Ajker Patrika

জার্মানির এক শহরে ট্রেন চলে ‘উল্টোভাবে’

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৯ মে ২০২৩, ১২: ৩৯
জার্মানির এক শহরে ট্রেন চলে ‘উল্টোভাবে’

ট্রেন রেললাইনের ওপর দিয়ে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ যদি দেখেন একটি ট্রেন উল্টোভাবে রেললাইনের নিচ দিয়ে চলছে, তাহলে নিশ্চয় চোখ কপালে উঠবে! তবে সত্যি এ ধরনের ট্রেন আছে। এর দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে জার্মানির উত্তর রাইন রাজ্যের শহর উপেরতালে। এখানকার সোয়েবেবান রেলওয়েতে দেখা পাবেন এমন আশ্চর্য ট্রেনের।

এ ধরনের রেলওয়ে পরিচিত ঝুলন্ত বা সাসপেনশন রেলওয়ে নামে। পাইলন বা খুঁটির সঙ্গে ঝুলতে থাকা রেল ট্র্যাকের নিচ দিয়ে ঝুলতে ঝুলতে চলে যায়। রাস্তা, ঘর-বাড়ি, নদীসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকের ওপর দিয়ে ছুটে যায় ট্রেনের বগিগুলো। এদিকে যাত্রীরা মনের আনন্দে উপভোগ করে নিচের অসাধারণ দৃশ্য।

অর্থাৎ, উল্টো বলা হলেও আসলে কিন্তু মোটেই উল্টে থাকে না বগিগুলো। বরং রেল ট্র্যাকের নিচে দিয়ে ঝুলে যাওয়ায় এমনটা মনে হয়। আমাদের যেমন মাথা ওপরের দিকে থাকে, তেমনি এই ট্রেনের যাত্রীরা কিংবা চালক স্বাভাবিকভাবেই বসে থাকেন। অর্থাৎ উল্টোভাবে ঝুলতে হয় না। 

নদীর ওপর দিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। ছবি: ফেসবুকপৃথিবীতে এমন ঝুলন্ত রেলওয়ে আছে জাপানেও। জার্মানির এই মনোরেল শহরের যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াত করে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। স্থানীয়দের এই আশ্চর্য ট্রেন পছন্দ দুটি কারণে—একটি হচ্ছে ট্রেনযাত্রার পথে দেখা যায় অসাধারণ সব দৃশ্য, অপরটি এই পথে ভ্রমণে যানজটের কোনো সুযোগ নেই। পাঁচ মিনিট পরপরই এ ধরনের ট্রেন আসায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় না।

এবার বরং কীভাবে এমন আশ্চর্য রেলপথের জন্ম তা জেনে নিই। এখানকার লম্বা, এঁকেবেঁকে যাওয়া নদী তীরের উপত্যকার কারণে সাধারণ রেলযোগাযোগ ছিল কঠিন। শহরের কর্মকর্তারা সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাব চান। উদ্যোক্তা ও প্রকৌশলী ইউজেন ল্যাংগেন তাঁর চিনিকলে কাঁচামাল পৌঁছাতে এমন ঝুলন্ত রেলওয়ে ব্যবহার করতেন। ১৮৯৩ সালে প্রস্তাবটি দেওয়ার পর এটিই পছন্দ হয় কর্তৃপক্ষের। সোয়েবেবান রেলওয়ের নির্মাণ শুরু হয় ১৮৯৮ সালে।
 
সেই ১৯০১ সাল থেকে যাত্রী পরিবহন করছে এই রেলওয়ের ট্রেনগুলো। ছবি: ফেসবুকপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১৯০১ সালে। ১৯২৫ সালে রেলওয়ে বড় একটি মাইলফলকে পৌঁছায় উপেরতালে নদীর ওপর ২ কোটি মানুষ পরিবহন করার মাধ্যমে। 

ঝুলন্ত এই রেল ট্র্যাক তৈরি করতে লাগে ২০ হাজার টন ইস্পাত। কাঠ ও কাচ দিয়ে ভেতরের অংশ সাজানো প্রতিটি বগি ৬৫ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারে। রেল ট্র্যাক কিছুটা বিস্তৃত হয়ে এখনকার পর্যায়ে পৌঁছায় ১৯০৩ সালে। এই দৈর্ঘ্য ১৩.৩ কিলোমিটার বা ৮.৩ মাইল। গোড়া থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় রেল ট্র্যাকটি। 

সোয়েবেবান রেলওয়ের রেলট্র্যাক। ছবি: ফেসবুক১৯৫০ সালে এই রেলওয়ের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় যাত্রীটি ওঠে। সে টাফি নামের এক ছোট্ট হাতি। অ্যাল্টহফ সার্কাস এসেছিল শহরে। পশ্চিম জার্মানিতে তখন বেশ জনপ্রিয় তাদের কম বয়স্ক হাতিটি। বেশ বন্ধুভাবাপন্ন হাতিটির জন্য চারটি ও নিজের জন্য একটি টিকিট কেটে ট্রেনের বগিতে চাপেন সার্কাস মালিক ফ্রাঞ্জ অ্যাল্টহফ। কিন্তু সাংবাদিক ও কর্মকর্তায় বগি ভরপুর হওয়ায় হাতিটি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে চলন্ত ট্রেন থেকে জানালা গলে লাফিয়ে পড়ে ৩৩ ফুট নিচের নদীতে। তবে পানি কম থাকায় তেমন ক্ষতি হয়নি। টাফি নদীর যেখানে পড়েছিল, সেখানে শিল্পী ব্রেন্ড বার্গক্যাম্পার হাতিটার একটি ভাস্কর্য তৈরি করেন ২০২০ সালে।

উল্টো চলে ট্রেন। ছবি: ফেসবুকচলার পথে গত ১২০ বছরে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে রেলওয়েটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ একটি পাওয়ার কেব্‌ল নিচের রাস্তায় ধসে পড়লে ৯ মাস বন্ধ ছিল রেলওয়ে। ২০১৯ সালে অনেকটা নতুন রূপে চালু হয় রেলওয়ে। এ সময় বেশির ভাগ নতুন বগি ব্যবহার করা হয়। 

রেলওয়ে আর এর ট্রেনগুলো শহরের বাসিন্দাদের ভারি প্রিয়। ‘আমি মনে করি না উপেরতালে ও বারম্যানের পরিচয় ফুটিয়ে তোলার জন্য সোয়েবেবানের চেয়ে উপযোগী আর কিছু আছে।’ সিএনএনকে বলেন স্থানীয় বাসিন্দা রোজমেরি ওয়েইনগার্তেন, ‘এটা সব সময়ই এখনে আছে আমার জন্য। আর আমি গর্বিত এটি এখনো চলছে।’

রাস্তার ওপর দিয়ে চলেছে ট্রেন। ছবি: ফেসবুকগোটা রেললাইনের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মোটে আধা ঘণ্টা। চলার পথে পড়ে মোটমাট ২০টি স্টেশন। ২৪ ঘণ্টায় যতবার ইচ্ছা ট্রেনভ্রমণের টিকিটের জন্য গুনতে হবে ৭.৩০ ইউরো বা ৮২৮ টাকা। একবার ভ্রমণের জন্য টিকিট কাটলে পড়বে ৩ ইউরো বা ৩৫৪ টাকা।

রেলওয়েটি শহরবাসীর পাশাপাশি পর্যটকদেরও পছন্দ। উপেরতালেতে ভ্রমণ করলে কোনোভাবেই এতে ভ্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। সার্ভিসে মূল বগিগুলোর একটি এখনো আছে। এটাই ১৯০০ সালে জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলহেম ও সম্রাজ্ঞী অগুস্তে ভিক্টোরিয়া ভ্রমণ করেন। কাইজারওয়াগন বা ইমপেরিয়াল ক্যারিজ নামে পরিচিত বগিটি বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভাড়া করা যায়।

সূত্র: সিএনএন, ট্রাভেল অ্যান্ড লেইজার ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

এস আলমের জামাতার পেটে ৩৭৪৫ কোটি টাকা

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত