে, গত বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিগত এক দশকে চীন, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম তাদের সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ করেছে। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত কিংবা পাকিস্তানও। এমনকি জাপানের মতো দেশও দীর্ঘদিনের ‘আগে আক্রমণ নয়’ নীতি ভেঙে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের সমরসজ্জা অশান্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্ম দিতে যাচ্ছে এবং এটি মূলত চীনের কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা ম্যালকম ডেভিস বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সব মূল খেলোয়াড়ই মূলত চীনের সামরিক আধুনিকীকরণের প্রতিক্রিয়ায় তাদের সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তারা বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
একটা সময় ছিল, যখন চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কাছে যথেষ্ট অস্ত্র ছিল না, লোকবল ছিল না। তখন ইতিহাসবিদেরা তাদের ‘বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জাদুঘর’ বলে আখ্যা দিতেন। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কোরীয় যুদ্ধে প্রায় ২ লাখ চীনা সৈন্য প্রাণ হারায়। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধেও প্রাণ হারায় কয়েক লাখ সেনা। কিন্তু ইতিহাসের পাতা থেকে প্রাণহানির বিষয়টি মুছে ফেলা হয়েছে। সেই দিন আর নেই। পুরোনো সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের নির্ভরতা এবং দুর্নীতির কালো ছায়া পেছনে ফেলে দারুণভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে।
২০১৩ সালে সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই পিএলএতে সংস্কার চলমান ছিল। শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৯০-এর দশকে চীনা প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিনের সময়। সে সময় উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং তৃতীয় তাইওয়ান প্রণালি সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা জিয়াং জেমিনকে হতবাক করে দিয়েছিল। তবে আসল প্রক্রিয়া শুরু হয় সি চিন পিংয়ের আমলেই। এ বিষয়ে স্ট্র্যাটেজিক কনসালট্যান্ট আলেক্সান্ডার নিল এএফপিকে বলেছেন, ‘সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। তিনি আসার পরই সেই প্রচেষ্টা সক্ষমতায় বদলে যাওয়া শুরু হয়।’
সে সময়ে পিএলএর একটি মাত্র বিমানবাহী রণতরী ছিল। তাও সেটি ছিল ইউক্রেনের কাছ থেকে আনা। এরপর টানা ২৭ বছর ধরে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করেছে চীন। এর ফলাফল হলো—চীনের কাছে বর্তমানে দুটি বিমানবাহী রণতরী, কয়েক শ দূর ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কয়েক হাজার যুদ্ধবিমান রয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর আকার যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই গত আগস্টে চীন যখন তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালায়, তখন শীর্ষ এক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, আসল বিষয়টির ধাক্কা সামলানো ওয়াশিংটনের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের কমান্ডার কার্ল থমাসও। তিনি মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের নৌবাহিনী খুবই বড়। তারা যদি তাইওয়ানের চারপাশে নিজেদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রাখতে চায় এবং অন্য দেশকে উত্তেজিত করতে চায়, খুব সহজেই তা করতে পারবে।’ নৌবাহিনীর আকার বাড়িয়েই ক্ষান্ত থাকেনি চীন, পাশাপাশি বাড়িয়েছে পারমাণবিকসহ বিভিন্ন কৌশলগত অস্ত্রের মজুতও। পেন্টাগনের মতে, চীন এসব অস্ত্র স্থল, নৌ এবং আকাশ যেকোনো জায়গা থেকেই ব্যবহার করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টের মতে, চীনের কাছে অন্তত সাড়ে ৩০০ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যা স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান, ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে ৭০০ ছাড়িয়ে যাবে।
চীনের উত্থান ও শক্তি অর্জন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে দেশটি চীনকেই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করছে। বিষয়টি স্পষ্ট হয় গত বছর পেন্টাগন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র প্রতিযোগী, যা তার অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে একত্র করে স্থিতিশীল ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি টেকসই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সক্ষম।’ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বেইজিং তার কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা এবং জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে খাপ খায় এমনভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চায়।’
যা হোক, এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আশপাশে অনেক দেশই বড় ধরনের সামরিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, যার স্পষ্ট অর্থ হলো চীনের প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনা। এ লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি গভীর সমুদ্রে কাজ করতে সক্ষম নৌবাহিনী বিকাশের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এই পরিকল্পনার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সশস্ত্র হয়ে ওঠার সম্পর্ক নেই খুব একটা, যতটা রয়েছে চীনের সশস্ত্র হয়ে ওঠার সঙ্গে।
কেবল দক্ষিণ কোরিয়া নয়, অস্ট্রেলিয়াও তথাকথিত অকাস (AUKUS) চুক্তির মাধ্যমে সামরিক খাতে ব্রিটিশ ও মার্কিন সহায়তা নিচ্ছে। সহায়তার তালিকায় রয়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ক্রয়, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পানির নিচে থাকতে পারে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। এ ছড়া, বিভিন্ন হাইপারসনিক অস্ত্র, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি অত্যাধুনিক বি-২১ স্টেলথ বোমারু বিমান, যা কার্যত নিজেকে লুকিয়ে রেখে বিশ্বের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম তা কিনতেও ক্যানবেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালকম ডেভিসের মতে, এই প্রকল্পগুলো এটিই নির্দেশ করে যে চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সি জিনপিং না থাকলে অকাস থাকত না। সেই অর্থে বলা যায় তিনি আমাদের বিশাল উপকার করেছেন।’
এএফপি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

চীনে সি চিন পিংয়ের টানা এক দশকের শাসনে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী গড়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনের দিকে এবং প্রতিপক্ষের কপালে ভাঁজ ধরাতে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক অস্ত্রের বিশাল সংগ্রহও নিশ্চিত করেছে। চীনের এমন সমরসজ্জা প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য করেছে। ফলে সি চিন পিংয়ের পরবর্তী পাঁচ বছরের শাসনামলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা দ্রুত বাড়তে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের পরপরই গভীর সমুদ্র উপযোগী নৌবাহিনী তৈরি করছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন কিনছে অস্ট্রেলিয়া। কেবল এ দুটি দেশই নয়, চীনের প্রতিবেশী অনেক দেশই সমর ব্যয় বাড়িয়েছে। লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ জানিয়েছে, গত বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিগত এক দশকে চীন, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম তাদের সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ করেছে। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত কিংবা পাকিস্তানও। এমনকি জাপানের মতো দেশও দীর্ঘদিনের ‘আগে আক্রমণ নয়’ নীতি ভেঙে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের সমরসজ্জা অশান্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্ম দিতে যাচ্ছে এবং এটি মূলত চীনের কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা ম্যালকম ডেভিস বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সব মূল খেলোয়াড়ই মূলত চীনের সামরিক আধুনিকীকরণের প্রতিক্রিয়ায় তাদের সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তারা বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
একটা সময় ছিল, যখন চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কাছে যথেষ্ট অস্ত্র ছিল না, লোকবল ছিল না। তখন ইতিহাসবিদেরা তাদের ‘বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জাদুঘর’ বলে আখ্যা দিতেন। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কোরীয় যুদ্ধে প্রায় ২ লাখ চীনা সৈন্য প্রাণ হারায়। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধেও প্রাণ হারায় কয়েক লাখ সেনা। কিন্তু ইতিহাসের পাতা থেকে প্রাণহানির বিষয়টি মুছে ফেলা হয়েছে। সেই দিন আর নেই। পুরোনো সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের নির্ভরতা এবং দুর্নীতির কালো ছায়া পেছনে ফেলে দারুণভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে।
২০১৩ সালে সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই পিএলএতে সংস্কার চলমান ছিল। শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৯০-এর দশকে চীনা প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিনের সময়। সে সময় উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং তৃতীয় তাইওয়ান প্রণালি সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা জিয়াং জেমিনকে হতবাক করে দিয়েছিল। তবে আসল প্রক্রিয়া শুরু হয় সি চিন পিংয়ের আমলেই। এ বিষয়ে স্ট্র্যাটেজিক কনসালট্যান্ট আলেক্সান্ডার নিল এএফপিকে বলেছেন, ‘সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। তিনি আসার পরই সেই প্রচেষ্টা সক্ষমতায় বদলে যাওয়া শুরু হয়।’
সে সময়ে পিএলএর একটি মাত্র বিমানবাহী রণতরী ছিল। তাও সেটি ছিল ইউক্রেনের কাছ থেকে আনা। এরপর টানা ২৭ বছর ধরে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করেছে চীন। এর ফলাফল হলো—চীনের কাছে বর্তমানে দুটি বিমানবাহী রণতরী, কয়েক শ দূর ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কয়েক হাজার যুদ্ধবিমান রয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর আকার যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই গত আগস্টে চীন যখন তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালায়, তখন শীর্ষ এক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, আসল বিষয়টির ধাক্কা সামলানো ওয়াশিংটনের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের কমান্ডার কার্ল থমাসও। তিনি মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের নৌবাহিনী খুবই বড়। তারা যদি তাইওয়ানের চারপাশে নিজেদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রাখতে চায় এবং অন্য দেশকে উত্তেজিত করতে চায়, খুব সহজেই তা করতে পারবে।’ নৌবাহিনীর আকার বাড়িয়েই ক্ষান্ত থাকেনি চীন, পাশাপাশি বাড়িয়েছে পারমাণবিকসহ বিভিন্ন কৌশলগত অস্ত্রের মজুতও। পেন্টাগনের মতে, চীন এসব অস্ত্র স্থল, নৌ এবং আকাশ যেকোনো জায়গা থেকেই ব্যবহার করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টের মতে, চীনের কাছে অন্তত সাড়ে ৩০০ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যা স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান, ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে ৭০০ ছাড়িয়ে যাবে।
চীনের উত্থান ও শক্তি অর্জন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে দেশটি চীনকেই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করছে। বিষয়টি স্পষ্ট হয় গত বছর পেন্টাগন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র প্রতিযোগী, যা তার অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে একত্র করে স্থিতিশীল ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি টেকসই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সক্ষম।’ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বেইজিং তার কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা এবং জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে খাপ খায় এমনভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চায়।’
যা হোক, এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আশপাশে অনেক দেশই বড় ধরনের সামরিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, যার স্পষ্ট অর্থ হলো চীনের প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনা। এ লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি গভীর সমুদ্রে কাজ করতে সক্ষম নৌবাহিনী বিকাশের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এই পরিকল্পনার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সশস্ত্র হয়ে ওঠার সম্পর্ক নেই খুব একটা, যতটা রয়েছে চীনের সশস্ত্র হয়ে ওঠার সঙ্গে।
কেবল দক্ষিণ কোরিয়া নয়, অস্ট্রেলিয়াও তথাকথিত অকাস (AUKUS) চুক্তির মাধ্যমে সামরিক খাতে ব্রিটিশ ও মার্কিন সহায়তা নিচ্ছে। সহায়তার তালিকায় রয়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ক্রয়, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পানির নিচে থাকতে পারে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। এ ছড়া, বিভিন্ন হাইপারসনিক অস্ত্র, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি অত্যাধুনিক বি-২১ স্টেলথ বোমারু বিমান, যা কার্যত নিজেকে লুকিয়ে রেখে বিশ্বের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম তা কিনতেও ক্যানবেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালকম ডেভিসের মতে, এই প্রকল্পগুলো এটিই নির্দেশ করে যে চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সি জিনপিং না থাকলে অকাস থাকত না। সেই অর্থে বলা যায় তিনি আমাদের বিশাল উপকার করেছেন।’
এএফপি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১১ ঘণ্টা আগে
বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১ দিন আগে
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কি কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির। এর মধ্যে ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আবার শ্রমজীবী আমেরিকানদের দিকে ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে মূলধারার রাজনীতিতে একসময়ে বাতিল হয়ে যাওয়া মতাদর্শগুলো একেবারে বাদ না দেওয়া। কুমো একে বলেছেন ‘গৃহযুদ্ধ।’ আর এই গৃহযুদ্ধে কুমোর মতো ‘মধ্যপন্থীরা’ মুখোমুখি হয়েছেন মামদানির মতো প্রগতিশীল নতুনদের।
ভোটের দিন বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটস এলাকার ৬৮ বছর বয়সী ভোটার মাইকেল ব্ল্যাকম্যান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত রাজনীতির বিরুদ্ধে যাওয়া’ ছিল তাঁর কাছে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইস্যু। তিনি বলেন, ‘মামদানি হয়তো তাঁর সব প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর অন্তত একটা আদর্শ আছে।’
ব্ল্যাকম্যানের কাছে কুমো মানে ‘একই পুরোনো রাজনীতি’র পুনরাবৃত্তি, যা বহুদিন ধরে উদারপন্থী রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ধনবান দাতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তি তাঁকে সমর্থন দেওয়া সেটিই প্রমাণ করে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস নামের সংগঠন জানায়, ‘জোহরানের এই বিজয় করপোরেটপন্থী, প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটদের জন্য সতর্কবার্তা—আপনি যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ না করেন, আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে।’
মামদানির প্রচারণা শিবিরও তাঁর এই বিজয়কে স্থানীয় সীমানা ছাড়িয়ে এক বড় বার্তা হিসেবে তুলে ধরেছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মাইকেল জিয়ানারিস নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই বার্তা শুধু নিউইয়র্ক সিটির জন্য নয়, শুধু নিউইয়র্ক রাজ্যের জন্য নয়, এমনকি শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্যও নয়—এটা গোটা বিশ্বের জন্য।’ তিনি যোগ করেন, ‘মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা সবকিছু করতে পারে।’
মামদানির প্রচারণা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া যায়, তা সময়ই বলবে। জাতীয় পর্যায়ে অনেক শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা এখনো তাঁকে পুরোপুরি গ্রহণ করেননি। তাঁদের আশঙ্কা, ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য হিসেবে মামদানির অবস্থান এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে তাঁর স্পষ্ট সমর্থন হয়তো ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের দূরে ঠেলে দিতে পারে।
এই তালিকার শীর্ষে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর চাক শুমার। তিনি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরপেক্ষ থেকেছেন। তবে ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ ট্রিপ ইয়াং বলেন, সমর্থন যেখান থেকেই আসুক না কেন, দলের নেতারা মামদানির এই প্রচারণাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। কারণ, গত বছরের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনে পরাজয়ের পর ডেমোক্র্যাটরা এখন ভবিষ্যতের পথ খুঁজছে।
ইয়াং বলেন, কুমোর অভিযোগ করা ‘গৃহযুদ্ধ’ আসলে অতিরঞ্জন। কারণ, পুরোনো ধাঁচের ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ নিয়ে কেউ সংগঠিতভাবে কুমোর বিপক্ষে নামেননি। বরং তাঁর মতে মামদানির এই জয় দেখিয়ে দিয়েছে পার্টি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা দলের নেতৃত্ব পছন্দ করুক বা না করুক। ডেমোক্রেটিক পার্টি যাচ্ছে এমন এক রূপান্তরের দিকে, যেখানে লেবেল বা মতাদর্শের চেয়ে চিন্তার বৈচিত্র্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ইয়াং বলেন, ‘আপনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট, মধ্যপন্থী বা রক্ষণশীল যা-ই হোন না কেন, সেটা আসলে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভোটাররা খোঁজে এমন প্রার্থীকে, যিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং তাঁদের সবচেয়ে জরুরি সমস্যার কথা বলতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে এখন বড় বিষয় হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। কিন্তু মূল ব্যাপারটা হলো একটা সমস্যাকে চিহ্নিত করা, তারপর সেটি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।’
ইয়াং আরও বলেন, শহরের বিভিন্ন কমিউনিটিতে মামদানির নিয়মিত উপস্থিতি, এমনকি বৈরী গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের ইচ্ছাও ডেমোক্র্যাটদের অনুসরণ করা উচিত। তাঁর কথায়, ‘অনেক ডেমোক্র্যাট কেবল নিরাপদ রাজনৈতিক পরিসরেই থাকেন।’
ব্রুকলিনের বার্ড কলেজের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড্যানিয়েল ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, মামদানির সাফল্য প্রমাণ করেছে, ‘সহনীয় জীবনযাপন এখন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় ইস্যু।’ তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটরা ঐতিহাসিকভাবে সাফল্য পান যখন তাঁরা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নে যেমন জীবনের ব্যয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মতো ‘রুটি-রুজির ইস্যুতে’ মন দেন।
তবে এসবের দিকে মনোযোগ দেওয়া মানে এই নয় যে প্রগতিশীল মূল্যবোধ বা আদর্শ বিসর্জন দিতে হবে। ওয়ার্টেল-লন্ডনের ভাষায়, ‘মামদানি দেখিয়েছেন কীভাবে এসব অগ্রাধিকারকে সামাজিক ন্যায়বিচারের নৈতিক জরুরির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়, যা অনেক প্রগতিশীল মানুষের প্রেরণার উৎস।’
তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে একটি বড় ঐক্যবদ্ধ জোট গড়তে চান, তাহলে তাঁদের মামদানির পথ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’ অনেকের কাছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং গাজায় গণহত্যার নিন্দা করার মধ্য দিয়ে এই প্রগতিশীল মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মামদানি।
তবে এই অবস্থানেই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। কুমো মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ ও ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও মামদানি কিছু বক্তব্যে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন; যেমন তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তারপরও তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের সমালোচনায় দৃঢ়।
নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির সমর্থক শবনম সালেহেজাদেহি বলেন, ‘তাঁর রাজনীতিতে যে নীতিগত দৃঢ়তা আছে, তা আমি পছন্দ করি।’ গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থী মনোভাব বাড়ছে। যদিও দলের শীর্ষ নেতারা এখনো ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার পক্ষে। সালেহেজাদেহি বলেন, ‘মামদানি ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি গাজায় যা ঘটছে, সেটিকে স্পষ্টভাবে গণহত্যা হিসেবেই দেখেন।’
তবে মামদানির এই জয়ের গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নীতি বাস্তবায়নে সামনে আসবে বহু বাধা। বিশেষ করে যদি তিনি তাঁর অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন করতে চান; যেমন সর্বজনীন শিশুসেবা চালু করা, যার জন্য করপোরেশন ও ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে।
ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, ‘তবু ইতিহাস বলে, এসব লড়াই জেতা অসম্ভব নয়। এমনকি রিপাবলিকান মেয়র ব্লুমবার্গও একসময় কর বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। কারণ, তিনি কার্যকর ও সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব দেখিয়েছিলেন। যদি মামদানি তেমন নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে তিনি মানুষকে অবাক করে দিতে পারবেন তাঁর অর্জনের পরিমাণ দেখিয়ে।’
৩৪ বছর বয়সী সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সামাদ আহমেদের কাছে মামদানির প্রার্থিতা ছিল এক রকম ‘রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা।’ জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেন। তবে তিনি জানেন, জনমত খুব সহজেই পাল্টে যেতে পারে। যদি মামদানি প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে তা তাঁর মতো প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সামাদ বলেন, ‘আমি কখনো মনে করিনি যে কোনো প্রার্থী আমার মতো নিউইয়র্কারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। কিন্তু মামদানি আমাকে সে আশা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এটা তাঁর দায়িত্ব—আমাদের এই আশাকে সঠিক বলে প্রমাণ করা। না হলে নিউইয়র্কাররা তাঁকে বিদায় জানাতে দেরি করবে না। আমেরিকানরা এমনই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কি কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির। এর মধ্যে ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আবার শ্রমজীবী আমেরিকানদের দিকে ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে মূলধারার রাজনীতিতে একসময়ে বাতিল হয়ে যাওয়া মতাদর্শগুলো একেবারে বাদ না দেওয়া। কুমো একে বলেছেন ‘গৃহযুদ্ধ।’ আর এই গৃহযুদ্ধে কুমোর মতো ‘মধ্যপন্থীরা’ মুখোমুখি হয়েছেন মামদানির মতো প্রগতিশীল নতুনদের।
ভোটের দিন বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটস এলাকার ৬৮ বছর বয়সী ভোটার মাইকেল ব্ল্যাকম্যান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত রাজনীতির বিরুদ্ধে যাওয়া’ ছিল তাঁর কাছে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইস্যু। তিনি বলেন, ‘মামদানি হয়তো তাঁর সব প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর অন্তত একটা আদর্শ আছে।’
ব্ল্যাকম্যানের কাছে কুমো মানে ‘একই পুরোনো রাজনীতি’র পুনরাবৃত্তি, যা বহুদিন ধরে উদারপন্থী রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ধনবান দাতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তি তাঁকে সমর্থন দেওয়া সেটিই প্রমাণ করে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস নামের সংগঠন জানায়, ‘জোহরানের এই বিজয় করপোরেটপন্থী, প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটদের জন্য সতর্কবার্তা—আপনি যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ না করেন, আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে।’
মামদানির প্রচারণা শিবিরও তাঁর এই বিজয়কে স্থানীয় সীমানা ছাড়িয়ে এক বড় বার্তা হিসেবে তুলে ধরেছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মাইকেল জিয়ানারিস নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই বার্তা শুধু নিউইয়র্ক সিটির জন্য নয়, শুধু নিউইয়র্ক রাজ্যের জন্য নয়, এমনকি শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্যও নয়—এটা গোটা বিশ্বের জন্য।’ তিনি যোগ করেন, ‘মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা সবকিছু করতে পারে।’
মামদানির প্রচারণা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া যায়, তা সময়ই বলবে। জাতীয় পর্যায়ে অনেক শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা এখনো তাঁকে পুরোপুরি গ্রহণ করেননি। তাঁদের আশঙ্কা, ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য হিসেবে মামদানির অবস্থান এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে তাঁর স্পষ্ট সমর্থন হয়তো ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের দূরে ঠেলে দিতে পারে।
এই তালিকার শীর্ষে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর চাক শুমার। তিনি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরপেক্ষ থেকেছেন। তবে ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ ট্রিপ ইয়াং বলেন, সমর্থন যেখান থেকেই আসুক না কেন, দলের নেতারা মামদানির এই প্রচারণাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। কারণ, গত বছরের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনে পরাজয়ের পর ডেমোক্র্যাটরা এখন ভবিষ্যতের পথ খুঁজছে।
ইয়াং বলেন, কুমোর অভিযোগ করা ‘গৃহযুদ্ধ’ আসলে অতিরঞ্জন। কারণ, পুরোনো ধাঁচের ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ নিয়ে কেউ সংগঠিতভাবে কুমোর বিপক্ষে নামেননি। বরং তাঁর মতে মামদানির এই জয় দেখিয়ে দিয়েছে পার্টি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা দলের নেতৃত্ব পছন্দ করুক বা না করুক। ডেমোক্রেটিক পার্টি যাচ্ছে এমন এক রূপান্তরের দিকে, যেখানে লেবেল বা মতাদর্শের চেয়ে চিন্তার বৈচিত্র্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ইয়াং বলেন, ‘আপনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট, মধ্যপন্থী বা রক্ষণশীল যা-ই হোন না কেন, সেটা আসলে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভোটাররা খোঁজে এমন প্রার্থীকে, যিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং তাঁদের সবচেয়ে জরুরি সমস্যার কথা বলতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে এখন বড় বিষয় হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। কিন্তু মূল ব্যাপারটা হলো একটা সমস্যাকে চিহ্নিত করা, তারপর সেটি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।’
ইয়াং আরও বলেন, শহরের বিভিন্ন কমিউনিটিতে মামদানির নিয়মিত উপস্থিতি, এমনকি বৈরী গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের ইচ্ছাও ডেমোক্র্যাটদের অনুসরণ করা উচিত। তাঁর কথায়, ‘অনেক ডেমোক্র্যাট কেবল নিরাপদ রাজনৈতিক পরিসরেই থাকেন।’
ব্রুকলিনের বার্ড কলেজের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড্যানিয়েল ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, মামদানির সাফল্য প্রমাণ করেছে, ‘সহনীয় জীবনযাপন এখন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় ইস্যু।’ তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটরা ঐতিহাসিকভাবে সাফল্য পান যখন তাঁরা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নে যেমন জীবনের ব্যয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মতো ‘রুটি-রুজির ইস্যুতে’ মন দেন।
তবে এসবের দিকে মনোযোগ দেওয়া মানে এই নয় যে প্রগতিশীল মূল্যবোধ বা আদর্শ বিসর্জন দিতে হবে। ওয়ার্টেল-লন্ডনের ভাষায়, ‘মামদানি দেখিয়েছেন কীভাবে এসব অগ্রাধিকারকে সামাজিক ন্যায়বিচারের নৈতিক জরুরির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়, যা অনেক প্রগতিশীল মানুষের প্রেরণার উৎস।’
তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে একটি বড় ঐক্যবদ্ধ জোট গড়তে চান, তাহলে তাঁদের মামদানির পথ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’ অনেকের কাছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং গাজায় গণহত্যার নিন্দা করার মধ্য দিয়ে এই প্রগতিশীল মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মামদানি।
তবে এই অবস্থানেই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। কুমো মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ ও ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও মামদানি কিছু বক্তব্যে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন; যেমন তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তারপরও তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের সমালোচনায় দৃঢ়।
নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির সমর্থক শবনম সালেহেজাদেহি বলেন, ‘তাঁর রাজনীতিতে যে নীতিগত দৃঢ়তা আছে, তা আমি পছন্দ করি।’ গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থী মনোভাব বাড়ছে। যদিও দলের শীর্ষ নেতারা এখনো ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার পক্ষে। সালেহেজাদেহি বলেন, ‘মামদানি ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি গাজায় যা ঘটছে, সেটিকে স্পষ্টভাবে গণহত্যা হিসেবেই দেখেন।’
তবে মামদানির এই জয়ের গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নীতি বাস্তবায়নে সামনে আসবে বহু বাধা। বিশেষ করে যদি তিনি তাঁর অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন করতে চান; যেমন সর্বজনীন শিশুসেবা চালু করা, যার জন্য করপোরেশন ও ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে।
ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, ‘তবু ইতিহাস বলে, এসব লড়াই জেতা অসম্ভব নয়। এমনকি রিপাবলিকান মেয়র ব্লুমবার্গও একসময় কর বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। কারণ, তিনি কার্যকর ও সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব দেখিয়েছিলেন। যদি মামদানি তেমন নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে তিনি মানুষকে অবাক করে দিতে পারবেন তাঁর অর্জনের পরিমাণ দেখিয়ে।’
৩৪ বছর বয়সী সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সামাদ আহমেদের কাছে মামদানির প্রার্থিতা ছিল এক রকম ‘রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা।’ জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেন। তবে তিনি জানেন, জনমত খুব সহজেই পাল্টে যেতে পারে। যদি মামদানি প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে তা তাঁর মতো প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সামাদ বলেন, ‘আমি কখনো মনে করিনি যে কোনো প্রার্থী আমার মতো নিউইয়র্কারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। কিন্তু মামদানি আমাকে সে আশা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এটা তাঁর দায়িত্ব—আমাদের এই আশাকে সঠিক বলে প্রমাণ করা। না হলে নিউইয়র্কাররা তাঁকে বিদায় জানাতে দেরি করবে না। আমেরিকানরা এমনই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমত
০৬ অক্টোবর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১১ ঘণ্টা আগে
বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১ দিন আগে
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মধ্যপন্থী থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক পর্যন্ত, আদর্শগত দিক থেকে আলাদা ঘরানার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরাও এই জয়ে বিজয়ী হয়েছেন। স্পষ্টত ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য এটি এক নতুন পথের ইঙ্গিত।
ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট ও সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার। রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্লে-সিয়ার্সকে পরাজিত করে তিনি রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে রেকর্ড গড়লেন।
এই জয়ের পেছনে রয়েছে উত্তর ভার্জিনিয়ার শহরতলি ও আধা শহরতলির লুডন কাউন্টির মতো অঞ্চলগুলোর ‘সাব-আরবান সুইং’। স্প্যানবার্গারের বিজয়ের আধিপত্য বুঝতে এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট: লুডন কাউন্টিতে তিনি ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই অনুপাত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুসারে যেসব পরিবারে কোনো ফেডারেল কর্মী বা ফেডারেল ঠিকাদার আছেন, স্প্যানবার্গার তাঁদের ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল কর্মী বাহিনীকে দুর্বল করার নীতির প্রতি এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ভোটারের অসন্তোষের ইঙ্গিত।
স্প্যানবার্গারের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জে জনস, যিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন, তিনিও জয়লাভ করতে সক্ষম হন।
নিউ জার্সিতে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি মিকি শেরিল জয়লাভ করেন, এটিও রাজ্যের ট্রাম্পবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন। এই রাজ্যে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের চেয়ে ৮ লাখের বেশি হওয়া সত্ত্বেও রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক চিয়াত্তারেল্লি তাঁর আঞ্চলিক অহম ‘জার্সি গাই’ ক্যাম্পেইন এবং ট্রাম্পের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুযায়ী, শেরিল লাতিনো ভোটারদের ৬৪ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৯১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।
যেখানে চিয়াত্তারেল্লি সহজে জিতেছেন, সেখানকার ভোটদাতাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ মনে করেন, শুল্ক-কর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তবে ৩২ শতাংশ ভোটার যখন অর্থনীতিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাঁদের ৬১ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ ব্যবধানে শেরিলকে সমর্থন দিয়েছেন। এটিই জয়ের মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক জোহরান মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে দ্বিতীয়বারের মতো (প্রাইমারির পর) পরাজিত করেন। যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোকে ভোট দেওয়ার জন্য রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কুমোর জন্য এটি একটি চরম বিব্রতকর ঘটনা। ট্রাম্পের পক্ষ থেকেও এটি একটি ব্যর্থতা। তিনি কুমোকে সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘যদি একজন খারাপ ডেমোক্র্যাট এবং একজন কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’
মামদানি তাঁর প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর ওপর ক্রমাগত জোর দিয়েছেন। তাঁর জয়ের ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন নির্মাণের পথে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর জন্য অনুমোদিত ব্যালট প্রস্তাবগুলো কার্যকর হলে নিউইয়র্ক সিটি দেশের অন্যান্য শহরের জন্য একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররাও একটি সীমানা পুনর্নির্ধারণ ব্যালট প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, যা আগামী বছর হাউস দখলে ডেমোক্র্যাটদের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটরা পাঁচটি অতিরিক্ত অনুকূল নির্বাচনী এলাকা পেতে পারেন।
গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই প্রচেষ্টার প্রধান মুখ ছিলেন। তিনি এই জন্য ১০৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেন এবং প্রচারণায় নিজে উপস্থিত থাকেন। এটি নিউসমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মুহূর্ত। ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি সুযোগ।
এসব বড় জয়ের বাইরেও ডেমোক্র্যাটরা ছোটখাটো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন:
পেনসিলভানিয়া: ডেমোক্র্যাট রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের ১০ বছরের নতুন মেয়াদ নিশ্চিত করেছেন। ফলে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যের আদালতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ডেমোক্র্যাটদের হাতেই রইল।
মেইন: ভোটাররা এমন একটি ব্যালট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে ভোট দেওয়ার সময় ছবিসহ পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করার মতো কড়া নিয়ম ছিল।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এই নির্বাচন ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক (মধ্যপন্থী বনাম প্রগতিশীল) মেটাতে সামান্যই সাহায্য করবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর সম্মিলিত বার্তাটি তাদের জন্য আগামী নির্বাচনী লড়াইয়ে জেতার একটি সূত্র দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মধ্যপন্থী থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক পর্যন্ত, আদর্শগত দিক থেকে আলাদা ঘরানার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরাও এই জয়ে বিজয়ী হয়েছেন। স্পষ্টত ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য এটি এক নতুন পথের ইঙ্গিত।
ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট ও সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার। রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্লে-সিয়ার্সকে পরাজিত করে তিনি রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে রেকর্ড গড়লেন।
এই জয়ের পেছনে রয়েছে উত্তর ভার্জিনিয়ার শহরতলি ও আধা শহরতলির লুডন কাউন্টির মতো অঞ্চলগুলোর ‘সাব-আরবান সুইং’। স্প্যানবার্গারের বিজয়ের আধিপত্য বুঝতে এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট: লুডন কাউন্টিতে তিনি ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই অনুপাত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুসারে যেসব পরিবারে কোনো ফেডারেল কর্মী বা ফেডারেল ঠিকাদার আছেন, স্প্যানবার্গার তাঁদের ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল কর্মী বাহিনীকে দুর্বল করার নীতির প্রতি এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ভোটারের অসন্তোষের ইঙ্গিত।
স্প্যানবার্গারের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জে জনস, যিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন, তিনিও জয়লাভ করতে সক্ষম হন।
নিউ জার্সিতে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি মিকি শেরিল জয়লাভ করেন, এটিও রাজ্যের ট্রাম্পবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন। এই রাজ্যে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের চেয়ে ৮ লাখের বেশি হওয়া সত্ত্বেও রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক চিয়াত্তারেল্লি তাঁর আঞ্চলিক অহম ‘জার্সি গাই’ ক্যাম্পেইন এবং ট্রাম্পের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুযায়ী, শেরিল লাতিনো ভোটারদের ৬৪ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৯১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।
যেখানে চিয়াত্তারেল্লি সহজে জিতেছেন, সেখানকার ভোটদাতাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ মনে করেন, শুল্ক-কর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তবে ৩২ শতাংশ ভোটার যখন অর্থনীতিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাঁদের ৬১ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ ব্যবধানে শেরিলকে সমর্থন দিয়েছেন। এটিই জয়ের মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক জোহরান মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে দ্বিতীয়বারের মতো (প্রাইমারির পর) পরাজিত করেন। যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোকে ভোট দেওয়ার জন্য রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কুমোর জন্য এটি একটি চরম বিব্রতকর ঘটনা। ট্রাম্পের পক্ষ থেকেও এটি একটি ব্যর্থতা। তিনি কুমোকে সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘যদি একজন খারাপ ডেমোক্র্যাট এবং একজন কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’
মামদানি তাঁর প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর ওপর ক্রমাগত জোর দিয়েছেন। তাঁর জয়ের ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন নির্মাণের পথে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর জন্য অনুমোদিত ব্যালট প্রস্তাবগুলো কার্যকর হলে নিউইয়র্ক সিটি দেশের অন্যান্য শহরের জন্য একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররাও একটি সীমানা পুনর্নির্ধারণ ব্যালট প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, যা আগামী বছর হাউস দখলে ডেমোক্র্যাটদের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটরা পাঁচটি অতিরিক্ত অনুকূল নির্বাচনী এলাকা পেতে পারেন।
গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই প্রচেষ্টার প্রধান মুখ ছিলেন। তিনি এই জন্য ১০৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেন এবং প্রচারণায় নিজে উপস্থিত থাকেন। এটি নিউসমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মুহূর্ত। ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি সুযোগ।
এসব বড় জয়ের বাইরেও ডেমোক্র্যাটরা ছোটখাটো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন:
পেনসিলভানিয়া: ডেমোক্র্যাট রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের ১০ বছরের নতুন মেয়াদ নিশ্চিত করেছেন। ফলে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যের আদালতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ডেমোক্র্যাটদের হাতেই রইল।
মেইন: ভোটাররা এমন একটি ব্যালট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে ভোট দেওয়ার সময় ছবিসহ পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করার মতো কড়া নিয়ম ছিল।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এই নির্বাচন ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক (মধ্যপন্থী বনাম প্রগতিশীল) মেটাতে সামান্যই সাহায্য করবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর সম্মিলিত বার্তাটি তাদের জন্য আগামী নির্বাচনী লড়াইয়ে জেতার একটি সূত্র দিতে পারে।

চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমত
০৬ অক্টোবর ২০২২
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১ দিন আগে
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমত
০৬ অক্টোবর ২০২২
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১১ ঘণ্টা আগে
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এই পরিবারের সদস্য। এই পরিবারের প্রভাব ভারতের রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তাদের এই উত্তরাধিকার শুধু ইতিহাসে নয়, রাজনীতির মানসেও এক ধারণা গভীরভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব জন্মগত অধিকারও হতে পারে। এই চিন্তাই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের রাজনীতির প্রতিটি দলে, প্রতিটি প্রদেশে, আর প্রতিটি স্তরে।
কেবল নেহরু–গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তোলা হলেও, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা বংশানুক্রমিক রাজনীতি আসলে ভারতের প্রায় সব দলেই দেখা যায়। জনতা দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিজয়নন্দ (বিজু) পট্টনায়কের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নবীন পট্টনায়ক লোকসভায় বাবার খালি আসনে নির্বাচিত হন। পরে নবীন বাবার নাম অনুসারে ‘বিজু জনতা দল’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজুর পথ অনুসরণ করে নবীন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং দুই দশকেরও বেশি সময় রাজ্য পরিচালনা করেন।
মহারাষ্ট্রের দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে মৃত্যুর আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে। উদ্ধবের ছেলে আদিত্য ঠাকরেও এখন রাজনীতির মঞ্চে সক্রিয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অপেক্ষায়। একই ধারা দেখা যায় সমাজবাদী পার্টিতেও। দলের প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদবও সেই পদে আসেন। এখন তিনি দলের সভাপতি ও এমপি। বিহারের লোক জনশক্তি পার্টিতেও একই চিত্র। প্রয়াত নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও এই বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। জম্মু–কাশ্মীরে তিন প্রজন্ম ধরে আবদুল্লাহ পরিবার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর বিরোধী শিবিরে নেতৃত্বে আছে মুফতি পরিবারের দুই প্রজন্ম। পাঞ্জাবে দীর্ঘদিন শিরোমণি আকালি দল পরিচালনা করেছেন প্রকাশ সিং বাদল। এখন তাঁর ছেলে সুখবীর বাদল দলের প্রধান। তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই এখন উত্তরাধিকারের লড়াইয়ে নেমেছেন। তামিলনাড়ুতে প্রয়াত এম করুণানিধির পরিবার এখনো ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) দলের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ছেলে এমকে স্ট্যালিন এখন মুখ্যমন্ত্রী, আর তাঁর নাতিকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এটি শুধু কিছু বিখ্যাত পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের শাসনব্যবস্থার গাঁথুনিতেই এই পারিবারিক রাজনীতি বীজ গভীরভাবে বোনা। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৪৯টি পরিবার থেকে একাধিক সদস্য রাজ্যের আইনসভায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ১১ জন মন্ত্রী ও ৯ জন মুখ্যমন্ত্রীরও পারিবারিক রাজনৈতিক সংযোগ আছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৫ বছরের নিচে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ না কেউ রাজনীতিতে ছিলেন। তরুণ সাংসদদের প্রায় সবাই কোনো আত্মীয়—সাধারণত বাবা বা মা—থেকে আসন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সব দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নারী সাংসদদের ৭০ শতাংশ বংশানুক্রমিক রাজনীতির ফল। এমনকি যেসব নারী রাজনীতিকের সরাসরি উত্তরসূরি নেই, যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুমারী মায়াবতী, তাঁরাও তাঁদের ভাতিজাদের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তুলছেন।
ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, এই বংশানুক্রমিক রাজনীতি গোটা উপমহাদেশেই দেখা যায়। পাকিস্তানে ভুট্টো ও শরিফ পরিবার, বাংলাদেশে শেখ ও জিয়া পরিবার, শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে ও রাজাপক্ষে পরিবার। তবে ভারতের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে এই প্রবণতা কিছুটা বেমানান বলেই মনে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কেন ভারত এত গভীরভাবে এই পারিবারিক রাজনীতি মেনে নিয়েছে?
এর একটি কারণ হতে পারে—পরিবার একটি কার্যকর রাজনৈতিক ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে কাজ করে। পরিচিত নামধারী প্রার্থীদের ভোটারদের মনোযোগ পেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। যদি ভোটাররা কোনো প্রার্থীর বাবা, খালা বা ভাইকে একসময় গ্রহণ করে থাকেন, তবে তাঁরা সম্ভবত একই পরিবারের নতুন প্রার্থীকেও সহজেই মেনে নেন। এভাবে তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। ভারতের অতীত প্রেক্ষাপটে, যখন সাক্ষরতার হার ও গণমাধ্যমের প্রভাব কম ছিল, তখন এই বিষয়টি আরও বেশি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল।
কিন্তু সাক্ষরতার হার যখন ৮১ শতাংশের কাছাকাছি এবং মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, তখন বোঝা যায় অন্য আরও কিছু কারণ আছে এর পেছনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়তো—দলীয় রাজনীতির ভেতরকার চর্চা ও গতিপ্রকৃতি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও প্রায় অস্বচ্ছ। প্রায় সব দলেই সিদ্ধান্ত নেয় একদল ক্ষুদ্র প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কখনো বা একক কোনো নেতা, যাদের আবার পরিবর্তন আনাতে আগ্রহ কম। ফলে, যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক সম্পর্কই সাধারণত বেশি মূল্য পায়।
এ অবস্থায় প্রার্থী হতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নতুনদের জন্য বাধা। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারগুলোর হাতে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক পুঁজি, যা তারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকে জমিয়েছে। তাদের আছে তৈরি নির্বাচনী কাঠামো—দাতা, কর্মী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক। এতে করে নতুন রাজনীতিকদের তুলনায় তাদের সুবিধা অনেক বেশি।
ভারতের এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পেছনে সাংস্কৃতিক কারণও আছে। আধুনিকায়নের অগ্রগতি সত্ত্বেও সমাজে এখনো জমিদারি মানসিকতা টিকে আছে। আগের দিনে যেভাবে স্থানীয় জমিদার বা রাজাদের প্রতি আনুগত্য দেখানো হতো, এখন সেই শ্রদ্ধা দেওয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের। এতে মনে হয় রাজনৈতিক অভিজাতরা যেন অন্য শ্রেণির মানুষ, যাদের পরিবারই ক্ষমতার উপযুক্ত। এই অহংবোধ এতটাই গভীর যে দুর্বল কর্মক্ষমতাও তাদের নেতৃত্ব থেকে সরাতে পারে না। বারবার নির্বাচনে হারলেও তারা দলীয় নেতৃত্ব ধরে রাখে।
এ ধরনের রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারিত হয় বংশপরম্পরায়, যোগ্যতা, নিষ্ঠা বা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বদলে, তখন শাসনব্যবস্থার মান নেমে যায়। সীমিত প্রতিভার ভান্ডার থেকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া কখনোই সুবিধাজনক নয়। আরও খারাপ হয় যখন প্রার্থীর একমাত্র যোগ্যতা হয় তার পদবি। এমন নেতারা সাধারণ মানুষের বাস্তব চ্যালেঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে জনগণের প্রয়োজন বুঝে কাজ করার সক্ষমতাও কম থাকে। তবুও তাদের ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না।
এখন সময় এসেছে ভারতকে ‘রাজবংশের’ রাজনীতি ছাড়িয়ে যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার। এর জন্য প্রয়োজন গভীর সংস্কার—আইন করে মেয়াদসীমা নির্ধারণ, দলীয় পর্যায়ে প্রকৃত নির্বাচনের ব্যবস্থা, এবং ভোটারদের সচেতন করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা বাছাইয়ের প্রেরণা জাগানো। যত দিন ভারতীয় রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য—‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য’—পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এই পরিবারের সদস্য। এই পরিবারের প্রভাব ভারতের রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তাদের এই উত্তরাধিকার শুধু ইতিহাসে নয়, রাজনীতির মানসেও এক ধারণা গভীরভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব জন্মগত অধিকারও হতে পারে। এই চিন্তাই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের রাজনীতির প্রতিটি দলে, প্রতিটি প্রদেশে, আর প্রতিটি স্তরে।
কেবল নেহরু–গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তোলা হলেও, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা বংশানুক্রমিক রাজনীতি আসলে ভারতের প্রায় সব দলেই দেখা যায়। জনতা দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিজয়নন্দ (বিজু) পট্টনায়কের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নবীন পট্টনায়ক লোকসভায় বাবার খালি আসনে নির্বাচিত হন। পরে নবীন বাবার নাম অনুসারে ‘বিজু জনতা দল’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজুর পথ অনুসরণ করে নবীন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং দুই দশকেরও বেশি সময় রাজ্য পরিচালনা করেন।
মহারাষ্ট্রের দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে মৃত্যুর আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে। উদ্ধবের ছেলে আদিত্য ঠাকরেও এখন রাজনীতির মঞ্চে সক্রিয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অপেক্ষায়। একই ধারা দেখা যায় সমাজবাদী পার্টিতেও। দলের প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদবও সেই পদে আসেন। এখন তিনি দলের সভাপতি ও এমপি। বিহারের লোক জনশক্তি পার্টিতেও একই চিত্র। প্রয়াত নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও এই বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। জম্মু–কাশ্মীরে তিন প্রজন্ম ধরে আবদুল্লাহ পরিবার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর বিরোধী শিবিরে নেতৃত্বে আছে মুফতি পরিবারের দুই প্রজন্ম। পাঞ্জাবে দীর্ঘদিন শিরোমণি আকালি দল পরিচালনা করেছেন প্রকাশ সিং বাদল। এখন তাঁর ছেলে সুখবীর বাদল দলের প্রধান। তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই এখন উত্তরাধিকারের লড়াইয়ে নেমেছেন। তামিলনাড়ুতে প্রয়াত এম করুণানিধির পরিবার এখনো ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) দলের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ছেলে এমকে স্ট্যালিন এখন মুখ্যমন্ত্রী, আর তাঁর নাতিকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এটি শুধু কিছু বিখ্যাত পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের শাসনব্যবস্থার গাঁথুনিতেই এই পারিবারিক রাজনীতি বীজ গভীরভাবে বোনা। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৪৯টি পরিবার থেকে একাধিক সদস্য রাজ্যের আইনসভায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ১১ জন মন্ত্রী ও ৯ জন মুখ্যমন্ত্রীরও পারিবারিক রাজনৈতিক সংযোগ আছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৫ বছরের নিচে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ না কেউ রাজনীতিতে ছিলেন। তরুণ সাংসদদের প্রায় সবাই কোনো আত্মীয়—সাধারণত বাবা বা মা—থেকে আসন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সব দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নারী সাংসদদের ৭০ শতাংশ বংশানুক্রমিক রাজনীতির ফল। এমনকি যেসব নারী রাজনীতিকের সরাসরি উত্তরসূরি নেই, যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুমারী মায়াবতী, তাঁরাও তাঁদের ভাতিজাদের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তুলছেন।
ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, এই বংশানুক্রমিক রাজনীতি গোটা উপমহাদেশেই দেখা যায়। পাকিস্তানে ভুট্টো ও শরিফ পরিবার, বাংলাদেশে শেখ ও জিয়া পরিবার, শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে ও রাজাপক্ষে পরিবার। তবে ভারতের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে এই প্রবণতা কিছুটা বেমানান বলেই মনে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কেন ভারত এত গভীরভাবে এই পারিবারিক রাজনীতি মেনে নিয়েছে?
এর একটি কারণ হতে পারে—পরিবার একটি কার্যকর রাজনৈতিক ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে কাজ করে। পরিচিত নামধারী প্রার্থীদের ভোটারদের মনোযোগ পেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। যদি ভোটাররা কোনো প্রার্থীর বাবা, খালা বা ভাইকে একসময় গ্রহণ করে থাকেন, তবে তাঁরা সম্ভবত একই পরিবারের নতুন প্রার্থীকেও সহজেই মেনে নেন। এভাবে তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। ভারতের অতীত প্রেক্ষাপটে, যখন সাক্ষরতার হার ও গণমাধ্যমের প্রভাব কম ছিল, তখন এই বিষয়টি আরও বেশি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল।
কিন্তু সাক্ষরতার হার যখন ৮১ শতাংশের কাছাকাছি এবং মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, তখন বোঝা যায় অন্য আরও কিছু কারণ আছে এর পেছনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়তো—দলীয় রাজনীতির ভেতরকার চর্চা ও গতিপ্রকৃতি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও প্রায় অস্বচ্ছ। প্রায় সব দলেই সিদ্ধান্ত নেয় একদল ক্ষুদ্র প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কখনো বা একক কোনো নেতা, যাদের আবার পরিবর্তন আনাতে আগ্রহ কম। ফলে, যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক সম্পর্কই সাধারণত বেশি মূল্য পায়।
এ অবস্থায় প্রার্থী হতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নতুনদের জন্য বাধা। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারগুলোর হাতে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক পুঁজি, যা তারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকে জমিয়েছে। তাদের আছে তৈরি নির্বাচনী কাঠামো—দাতা, কর্মী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক। এতে করে নতুন রাজনীতিকদের তুলনায় তাদের সুবিধা অনেক বেশি।
ভারতের এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পেছনে সাংস্কৃতিক কারণও আছে। আধুনিকায়নের অগ্রগতি সত্ত্বেও সমাজে এখনো জমিদারি মানসিকতা টিকে আছে। আগের দিনে যেভাবে স্থানীয় জমিদার বা রাজাদের প্রতি আনুগত্য দেখানো হতো, এখন সেই শ্রদ্ধা দেওয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের। এতে মনে হয় রাজনৈতিক অভিজাতরা যেন অন্য শ্রেণির মানুষ, যাদের পরিবারই ক্ষমতার উপযুক্ত। এই অহংবোধ এতটাই গভীর যে দুর্বল কর্মক্ষমতাও তাদের নেতৃত্ব থেকে সরাতে পারে না। বারবার নির্বাচনে হারলেও তারা দলীয় নেতৃত্ব ধরে রাখে।
এ ধরনের রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারিত হয় বংশপরম্পরায়, যোগ্যতা, নিষ্ঠা বা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বদলে, তখন শাসনব্যবস্থার মান নেমে যায়। সীমিত প্রতিভার ভান্ডার থেকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া কখনোই সুবিধাজনক নয়। আরও খারাপ হয় যখন প্রার্থীর একমাত্র যোগ্যতা হয় তার পদবি। এমন নেতারা সাধারণ মানুষের বাস্তব চ্যালেঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে জনগণের প্রয়োজন বুঝে কাজ করার সক্ষমতাও কম থাকে। তবুও তাদের ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না।
এখন সময় এসেছে ভারতকে ‘রাজবংশের’ রাজনীতি ছাড়িয়ে যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার। এর জন্য প্রয়োজন গভীর সংস্কার—আইন করে মেয়াদসীমা নির্ধারণ, দলীয় পর্যায়ে প্রকৃত নির্বাচনের ব্যবস্থা, এবং ভোটারদের সচেতন করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা বাছাইয়ের প্রেরণা জাগানো। যত দিন ভারতীয় রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য—‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য’—পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমত
০৬ অক্টোবর ২০২২
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১১ ঘণ্টা আগে
বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১ দিন আগে