Ajker Patrika

যে শহরে একজন মানুষের বাস 

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩৮
যে শহরে একজন মানুষের বাস 

একটি শহরের জনসংখ্যা কত হতে পারে? আর যা-ই হোক, আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না কোনো শহরে কেবল একজন মানুষ বাস করেন। আশ্চর্যজনক হলেও মার্কিন মুল্লুকের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট এক শহর মনোওয়ির জনসংখ্যা এক।

দক্ষিণ ডাকোটার সীমান্ত থেকে মাইল পাঁচেক দূরে নেব্রাস্কার উত্তর সীমায় শহরটির অবস্থান। ঘাসে ঢাকা প্রেইরি অঞ্চল ও সোনালি গমের খেতের মাঝখান দিয়ে ক্লান্তিহীনভাবে চলে গেছে ধুলোময় এক পাকা সড়ক। এটি ধরেই একসময় পৌঁছে যাবেন মনোওয়িতে। এখানকার একটু উঁচু দেখে খড়ের গাড়ায় উঠে পড়লেই গোটা শহরটি আপনার নজরে চলে আসবে। তারপর শহরের রাস্তাটি ধরে একটু হাঁটতেই হয়তো বৃদ্ধ এক নারী আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। কিংবা মনোওয়ির একমাত্র সরাইখানায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হবে আপনার। জানবেন তাঁর নাম এলসি এইলার। মনোওয়ির একমাত্র বাসিন্দা তিনি।

২০০৪ সাল থেকে...

২০০৪ সালে এলসি এইলারের স্বামী রুডি মারা গিয়ে শুধু যে সরাইখানার দায়িত্ব এলসির কাঁধে চাপিয়ে দিলেন তা-ই না, গোটা শহরেরই ভার চলে এল তাঁর ওপর। একা হাতেই এখনো গোটা শহরটাই সামলাচ্ছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে এটিই একমাত্র শহর, যার জনসংখ্যা এক। আর শহরের মেয়র, ক্লার্ক, বারটেন্ডার, গ্রন্থাগারিক, দোকানি—সবকিছুই ৮৮ বছরের এই নারী। 

শহরের ঢোকার আগে মনোওয়ি ১ লেখা প্ল্যাকার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এলসি এইলার।

ভূতুড়ে শহরের মেয়র

প্রতি বছর মনোওয়ির একমাত্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মানে তাঁর সরাইখানায় এইলর মেয়র নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি বোর্ড ঝুলিয়ে দেন। তারপর ভোটের আয়োজন করেন নিজেকে মেয়র নির্বাচিত করার জন্য। একটি পৌর পরিকল্পনাও তৈরি করতে হয় তাঁকে সরকারি সহায়তা পাওয়ার জন্য। শহরের বাতি তিনটি জ্বলা ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ফিবছর ৫০০ ডলারও (আমাদের হিসাবে ৫০ হাজার টাকা) জোগাড় করতে হয় তাঁকে।  শহরের খালি ভবনগুলোর খোঁজ-খবরও রাখতে হয় এলসিকে। যদি কেউ পুরোনো দালানগুলোর কোনো একটিতে উঠতে এবং শহরের অধিবাসীর সংখ্যা দ্বিগুণ করতে চান, সে জন্য তো প্রস্তুত থাকতে হবে তাঁকে!

মনোওয়ির স্বর্ণযুগ

১৯৩০-এর দশকে এলকহর্ন রেল রোডের একটি ব্যস্ত স্টেশন ছিল মনোওয়ি। তখন ১৫০ জন মানুষের বাস ছিল ছোট্ট শহরটিতে। ছিল কিছু মুদি দোকান, রেস্তোরাঁ, এমনকি একটি জেলখানাও। শহর থেকে পোয়া মাইল দূরে একটি খামারে বেড়ে ওঠেন এলসি এইলার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় মনোওয়ির এক কামরার স্কুলভবনে রুডি এইলারের সঙ্গে পরিচয় তাঁর। দুজন বাসে চেপে সাত মাইল দূরে অবস্থিত সবচেয়ে কাছের মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও যেতেন একসঙ্গেই। রুডি মার্কিন এয়ারফোর্সে যোগ দিয়ে যখন কোরীয় যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন, এইলার তখন ক্যানসাসে একটা চাকরি করছেন। তবে সব সময়ই মনোওয়িই ছিল এলসি এইলারের বাড়ি। ফিরে এসে ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করলেন রুডিকে। তারপর দম্পতির ঘরে জন্ম নিল দুই সন্তান। তাদের লালন-পালন করতে লাগলেন এলসি এইলার। রুডি এ সময় বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল এইলারের বাবার পরিত্যক্ত সরাইখানাটি চালু করার। ১৯৭১ সালে স্বামী-স্ত্রী মিলে আবার দোর খুললেন সরাইখানার।

রুডি’জ লাইব্রেরিখালি হয়ে যাচ্ছে শহর

রুডি-এলসি এইলারের সরাইখানা মনোওয়ি টাভের্ন যখন পুনরায় চালু হলো, ততদিনে শহরটি মরতে শুরু করেছে। খামারগুলোর তখন দৈন দশা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এমনিতেও এদিককার বিশাল সমতল অঞ্চলের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছিল। ফলে মনোওয়িসহ আশপাশের শহরগুলোর বাসিন্দারা বিপুল হারে এলাকা ছাড়ছিলেন।

মনোওয়ির কাঠের গির্জায় শেষ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াটি হয় এইলারের বাবার। সেটি ১৯৬০ সালে। ১৯৬৭-৭০ সালের মধ্যে শেষ তিনটি মুদি দোকান ও ডাকঘর বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৪ সালে বন্ধ হয় স্কুলটি। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি কাজের সন্ধানে রুডি-এইলারের দুই সন্তান শহর ছাড়ে। ১৯৮০ সালে শহরের জনসংখ্যা নামে ১৮তে। বিশ বছর পর মানে ২০০০ সালের দিকে শহরের বাসিন্দা বলতে থাকেন কেবল দুজন রুডি ও এলসি এইলার। তাঁরা তখনো সরাইখানাটা চালু রেখেছেন। বর্তমানে নেব্রাস্কার বয়েড কাউন্টির যে তিনটি শহরের জনসংখ্যা কম, তার একটি মনোওয়ি।

মনোওয়ির একটি বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এলসি এইলার।

আসলে একা নন

শহরে একা বাস করলেও একাকিত্ব গ্রাস করতে পারে না ৮৮ বছরেই এ নারীকে। সোমবার ছুটি কাটান তিনি। বাকি ছয় দিন নিয়ম করে সকাল ৯টার দিকে নিজের ট্রেইলারটি (স্থান পরিবর্তন করা যায় এমন ঘর) থেকে বের হয়ে সরাইখানায় গিয়ে বার খোলেন। তারপর তাঁর নিয়মিত ক্রেতারা আসতে শুরু করেন। বেশির ভাগের বাস ২০-৩০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে, বহু বছর ধরে যাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তবে ২০০ মাইল দূরের লিংকন কিংবা ওমাহা থেকেও কেউ কেউ আসেন সরাইখানায় তাঁকে সঙ্গ দিতে। এটি বড় একটি পরিবারের মতো। চতুর্থ-পঞ্চম প্রজন্মেরে ক্রেতারাও আসেন। যাদের শিশু অবস্থায় দেখেছি তাঁরা নিজেদের বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আসছে দেখে খুব আনন্দ হয়। তাঁকে দেখতে আসা পরিচিতদের সম্পর্কে জানতে চাইলে এভাবেই হেসে উত্তর দেন এইলার।

সরাইখানায় একটি হ্যাম বার্গারের দাম সাড়ে তিন ডলার (প্রায় ৩৭০ টাকা), হট ডগ সোয়া ডলার (১৩০ টাকা)। আর এখানে আড্ডায় প্রিয় ক্রেতাদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটে এইলারের। ২০২১ সালে বন্ধুদের সঙ্গে সরাইখানার ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করেন তিনি।

মনোওয়ির গির্জা।

২০০৫ থেকে...

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বন্ধুদের একজন ছিলেন আলোকচিত্র এলিশা শাকার। ২০০৫ সাল থেকে তিনি এইলার ও তাঁর দৈনন্দিন জীবন-যাপনের বিভিন্ন ছবি তুলে আসছেন। তখন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ালেখা করছেন। তখন থেকেই ছবি তোলায় আগ্রহ তাঁর। গত ১৭-১৮ বছরে অন্তত এক ডজন বার শহরটিতে এসেছেন তিনি এইলারের সান্নিধ্য পেতে এবং তাঁর ছবি তুলতে। এইলারকে নিয়ে ২০২২ সালের জুনে নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেনও তিনি।

পড়ুয়া ছিলেন রুডি

তবে শহরে সরাইখানার পাশাপাশি সাধারণের জন্য আরেকটি দালান আছে, সেটি লাইব্রেরি। রুডি ছিলেন খুব পড়ুয়া মানুষ। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল ব্যক্তিগত সংগ্রহের বইগুলো দিয়ে একটি পাঠাগার গড়ার। তাঁর মৃত্যুর পর এইলার, তাঁদের সন্তান ও নাতিরা মিলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেন পাঠাগারটির। নাম দেওয়া হয় রুডিজ লাইব্রেরি। এখন পাঠাগারটির চাবি ঝুলতে থাকে সরাইখানায়। যার ইচ্ছা চাবি দিয়ে পাঠাগারের দরজা খুলে ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন পড়ালেখায়।

মনোওয়ির একমাত্র বাসিন্দা এলসি এইলার।

মায়ার বাঁধন

দুই সন্তানের পাশাপাশি এইলারের আছে পাঁচ নাতি ও দুই পুতি। সবচেয়ে কাছের জনের বাস ৯০ মাইল দূরের নেব্রাস্কার পোনকায়। বাকিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন অ্যারিজোনা থেকে শুরু করে নেদারল্যান্ডসে।

‘আমি জানি সন্তানদের কাছে কোথাও গিয়ে থাকতে পারি চাইলেই। কিংবা যখন ইচ্ছা বাস করতে পারি তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু তখন আবার নতুন করে বন্ধু তৈরি করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত চলাফেরা করতে পারি, এখানেই থাকতে চাই। বয়স হয়ে গেলে আমার মনে হয় অভ্যাসগুলো বদলানো অনেক মুশকিল।’ একা একা মনোওয়িতে পড়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে বলেছিলেন এইলার। 

মনোওয়ির রাস্তা ধরে যাচ্ছে একটি গাড়ি।

এখন দোর আটকানোর সময়

সরাইখানা খোলার ১২ ঘণ্টা পর আবার মনোওয়িতে অবস্থান করা মানুষের সংখ্যা একে নেমে আসে। এইলার বারে তালা দেন, তারপর পা টেনে টেনে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে যান নিজের ট্রেইলারে । বাইরের প্রেইরির ঘাসে যখন বাতাস দোল দিয়ে যায়, এইলার খুলে বসেন রুডির কোনো একটি বই। ১১টার দিকে বিছানায় এলিয়ে দেন শরীর। আগামীকাল বন্ধুদের সঙ্গে কেমন কাটবে ভাবতে ভাবতে একসময় বুজে আসে দুচোখের পাতা।

সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেইজার. কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনার দানা গিলে ফেলল শিশু, বাইরে যেতে নিষেধ মায়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৯
১০ হাজার ইউয়ান মূল্যের সোনার দানা গিলে ফেলেছে শিশু। ছবি: এআই নির্মিত প্রতীকী ছবি
১০ হাজার ইউয়ান মূল্যের সোনার দানা গিলে ফেলেছে শিশু। ছবি: এআই নির্মিত প্রতীকী ছবি

শিশুদের কয়েন মুখে দেওয়া বা গিলে ফেলা নতুন কিছু নয়। চোখের পলকে এই অঘটন অনেক শিশুই ঘটিয়ে ফেলে। পরে অনেককে দৌড়াতে হয় হাসপাতালে, আবার অনেকের স্বাভাবিক নিয়মে তা মলের সঙ্গে বের হয়ে আসে। এদিকে চীনের ১১ বছর বয়সী এক শিশু গিলে ফেলেছে সোনার দানা (গোল্ড বিন)। যার বাজারমূল্য ১০ হাজার ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ২৫ টাকা)।

দক্ষিণ-পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের কুনশানের বাসিন্দা জি গত ১৭ অক্টোবর ১০ গ্রামের একটি সোনার দানা কেনেন। কয়েক দিন পর ২২ অক্টোবর তাঁর ছেলে সোনার দানাটি হাতে পেয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ গিলে ফেলে।

এ সময় জি বারান্দায় কাপড় ধুচ্ছিলেন। তাঁর ছেলে আতঙ্কিত হয়ে ছুটে এসে জানায়, সে গোল্ড বিনটি গিলে ফেলেছে। তার ভয় হচ্ছে সে কি এখন মারা যাবে!

জিকে তাঁর ছেলে আরও জানায়, জিব দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করার সময় সে সোনার দানাটি গিলে ফেলেছে।

প্রথমে জি ভেবেছিলেন, ছেলে মজা করছে। পরে দেখেন সোনার দানাটি নেই। তখন তিনি চিন্তায় পড়ে যান।

জির তখন মনে পড়ে, তাঁর ভাগনিও একবার একটি কয়েন গিলে ফেলেছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেছিলেন, এটি গুরুতর কিছু নয়। মলের সঙ্গে বের হয়ে যাবে।

জি মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে থাকেন কী করা যায়। ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে তিনি দেখেন, সোনার জিনিসও একইভাবে মলের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে।

এরপর জি ছেলেকে চোখে চোখে রাখতে থাকেন হারানো এই মূল্যবান সম্পদ উদ্ধারের আশায়। ছেলেকে সতর্ক করতে থাকেন বাইরে মলত্যাগ না করে ঘরে নির্ধারিত স্থানে করতে। কারণ, মলের সঙ্গে সোনার দানাটি বের হয়ে আসবে। তা সত্ত্বেও টানা পাঁচ দিন ধরে দিনে দুবার পরীক্ষা করেও সোনাটি পাওয়া যায়নি।

পরে গত ২৬ অক্টোবর ছেলেকে কুনশান ফিফথ পিপলস হাসপাতালে নিয়ে যান জি। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা দেখেন, শিশুটির পেটে একটি বস্তু রয়েছে। তবে শিশুটির কোনো ব্যথা বা বমির লক্ষণ ছিল না।

পরে সেদিন সন্ধ্যায় সোনার দানাটি নিরাপদে বের হয়। তবে এটি কি স্বাভাবিকভাবে বের হয়েছে নাকি চিকিৎসার মাধ্যমে বের করা হয়েছে, তা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হ্যালোইনে সুপারহিরো সেজেছিলেন—সেদিনই একটি জীবন বাঁচালেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এই পোশাকেই একটি জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
এই পোশাকেই একটি জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

২০২০ সালের হ্যালোইন রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের গ্রিনভিলে এক অবিশ্বাস্য ঘটনার মুখোমুখি হন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। সেই রাতে স্ত্রীর বোনের বাড়িতে হ্যালোইন পার্টিতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। আর হ্যালোইনের বিশেষ পোশাক হিসেবে টেইলরের কাছে সেদিন বিকল্প ছিল মাত্র দুটো—তাঁকে হয় যিশুখ্রিষ্ট সাজতে হবে, নয়তো অ্যামাজন প্রাইম সিরিজ দ্য বয়েজ-এর কুখ্যাত সুপারহিরো ‘হোমল্যান্ডার’। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে শেষ পর্যন্ত সুপারহিরোর পোশাকটিই বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য গার্ডিয়ানে টেইলর লিখেছেন, সেদিন অন্য এক চরিত্র ‘স্টারলাইট’ সেজে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী চেলসি। তাঁদের দুই সন্তানও ছিল গাড়িতে—তাদের একজন সেজেছিল ‘আয়রন ম্যান’ আর অন্যজন ‘ড্রাগন’।

যাত্রাপথে হঠাৎ তাঁরা দেখতে পান একটি বাড়ি থেকে আগুনের শিখা বের হচ্ছে। টেইলর তখনই তাঁর স্ত্রী চেলসিকে বলেন, ‘গাড়ি থামাও, আর ৯১১-এ ফোন দাও।’ তিনি দৌড়ে চলে যান জ্বলন্ত বাড়ির দিকে।

বাড়িটির সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁরা শুধু আগুনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেই যাচ্ছিলেন, যেন কারওরই কিছু করার নেই। টেইলর তাঁদের কাছে জানতে চান—ভেতরে কেউ আছে কি না। উত্তর আসে, ‘জানি না।’

টেইলর অবশ্য দৌড়ে বাড়িটির আরও কাছে এগিয়ে যান এবং দরজা খুলে ডাক দেন, ‘কেউ আছেন?’ ভেতর থেকে ক্ষীণ একটি আওয়াজও ভেসে আসে। দেরি না করে তখনই দৌড়ে আগুনের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি।

ভেতরে প্রবল ধোঁয়া ও তাপ সহ্য করেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গিয়ে টেইলর দেখতে পান এক ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। সময় নষ্ট না করে তিনি প্রায় ছয় লম্বা ওই লোকটিকে বহন করে রাস্তায় নিয়ে আসেন।

লোকটির জ্ঞান ফিরে আসার পর অবশ্য পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসও আসে। কিন্তু টেইলর তখন নিজের অদ্ভুত বেশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কোনো রকমে পালিয়ে আসেন।

তবে টেইলরের এই জীবন বাঁচানোর খবরটি আর চাপা থাকে না। এই ঘটনার পর সবাই তাঁকে ‘সুপারহিরো’ বলে সবাই ডাকতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ‘কার্নেগি মেডেল ফর হিরোইজম’ পান তিনি এবং ওহাইও ফায়ার সার্ভিস হল অব ফেমে তাঁর নাম ওঠে। পাঁচ বছর পরও তাঁর সন্তানেরা গর্ব করে বলে—‘আমার বাবা সত্যিকারের সুপারহিরো।’

এমনকি দ্য বয়েজ সিরিজে হোমল্যান্ডারের চরিত্রে অভিনয় করা অ্যান্টনি স্টার তাঁর গল্পটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘এর চেয়ে গর্বিত মুহূর্ত আর হতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘুরতে গিয়ে বৃদ্ধাকে রেখেই চলে গেল সহযাত্রীরা, পরে মিলল মৃতদেহ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান নারী। ছবি: সংগৃহীত
লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান নারী। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বলা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবাল রিফ। প্রশান্ত মহাসাগরের কোরাল সাগরের এই প্রবাল রিফের কাছাকাছি এক দ্বীপে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ৮০ বছর বয়সী এক নারী পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।

গত শনিবার কেয়ার্নস শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল উত্তরে অবস্থিত লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইক করতে গিয়েছিলেন ওই নারী। কোরাল অ্যাডভেঞ্চারার নামের একটি ক্রুজ জাহাজে চড়ে আরও অনেকের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। ওই নারী পর্যটক হাইক করার সময় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে গিয়ে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূর্যাস্তের সময় জাহাজটি দ্বীপ ছেড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর ক্রুরা বুঝতে পারেন, ওই নারী জাহাজে নেই। পরে জাহাজটি দ্বীপে ফিরে যায়। ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়।

পরদিন রোববার সকালে অনুসন্ধানকারীরা দ্বীপ থেকে ওই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেন।

অস্ট্রেলিয়ান মেরিটাইম সেফটি অথরিটি (এএমএসএ) জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জাহাজটি ডারউইনে পৌঁছালে ক্রু সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।

এএমএসএর এক মুখপাত্র জানান, গত শনিবার স্থানীয় সময় রাত প্রায় ৯টার দিকে (জিএমটি অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৫ টা) জাহাজের ক্যাপ্টেন প্রথমবারের মতো ওই নারীর নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন।

সংস্থাটি বলেছে, তারা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে ঘটনাটি তদন্ত করবে এবং তারা বাণিজ্যিক জাহাজে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।

কোরাল এক্সপেডিশনস-এর প্রধান নির্বাহী মার্ক ফাইফিল্ড জানিয়েছেন, সংস্থার কর্মীরা ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই ‘দুঃখজনক মৃত্যু’-র ঘটনায় পরিবারকে সহায়তা দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত এখনো চলছে, তবে যা ঘটেছে তার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত এবং ওই নারীর পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছি।’

কুইন্সল্যান্ড পুলিশ জানিয়েছে, নারীর এই ‘হঠাৎ এবং সন্দেহাতীত’ মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

কুরিয়ার মেল পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, ওই প্রবীণ নারী দ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কুকস লুক-এ ওঠার জন্য দলের সঙ্গে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

৬০ দিনের ক্রুজে গিয়েছিলেন ওই নারী, যার টিকিটের দাম কয়েক হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার। কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কোরাল অ্যাডভেঞ্চারার জাহাজে সর্বোচ্চ ১২০ জন যাত্রী ও ৪৬ জন ক্রু সদস্য থাকতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের দুর্গম এলাকাগুলোতে যাওয়ার জন্য এটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই জাহাজে ছোট নৌকা বা ‘টেন্ডার’ রয়েছে যেগুলো দিয়ে দিনের বেলা যাত্রীদের ভ্রমণে ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিপসের প্যাকেটকে বন্দুক ভেবে কিশোরকে পুলিশে দিল এআই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৯
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি

চিপস খেতে খেতে রাস্তায় হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের স্কুলপড়ুয়া কিশোর টাকি অ্যালেন। হঠাৎ আটটি পুলিশের গাড়ি এসে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাকে। গাড়ি থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা তার দিকে বন্দুক তাক করে হাঁটু গেড়ে বসতে বললেন। এমন আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর বুঝে উঠতে পারছে না, কী তার ভুল। পুলিশের নির্দেশ মানার পর হাতে পড়ল হাতকড়া।

টাকি অ্যালেনকে কিশোর বয়সে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। অ্যালেনের হাতে থাকা চিপসকে বন্দুক হিসেবে শনাক্ত করেছে এক এআই সিস্টেম!

স্থানীয় গণমাধ্যম ডব্লিউএমএআর-২ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাকি অ্যালেন বলে, ‘হঠাৎ দেখি প্রায় আটটা পুলিশ কার এসে গেল। তারপর সবাই বন্দুক তাক করে আমাকে মাটিতে শুতে বলছে।’

অ্যালেন বলতে থাকে, ‘ফুটবল অনুশীলনের পর এক প্যাকেট ডোরিটোস চিপস খেয়ে খালি প্যাকেটটি পকেটে রেখে দিই। এর ২০ মিনিট পরই এই ঘটনা। একজন অফিসার আমাকে হাঁটু গেড়ে বসতে বলেন, তারপর আমাকে আটক করে হাতকড়া পরান।

তবে বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ বিবিসি নিউজের কাছে দাবি করে, অ্যালেনকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, কোনো হুমকি নেই নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি নিরাপদে সমাধান করা হয়।

এই ঘটনার পর থেকে ফুটবল অনুশীলন শেষে স্কুলের ভেতরে চলে যায় অ্যালেন। সে জানায়, বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়, বিশেষ করে চিপস খাওয়া বা কিছু পান করা।

বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ জানায়, সেই মুহূর্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত ও আনুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের কর্মকর্তারা।

বিভাগটি আরও জানায়, এআই সতর্কবার্তাটি মানব পর্যালোচকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা এতে কোনো হুমকি পাননি। এই বার্তা স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে পাঠানো হলেও তিনি এ তথ্যটি দেখেননি এবং স্কুলের নিরাপত্তা টিমকে জানান। তারা পুলিশকে ডাকে।

অভিভাবকদের উদ্দেশে এক চিঠিতে স্কুলের প্রিন্সিপাল কেট স্মিথ বলেন, স্কুলের নিরাপত্তা দল দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং কোনো অস্ত্র না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রাথমিক সতর্কতা বাতিল করে।

তিনি আরও জানান, ‘আমাদের স্কুল রিসোর্স অফিসারকে (এসআরও) বিষয়টি জানানো হলে তিনি অতিরিক্ত সহায়তার জন্য স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা স্কুলে এসে ওই শিক্ষার্থীকে তল্লাশি করেন এবং দ্রুত নিশ্চিত হন যে তার কাছে কোনো অস্ত্র নেই।’

এআই টুল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমনিলার্ট এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বিবিসি নিউজকে জানায়, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের উদ্বেগ জানাতে চাই।’

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের সিস্টেম প্রথমে এমন কিছু শনাক্ত করে যা দেখতে আগ্নেয়াস্ত্রের মতো লাগছিল। ছবিটি পরে তাদের পর্যালোচনা দল যাচাই করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই তথ্য ও ছবি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুলের নিরাপত্তা দলের কাছে মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তাদের সিস্টেমে ‘সমাধান হয়েছে’ বলে চিহ্নিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা শেষ হয়। তাদের সিস্টেম ‘যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, সেভাবেই কাজ করেছে।’

অ্যালেন মন্তব্য করেছে, ‘আমার মনে হয় না কোনো চিপসের প্যাকেটকে কখনো বন্দুক হিসেবে ভুল ধরা উচিত।’

এই ঘটনায় স্কুলগুলোতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছে অনেকে। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বাল্টিমোর কাউন্টির স্থানীয় কাউন্সিলর ইজি পাকোটা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি তাদের এআই-চালিত অস্ত্র শনাক্তকরণ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত