Ajker Patrika

সাপ ও মশাভর্তি অন্ধকার কূপে ৫৪ ঘণ্টা দেয়াল ধরে ঝুলে রইলেন চীনা নারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১৭
টানা ৫৪ ঘণ্টা এক কূপে আটকে ছিলেন এক চীনা নারী। ছবি: সংগৃহীত
টানা ৫৪ ঘণ্টা এক কূপে আটকে ছিলেন এক চীনা নারী। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব চীনে এক নারী দুর্ঘটনাক্রমে সাপ ও মশাভর্তি পরিত্যক্ত কূপে পড়ে যান। এরপর, সেখানেই ৫৪ ঘণ্টা ধরে বেঁচে থাকার লড়াই চালান। অবশেষে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এই পুরো সময়ে তিনি ক্লান্তি, মশা ও পানিতে থাকা সাপের কামড়ের সঙ্গে লড়েছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ সেপ্টেম্বর। ফুজিয়ান প্রদেশের কুয়ানঝোউয়ের বনের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে ৪৮ বছর বয়সী কুইন নামের ওই নারী হঠাৎ করে গভীর কূপে পড়ে যান। পরে সঙ্গীরা দ্রুতই টের পান যে, তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। প্রথমে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো তথ্য পাননি তাঁরা। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশের কাছে জানান।

এরপর, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। সেই সকালেই তার ছেলে সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় জিনজিয়াং রুইটং ব্লু স্কাই ইমার্জেন্সি রেসকিউ সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১০ জনের একটি উদ্ধারকারী দল পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান শুরু করে। তাদের কাছে থার্মাল ইমেজিং ড্রোনও ছিল অনুসন্ধানের কাজে সহায়তার জন্য।

দলের ক্যাপ্টেন দু শিয়াহাং জানিয়েছেন, সেদিন বেলা ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তারা হঠাৎ দুর্বল গলায় সাহায্যের ডাক শুনতে পান। সেই দিকে এগিয়ে গিয়ে দলটি ঘাস-গাছের আড়ালে ঢাকা গভীর কূপটি খুঁজে পান। উদ্ধারকারীরা দ্রুত কূপের মুখের চারপাশের উদ্ভিদ সরিয়ে কুইনকে পানির মধ্যে ভাসমান অবস্থায় দেখেন। তাঁর ফ্যাকাশে আঙুলগুলো কূপের দেওয়ালে চড়া ফাটলগুলো আঁকড়ে ধরে ছিল।

কুইন পরে জানান, সৌভাগ্যক্রমে সাঁতার জানা থাকায় কূপে পড়ার পর তিনি দ্রুতই দেয়ালের গায়ে বেরিয়ে থাকা একটি পাথর ধরে ভাসতে পেরেছিলেন। তবে কূপের অনন্য গঠনের—ওপরের দিকে সরু এবং নিচের দিকে প্রশস্ত—কারণে তিনি দেয়াল বেয়ে ওঠার শক্তি পাননি। এই অবস্থায় তিনি এক হাতে পাথরটি ধরে রাখেন এবং অন্য হাতে আরও তিনটি পাথর খুঁজে বের করে পা রাখার অস্থায়ী জায়গা বানান। দুই হাতে দেয়াল আঁকড়ে ধরে তিনি দুই দিনের বেশি সময় এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন।

কুইন স্মরণ করে বলেন, ‘অনেকবার আমি সম্পূর্ণভাবে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। কূপের তলা অন্ধকারে ঢাকা, মশা ঘিরে রেখেছিল, এমনকি কিছু সাপও সেখানে ছিল। আমি মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। একবার পানিতে থাকা সাপ আমার হাতে কামড় দিয়েছিল। ভাগ্যবশত, সেটি বিষধর ছিল না এবং কোনো গুরুতর ক্ষতি হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকবার আমি হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছি। কিন্তু তখন আমার ৭০ বছর বয়সী মা, ৮০ বছর বয়সী বাবা, আর কলেজে নতুন ভর্তি হওয়া মেয়েটির কথা মনে পড়ত। যদি আমি তাদের ছেড়ে যেতাম, তারা কী করত? এই চিন্তাই আমাকে ৫৪ ঘণ্টা টিকে থাকার শক্তি জুগিয়েছে।’

উদ্ধারের পর কুইনকে সঙ্গে সঙ্গে জিনজিয়াং সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে আরও চিকিৎসার জন্য কুয়ানঝোউ ফার্স্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ডাক্তাররা তাঁর দুটি পাঁজর ভাঙা এবং ফুসফুসে সামান্য ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ কূপের দেয়ালে আঁকড়ে থাকার কারণে তাঁর হাত গুরুতরভাবে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল এবং কয়েক দিনের মধ্যে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত