Ajker Patrika

৩৭ বছর পর নতুন সম্পাদক পেল ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
ফ্যাশনের বাইবেল ‘ভোগ’-এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পথচলা নবনিযুক্ত সম্পাদক ক্লোয়ে ম্যালের। ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাশনের বাইবেল ‘ভোগ’-এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পথচলা নবনিযুক্ত সম্পাদক ক্লোয়ে ম্যালের। ছবি: সংগৃহীত

ফ্যাশন জগতের বাইবেল বলা হয় ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনকে। ফ্যাশন ও প্রকাশনার জগতের কিংবদন্তি অ্যানা উইন্ট্যুর ছিলেন এর সম্পাদক। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর নতুন এক সম্পাদক পেল ভোগ, ৩৯ বছর বয়সী ক্লোয়ে ম্যালে। দীর্ঘদিন ধরে ভোগ-এর সঙ্গে পথচলা নতুন এই সম্পাদকের। বয়সের তুলনায় যোগ্যতায় দায়িত্ব পেলেন বেশ বড়! ক্লোয়ে এতদিন ভোগ ওয়েবসাইটের সম্পাদক ও এর পডকাস্টের সহসঞ্চালক হিসেবে কাজ করছিলেন।

মার্কিন তারকা দম্পতির কন্যা ক্লোয়ে ম্যালে। বাবা প্রয়াত বিখ্যাত পরিচালক লুই মাল্লে আর মা অভিনেত্রী ক্যান্ডিস বার্গেন। লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা তাঁর। পড়েছেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্য ও তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে। পরে দ্য নিউইয়র্ক অবজারভারে কাজ শুরু করেন এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন প্রকাশনায় লিখেছেন। তিন বছর বয়সে প্রথমবার তাঁর নাম প্রকাশিত হয় দ্য টাইমস-এর পাতায়।

এক দশক ধরে ফ্যাশন ও গণমাধ্যম শিল্পে জল্পনা চলছিল, ৭৫ বছর বয়সী অ্যানা উইন্ট্যুরের উত্তরসূরি কে হবেন?

নতুন ‘সম্পাদক’ ক্লোয়ে ম্যালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ডিনার পার্টির আড্ডা মানেই যেন এই প্রশ্ন। সত্যি বলতে, অ্যানাকে কেউই প্রতিস্থাপন করতে পারবেন না।’

মজার ব্যাপার হলো, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে গত মে মাসের ১ তারিখে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার ১ সপ্তাহ আগে থেকে ম্যালে জানতেন, তিনিই হচ্ছেন ভোগের নতুন সম্পাদক। কিন্তু অ্যানা উইন্ট্যুরের কড়া নির্দেশে কাউকেই এসব কথা জানাননি। এমনকি নিজের মা অভিনেত্রী ক্যান্ডিস বার্গেনকেও তখনো কিছু বলেননি।

তবে দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি যতটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে তা অনেক জটিল। কেন না অ্যানা উইন্ট্যুর ভোগ-এর প্রকাশনা সংস্থা কনডে ন্যাস্টে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন।

সম্পাদকের দায়িত্ব হস্তান্তর করলেও অ্যানা এখনই অবসর নিচ্ছেন না। তিনি এখনো কনডে ন্যাস্টের চিফ কনটেন্ট অফিসার। বাস্তবে তিনি ম্যালের সরাসরি সুপারভাইজার। ভোগ-এর ২৮টি আন্তর্জাতিক সংস্করণের সব কটি তাঁরই তত্ত্বাবধানে। এমনকি নিজের অফিস থেকেও সরছেন না তিনি।

৩৭ বছর ধরে ‘ভোগ’-এর সম্পাদক ছিলেন ফ্যাশন কিংবদন্তি অ্যানা উইন্ট্যুর। ছবি: সংগৃহীত
৩৭ বছর ধরে ‘ভোগ’-এর সম্পাদক ছিলেন ফ্যাশন কিংবদন্তি অ্যানা উইন্ট্যুর। ছবি: সংগৃহীত

এই হস্তান্তর ব্যবস্থা কিছুটা অস্বাভাবিক দুজনেই স্বীকার করেছেন। কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্যে উইন্ট্যুর নিজেকে একই সঙ্গে ম্যালের ‘গুরু এবং শিক্ষার্থী’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যালে বলেন, ‘আমি যেন উঁচু কোনো দড়ির ওপর কসরত দেখাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি, এই পদে আগ্রহী অনেকেই অ্যানার ঠিক পাশের করিডরে থাকার বিষয়টি ভেবে একটু ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু আমি খুশি যে তিনি সেখানেই আছেন, তাঁর ক্ল্যারিস ক্লিফ পটারি নিয়ে।’

নিজেকে ‘নেপো কিড’ হিসেবে অভিহিত করে ম্যালে বলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠায় যে বিশেষ সুবিধা ছিল, তা অস্বীকার করা বোকামি হবে। তবে এটা আমাকে আরও পরিশ্রমী করেছে। জীবনের অনেকটা সময় আমি চেষ্টা করেছি প্রমাণ করতে যে আমি শুধু ক্যান্ডিস বার্গেনের মেয়ে নই কিংবা বেভারলি হিলসের কোনো বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত মানুষও নই।’

প্রয়াত বিখ্যাত পরিচালক লুই মাল্লে ও অভিনেত্রী ক্যান্ডিস বার্গেন দম্পতির কন্যা ক্লোয়ে ম্যালে। ছবি: সংগৃহীত
প্রয়াত বিখ্যাত পরিচালক লুই মাল্লে ও অভিনেত্রী ক্যান্ডিস বার্গেন দম্পতির কন্যা ক্লোয়ে ম্যালে। ছবি: সংগৃহীত

নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়ার সময় ম্যালে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, এ পদে যে আসবেন, তিনি যদি ‘অ্যানা লাইট’ হওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে কখনোই সফলতা পাবেন না। তিনি যোগ করেন, ‘নিজের ছাপ রেখে যাওয়াটাই হবে এই ভূমিকায় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এমন এক দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে বোঝা যায়—এটি আমার ভোগ।’

আর ‘ভোগ’-এর সম্পাদক হিসেবে ক্লোয়ের পদবি ‘সম্পাদক’ নয়, বরং ‘হেড অব এডিটোরিয়াল কনটেন্ট’ বা সম্পাদকীয় কনটেন্টের প্রধান দেওয়া হচ্ছে।

এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে এসে অন্যান্য পুরনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মতো ভোগও একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এখনকার সম্পাদকদের কাজ শুধু লেখা বা কনটেন্ট সম্পাদনা নয়, তাঁদের নতুন আয়ের পথ তৈরি করতে হয়, বড় মাপের চমকপ্রদ ইভেন্ট আয়োজন করতে হয়, এমনকি পণ্য বিক্রির কৌশলও ভাবতে হয়।

যেসব প্রতিষ্ঠান সময়মতো ডিজিটাল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি, তারা হারিয়েছে অর্থ ও প্রভাব। এখন তারা মরিয়া হয়ে নতুন পাঠকগোষ্ঠী খুঁজছে এবং পুরনো পাঠকদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

ভোগ ওয়েবসাইটের সম্পাদক ও এর পডকাস্টের সহ-সঞ্চালক হিসেবে কাজ করছিলেন ক্লোয়ে। ছবি: সংগৃহীত
ভোগ ওয়েবসাইটের সম্পাদক ও এর পডকাস্টের সহ-সঞ্চালক হিসেবে কাজ করছিলেন ক্লোয়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভোগের নতুন সম্পাদক নিজেকে ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ নয়, বরং একজন সাংবাদিক হিসেবে বেশি দেখেন। যদিও ভোগ ঐতিহ্যগতভাবে ফ্যাশন ভিজ্যুয়ালসের জন্য বেশি পরিচিত। কর্মীদের পাঠানো এক ই-মেইলে অ্যানা উইন্ট্যুর তাঁকে ‘একজন তৃষ্ণার্ত-নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক, যাঁর চোখ নির্ভুল ছবিতে আটকায়’—বলে প্রশংসা করেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ভোগ-এর ওয়েব বিভাগের দায়িত্ব নেন ম্যালে। তখন থেকে তিনি বেশ কিছু আলোচিত প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন। তার মধ্যে রয়েছে কুকুরদের নিয়ে একটি আড়ম্বরপূর্ণ কভার প্রতিযোগিতা এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির নাতি জ্যাক শ্লসবার্গকে গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া।

বর্তমান সময়ে ভোগ-এ ম্যালে বেশির ভাগ সময় বিয়ে সংক্রান্ত স্টোরিগুলো নিয়ে কাজ করে থাকেন। তিনি জানান, ২০২৩ সালের পর থেকে অনলাইনে ভোগ ওয়েডিংস-এর কভারেজ প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ভোগ-এর ওয়েব বিভাগের দায়িত্ব নেন ম্যালে। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরে ভোগ-এর ওয়েব বিভাগের দায়িত্ব নেন ম্যালে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি লরেন সানচেজ বেজোসকে নিয়ে তাঁর ডিজিটাল কভার স্টোরি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। অনেকেই মন্তব্য করেন, জেফ বেজোসের নববধূ হিসেবে তিনি ভোগ কভারের মর্যাদা ‘অর্জন করেননি’। এ নিয়ে ম্যালে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ভোগ-এর কাভারে আসা মানে এক ধরনের স্বীকৃতি। তবে কখনো কখনো হিসাব করে ঝুঁকি নেওয়াও জরুরি। এটা আমাদের জন্য বড় মুহূর্ত ছিল। সবাই সেই নিয়ে কথা বলছিল। আমরা সেই মুহূর্তটিকে ধরতে পেরেছিলাম।’

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মেলানিয়া ট্রাম্পকে কখনো ভোগের কভারে দেখা যাবে কি না। এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান নতুন সম্পাদক। তবে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে ভোগে কি পরিবর্তন আসছে তা অনেকেই দেখার অপেক্ষায়।

ম্যালের সম্পাদনায় প্রথম প্রিন্ট সংখ্যা সম্ভবত আগামী বছর প্রকাশিত হবে। তিনি মনে করেন, ভোগ–এর সংখ্যাগুলো মাসিক নিয়মে প্রকাশের পরিবর্তে নির্দিষ্ট থিম বা সাংস্কৃতিক মুহূর্তকে ঘিরে প্রকাশিত হওয়া উচিত, যেন উচ্চমানের পুরু কাগজে মুদ্রিত এই ম্যাগাজিনের প্রতিটি সংখ্যা হয় সংগ্রহযোগ্য সংস্করণ।

ম্যালে বলেন, আজকের ভোগ ‘কৌশলী, চটপটে এবং তীক্ষ্ণ’। পপ সংস্কৃতিতে প্রচলিত ‘ঝলমলে কিন্তু নির্মম ফ্যাশন সাম্রাজ্য’-এর চিত্র থেকে অনেকটা আলাদা। সেই পুরোনো ঠান্ডা, প্রতিযোগিতামূলক গ্ল্যামার যুগ মূলত শেষ হয়ে গেছে।

এই পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে ম্যালে নিজেও অনেকটা ভিন্ন ধাঁচের। নিউইয়র্কের তারকা পরিবারে বেড়ে ওঠা হলেও তিনি সহজ-স্বভাব, প্রাণবন্ত ও অহংবর্জিত। ফ্যাশন অভিজাতদের তিনি বিশেষ পছন্দ করেন না। একবার টমি হিলফিগারের ফ্যাশন শোতে তিনি সংগীতশিল্পী জন বাতিস্তের অনুরোধে উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করেছিলেন। তাঁর অফিসে ডিজনির দুই ভিলেন ম্যালিফিসেন্ট ও ক্রুয়েলা দে ভিল-এর লেগো মডেল সাজানো, যেগুলো তাঁর পাঁচ বছরের ছেলের তৈরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

জোটে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রেখে আরপিও অধ্যাদেশ জারি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ