Ajker Patrika

নারীরা এত ‘অ-রোমান্টিক’ কেন

পরাগ মাঝি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যদি কেউ ভালোবাসা দিবসে তাঁর সঙ্গীর জন্য একটি কার্ড কিনে থাকেন, তাহলে সহজেই বলে দেওয়া যায়—কার্ড কেনা মানুষটি একজন পুরুষ। কারণ সাধারণত পুরুষেরাই নারীদের তুলনায় বেশি রোমান্টিক। এটি একটি সর্বজনবিদিত সত্য, তবে স্বীকৃতি খুবই কম।

অনেকেই মনে করেন, বিবাহিত জীবনের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো নারীদের রোমান্স হীনতা। এমনকি অনেকে এই বিষয়টিকে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবেও মনে করেন।

নারীরা যে অ-রোমান্টিক, বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনার পরিচিত প্রেমিক যুগলদের কথা ভাবুন। তাঁদের মধ্যে কে বেশি রোমান্টিক? ভাবতে পারেন, আপনার প্রিয় রোমান্টিক গানগুলোর কথাও। বেশির ভাগ গানই একজন পুরুষের লেখা এবং গেয়েছেনও পুরুষ। আর নিঃসন্দেহে এটি কোনো নারী কিংবা প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া। প্রেমের গান নারীরা গাইলেও খোঁজ নিয়ে দেখুন, এগুলো কোনো পুরুষেরই লেখা।

ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এই বাস্তবতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুধু কার্ড কেনাই নয়, ফুল দেওয়া, পার্টি দেওয়া কিংবা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মতো পরিকল্পনাগুলো মূলত পুরুষেরাই করে থাকেন। এই পর্যবেক্ষণের সত্যতা খুঁজতে গেলে ভ্যালেন্টাইনস ডে-র উৎপত্তির দিকে তাকালেই যথেষ্ট। ভ্যালেন্টাইন ছিলেন এক পুরোহিত, যিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে রোমান্টিক। সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস মনে করতেন, বিবাহিত পুরুষেরা যুদ্ধের জন্য কম উপযুক্ত। তাই তিনি বিয়ে নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করতেন। যখন সম্রাট এই কথা জানতে পারেন, তখন তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। কিন্তু মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকার সময় তিনি জেলারের কন্যার প্রেমে পড়েন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন। তিনি তাঁর প্রেমিকাকে একটি চিঠি লিখে যান। যেখানে লেখা ছিল, ‘তোমার ভ্যালেন্টাইনের কাছ থেকে’।

সম্ভবত সর্বপ্রথম ‘তোমার ভ্যালেন্টাইন’ একজন পুরুষ হওয়ার কারণেই, আজও রোমান্সের দায়িত্ব পুরুষদের কাঁধেই বর্তায়। অথবা এর আরও ব্যাখ্যা থাকতে পারে। পুরুষেরা দ্রুত ও সহজে সন্তান উৎপাদন করতে পারেন, তাই প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রেও হয়তো তাঁদের তাড়াহুড়া বেশি। অন্যদিকে, নারীদের জন্য ব্যাপারটা বেশ জটিল; অন্তত নয় মাসের শারীরিক কষ্টের ঝুঁকি আছে, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অনেক বেশি চিন্তাশীল।

কিন্তু এই যুক্তি কি আজকের যুগেও প্রযোজ্য? এক নারী দাবি করেছেন, যদি তিনি তাঁর স্বামীকে কোনো শারীরিক স্নেহ দেখান, তবে সেই আচরণটিকে তৎক্ষণাৎ তাঁর স্বামী ‘যৌন সম্পর্কের সংকেত’ হিসেবে নেন। এখন কথা হচ্ছে, যদি একটুখানি স্নেহপূর্ণ স্পর্শই পুরুষকে এমন উন্মত্ত করে তোলে, তাহলে কি এর কারণ এটাই নয় যে, নারীদের স্নেহপূর্ণ মুহূর্তগুলো আসলে খুব বিরল?

হ্যাঁ, পুরুষেরাও কখনো কখনো অ-রোমান্টিক হতে পারেন। অনেক রোমান্টিক নারীও রয়েছেন যারা নিরামিষ, রোমান্সহীন কোনো পুরুষের সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছেন। তবে নারীরা সাধারণত তাদের বৈবাহিক অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই অ-রোমান্টিক পুরুষের সংখ্যা বাস্তবে যতটা, তার চেয়ে বেশি মনে হতে পারে।

দাম্পত্য নিয়ে নারীরা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন, পরামর্শ নেন, এমনকি অনলাইনে তাঁদের দুঃখের কাহিনিও শেয়ার করেন। অন্যদিকে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি আলাদা। তারা রোমান্স চাইলেও, সেটা স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করেন। এমনকি কোনো অ-রোমান্টিক দাম্পত্যে থাকলেও তাঁরা তা সহজে প্রকাশ করেন না। কারণ তাঁরা জানেন, এতে তাঁদের দুর্বল বলে মনে করা হবে। ফলে তাঁরা নীরবে কষ্ট পেতে থাকেন, তাঁদের অসন্তোষ অপ্রকাশিত ও অমীমাংসিত থেকে যায়।

নারীরা রোমান্স পছন্দ করেন না—এমনটা নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা রোমান্সকে একতরফা হিসেবেই ধরে নেন, পারস্পরিক বিনিময়ের একটি দায়িত্ব হিসেবে নয়।

ভ্যালেন্টাইনস ডে হয়তো বাণিজ্যিকীকৃত ও অতিরঞ্জিত, তবে এটি ভালোবাসার প্রকাশের একটি সুযোগও। ভালোবাসা মানেই বিশাল কার্ড বা রেশমি হৃদয় উপহার দেওয়া নয়। ভালোবাসা হলো কারও চাহিদা বুঝতে পারা এবং তা পূরণ করা। আর বেশির ভাগ পুরুষের, আসলে বলা উচিত বেশির ভাগ মানুষেরই সেই চাহিদার একটি বড় অংশ হলো—রোমান্স।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বধ্যভূমি ৭১

সম্পাদকীয়
বধ্যভূমি ৭১

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রহনপুর গণকবর

সম্পাদকীয়
রহনপুর গণকবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

সম্পাদকীয়
ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।

আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।

বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।

তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।

সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত