Ajker Patrika

কলম্বিয়ার রংধনু নদী

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ১৯
কলম্বিয়ার রংধনু নদী

রংধনু নদী নামটা দেখেই চমকে উঠলেন! ভাবছেন নদীতে আবার এত রঙের বাহার মেলে নাকি! কিন্তু বছরের কয়েকটা মাস কলম্বিয়ার ক্যানো ক্রিস্টালস লাল, নীল, হলুদ, কমলা, সবুজ এমন নানা রঙের ছটায় বর্ণিল হয়ে ওঠে নদী। এমনটা পাবেন না আর কোথাও। তাই আদর করে কেউ একে ডাকে রংধনু নদী। কেউ আবার বলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদী। 

ক্যানো ক্রিস্টালসের অবস্থান আন্দিজ পর্বতমালার পূর্বে, মধ্য কলম্বিয়ায়। ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটিকে তরল রংধনু নামেও চেনেন কলম্বিয়ানরা। মজার ঘটনা, বিংশ শতকের বড় একটা সময় পর্যন্ত এই নদীর খোঁজ জানতেন বাইরের খুব কম মানুষই। কারণ আশপাশের এলাকায় ছিল গেরিলাদের আস্তানা। ফলে সাধারণ মানুষ কিংবা পর্যটকদের জন্য নদীটির কাছেধারে যাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। তবে একপর্যায়ে লা মেকারেনা শহর ও এর আশপাশের বড় এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে কলম্বিয়ার সেনাবাহিনী। ধুলোময় এই শহরকে বলতে পারে ক্যানো ক্রিস্টালসের প্রবেশ দুয়ার। ফলে পর্যটকদের জন্য জায়গাটি উন্মুক্ত। অনায়াসে তাঁরা এখন ঘুরে আসতে পারেন নদী ও আশপাশের এলাকা। 

কলম্বিয়ার রাজধানী বগোতা কিংবা ভিলাভিসেনসিয়ো থেকে উড়োজাহাজে চেপে পৌঁছানো যায় লা মেকারেনা বিমানবন্দরে। এটি এতই ছোট এক বিমানবন্দর যে এর মালামাল বহনের গাড়িটা টেনে নিয়ে যায় একটি খচ্চর। শহরের ভেতরে দেখার মতো খুব বেশি কিছু নেই পর্যটকদের জন্য। তাঁদের মূল আকর্ষণ রংধনু নদী। সেখানে পৌঁছানোর জন্য শহর থেকে যাত্রা শুরু করতে হয় গুয়ায়বেরো নামে অপর একটি নদী ধরে। এখান থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চেপে বসেন পর্যটকেরা। নদীর দুই তীরে দেখা মেলে উজ্জ্বল লাল রঙের টিয়াজাতীয় পাখি ম্যাকাউ এবং জোরে হুংকার করতে ওস্তাদ হাওলার বানরদের। একপর্যায়ে নৌকা থেকে নেমে পাহাড়-জঙ্গলের মাঝের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করেন ক্যানো ক্রিস্টালস নামের আশ্চর্য সুন্দর সেই নদীর দিকে। 

রংধনু নদী দেখতে এসেছেন এক পর্যটকঅনেকে ভুল করে ভাবেন ক্যানো ক্রিস্টালসের আশ্চর্য এই রং আসে শৈবাল কিংবা শ্যাওলা থেকে। তবে এ ঘটনার মূল দায় বা অবদান আসলে ম্যাকারেনিয়া ক্লেভিগেরা নামে জলজ এক ধরনের উদ্ভিদের। নানা রঙের ছটায় নদীকে বর্ণিল করে তুলতে উদ্ভিদটির উপযুক্ত পরিবেশ পেতে হয়। পানির উচ্চতা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছালে এবং সঠিক পরিমাণে সূর্যের আলো পেলে তবেই কেবল নানা রঙের ছটায় নদীটিকে বর্ণিল করে তোলে এটি। 

এক পর্যটক হাতে নিয়ে দেখছেন ম্যাকারেনিয়া ক্লাভিগেরা নামের উদ্ভিদটিকেকেবল জুন থেকে ডিসেম্বরই নদীটিতে এই রঙের খেলা দেখতে পারবেন। শুকনো মৌসুমে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত রংধনু নদী পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে। এ সময়টা এখানকার পরিবেশগত ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্যই পর্যটকদের আনাগোনা নিষিদ্ধ থাকে। পর্যটকেরা এ সময় আসবেনই বা কেন? পানির প্রবাহ কম থাকায় ম্যাকারেনিয়া ক্লেভিগেরা এ সময় বর্ণিল করে তোলে না নদীকে। 

অনেকের চোখে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদীবর্ষায় ফিকে গোলাপি থেকে গাঢ় গোলাপি কিংবা লালের ছটাই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে নদীটিতে। তবে সূর্যের আলো কম পৌঁছে এমন জায়গায় ম্যাকারেনিয়া ক্লেভিগেরা উজ্জ্বল সবুজ রং ধারণ করে। তেমনি নীল, হলুদ কিংবা কমলা রঙে রাঙিয়ে দেয় নদীটিকে। 

রংধনু নদী চলার পথে কখনো জন্ম দিয়েছে জলপ্রপাতেরমেকারেনা পর্বতমালা দক্ষিণের মালভূমি থেকে উৎপত্তির পর দ্রুত গতিতে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে নদীটি। পথে সে জন্ম দিয়েছে অনেক জলপ্রপাত, ছোট ছোট শাখা আর নানা ধরনের গর্তের। কাজেই নদীটির দুপাড় ধরে গেলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নানা বর্ণের ছটা মিলিয়ে মুগ্ধ হবেন। আবার নদীর দুপাশের চোখ জুড়ানো অরণ্যও মন কাড়বে। 

আজব নদী ক্যানো ক্রিস্টালসপর্যটকদের কাছে নতুন হলেও ক্যানো ক্রিস্টালসকে স্থানীয় বাসিন্দারা চেনেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। ‘তরল রংধনু’র আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নাম দিয়েছেন তাঁরাই। যেমন নদীর ভাটি এলাকায় একটি ছোট হ্রদ বা পুকুরের নাম রাখা হয়েছে পিসসিনা ক্যারল বা ক্যারলের পুকুর। এর নাম কীভাবে এলো? স্থানীয় এক বাসিন্দার মনে কোনো কারণে বিশ্বাস তৈরি হয়, পানিতে বাচ্চা জন্ম দেওয়া কম কষ্টের। অতএব স্ত্রীকে জলপ্রপাতের ভাটিতে শান্ত জলের সেই ছোট লেক বা পুকুরে সন্তান জন্মদানে রাজি করায়। সেখানেই জন্ম নেয় তাঁদের মেয়ে ক্যারল। 

ক্যানো ক্রিস্টালসের অবস্থান আন্দিজ পর্বতমালার পূর্বে, মধ্য কলম্বিয়ায়শুরুর দিকে পর্যটকদের জন্য কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় পরিবেশের কিছু ক্ষতি হয়। তখন নদী এলাকায় পর্যটকদের আগমন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ২০০৯ সালে পর্যটকদের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়। তবে এখন খুব কড়াকড়িভাবে কিছু নিয়ম মানা হয়। সঙ্গে স্থানীয় গাইড নিতে হয় এখন। একটি দলে সাত জনের বেশি পর্যটক যেতে পারেন না। দিনে ভ্রমণে আসতে পারেন সর্বোচ্চ ২০০ জন। নদী ভ্রমণের সময় মুখে সানস্ক্রিন মাখা কিংবা পোকামাকড় মারার ওষুধ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়ই কেবল গোসল করতে পারেন পর্যটকেরা। তবে এত সুন্দর একটি নদী দেখার জন্য এমন শত নিয়ম মানতেও আপত্তি নেই পর্যটকদের। 

সূত্র. বিবিসি,অ্যামিউজিং প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত