Ajker Patrika

যেকোনো পরিস্থিতিতে মন স্থির রাখুন

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০: ১২
যেকোনো পরিস্থিতিতে মন স্থির রাখুন

জীবনে চলার পথে সমস্যার শেষ নেই। এমন এক সময় আসে, যখন নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। এতে অনেক সময় নারীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন; পাশাপাশি আইনি জটিলতার মুখোমুখিও হন তাঁরা। আজ থাকছে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ...

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিনআইনি বিষয়ে পরামর্শ 

পরামর্শ দিয়েছেন,ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বিয়ে হয়েছে দুই বছর হলো। নিজেরা পছন্দ করলেও পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। কিন্তু ছয় মাস আগে বিয়ে ভেঙে যায়। মিউচুয়াল ডিভোর্স হলেও সাবেক স্বামীর ইচ্ছাতেই এ বিচ্ছেদ হয়েছে। তবে সে বিচ্ছেদের বিষয়ে নিজের দোষ ঢাকার জন্য আমার চরিত্র নিয়ে আজেবাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে। যদিও এসব কথার বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। কর্মস্থলেও এসবের কারণে আমাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এখন আমি কী করতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নড়াইল

একজন ব্যক্তির সম্মানের প্রতি অসম্মান করা হলে বা সম্মান বিষয়ে হানিকর কিছু বলা হলে সেটিকে সাধারণ অর্থে মানহানি বলা হয়। এখানে আপনার ক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট যে আপনার সাবেক স্বামী আপনার মানহানি করেছেন।

পেনাল কোড ৪৯৯ ধারার বিধানমতে, যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কিংবা তার খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট হবে জানা সত্ত্বেও অথবা তার বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও কথিত বা পঠিত হওয়ার জন্য অভিপ্রেত কথা কিংবা চিহ্ন দ্বারা বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে সে ব্যক্তি-সম্পর্কিত কোনো নিন্দাবাদ প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তবে সেই ব্যক্তি ওই অপর ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে গণ্য হবে।

এ ক্ষেত্রে আপনি দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী মানহানির মামলা করতে পারেন। মানহানি একই সঙ্গে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধ। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৫০০ ধারা অনুযায়ী, মানহানির অপরাধের শাস্তি দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড। ফৌজদারি আদালতে নালিশি মামলা হিসেবে অভিযোগ করতে হবে। আদালতে অভিযোগ করে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলা করতে হবে। আদালত সমন জারি করবেন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মানহানির মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দিলে আদালতে হাজির হয়ে জামিন না চাইলে সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

মানহানির মামলা যে শুধু ফৌজদারি হবে, তা কিন্তু নয়। কেউ আপনার মানহানি করলে যদি সেটি আপনার আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে, তাহলে আপনি তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করতে পারবেন। আপনি যেমন বললেন, আপনার চাকরির জায়গায় অসুবিধা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যদি আপনি আর্থিক কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে ক্ষতিপূরণ দাবি করে দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা দায়েরের সুযোগ আপনার রয়েছে। এই মোকদ্দমা দায়ের করতে হলে ক্ষতিপূরণের টাকার মূল্যের ওপর কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। তবে বিচারপদ্ধতি দেওয়ানি মোকদ্দমার মতোই। মামলায় আপনি জয়ী হলে আপনার সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ আদায় করতে পারেন।

ডা. ফারজানা রহমানমানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ 

পরামর্শ দিয়েছেন, ডা. ফারজানা রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

আমার বয়স ৪৪ বছর। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আমার ১২ বছরের একটি ছেলে আছে। এক বছর ধরে আমি বর্তমান সময়ের কথা ভুলে যাচ্ছি। কিন্তু এ সময়ে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। এমনকি জন্মের ছয় মাস সময়ের কথা মনে আর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কিন্তু গতকাল রাতে কী করেছি, সেটা সকালে ভুলে গেছি। এই সমস্যার কারণে স্বামী আর সন্তানের সামনে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ছি। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মরিয়ম, সাভার

আপনি কি ইদানীং কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন? পরিবার বা আপনার পেশাগত জীবনে এ জন্য কোনো ঝামেলা হচ্ছে? আপনার কি হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের কোনো সমস্যা আছে? আপনার ভুলে যাওয়ার মূল কারণটি আগে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। টেস্টগুলোর রেজাল্ট পেলে সমাধান দেওয়া সহজ হতো। রুটিন মেডিকেল চেকআপ দরকার। অনেক কারণে আমরা ভুলে যাই। বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, মাদকাসক্তি অথবা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক, মানসিক বা স্নায়ুর কোনো সমস্যা ভুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তাই আপনার ভুলে যাওয়ার সঠিক কারণ পাওয়া গেলে উত্তর দেওয়া সহজ হবে।

দুই মাসে আমার সন্তান মারা যায়। সে দেখতে ঠিক আমারই মতো হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, মেয়ে চলে যাওয়ার ঠিক তিন মাসের মাথায় মেয়ের বাবা আমাকে ছেড়ে চলে যায়। ভেঙে পড়া কাকে বলে, আমি জানি না। এখন সব ফাঁকা লাগে। সব সময় শুধু কান্না পায়। দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ করে বসে থাকি। কী করব জানি না। সব এক নিমেষে শেষ হয়ে গেছে। ভালো থাকতে চাই। আমার এখন কী করা উচিত?
ফারিয়া, সুনামগঞ্জ

প্রিয়জনের চিরবিদায়ের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তবে আপনি যে ভালো থাকতে চাইছেন, এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয়। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা বা শখের বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। নতুন কোনো কোর্সে ভর্তি হতে পারেন; অর্থাৎ নিজের পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারেন।

আপনি জীবনের এই সময়টা মোকাবিলা করছেন খুব সাহসিকতার সঙ্গে। আপনার এই অদম্য মনোবলের প্রশংসা করছি। আপনি আপনার ইতিবাচক মনোভাবের জন্য ভালো থাকবেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত