Ajker Patrika

মরুভূমি নাকি হ্রদের রাজ্য

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৩, ১৮: ০৪
মরুভূমি নাকি হ্রদের রাজ্য

লিনসয়েস মারেনিসিস জাতীয় উদ্যানে হাজির হলে একে আশ্চর্য সুন্দর এক স্বপ্ন ভেবে গায়ে একটা চিমটি কাটতেই পারেন। বালুর রাজ্যে একটু পরপরই এখানে ছেদ টেনে গেছে একটার পর একটা সবুজ কিংবা নীল হ্রদ। এটা কি মরুভূমি নাকি হ্রদের এক রাজ্য ভেবে ধন্দে পড়বেন। তবে বালিয়াড়ি আর হ্রদ মিলেমিশে যে রীতিমতো অপার্থিব এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে, তা অস্বীকার করতে পারবেন না কোনোভাবেই। 

ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মারাইনোতে অবস্থান ৫৯৮ বর্গমাইল আয়তনের জাতীয় উদ্যানটির। প্রথম দেখায় জায়গাটিকে একটি মরুভূমি বলে মনে করেন, তবে দোষ দেওয়া যাবে না আপনাকে। তবে একে সে অর্থে মরুভূমি বলতে পারবেন না আপনি। এখানকার বালিয়াড়িগুলোর মাঝখানে লুকিয়ে আছে আশ্চর্য সুন্দর সব ল্যাগুন বা হ্রদ। কাছাকাছি গেলেই পরিষ্কার হবে বিষয়টা। এ ধরনের ল্যাগুনের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। আর এখানকার কোনো কোনো বালিয়াড়ির উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি। তাই কখনো কখনো বালিয়াড়ির কারণে দূর থেকে হ্রদগুলো ঠাহর না-ও করতে পারেন। 

বালিয়াড়ি আর হ্রদ মিলেমিশে রীতিমতো অপার্থিব এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। ছবি: ফেসবুকআমাজন অববাহিকার ঠিক বাইরে হওয়ায় এখানে বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হয়। বালিয়াড়ির মাঝখানে জমা বৃষ্টির পানি জন্ম দেয় স্বচ্ছ নীল ও সবুজ ল্যাগুন বা হ্রদের। মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গেলেই মূলত অসাধারণ এই বৈচিত্র্যময় রূপ দেখতে পারবেন জাতীয় উদ্যানটির। তখন আবহাওয়া থাকে রৌদ্রোজ্জ্বল, ল্যাগুন থাকে পানিতে টইটুম্বুর। 

পর্যটকদের কাছেও প্রিয় এক জায়গা লিনসয়েস মারেনিসিস জাতীয় উদ্যান। ছবি: ফেসবুকআশ্চর্যজনক হলেও জায়গাটি নানা ধরনের মাছের আবাসস্থল। কিন্তু কথা হলো, শুকনো মৌসুমে সবগুলো ল্যাগুন বা হ্রদই মোটামুটি অদৃশ্য হয়। তাহলে বর্ষায় এভাবে মাছে ভরে যায় কীভাবে এগুলো? পাখিরা সাগর থেকে মাছের ডিম বয়ে আনা। নানাভাবেই আসে পাখিদের মাধ্যমে এই ডিম, পায়ের সঙ্গে লেগে পালকের সঙ্গে আটকে। এমনকি মাছের ডিম ছড়াতে পারে পাখির মলের মাধ্যমে। পার্কটির বৈচিত্র্য আরও বাড়িয়েছে পামগাছ। 

এবার বরং জাতীয় উদ্যানটি এর নাম কীভাবে পেল তা জেনে নেওয়া যাক। পর্তুগিজ শব্দ লিনসয়েসের অর্থ বিছানার চাদর। সে হিসেবে এর নামের অর্থ মারাইনোর বিছানার চাদর। নিশ্চয় কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না এমন নামের। আকাশ থেকে কিংবা ড্রোনে জায়গাটিকে দেখলে তবেই বুঝতে পারবেন বিষয়টি। মনে হয় যেন একটার পর একটা চাদর ফেলে রাখা হয়েছে জলার বুকে। 

বালিয়াড়িগুলোর মাঝখানে তৈরি হয়েছে আশ্চর্য সুন্দর সব ল্যাগুন। ছবি: ফেসবুকহাজার হাজার বছরে জন্ম লিনসয়েস মারেনিসিস জাতীয় উদ্যানের। পারনায়িবা ও প্রেগিসাস নদীর বিপুল পলি এসে জমা হয় নদীমুখে। তারপর আটলান্টিক মহাসাগরে। ঢেউয়ে এবং প্রবল বাতাসে এগুলো কয়েক মাইল দূরে নিয়ে আসে। এভাবেই জন্ম হয় বালিয়াড়ির। এদিকে এখানকার মিষ্টি পানির ল্যাগুন বা হ্রদগুলোর পানি বালুর নিচের শক্ত পাথরের কারণে চুইয়ে অন্য কোনো দিকে চলে যেতে পারে না। ব্যাস, সব মিলিয়ে অসাধারণ এক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ মিলে যায় মানুষের। 

মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গেলেই মূলত জায়গাটির সৌন্দর্য বেশি উপভোগ করতে পারবেন। ছবি: ফেসবুকহ্রদগুলোর আয়তন, গভীরতা এবং কোন কোণে আলো পড়ছে—এসবের ওপর নির্ভর করে এদের জলের রঙে ভিন্নতা থাকে। গাঢ় নীল থেকে শুরু করে স্বচ্ছ সবুজ এমনকি গাঢ় নীল জলের হ্রদও চোখে পড়ে। 

তবে আশ্চর্য সুন্দর এই বালু-জলময় রাজ্যে যাওয়াটা খুব সহজ কাজ নয়। প্রথমে উড়োজাহাজে করে সাও পাওলোর মারেশাও কুইয়া মাশাডো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়ে যাবেন। সেখান থেকে প্রতিদিন চারবার বাস ছাড়ে নদীতীরের ছোট্ট শহর বাহেইরিয়াস। সময় লাগে ঘণ্টা পাঁচেক। এই শহরটিকে বলতে পারতেন জাতীয় উদ্যানটির প্রধান প্রবেশদ্বার। আবার সাও লুইস থেকে গাড়িতে পৌঁছাতে পারবেন সান্তো আমারোয়। সেখান থেকেও পার্কটিতে যাওয়া যায়। 

হ্রদগুলোর পানি বালুর নিচের শক্ত পাথরের কারণে চুইয়ে অন্য কোনো দিকে চলে যেতে পারে না। ছবি: ফেসবুকপার্কটিতে ট্র্যাকিং, স্কাই ডাইভিং (বছরের নির্দিষ্ট সময়), ফোর হুইলার গাড়িতে ভ্রমণসহ নানা ধরনের প্যাকেজ আছে ট্যুর অপারেটরদের। তবে বিশাল এই জায়গাটিতে হেঁটে যান কী ফোর হুইলারে চেপে, নিজের মুখ থেকে শুরু কর গাড়ি সবকিছুই যে বালুময় হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। 

জাতীয় উদ্যানটির কোনো কোনো ল্যাগুন বিশাল। লাগোয়া বনিতা কিংবা লাগোয়া আজুয়ার অবস্থান বাহেইরিয়াস শহরের কাছে। আতিনস গ্রামের কাছে অবস্থিত লাগোয়া ট্রপিক্যালও দেখার মতো জায়গা। লাগোয়া দ্য গাইভোতা (সিগ্যাল ল্যাগুন) পার্কের সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর হ্রদগুলোর একটি। 

সূত্র: সিএনএন, অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, আনইউজাল প্লেসেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত