ফসল

‘বর্তমানে যে অবস্থায় আছি পোলাপাইনরে কেমনে ভাত খাওয়াইমু ওই চিন্তাত পড়ছি। আর ঈদের কাপড় তো এখন আমার লাগি দুঃস্বপ্ন’। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরে ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কেজাউড়া গ্রামের আয়ন নেছা। 

বুড়িচংয়ে অবৈধভাবে খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে ফসলি জমির মাটি তোলা হচ্ছে। এতে একসময়ের তিন ফসলি জমিগুলো ডোবায় পরিণত হচ্ছে। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে মাটি তোলায় পাশের জমিতেও ভাঙন দেখা দিচ্ছে।

হাওর থেকে কাটা ধান মাড়াই করে শুকানোর জন্য খলায় স্তূপ করে রেখেছিলেন আহসানপুর গ্রামের সবচেয়ে বড় কৃষক আব্দুস শহিদ। প্রায় শুকিয়ে আসা এসব ধান দুদিন পরে গোলায় তোলার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই এসে পড়ে ঢলের পানি।

পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন মুগ ডাল। খেতভর্তি মুগ ডালের ফলন দেখে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমিতে স্বল্প খরচ আর স্বল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল বারি মুগ-৬ চাষ করে খুশি কৃষকেরা।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া ও মইয়ার হাওরের ধান রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি ফসল রক্ষা বাঁধ গতকাল শনিবার ভোরে ভেঙে গেছে। তবে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করে রাখায় রক্ষা পেয়েছে দুটি হাওরের ধান।

খাল খননের উপকার পেতে শুরু করেছেন দাকোপের তিলডাঙ্গা ও পানখালী ইউনিয়নের চাষিরা। খননের ফলে খালগুলোতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় এ বছর সেচের পানির সংকটে পড়তে হয়নি তাঁদের। এতে উপজেলার অন্যান্য এলাকার তুলনায় এ দুই ইউনিয়নে অধিকাংশ ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

‘বৈশাখ মাসে বৃষ্টি অয়, ফানি (পানি) অয় দেখছি। তবে ইরকম পানি স্থির হয়া থাকতে দেখছি না কোনো বছরই। বৈশাখ মাসো তুফান অইব ঠিকই আছে। কিন্তু ১৮-১৯ দিন ধইরা যে পাহাড়ি ঢলের ফানি (পানি) আইল, অখন পর্যন্ত নামার কোনো নামই নাই। এমন অবস্থা আমার বয়সেও দেখছি না।’

শান্তিগঞ্জে খাই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০ স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে এসব ফাটল দিয়ে হাওরে ঢুকছে পানি। এতে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।

শেরপুরে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে ৫ হাজার হেক্টর বোরো ধান ও সবজিখেতের ক্ষতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে জেলা সদরসহ ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় এই কালবৈশাখী হয়।

বরগুনার তালতলীতে ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে ঘেরে পানি ওঠানোর কারণে প্রায় ১৭ একর মুগ ডালের খেত তলিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ঋণ নিয়ে মুগ ডাল চাষ করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

সংস্কারের অভাবে জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমরগ্রাম-বানিয়াপাড়া খালের প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গার বিভিন্ন অংশ সরু হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে খালের প্রাণপ্রবাহ। এর প্রভাব পড়ছে কোমরগ্রাম-বানিয়াপাড়া ফসলি মাঠে। প্রায় দু শ বিঘা জমি এর জন্য জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। ফলে ব্যাহত হয় ফসলের উৎপাদন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় ২৫ মিনিটের এই শিলাবৃষ্টিতে আম ও ধানসহ অন্য ফসলের শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

বাসাইলে বোরো ধানের ভরা মৌসুমে উঠতি ফসল নষ্ট করে রাস্তার ধারের কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার এক কমিশনারের বিরুদ্ধে। ধানখেতের থোর-ধান নষ্ট করে রাস্তার মাটি কেটে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নবাগিয়া বিলপাড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে বাঁধটি আবার নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে প্রায় ৩০০ একর ফসলি জমির অসময়ে বন্যা ও বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি বেড়ে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ জেলার ভেতরের সব নদীর পানি বেড়েছে। এতে করে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে সুতাং ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে ৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখাই উপজেলার কয়েকটি উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরীতে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত রোববার রাত ৮টার দিকে ঝড় শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী চলা ঝড়ের তাণ্ডবে গাছপালা উপড়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের ওপর পড়ে। এ ছাড়া বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টিতে ফসল, পশুপাখির ক্ষতি হয়েছে।