Ajker Patrika

করোনা নির্মূল বটিকা ও বাস্তবতা

ফখরুল ইসলাম
করোনা নির্মূল বটিকা ও বাস্তবতা

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক হারে বাড়ছে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। চোখে সরষে ফুল দেখছেন অনেকেই। বিশেষত নিম্নবিত্ত মানুষ আছেন শাঁখের করাতের ওপর বসে। একদিকে করোনা, অন্যদিকে অভাব দুই–ই কাটছে তাদের। বলে রাখা ভালো–যারা বলেন, দেশে কেউ দায়িত্বশীল নেই, তাদের মুখে ছাই ছিটাতেই বুঝে তাঁরা মুখের সব আগল খুলে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে পদাধিকারবলেই সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

অভয়বাণী
দেশে প্রথম প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের আগে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে বসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ‘এই ভাইরাস বাংলাদেশে আসবে না। এটি যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে, এ জন্য দেশের সব বন্দরে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

উদ্দেশ্য সৎ ছিল নিশ্চয়। করোনা আতঙ্কে দিন কাটানো গোটা বিশ্বের সামনে নজির সৃষ্টি করতেই বুঝি তিনি এ কথা বলেছিলেন। আশ্বস্ত করতে চাইলেন মানুষকে। কিন্তু মানুষ? ভুল বুঝল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু দুরাচারী রীতিমতো ট্রল শুরু করল। এখানে থামলেও হতো। জেগে উঠল সংগঠনগুলো। বক্তৃতা হলো, বিবৃতি হলো। এমনকি মানবন্ধনও হলো করোনা নিয়ে। বিশ্বের ইতিহাসে এটাই প্রথম কিনা খুঁজে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা।

বাস্তবতা:
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তাবৎ সু–উদ্দেশ্যকে কাঁচকলা দেখিয়ে করোনা ঠিকই চলে এল দেশে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলো। বাকিটা ইতিহাস—যা এখনো চলমান।

গবেষকের ভূমিকা
মানুষের আতঙ্ক কমাতে কী না করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এমন মন্ত্রী হয় না। সেই সত্যযুগে থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এই যুগে এমন মন্ত্রী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা  শনাক্তের পর হাল না ছেড়ে দ্রুততম সময়ে একটি গবেষণা করলেন তিনি। গেবষণার ফলও জানিয়ে দিলেন তদ্‌নগদ। পরদিন ৯ মার্চ সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, ‘করোনাভাইরাস মারাত্মক রোগ নয়, ছোঁয়াচে।’

ভাগ্যিস আমাদের একটা সচিবালয় ছিল।

বাস্তবতা: 
করোনা মারাত্মক একটি ভাইরাস। একই সঙ্গে ছোঁয়াচেও। করোনা যে প্রানসংহারী তা তো পৃথিবীর ২৯ লাখের বেশি মানুষ মরে প্রমাণ করেছে।

প্রস্তুতিতে বিশ্বসেরা
গত বছরের ২৩ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবিলায় কেউ আগে থেকে প্রস্তুত থাকে না। বাংলাদেশ তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুত ছিল।

 বাস্তবতা
তিন মাস আগে তো দূরের কথা; বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশে এখনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রস্তুতির কোনো  লক্ষণ নেই। সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে প্রতিদিন যে হারে পরীক্ষা করানো হয়, তাতে সবার পরীক্ষা সম্পন্ন হতে পাঁচ–সাত বছর লাগবে।

পরিসংখ্যানবিদ
এত কিছুর পরও যখন কিছুতে কিছু হলো না, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিসংখ্যানবিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। গত বছরের ২৯ মার্চ  রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, ‘আমাদের প্রায় ৫০০ ভেন্টিলেটর আছে। অনেক বড় বড় দেশেও এত ভেন্টিলেটর থাকে না। ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থা কী রকম, সেটা আপনারা জানেন।’

 বাস্তবতা
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, ৩২ কোটি জনগণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ভেন্টিলেটর রয়েছে। আর ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এনএইচএসের হিসাবমতে, সাড়ে ছয় কোটি মানুষের বিপরীতে যুক্তরাজ্যে ভেন্টিলেটর রয়েছে প্রায় ছয় হাজার। জার্মান সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, দেশটির আট কোটি জনসংখ্যার জন্য রয়েছে ২৫ হাজার ভেন্টিলেটর। আগামী বছরের মধ্যে আরও ১০ হাজার ভেন্টিলেটর তৈরির জন্য স্থানীয় একটি কোম্পানিকে বলেছে দেশটির সরকার।

এ ছাড়া কানাডায় ৪ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে ৫ হাজার, ফ্রান্সের সাড়ে ৬ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে ভেন্টিলেটর রয়েছে ৬ হাজার ৬৫টি।

স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছরের জুনে যখন গোটা দেশ তটস্থ, তখন আবারও ত্রাতা হিসেবে সামনে এলেন জাহিদ মালেক। দুর্বার এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বলেন, ‘ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেশনে যারা গেছেন, প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন নতুন তত্ত্বের পর বেরসিক জনতা নামল সমালোচনায়। এ দেশের গুণীর কদর কে কবে করেছে?

বাস্তবতা
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বিভ্রান্ত মানুষকে সত্য সম্পর্কে নিশ্চিত করতে অনেক বিশেষজ্ঞ বললেন, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম এবং নিউমোনিয়াতে চলে যাওয়া রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর প্রয়োজন।

জ্যোতিষবিদ্যা
শুধু মানুষের কথা ভেবে আামাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কত বিদ্যাই না রপ্ত করেছেন! আগস্ট নাগাদ তাঁর জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রভূত দখলের প্রমাণ পেল দেশবাসী। গত ১৫ আগস্ট মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে জাহিদ মালেক মন্তব্য করেন, ‘ভ্যাকসিন লাগবে না। বেশি দিন লাগবে না; বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাস চলে যাবে।’

এই বক্তব্যের পর দেশের বহু প্রথিতযশা জ্যোতিষবিদ বাপ–দাদা থেকে পাওয়া জ্ঞানের চুলোয় আগুন দিয়ে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে অবিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে।

বাস্তবতা:
জনস্বাস্থ্যবিদেরা এই বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে বললেন, ‘বিজ্ঞানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞান বলছে, করোনা নিয়ন্ত্রণের দুটো উপায়। একটি ভ্যাকসিন। আরেকটা হল বিশ্ব স্বাস্থ্র সংস্থার নির্দেশনার সব পর্যায়ে প্রয়োগ।

দেশপ্রেমের নিদর্শন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী নতুন বছরের প্রথম মাসটি কীভাবে যেন চুপ থাকলেন। নিশ্চয় বড় কোনো সংকট ছিল। কিন্তু নীরবতা দীর্ঘ হলো না। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘হোয়াট বাংলাদেশ থিংকস টুডে, ইউএসএ থিংকস থ্রি মান্থস লেটার।’

বলার অপেক্ষা রাখে না দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়েই তিনি এমন কথা বলেছেন। আর বাংলাদেশের এমন অর্জনের কথা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতেই বেছে নিয়েছেন এ যুগের আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিকে। ভাষার মাস, তাতে কী।

বাস্তবতা
না বললেও চলে যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সত্য নয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু বিবেচনাতেই ঢের পিছিয়ে রয়েছে।

শেষ কথা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এমন পারফর্ম্যান্সে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিলেন অন্যরা। মাইক্রোফোন খুঁজে কে কী বলবেন, তা নিয়ে একটা হুজ্জত লেগে গিয়েছিল নিশ্চয়। অনেকে অনেক কথা বলেছেনও, কিন্তু তেমন মার্কেট পাননি। এ অবস্থায় প্রধান সেনাধ্যক্ষ হিসেবে সামনে এলেন ওবায়দুল কাদের। সরকারের জ্যেষ্ঠ এই মন্ত্রী মাঠে নেমেই ছক্কা মারলেন। দেশবাসীর মনোবল চাঙা করতে গত বছরের মার্চে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী।’

বাস্তবতা
কতটা শক্তিশালী, তা এখন দিনে ৮০–পেরোনো মৃত্যু দিয়েই আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝছি। তবে সবাই যে বুঝছে না, তা লোকেদের শপিংমল, বাজার, প্রমোদ ভ্রমণে প্রমাণ। অনেকে বেশ সচেতন হয়ে থুতনিতে মাস্ক লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সে অবস্থায় কেউ পাকড়াও করলে মিষ্টি করে হাসছেন। এই দুরন্ত সাহসীদের সাহস জুগিয়ে চলা মন্ত্রীবর্গকে সালাম ঠোকা ছাড়া আর কী করার আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৪
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে টয়লেটে সময় কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে মোট ১৪ বার টয়লেট যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরেই তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তার সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তার হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে, কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া, লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতির নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি’র পদে কাজ করার জন্য তাকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচারপর্বের পর, আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে এবং লি’র কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তার অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করায়।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে, ২০২৩ সালেও, জিয়াংসু প্রদেশেরই আরেক ব্যক্তি একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল একদিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১১
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সাধারণত অস্থায়ী পেশা হিসেবে ফুড ডেলিভারির চাকরি অনেকেই করেন। কেউ আবার মূল চাকরির ফাঁকে ফুড ডেলিভারি দেন অতিরিক্ত আয়ের জন্য। কিন্তু এ কাজ করেও যে লাখ টাকার মালিক হওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং নামের এক তরুণ।

ফুড ডেলিভারি করতে করতে মাত্র পাঁচ বছরে ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান সঞ্চয় করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান। প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ আর কঠোর মিতব্যয়িতাই তাঁকে লাখপতি বানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

ব্যর্থ ব্যবসা, তারপর নতুন শুরু

ঝাংয়ের বাড়ি ফুজিয়ান প্রদেশের ঝাংঝো শহরে। ২০১৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি নাশতার দোকান চালু করেন। শুরুতে কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসার অবস্থা হয়ে যায় টালমাটাল। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকে, ক্রেতা কমে যায় এবং প্রতিদিনের খরচ টানতে গিয়ে তিনি চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং তাঁর কাঁধে চাপে প্রায় ৫০ হাজার ইউয়ানের ঋণ।

চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন
চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন

এ ব্যর্থতা তরুণ ঝাংকে মানসিকভাবে দমিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি পরিবারকে বিষয়টি বুঝতে দিতে চাননি। তাই সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে একাই রওনা দেন সাংহাইয়ের পথে। বড় শহরে গিয়ে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তবুও লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শোধ করা, আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো মূলধন জোগাড় করা এবং নিজের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা।

১৪ ঘণ্টার কর্মদিবস এবং অবিশ্বাস্য পরিশ্রম

সাংহাইয়ের মিনহাং জেলায় উঝং রোডের একটি ডেলিভারি স্টেশনে তিনি কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টা ৪০ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি, ঠান্ডা কিংবা গরম—সব পরিস্থিতিতেই তিনি মাঠে থাকেন ডেলিভারির কাজে। সবার আগে অর্ডার ধরতে এবং দ্রুত ডেলিভারি দিতে তিনি সব সময় ছুটে চলেন। ডেলিভারি স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ান বলেন, ‘ছেলেটা খুব কম কথা বলে, কিন্তু কাজ করে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম দিয়ে। প্রতিদিনই দেখি সে সময় বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে।’

কাজের দক্ষতার কারণে সহকর্মীরা তাঁকে ডাকেন ‘অর্ডারের রাজা’ নামে। টানা দীর্ঘ শিফটের পরও তিনি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নিশ্চিত করেন, যাতে পরদিন আবার পুরো শক্তিতে কাজ করতে পারেন।

কঠোর মিতব্যয়িতা

ঝাংয়ের সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় রহস্য তাঁর মিতব্যয়ী জীবনযাপন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কোনো খরচ করেন না। বাইরে খাওয়া, বিনোদন, ভ্রমণ—কোনো কিছুতেই ব্যয় করেন না তিনি। এমনকি চন্দ্র নববর্ষেও তিনি বাড়ি যান না। তখন শহরে থেকে উচ্চমূল্যের অর্ডার ডেলিভারি করেন। এই কঠোর জীবনযাপন ও পরিশ্রম মিলিয়ে পাঁচ বছরে তাঁর মোট আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ ইউয়ান। প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে সঞ্চয় হয় ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান।

ঝাং জানান, তাঁর পরিবার এখনো জানে না যে তিনি ঋণ শোধ করে বড় অঙ্কের সঞ্চয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘একবার ব্যর্থ হয়েছি বলে থেমে থাকব না। ভবিষ্যতে আবার ব্যবসা শুরু করার পুঁজি হিসেবেই এ টাকা জমাচ্ছি।’

চীনের তরুণদের নতুন পেশা হিসেবে ডেলিভারি

অর্থনৈতিক ধাক্কা ও চাকরির বাজারের পরিবর্তনের মধ্যে চীনে ডেলিভারি পেশা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ঝাওপিনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশটিতে ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীর হার দুই বছরে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। আয়ও অনেক অফিসকর্মীর চেয়ে বেশি। বেইজিং বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে যেখানে সাধারণ একজন অফিসকর্মী মাসে গড়ে আয় করেন ৬ হাজার ইউয়ান, সেখানে ডেলিভারি ড্রাইভারদের গড় আয় মাসে ৭ হাজার ৩৫০ ইউয়ান পর্যন্ত। ব্যস্ত দিনে ঝাংয়ের মতো পরিশ্রমী ডেলিভারি কর্মীরা দিনে হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারেন।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে বিস্ময়কর সেই দুর্ঘটনাটি। সেদিন প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক স্কাইডাইভার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের টুলি এয়ারপোর্টের আকাশে ১৭ জন প্যারাস্যুটার একটি ‘সিক্সটিন-ওয়ে ফরমেশন জাম্পে’ অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন যখন বিমান থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর রিজার্ভ প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেলটি বিমানের উইং ফ্ল্যাপে আটকে যায়। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই রিজার্ভ প্যারাস্যুট খুলে যায় এবং বাতাসের হঠাৎ টানে পেছনের দিকে ছিটকে গিয়ে বিমানের ডানায় ধাক্কা খান এবং আটকে যান ওই স্কাইডাইভার। এতে বিমানের ডানায় ও স্ট্যাবিলাইজারে গুরুতর ক্ষতি হয়।

প্যারাস্যুটের দড়ি স্ট্যাবিলাইজারের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়ায় স্কাইডাইভার ঝুলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে পড়েন। অন্য প্যারাস্যুটারেরা জাম্প সম্পন্ন করলেও দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন। ঝুলে থাকা প্যারাস্যুটার জীবন বাঁচাতে তাঁর হুক নাইফ বের করে রিজার্ভ প্যারাস্যুটের ১১টি লাইন কেটে নিজেকে মুক্ত করেন। এরপর তিনি মূল প্যারাস্যুট খুলতে সক্ষম হন, যদিও রিজার্ভ প্যারাস্যুটের কিছু লাইন তখনো তাঁকে জড়িয়ে ছিল।

এদিকে পাইলট হঠাৎ বিমানটিকে ওপরের দিকে ঢলে যেতে এবং গতি কমে যেতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন বিমানটিতে ত্রুটি হয়েছে। পরে তাঁকে জানানো হয়, একজন স্কাইডাইভার বিমানের পেছনে ডানায় ঝুলে আছেন। এ অবস্থায় পাইলট জরুরি ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান এবং প্রয়োজনে নিজেও বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট বুঝতে পারেন, বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট-খাটো আঘাত নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেন ওই স্কাইডাইভার এবং পাইলটও ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর স্কাইডাইভারদের প্রতি এক সতর্কবার্তায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’ বলেছে—বিমানের দরজার কাছে প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেল সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য হুক নাইফ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ব্যুরো আরও জানিয়েছে, বিমানের ওজন ও ভারসাম্য নির্ণয় স্কাইডাইভিং অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে এসব কারণে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিয়ম শৃঙ্খলা বড়ই আজব জিনিস। যেমন, সময় মতো অফিসে উপস্থিত হওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সময়ের আগে যদি নিয়মিত নিয়ম নেমে অফিস করতে শুরু করেন, আর তাতে যদি অফিস আপত্তি জানায়, সেটা আবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়তে পারবে! অন্তত স্পেনের একটি আদালত তাই বলছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বা আগে অফিসে উপস্থিত হয়ে চাকরি হারিয়েছেন সে দেশের এক নারী কর্মী! চাকরি ফিরে পেতে তিনি গিয়েছিলেন আদালতে। আদালত জানিয়েছেন, তিনিই আসলে দোষ করেছেন!

স্পেনের আলিকান্তে অঞ্চলের একটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২২ বছর বয়সী এক নারী কর্মীর চাকরিচ্যুতি দেশটিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, তিনি নিয়মিত নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসে পৌঁছাতেন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এই আচরণ বরং কাজের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সেই নারী আদালতে মামলা করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে সময়ের আগে অফিসে হাজিরা দেওয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করার অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করে। তিনি এই বরখাস্তের বিরুদ্ধে ভ্যালেন্সিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতে তাঁর যুক্তি, অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে আগে আসা প্রমাণসাপেক্ষ না হওয়ায় গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে বরখাস্তের রায় শ্রম আইন অনুযায়ী বৈধ ধরা হয়েছে।

নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে অফিসে পৌঁছানো

নারী কর্মীর চাকরির চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, তাঁর কর্মঘণ্টা শুরু হবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতেন। এই অভ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এতে তাঁর সুপারভাইজারদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরক্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হতে থাকে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে সতর্ক করার জন্য একাধিকবার মৌখিকভাবে এবং লিখিত নোটিশ জারি করে। নোটিশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, কর্মীকে অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক সময় মেনে অফিসে উপস্থিত হতে হবে। তবে এসব সতর্কতা উপেক্ষা করে তিনি আগেভাগে অফিসে আসা চালিয়ে যান, যা কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সতর্কতার পরও অভ্যাস না বদলানো

প্রতিষ্ঠানের একাধিক সতর্কতা অগ্রাহ্য করে তিনি আরও ১৯ বার সময়ের আগে অফিসে এসে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি ডিউটি শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশনে লগইন করতেও উদ্যোগ নেন, যা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম বিরোধী।

প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ

আদালতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তি দিয়েছে, আগেভাগে আসাকে ইতিবাচক মনে হলেও বাস্তবে তা দলগত কাজে কোনো সুফল আনছিল না। প্রতিষ্ঠানটি জানায়—

  • ওই সময় সহকর্মীদের প্রস্তুতি ছাড়া তাঁকে কোনো কাজ দেওয়া যেত না।
  • কাজের প্রবাহ নির্দিষ্ট সমন্বয়ের ওপর নির্ভরশীল।
  • তাঁর আগাম উপস্থিতি কর্মপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করছিল।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আগাম কাজ শুরুর চেষ্টা দলগত সহযোগিতা ব্যাহত করছিল।

কর্মীর যুক্তি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি

কর্মী দাবি করেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে তাঁর বেশি সময় প্রয়োজন ছিল। তবে আদালতে এই দাবি প্রমাণ করার মতো কোনো নথি তিনি দিতে পারেননি। সময়ের আগে অফিসে আসার বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত একটি গাড়ি বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

বিচারকের সিদ্ধান্ত

বিচারক রায়ে বলেন, কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, নিয়মভঙ্গ এবং একই আচরণ বারবার পুনরাবৃত্তি স্প্যানিশ শ্রম আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করা আইনসম্মত।

শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আলবের্তো পায়া মন্তব্য করেন, এই রায় প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক

ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্প্যানিশ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দেরি করলে শাস্তি, আগে এলে বরখাস্ত। তাহলে কর্মীর মূল্যায়ন কোথায়!’ অন্যদিকে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলছেন, নির্ধারিত নিয়ম ভাঙা কোনোভাবেই প্রশংসনীয় নয়।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত