Ajker Patrika

ভিয়েতনাম যুদ্ধ কভার করা ১২ বছর বয়সী ফটোসাংবাদিকের অবিশ্বাস্য গল্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ০৬
১২ বছর বয়সী ফটোসাংবাদিক লু মান হং ওরফে জিমি। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
১২ বছর বয়সী ফটোসাংবাদিক লু মান হং ওরফে জিমি। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ ও নির্মম সংঘাত ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এই যুদ্ধের প্রতিটি দিন ভয়, মৃত্যু এবং সাহসিকতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। ঠিক এই কঠিন বাস্তবতার মাঝে ভিয়তনামের যুদ্ধের ছবি তুলতে লাগল কিশোর ফটোসাংবাদিক লু মান হং ওরফে জিমি।

মাত্র ১২ বছর বয়সে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সবচেয়ে কম বয়সী ফটোসাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন লু মান হং। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
মাত্র ১২ বছর বয়সে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সবচেয়ে কম বয়সী ফটোসাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন লু মান হং। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

১৯৬৮ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সবচেয়ে কম বয়সী ফটোসাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে লু মান হং। তার বাবা লো ভিনহ ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার। ৪৪ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত ছিলেন লো ভিনহ। তিনি উত্তর ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের হাত থেকে পালিয়ে দক্ষিণে এসেছিলেন। বাবার ডার্করুমেই ফটোগ্রাফিতে জিমির হাতেখড়ি হয়। সেখানে আলোছায়ার ব্যবহার এবং ক্যামেরার শাটারের ছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে।

অদম্য সংকল্পের মাধ্যমে পুলিশ ও অন্যদের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
অদম্য সংকল্পের মাধ্যমে পুলিশ ও অন্যদের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

১১ বছর বয়সেই জিমি বাবার সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। ভিয়েতনামের রাজধানী সাইগনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে থাকে।

ছোট শারীরিক গঠন অনেক সময় অসুবিধা তৈরি করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এই গঠনই একসময় তার সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেয়। ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে এবং সরু গলি দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারত, যা প্রাপ্তবয়স্কদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে, বয়স কম হওয়ায় প্রায়শই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হতো।

সরু গলি দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারতেন তিনি। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
সরু গলি দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারতেন তিনি। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

জিমি শেষ পর্যন্ত তার বাবার পরিচয় এবং অদম্য সংকল্পের মাধ্যমে পুলিশ ও অন্যদের কাছে সম্মান পেতে শুরু করে। সে এমন সব ঘটনার ছবি তোলার সুযোগ পায় যা অন্যদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

১৯৬৮ সালের টেট আক্রমণের সময় জিমি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠে। প্রায়ই এআরভিএন (আর্মি অব দ্য রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম) সৈন্যদের সঙ্গে ভিয়েত কং নিয়ন্ত্রিত সাইগনের গভীরে প্রবেশ করে ছবি তুলতো এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোতে সেগুলো বিক্রি করতো। প্রতিটি ছবির জন্য পেত ১০ ডলার (বর্তমান বাজারে ৯০ ডলারের বেশি)। এই পরিমাণ অর্থ ওই সময় ভিয়েতনামে পুরো পরিবারের এক মাসের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

ভিয়েতনামের রাজধানী সাইগনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
ভিয়েতনামের রাজধানী সাইগনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

জিমি এবং তার বাবা প্রতিদিন ভোর ৫টায় কাজ শুরু করতো। রাত ৯টা পর্যন্ত টানা কাজ চলতো। যুদ্ধবিরতির সময় তারা মোটরসাইকেলে করে শহরে ঘুরে বেড়াতো এবং সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়ে, বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যক্তির আগমন এবং অগ্নিকাণ্ড—সবকিছুর ছবি তুলতো। ফিল্ম প্রসেসিং এবং প্রিন্টিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো জিমি। এরপর বার্তা বাহক হিসেবেও কাজ করেছে। নতুন প্রিন্টগুলো সংবাদ সংস্থাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া ছিল তার কাজ।

জিমি তার বাবার ডার্করুমেই ফটোগ্রাফির হাতেখড়ি নেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
জিমি তার বাবার ডার্করুমেই ফটোগ্রাফির হাতেখড়ি নেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

তবে সাইগনের পতনের সময় জিমি তার সমস্ত ছবি এবং নেগেটিভ হারিয়ে ফেলে। তার পালানোর জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় ছিল এবং সৈন্যদের ঠাসাঠাসি করে থাকা একটি হেলিকপ্টারে তাকে টেনে তোলা হয়েছিল। পরে সে ভিয়েতনাম ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে একটি ছবির দোকান খোলে।

১৯৬৮ সালের টেট আক্রমণের সময় তিনি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
১৯৬৮ সালের টেট আক্রমণের সময় তিনি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

১৯৯৮ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে অ্যাসোসিয়েটেডে প্রেসের (এপি) সাবেক ফটোগ্রাফার হর্স্ট ফাসের সঙ্গে দেখা হয় জিমির। টেট আক্রমণের সময় ছোট্ট জিমির যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করার মুহূর্ত হর্স্ট নিজের ক্যামেরায় বন্দী করেছিলেন। তাঁর কাছে ছিল জিমির পুরোনো ছবি। ছবিতে হেলমেট পরে আছে জিমি, আর সেই হেলমেটে বড় অক্ষরে লেখা ‘PRESS’।

তাকে নিয়ে সংবাদপত্রে খবরও ছাপা হয়। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
তাকে নিয়ে সংবাদপত্রে খবরও ছাপা হয়। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

এই ছবির সঙ্গে ছিল একটি ল্যামিনেট করা পত্রিকা কাটিং, যার শিরোনাম ছিল: ‘বয় ১২, ইন ডেঞ্জারাস জবস।’

২০১৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লু মান হং। তাঁর গল্প যুদ্ধক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভা এবং অদম্য সংকল্পের একটি দৃষ্টান্ত। ফটো সাংবাদিকতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন তিনি।

ছবিতে হেলমেট পরে আছেন জিমি, আর সেই হেলমেটে বড় অক্ষরে লেখা ‘PRESS’। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস
ছবিতে হেলমেট পরে আছেন জিমি, আর সেই হেলমেটে বড় অক্ষরে লেখা ‘PRESS’। ছবি: রেয়ার হিস্টোরিক ফটোস

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

মেয়াদোত্তীর্ণ ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে সার্ভার, ঝুলে আছে ৭ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

যুবককে ধর্ষণের প্রত্যয়নপত্র দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত