Ajker Patrika

ভাড়া ৩ পয়সা কমায় ‘প্রাচীন মুদ্রার সন্ধানে’ নেমেছেন বাস কন্ডাক্টররা

আব্দুর রহমান, ঢাকা
ভাড়া ৩ পয়সা কমায় ‘প্রাচীন মুদ্রার সন্ধানে’ নেমেছেন বাস কন্ডাক্টররা

দেশে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা ২৫ পয়সা কমায় গণপরিবহন বিশেষ করে বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে বাস মিনিবাসের ন্যূনতম ভাড়া যথাক্রমে ১০ ও ৮ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ এটিকে যৌক্তিক সমন্বয় বললেও এই ভাড়া কমানোর বিষয়টি গণপরিবহন ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়!

কেন তামাশা বলছি, সেটা খোলাসা করা যাক। আমি দীর্ঘদিন রাজধানী ঢাকার কাজীপাড়া থেকে সদরঘাট রুটে নিয়মিত যাত্রী ছিলাম। এই রুটের কথাই বিবেচনা করা যাক। মিরপুর থেকে সদরঘাটের প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তায় বর্তমান ভাড়া ৩০ টাকা বা এর আশপাশেই হওয়ার কথা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে এই রুটে যদি কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা ভাড়া কমানো হয়, তাহলে ১৪ কিলোমিটারে কমবে ৪২ পয়সা। সে ক্ষেত্রে নতুন ভাড়া হবে ২৯ টাকা ৫৮ পয়সা। এখন প্রশ্ন হলো, নতুন ভাড়া অনুসারে এই রুটের কোনো যাত্রী ৫০ টাকার নোট দিলে কন্ডাক্টর তাঁকে কত টাকা ফেরত দেবেন? 

হিসাব অনুসারে, যাত্রী ৫০ টাকা দিলে ২০ টাকা ৪২ পয়সা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু কন্ডাক্টর এই ৪২ পয়সা খুচরা কোথায় পাবেন? বাংলাদেশে কি ১ টাকার নিচে কোনো পয়সা এখন পাওয়া যায়? স্মৃতি হাতড়ে বলতে পারি, বাংলাদেশে ৪ আনা বা ২৫ পয়সার মুদ্রাও উঠে গেছে বোধহয় দুই যুগ আগে। ৫ পয়সা অচল হয়ে পড়েছে গত শতাব্দীর শেষ দিকেই। আমরা যারা ২৮ / ৩০ বছর বয়সী তাদের স্মৃতিতে সম্ভবত ১ পয়সা বা দুই পয়সা তো দূরের কথা, ৫ পয়সা বা ১০ পয়সাও থাকার কথা নয়। বাস্তবিক অর্থে যে পয়সার প্রচলন নেই সে পয়সার গুণিতকে ভাড়া কমানোর বিষয়টি কেবল হাস্যকরই নয়, নাগরিকদের প্রতি উপহাসের নামান্তর!

কোনো যাত্রী যদি নতুন নির্ধারিত ভাড়া অনুসারে ন্যূনতম এক টাকা ফেরত পেতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁকে ৩৩ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে হবে। আবার ইদানীং এক টাকাও খুব বেশি দেখা যায় না। ফলে দুই টাকা ফেরত পেতে চাইলে যেতে হবে সাড়ে ৬৬ কিলোমিটারের বেশি। আর পাঁচ টাকা ফেরত পেতে চাইলে যেতে হবে ১৬৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ, ঢাকার আশপাশে যারা থাকেন তাঁদের কদাচিৎ দু–এক টাকা ফেরত পাওয়ার সৌভাগ্য হতে পারে! 

যারা দূরপাল্লার যাত্রী, তাঁরাও খুব একটা সুবিধা পাবেন বলে মনে হয় না। উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে ঢাকা–জামালপুর রুটে বাসের কথা। এই রুটের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। সেই বিবেচনায় ৫ টাকার কিঞ্চিৎ বেশি ভাড়া কমবে। সড়ক পথে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া থেকে সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফের দূরত্ব প্রায় ৯২০ কিলোমিটার। এই রুটে সর্বোচ্চ ভাড়া কমবে ২৭ টাকার কিছু বেশি। 

এই কথাগুলো বলার পেছনের উদ্দেশ্য হলো, সরকার যে ভাড়া কমিয়েছে, যাত্রীদের বিবেচনায় সেটির অসারতা তুলে ধরা। জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরিপ্রেক্ষিতে গণপরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করার নৈতিক দায় থেকে সরকার হয়তো ভাড়া কমিয়েছে। এতে যে যাত্রীদের বিন্দুমাত্র লাভ হবে না তা স্পষ্ট। 

ঢাকা এবং অন্যান্য মহানগরী ও দূরপাল্লার যত বাস আছে সেখানেও খুব বেশি হেরফের হবে না। হওয়ার সুযোগই নেই। অন্তত হিসাব তা–ই বলে। 

ফলে, ভাড়া যখন কমানোই হয়েছে তখন আরেকটু সচেতনভাবে বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যাত্রীদের জন্য দৃশ্যমান সুবিধা দেয় এমন পর্যায়ে ভাড়া কমালে সেটি যৌক্তিক হতো। তা না হলে বাস কন্ডাক্টরদের এখন কয়েক দশক আগের এক পয়সা, পাঁচ পয়সা আর দশ পয়সার সন্ধানে নামতে হবে! মরিয়া হয়ে জিনের বাদশার শরণাপন্নও হতে পারেন! 

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত