আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
বাড়ির পাশে গবাদিপশু রাখার মাটির ঢিবি। তার ওপর মাচান করে পাতানো হয়েছে খাট। ওপরে জিও ব্যাগ আর পলিথিন দিয়ে তৈরি চালা। চারদিক পলিথিনে ঘেরা। এভাবেই তৈরি ঝুপড়িতে খাটের ওপর বসে বসে দিন কাটে রূপবানুর (৪৫)। প্রায় এক মাস ধরে এই ঝুপড়িতে রূপবানুর সংসার। খাটের পাশে বাঁশের মাচায় চুলা, হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। আর চারদিকে পানি। টিউবওয়েল, গোসলখানা, টয়লেট—সবকিছু পানিতে তলিয়েছে।
রূপবানুর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মশালেরচর গ্রামে। গ্রামের মৃত হাছেন মণ্ডলের স্ত্রী তিনি। চলতি বন্যায় পানিবন্দী রূপবানুর কাটছে গৃহবন্দী জীবন।
বন্যায় রূপবানু খাদ্যসংকটে থাকলেও বেশি বিড়ম্বনা সইতে হচ্ছে স্যানিটেশন নিয়ে। টয়লেট আর গোসলখানা তলিয়ে যাওয়ায় এই বিড়ম্বনা। রূপবানু বললেন, ‘আমাদের খুব অসুবিধা। এক মাস থাইকা এই মাচানে আছি। বাইরে যাইতে পারি না। বাড়িতে টিউবওয়েল তলায় গেছে। শান্তিমতো পানিও খাইতে পারি না।...খুব কষ্ট হয়। ভুরা নিয়া (কলাগাছের ভেলা) দূরে গিয়া প্রয়োজন সারতে হয়। অন্ধকার না হইলে সেটাও করতে পারি না।’
রূপবানু জানান, গত বছর বন্যায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে স্যানিটারি প্যাড পেলেও এবার এখন পর্যন্ত সেগুলো কেউ দেয়নি। তিনি বললেন, ‘কাপড় আর ময়লা পানি দিয়া আমগো পরিষ্কার হওন লাগে।’
ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও আছির উদ্দিনের বাড়িতে এখনো হাঁটুপানি। মাসব্যাপী পানিবন্দী থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। পুরুষেরা ভেলা কিংবা নৌকা নিয়ে দূরে গিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে এলেও নারীদের ক্ষেত্রে তা বেশ কষ্টসাধ্য।
আছির উদ্দিন বলেন, ‘ভেজা ছাড়া (পায়খানা-প্রস্রাবের) বুদ্ধি নাই। আর মাসিকের সময় ত্যানা-ন্যাকড়া ছাড়া উপায় নাই। এই কাদাপানিতে হেগুলা ধোয়া পাকলা করন লাগে।’
আছির উদ্দিনের স্ত্রী শাহিনুর বেগম বলেন, ‘এক মাস হইলো বাড়িতে পানি। শারীরিক সমস্যার (মাসিক) সময় ভোগান্তির শ্যাষ থাকে না। কই যাইয়া কী করি, কূল পাই না।’
দৈনন্দিন প্রয়োজন ছাড়াও বন্যায় প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে কুড়িগ্রামের প্রসূতি ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের। প্লাবিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ না থাকায় নানান কষ্ট সইতে হচ্ছে তাদের। পানিবন্দী অবস্থায় পরিচ্ছন্নতা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা তাদের নাগালের বাইরে। এখানে বর্তমানে গবাদিপশু আর অপরিচ্ছন্নতা সঙ্গী করে বসবাস করছে নারী ও শিশুরা।
ব্রহ্মপুত্রের বতুয়াতলীরচর গ্রামে মৎস্যজীবী আলামিনের বসতি। বন্যায় তাঁর বাড়ি বুকসমান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বতসঘরসহ সবকিছু। জেগেছিল শুধু গরু-ছাগল রাখার ঝুপড়ি। সেটিতে ১০-১২টি গরু, কয়েকটি ছাগল আর মুরগিসহ আশ্রয় নিয়েছে আলামিনের পরিবার। সেই ঝুপড়িতে দেখা মেলে তাঁর ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আইরিনের। সঙ্গে তিন বছরের শিশুসন্তান আর কিশোরী ননদ।
সংবাদকর্মী দেখে অনেকটা অপ্রস্তুত আইরিন বলেন, ‘ঘরে থাকনের কোনো উপায় নাই। সবাই মিলে গরুর ঘরে থাকি। এহানেই রান্ধি, এহানেই খাই। বৃষ্টি এলে বইসা থাকতে হয়, ঘুমাতেও পারি না। খাওয়ার পানির খুব কষ্ট।’
গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবার যে কোনো উপায় নেই, তা চারদিক দেখে বোঝা যায়। তবু বিব্রতকর প্রশ্ন করি আইরিনকে। তিনি বলেন, ‘কোনো উপায় নাই। মাইনা চলন লাগে। বেশি সমস্যা হইলে নৌকা নিয়া হেই মোল্লাহাটে যাওন লাগে। এহানে কেউ সেবা দিতে আহে না।’
শুধু রূপবানু, শাহিনুর কিংবা আইরিন নন; বন্যাদুর্গত কুড়িগ্রামের প্রতিটি পরিবারের নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা ও স্যানিটেশন সুবিধার নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু এসব ভোগান্তি নিয়ে তাদের আওয়াজ কারও কানে পৌঁছায় না। তা বানের জলে ভেসে যায় নদী থেকে সাগরে।
বাড়ির পাশে গবাদিপশু রাখার মাটির ঢিবি। তার ওপর মাচান করে পাতানো হয়েছে খাট। ওপরে জিও ব্যাগ আর পলিথিন দিয়ে তৈরি চালা। চারদিক পলিথিনে ঘেরা। এভাবেই তৈরি ঝুপড়িতে খাটের ওপর বসে বসে দিন কাটে রূপবানুর (৪৫)। প্রায় এক মাস ধরে এই ঝুপড়িতে রূপবানুর সংসার। খাটের পাশে বাঁশের মাচায় চুলা, হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। আর চারদিকে পানি। টিউবওয়েল, গোসলখানা, টয়লেট—সবকিছু পানিতে তলিয়েছে।
রূপবানুর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মশালেরচর গ্রামে। গ্রামের মৃত হাছেন মণ্ডলের স্ত্রী তিনি। চলতি বন্যায় পানিবন্দী রূপবানুর কাটছে গৃহবন্দী জীবন।
বন্যায় রূপবানু খাদ্যসংকটে থাকলেও বেশি বিড়ম্বনা সইতে হচ্ছে স্যানিটেশন নিয়ে। টয়লেট আর গোসলখানা তলিয়ে যাওয়ায় এই বিড়ম্বনা। রূপবানু বললেন, ‘আমাদের খুব অসুবিধা। এক মাস থাইকা এই মাচানে আছি। বাইরে যাইতে পারি না। বাড়িতে টিউবওয়েল তলায় গেছে। শান্তিমতো পানিও খাইতে পারি না।...খুব কষ্ট হয়। ভুরা নিয়া (কলাগাছের ভেলা) দূরে গিয়া প্রয়োজন সারতে হয়। অন্ধকার না হইলে সেটাও করতে পারি না।’
রূপবানু জানান, গত বছর বন্যায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে স্যানিটারি প্যাড পেলেও এবার এখন পর্যন্ত সেগুলো কেউ দেয়নি। তিনি বললেন, ‘কাপড় আর ময়লা পানি দিয়া আমগো পরিষ্কার হওন লাগে।’
ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও আছির উদ্দিনের বাড়িতে এখনো হাঁটুপানি। মাসব্যাপী পানিবন্দী থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। পুরুষেরা ভেলা কিংবা নৌকা নিয়ে দূরে গিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে এলেও নারীদের ক্ষেত্রে তা বেশ কষ্টসাধ্য।
আছির উদ্দিন বলেন, ‘ভেজা ছাড়া (পায়খানা-প্রস্রাবের) বুদ্ধি নাই। আর মাসিকের সময় ত্যানা-ন্যাকড়া ছাড়া উপায় নাই। এই কাদাপানিতে হেগুলা ধোয়া পাকলা করন লাগে।’
আছির উদ্দিনের স্ত্রী শাহিনুর বেগম বলেন, ‘এক মাস হইলো বাড়িতে পানি। শারীরিক সমস্যার (মাসিক) সময় ভোগান্তির শ্যাষ থাকে না। কই যাইয়া কী করি, কূল পাই না।’
দৈনন্দিন প্রয়োজন ছাড়াও বন্যায় প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে কুড়িগ্রামের প্রসূতি ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের। প্লাবিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ না থাকায় নানান কষ্ট সইতে হচ্ছে তাদের। পানিবন্দী অবস্থায় পরিচ্ছন্নতা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা তাদের নাগালের বাইরে। এখানে বর্তমানে গবাদিপশু আর অপরিচ্ছন্নতা সঙ্গী করে বসবাস করছে নারী ও শিশুরা।
ব্রহ্মপুত্রের বতুয়াতলীরচর গ্রামে মৎস্যজীবী আলামিনের বসতি। বন্যায় তাঁর বাড়ি বুকসমান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বতসঘরসহ সবকিছু। জেগেছিল শুধু গরু-ছাগল রাখার ঝুপড়ি। সেটিতে ১০-১২টি গরু, কয়েকটি ছাগল আর মুরগিসহ আশ্রয় নিয়েছে আলামিনের পরিবার। সেই ঝুপড়িতে দেখা মেলে তাঁর ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আইরিনের। সঙ্গে তিন বছরের শিশুসন্তান আর কিশোরী ননদ।
সংবাদকর্মী দেখে অনেকটা অপ্রস্তুত আইরিন বলেন, ‘ঘরে থাকনের কোনো উপায় নাই। সবাই মিলে গরুর ঘরে থাকি। এহানেই রান্ধি, এহানেই খাই। বৃষ্টি এলে বইসা থাকতে হয়, ঘুমাতেও পারি না। খাওয়ার পানির খুব কষ্ট।’
গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবার যে কোনো উপায় নেই, তা চারদিক দেখে বোঝা যায়। তবু বিব্রতকর প্রশ্ন করি আইরিনকে। তিনি বলেন, ‘কোনো উপায় নাই। মাইনা চলন লাগে। বেশি সমস্যা হইলে নৌকা নিয়া হেই মোল্লাহাটে যাওন লাগে। এহানে কেউ সেবা দিতে আহে না।’
শুধু রূপবানু, শাহিনুর কিংবা আইরিন নন; বন্যাদুর্গত কুড়িগ্রামের প্রতিটি পরিবারের নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা ও স্যানিটেশন সুবিধার নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু এসব ভোগান্তি নিয়ে তাদের আওয়াজ কারও কানে পৌঁছায় না। তা বানের জলে ভেসে যায় নদী থেকে সাগরে।
মানুষ স্বপ্নবাজ প্রাণী। যুদ্ধ ও সংঘাতময় পৃথিবীতে ভিটে চ্যুত মানুষও স্বপ্ন দেখে। এই স্বার্থ আর সংঘাতময় পৃথিবীতে মানুষ তার জীবনের চেয়েও বড়। নইলে বেঁচে থাকে কীভাবে! বিশ্ব শরণার্থী দিবসে তেমনি কিছু নারীর গল্প রইল, যাঁরা উদ্বাস্তু জীবনেও স্বপ্ন দেখেছেন জীবনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
২ দিন আগেকারও কোলে শিশুসন্তান, কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কারও হাতে স্যালাইনের ক্যানুলা। চাকরি বাঁচাতে এই অবস্থায় ২১ দিন ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছেন তাঁরা। করবেন নাই-বা কেন, তাঁদের কেউ সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কারও বেতনের টাকায় চলছে পরিবারের অসুস্থ সদস্যের চিকিৎসা; কেউ আবার বেতনের টাকায় সন্তানের জন্য...
৪ দিন আগেযুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা এবং দৈনন্দিন আতঙ্ক ইসরায়েলি নারীদের গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে এমন তথ্যের আভাস পাওয়া গেছে।
৪ দিন আগেঅনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় মাত্র ২০ হাজার টাকায় বোরকার ব্যবসা শুরু করেন। ডিজাইন, কাপড় সংগ্রহ, ডেলিভারি—সবই এক হাতে সামলাতেন তিনি। বর্তমানে ঢাকায় তাঁর দুটি শোরুম রয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণ বহু আগেই কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আমেরিকা, কানাডা, জাপান, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে...
৪ দিন আগে