সকাল সাতটা। রোজার আগমুহূর্তে পর্যটকশূন্য কক্সবাজার। হোটেল থেকে বের হয়ে লাবণী পয়েন্টের দিকে হাঁটতে থাকি। আজ আকাশটা ভীষণ নীল, সাগরপাড়েও আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। আশপাশে মানুষ বলতে শুধু আমিই। হঠাৎ সাগরে চোখ পড়ে কয়েকজন সার্ফারের দিকে। তাদের বয়স ১০ থেকে ১৩-এর কোঠায়। ঘণ্টাখানেক ঢেউয়ের বুকে দাপিয়ে সার্ফিং করে সাগর থেকে উঠে আসে তারা। তারপর সৈকতের ঝালমুড়ির হকারের ওপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে! ক্ষুধা পেয়েছে প্রচণ্ড। মুড়ি খাওয়া শেষ হলে তাদের পিছু নিলাম। সবার সঙ্গে আমার গন্তব্যও লাবণী পয়েন্টের জেলা প্রশাসন মার্কেট। বাংলাদেশ সার্ফ গার্লস অ্যান্ড বয়েজ ক্লাবের হয়ে সার্ফিং করে তারা। সেখানে গিয়েই পরিচয় হয় তাদের প্রশিক্ষক রাশেদ আলমের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই ২০১৩ সাল থেকে ক্লাবটির যাত্রা শুরু। রাশেদ জানান, ১৪ জন মেয়ে এবং ২০ জন ছেলেকে বর্তমানে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী রাশেদ সব ফেলে চলে এসেছেন দেশের টানে। যে সমুদ্রসৈকতে তাঁর বেড়ে ওঠা, তাকে উপেক্ষা করে মার্কিন মুলুকে তাঁর মন টেকেনি। নিজ প্রচেষ্টা ও বন্ধুদের সহায়তায় করছেন এক কঠিন সংগ্রাম। তিনি পরিচয় করিয়ে দেন সার্ফারদের সঙ্গে। সেখানেই ছিলেন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় সার্ফিং টুর্নামেন্টে পুরুষ সিনিয়র বিভাগের চ্যাম্পিয়ন আবদুল মান্নান এবং নারী বিভাগের চ্যাম্পিয়ন ফাতেমা।
কথা হয় ফাতেমার সঙ্গে। রাশেদের মাধ্যমে সার্ফিংয়ের হাতেখড়ি তার ২০১৯ সালের শেষে। তাকে সাগরে নিয়ে আসাটা ছিল বিশাল এক সংগ্রামের। কক্সবাজার শহরের গুণারপাড়ার এক দরিদ্র পরিবারে ফাতেমার জন্ম। এক ভাই, তিন বোনের সবার ছোট ফাতেমা। তাই অনেক আদরের। যে পরিবারটি দিন এনে দিন খায়, সেই পরিবারের একটি মেয়ে এই বিলাসী খেলায় সময় নষ্ট করবে, তা প্রথমে চায়নি ফাতেমার পরিবার। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে ছোট্ট ফাতেমা ঠিকই চলে আসত সাগরে। সে যখন ঢেউকে বশ বানাতে শুরু করল, তখন থেকে পরিবারের সহযোগিতা বাড়তে থাকে। মা সারা খাতুন মেয়ের জন্য হয়ে ওঠেন বড় সমর্থক। প্রতিবেশীদের টিপ্পনীর পরেও মা একটুও টলেননি। মেয়েকে সব সময় জুগিয়েছেন সাহস। সকালে হাতে গুঁজে দিয়েছেন অন্তত পাঁচ টাকার একটা কয়েন।
ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করি, সে কি জানে, সে একজন চ্যাম্পিয়ন? আমাদের তারকা? চোখে বিস্ময় নিয়ে ফাতেমার প্রশ্ন, তারকা কিতা? সাগরে ফাতেমা যতটা ক্ষিপ্র ও কৌশলী, পাড়ে সে ঠিক ততটাই উল্টো এক লাজুক বালিকা। তবে এ বয়সেই বুঝে গেছে, তার কাছে সার্ফিং খেলার চেয়েও বেশি কিছু। তার কাছে সার্ফিং প্রার্থনার মতো। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমার আত্মবিশ্বাস দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। সাগরের ঢেউকে বশ করার কায়দা যে রপ্ত করেছে, সে-ই তো বলতে পারে, ‘ভাইয়া, আমার সঙ্গে বিদেশেও কেই ফারব না।’
সার্ফিং প্রচণ্ড শক্তির খেলা, বুদ্ধির খেলা। তাই শরীর ঠিক রাখতে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত প্রোটিন ও পুষ্টির। কিন্তু সাগরপাড়ের ফেরিওয়ালা পরিবারগুলোর অভাবের সংসারে নুন আনতেই যেখানে পান্তা ফুরায়, সেখানে প্রোটিন আর পুষ্টির চাহিদা মিটবে কীভাবে? তাই পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি কিংবা একটা বনরুটিতেই তাদের মেটাতে হয় প্রোটিন ও পুষ্টির চাহিদা। এ যেন ঢেউ বশ মানানোর কায়দার মতোই শরীর বশ মানানোর কায়দা!
প্রোটিন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের চিন্তা যেমন আছে, তেমনি আছে বাল্যবিবাহ ঠেকানোর চিন্তা। চিন্তিত রাশেদ আলম জানালেন, দরিদ্র পরিবারের এই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সেই। প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পাঁচ-ছয় বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর একজন তৈরি সার্ফারের যখন বিয়ে হয়ে যায়, তখন তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না রাশেদের মতো মানুষদের।
ফিরতি পথ ধরি। উচ্ছল ফাতেমার মুখ অদৃশ্য হয়ে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে চিন্তিত রাশেদের মুখ।
সকাল সাতটা। রোজার আগমুহূর্তে পর্যটকশূন্য কক্সবাজার। হোটেল থেকে বের হয়ে লাবণী পয়েন্টের দিকে হাঁটতে থাকি। আজ আকাশটা ভীষণ নীল, সাগরপাড়েও আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। আশপাশে মানুষ বলতে শুধু আমিই। হঠাৎ সাগরে চোখ পড়ে কয়েকজন সার্ফারের দিকে। তাদের বয়স ১০ থেকে ১৩-এর কোঠায়। ঘণ্টাখানেক ঢেউয়ের বুকে দাপিয়ে সার্ফিং করে সাগর থেকে উঠে আসে তারা। তারপর সৈকতের ঝালমুড়ির হকারের ওপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে! ক্ষুধা পেয়েছে প্রচণ্ড। মুড়ি খাওয়া শেষ হলে তাদের পিছু নিলাম। সবার সঙ্গে আমার গন্তব্যও লাবণী পয়েন্টের জেলা প্রশাসন মার্কেট। বাংলাদেশ সার্ফ গার্লস অ্যান্ড বয়েজ ক্লাবের হয়ে সার্ফিং করে তারা। সেখানে গিয়েই পরিচয় হয় তাদের প্রশিক্ষক রাশেদ আলমের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই ২০১৩ সাল থেকে ক্লাবটির যাত্রা শুরু। রাশেদ জানান, ১৪ জন মেয়ে এবং ২০ জন ছেলেকে বর্তমানে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী রাশেদ সব ফেলে চলে এসেছেন দেশের টানে। যে সমুদ্রসৈকতে তাঁর বেড়ে ওঠা, তাকে উপেক্ষা করে মার্কিন মুলুকে তাঁর মন টেকেনি। নিজ প্রচেষ্টা ও বন্ধুদের সহায়তায় করছেন এক কঠিন সংগ্রাম। তিনি পরিচয় করিয়ে দেন সার্ফারদের সঙ্গে। সেখানেই ছিলেন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় সার্ফিং টুর্নামেন্টে পুরুষ সিনিয়র বিভাগের চ্যাম্পিয়ন আবদুল মান্নান এবং নারী বিভাগের চ্যাম্পিয়ন ফাতেমা।
কথা হয় ফাতেমার সঙ্গে। রাশেদের মাধ্যমে সার্ফিংয়ের হাতেখড়ি তার ২০১৯ সালের শেষে। তাকে সাগরে নিয়ে আসাটা ছিল বিশাল এক সংগ্রামের। কক্সবাজার শহরের গুণারপাড়ার এক দরিদ্র পরিবারে ফাতেমার জন্ম। এক ভাই, তিন বোনের সবার ছোট ফাতেমা। তাই অনেক আদরের। যে পরিবারটি দিন এনে দিন খায়, সেই পরিবারের একটি মেয়ে এই বিলাসী খেলায় সময় নষ্ট করবে, তা প্রথমে চায়নি ফাতেমার পরিবার। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে ছোট্ট ফাতেমা ঠিকই চলে আসত সাগরে। সে যখন ঢেউকে বশ বানাতে শুরু করল, তখন থেকে পরিবারের সহযোগিতা বাড়তে থাকে। মা সারা খাতুন মেয়ের জন্য হয়ে ওঠেন বড় সমর্থক। প্রতিবেশীদের টিপ্পনীর পরেও মা একটুও টলেননি। মেয়েকে সব সময় জুগিয়েছেন সাহস। সকালে হাতে গুঁজে দিয়েছেন অন্তত পাঁচ টাকার একটা কয়েন।
ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করি, সে কি জানে, সে একজন চ্যাম্পিয়ন? আমাদের তারকা? চোখে বিস্ময় নিয়ে ফাতেমার প্রশ্ন, তারকা কিতা? সাগরে ফাতেমা যতটা ক্ষিপ্র ও কৌশলী, পাড়ে সে ঠিক ততটাই উল্টো এক লাজুক বালিকা। তবে এ বয়সেই বুঝে গেছে, তার কাছে সার্ফিং খেলার চেয়েও বেশি কিছু। তার কাছে সার্ফিং প্রার্থনার মতো। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমার আত্মবিশ্বাস দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। সাগরের ঢেউকে বশ করার কায়দা যে রপ্ত করেছে, সে-ই তো বলতে পারে, ‘ভাইয়া, আমার সঙ্গে বিদেশেও কেই ফারব না।’
সার্ফিং প্রচণ্ড শক্তির খেলা, বুদ্ধির খেলা। তাই শরীর ঠিক রাখতে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত প্রোটিন ও পুষ্টির। কিন্তু সাগরপাড়ের ফেরিওয়ালা পরিবারগুলোর অভাবের সংসারে নুন আনতেই যেখানে পান্তা ফুরায়, সেখানে প্রোটিন আর পুষ্টির চাহিদা মিটবে কীভাবে? তাই পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি কিংবা একটা বনরুটিতেই তাদের মেটাতে হয় প্রোটিন ও পুষ্টির চাহিদা। এ যেন ঢেউ বশ মানানোর কায়দার মতোই শরীর বশ মানানোর কায়দা!
প্রোটিন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের চিন্তা যেমন আছে, তেমনি আছে বাল্যবিবাহ ঠেকানোর চিন্তা। চিন্তিত রাশেদ আলম জানালেন, দরিদ্র পরিবারের এই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সেই। প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পাঁচ-ছয় বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর একজন তৈরি সার্ফারের যখন বিয়ে হয়ে যায়, তখন তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না রাশেদের মতো মানুষদের।
ফিরতি পথ ধরি। উচ্ছল ফাতেমার মুখ অদৃশ্য হয়ে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে চিন্তিত রাশেদের মুখ।
বান্দরবানের থানচিতে ৫ মে সকালে পাহাড়ের জুমখেতে ধান রোপণ করতে গিয়েছিলেন এক খেয়াং নারী। দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তিনি আর ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা বিকেলে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে নির্মাণাধীন থানচি-রেমাক্রি-লেইক্রি সড়কের পাশের একটি নালায় তাঁর লাশ খুঁজে
১ দিন আগেবাকি দুনিয়ার কাছে নাম না জানা কাবুলের এক সরু গলির ভেতর অখ্যাত এক স্কুলে সংগোপনে হয়ে গেল দুই দিনের এক প্রদর্শনী। কাবুল শুনেই বুঝতে পারছেন, সেখানে এসব প্রদর্শনী সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেটি হয়ে গেল।
১ দিন আগেআমার মামারা মায়ের সম্পত্তি দিচ্ছেন না। দিই-দিচ্ছি করে ঘোরাচ্ছেন অনেক বছর ধরে। এই কাজ কীভাবে করা সম্ভব? মায়ের নামে জমি খারিজ করতে গেলে মামাদের এনআইডি লাগবে। কীভাবে সেটা বের করতে পারি?
১ দিন আগেশিশুরা ভালোভাবে তখন শেখে, যখন তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলোকে তাদের নিজস্ব ধারণার মাধ্যমে বুঝতে দেওয়া হয়। নিজস্ব ধারণা এবং আগ্রহ বিকাশের সুযোগ দেওয়া হলে শিশুরা কেবল জ্ঞান অর্জন করবে না, বরং সেই জ্ঞানকে ব্যবহার করাও শিখবে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ১৯১৫ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে একটি স্কুল খোলা হয়।
১ দিন আগে