Ajker Patrika

সমানাধিকারের লড়াই চলছে বিশ্বময়

ফিচার ডেস্ক
সমানাধিকারের লড়াই চলছে বিশ্বময়

বিশ্বব্যাপী নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখন আর শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি একটি দেশের সামাজিক অগ্রগতির পরিমাপকও বটে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের তথ্য বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীরা বিভিন্ন খাতে যুক্ত হয়ে জাতীয় উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কোনো একক পরিমাপকের ওপর নির্ভর করে না। এটি নির্ধারিত হয় সমাজের মূল্যবোধ, সরকারি নীতিমালা, সংস্কৃতি ও কর্মপরিবেশের সমন্বয়ে। নারীর জন্য সঠিক কর্মপরিবেশ দেওয়ার দিক থেকে ইউরোপীয় দেশগুলো উদাহরণ হতে পারে উন্নয়নশীল দেশের জন্য। কারণ, সেখানে নারীদের জন্য যে সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল নীতির কারণে নয়; বরং সেটি দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও সামাজিক সচেতনতার ফল। নারীর কাজের পরিবেশ শুধু একটি চাকরির বিষয় নয়, এটি একধরনের স্বাধীনতা, যা জাতি গঠনের পূর্বশর্ত।

নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেশি, এমন ৩০টি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। জরিপটি ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে করা হয়েছে, যাঁরা কাজ করছেন বা কাজ খুঁজছেন।

এ তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, খুব গরিব অথবা খুব ধনী দেশগুলোতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেশি। কিন্তু মাঝারি আয়ের দেশে তা তুলনামূলকভাবে কম। যেমন আইসল্যান্ড উচ্চ আয়ের দেশ আর মাদাগাস্কার নিম্ন আয়ের দেশ। দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের দেশ হয়েও নারীদের কর্মসংস্থান হারের দিক থেকে দেশ দুটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। বিশ্বব্যাপী সমতা নিশ্চিত করতে হলে, সব দেশেই নারীদের জন্য উপযোগী ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি।

আফ্রিকান দেশগুলোতে নারীরা মূলত কৃষিকেন্দ্রিক কাজে নিয়োজিত। যেমন মাদাগাস্কারে কর্মজীবী ৮৪ শতাংশ নারীর বেশির ভাগ চায়ের খামারে কাজ করেন। তানজানিয়ায় ৮২ শতাংশ কর্মজীবী নারীর মধ্যে বেশির ভাগই মাছ প্রক্রিয়াজাত ও কৃষিকাজে এবং নাইজেরিয়ার কর্মজীবী নারীরা হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় সক্রিয়। যদিও এসব কাজের অনেকটাই আনুষ্ঠানিক খাতের বাইরে। তারপরও পরিবার ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে নারীরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, স্বাবলম্বী নারীদের মহাদেশ আফ্রিকা।

এশিয়ায় নারী শ্রমশক্তির চিত্র দ্বিমুখী। উত্তর কোরিয়ায় সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ নারী কাজ করেন প্রধানত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কারখানায়। কম্বোডিয়া, কাজাখস্তান ও জাপানে নারীরা পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও প্রযুক্তি খাতে যুক্ত। উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশের নারীরা কাজ করলেও খাতভেদে ভিন্নতা লক্ষণীয়। উন্নত এশীয় দেশগুলোতে নারীরা প্রযুক্তিনির্ভর কাজ করলেও দরিদ্র দেশে তাঁরা পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

ইউরোপে নারীরা তুলনামূলকভাবে সমান সুযোগ ও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশে কাজ করছেন। আইসল্যান্ড, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসে নারীরা প্রশাসন, গবেষণা, প্রযুক্তি ও খেলাধুলার মতো আনুষ্ঠানিক খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের নারীরা কৃষি ও উদ্যোক্তা খাতে দক্ষ ও পেশাদার শ্রমিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছেন। সেখানে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের মিলনে গড়ে উঠছে নারীশক্তি। সেই অঞ্চলে নারীরা কৃষি, খামার ব্যবস্থাপনা এবং হস্তশিল্পে দক্ষভাবে যুক্ত। তাঁরা শুধু শ্রমিক নন, উদ্যোক্তাও বটে।

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে নারীরা হস্তশিল্প ও খামার ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় নারীরা হসপিটালিটি, প্রক্রিয়াজাত শিল্পে সক্রিয়। যদিও এই অংশগ্রহণের হার ইউরোপ বা আফ্রিকার তুলনায় কম। বাহামাসে ৭৬ শতাংশ নারী হোটেল ও উৎপাদন খাতে যুক্ত, যা শহুরে জীবনে নারীদের অংশগ্রহণের প্রমাণ।

বিশ্বের ধনী ও গরিব—উভয় দেশের নারীরা কর্মক্ষম হলেও তাঁদের কাজের ধরন, পরিবেশ ও স্বীকৃতিতে রয়েছে বড় ধরনের বৈচিত্র্য। নারীর শ্রমশক্তিকে সম্মান ও সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে একটি জাতি—এটিই এই বৈশ্বিক চিত্রের মূল বার্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত