Ajker Patrika

বিটকয়েন: ১৪ বছরের ব্যবধানে শূন্য থেকে ১ লাখ ডলারে দাম উঠল যেভাবে

বিটকয়েনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ছবি: এএফপি
বিটকয়েনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ছবি: এএফপি

সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির জয়জয়কার। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ১৪ বছরের ব্যবধানে শূন্য থেকে ১ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। তবে এর মূল্য সরল রৈখিকভাবে বাড়েনি; এর বৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত অস্থির। বিটকয়েনের এই মূল্যবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতি ও বাজারের জন্য এক নজিরবিহীন ঘটনা।

বিটকয়েনের জন্ম: ২০০৮-২০০৯
বিটকয়েনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ‘সাতোশি নাকামোতো’ নামের এক অজানা ব্যক্তির (বা গ্রুপের) বিটকয়েনের ধারণা প্রকাশ করেন। এই ধারণা একটি নতুন ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা তৈরির কথা বলা হয়েছিল যা কেন্দ্রীয় কোনো ব্যাংক বা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না, বরং ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে স্যাটোশি নাকামোতো বিটকয়েন ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক চালু করেন এবং প্রথম বিটকয়েন ব্লক ‘জেনেসিস ব্লক’ তৈরি করেন। প্রথম ৫০ বিটকয়েন তৈরি হয়েছিল এই ব্লকের মাধ্যমে, কিন্তু তখন তার মূল্য ছিল শূন্য। প্রথম কয়েক বছর বিটকয়েনের বাজার ছিল খুবই ছোট এবং তার ব্যবহারও ছিল সীমিত।

বিটকয়েনের মূল্য পরিবর্তনের ইতিহাস
বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ ও ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ার কারণে বিটকয়েনের মূল্য বেড়েছে। বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার মূলধনও বেড়েছে।

সাতোশি নাকামোতো একে দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য ডিজাইন করলেও এখন অনেকভাবেই ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। বিটকয়েন বর্তমানে মূল্য সংরক্ষণ, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিটকয়েনকে সোনার মতো একটি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে দেখা হয়।

বিটকয়েনের মূল্য সাধারণত ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। যারা বাজারের পরবর্তী বড় পরিবর্তন বা মূল্য ওঠানামা পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ক্রয়-বিক্রয় করেন। বিটকয়েনের মূল্য কখনই স্থির থাকে না। এর মূল্য বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে।

যারা বিটকয়েন বা অন্য কোন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্ভরযোগ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বেছে নেওয়া। নিরাপদ এবং প্রতিষ্ঠিত এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ করলে লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। তাই, বিনিয়োগের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৯-২০১৫: প্রায় শূন্য থেকে শুরু
২০০৯ সালে বিটকয়েন চালু হওয়ার সময় এর মূল্য ছিল প্রায় শূন্য। ২০১০ সালের মে মাসে বিটকয়েনের মূল্য প্রথমবারের মতো নগদায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর এর মূল্য দশমিক ২ ডলারে–এ উন্নীত হয় এবং বছর শেষে এক বিটকয়েনের মূল্য দাঁড়ায় দশমিক ৩ ডলারে পৌঁছায়।

২০১১ সালে এটি প্রথমবারের মতো ১ ডলার অতিক্রম করে এবং ৮ জুন ২৯ দশমিক ৬০ ডলারে-এ পৌঁছায়। কিন্তু পরবর্তীতে বছর শেষে মূল আবার কমে বিটকয়নের মূল্য ৫ ডলার হয়।

২০১২ সালে বিটকয়েনের মূল্য সামান্য বাড়ে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে বিটকয়েন ১ হাজার ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। বছরের শুরুতে এর মূল্য ছিল ১৩ ডলার আর বছর শেষে এর মূল্য ৭৩২ ডলার।

২০১৬–২০২০: বিটকয়েনের মূল্যের বড় উত্থান
২০১৬ সালে বিটকয়েন ধীরে ধীরে ৯০০ ডলারে পৌঁছায়। ২০১৭ সালে এর মূল্য ১ হাজার ডলার থেকে ১৯ হাজার ১৮৮ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যায়।

২০২০ সালে কোভিড–১৯ মহামারির সময় বিটকয়েনের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই বছর শুরুতে বিটকয়েনের মূল্য ৭ হাজার ১৬১ ডলার হয় এবং বছরের শেষে এর মূল্য দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৯৯৩ ডলার। এই বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৪১৬ শতাংশ।

২০২১-২০২৩: মূল্যবৃদ্ধি ও ধস
২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি বিটকয়েনের মূল্য ৪০ হাজার ডলার অতিক্রম করে। এপ্রিল মাসে এর মূল্য ৬৪ হাজার ৮৯৫ ডলারে পৌঁছে। তবে জুন–জুলাইয়ে এর মূল্য অর্ধেকে নেমে আসে।

২০২২ সালে ক্রিপ্টো বাজারের ধস নামে। এই বছরের শেষে বিটকয়েনের মূল্য ২০ হাজার ডলারের নিচে নেমে যায়। তবে ২০২৩ সালের শুরুতে বিটকয়নের মূল্য ১৬ হাজার ৫৩০ ডলার ছিল এবং বছর শেষে এর মূল্য ৪২ হাজার ২৫৮ ডলারে পৌঁছায়।

২০২৪: বিটকয়েনের নতুন রেকর্ড এবং ভবিষ্যৎ
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিটকয়েন স্পট ইটিএফ অনুমোদন পাওয়ার পর এর মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মার্চ মাসে এর মূল্য ৭৩ হাজার ৮৩৫ ডলার অতিক্রম করে। এই অনুমোদনটি বিটকয়েনের মূল্যের ওপর এক শক্তিশালী ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। কারণ এটি বিটকয়েনকে বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। স্পট ইটিএফের অনুমোদন বিটকয়েনের বৈশ্বিক স্বীকৃতির এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে মার্চ মাসে বিটকয়েনের মূল্য ৭৩ হাজার ৮৩৫ ডলার অতিক্রম করে।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বিটকয়েনের চতুর্থ হালভিং ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতি মাইনিং ব্লকের পুরস্কার ৬ দশমিক ২৫ বিটকয়েন থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ২৫ বিটকয়েন করা হয়। হালভিং ইভেন্টটি বিটকয়েনের সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যা ঐতিহ্যগতভাবে বিটকয়েনের মূল্য বাড়াতে সাহায্য করে। এই ইভেন্টের পর বিটকয়েনের মূল্য কিছুদিন ৬৩ হাজার ৮২১ ডলারে স্থির ছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই তরতর করে বাড়তে শুরু করেছিল বিটকয়েনের দাম। গত নভেম্বর মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে বিটকয়েন নতুন রেকর্ড গড়ে। গত ৭ নভেম্বর এর মূল্য ৭৬ হাজার ৯৯৯ ডলার এবং ১০ নভেম্বর ৮০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। ডিসেম্বরের শুরুতে এর মূল্য ১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা ক্রিপ্টো বাজারে একটি নতুন যুগের সূচনা করে।

ট্রাম্পের ক্রিপ্টো-বান্ধব নীতিমালা তৈরির প্রতিশ্রুতি এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন প্রধান নিয়োগের কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশাল উৎসাহ তৈরি হয়েছে। গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিটকয়েনের দাম কিছু সময়ের জন্য ১ লাখ ৬ হাজার ডলারে উঠে যায়।

বিটকয়েন ২০২৪ সালে তার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশ্ব অর্থনীতি, প্রযুক্তি, এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিটকয়েন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবৈধ ও নকল মোবাইল চিহ্নিত করবে এনইআইআর, চালু হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিটিআরসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিটিআরসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ছবি: আজকের পত্রিকা

অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেনাবেচা বন্ধ করতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ফয়েজ আহমদ বলেন, এনইআইআর সিস্টেম আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালু হবে। এনইআইআর এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত আইএমইআই নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ব্যবহৃত সিমের সঙ্গে যুক্ত করে নিবন্ধিত করবে। ফলে বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এই সিস্টেম চালু হলে অবৈধভাবে আমদানি করা বা নকল মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ হবে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিভিন্ন সংস্থার তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে এনইআইআর কার্যকর করার বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি ঘটে অবৈধ বা অনিবন্ধিত ডিভাইস থেকে। এনইআইআর চালু হলে নেটওয়ার্কে আর এ ধরনের ডিভাইস কাজ করবে না।

বিটিআরসি ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইকেওয়াইসি জালিয়াতির ৮৫ শতাংশ ঘটেছিল অনিবন্ধিত বা পুনঃপ্রোগ্রাম করা হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১ দশমিক ৮ লাখ ফোন চুরি সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। এনইআইআর চালু হলে এসব ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করা যাবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর অনুমান অনুযায়ী, অবৈধ ফোন আমদানির কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এনইআইআর কার্যকর হলে এই ক্ষতি রোধ সম্ভব বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।

তৈয়্যব আশা প্রকাশ করে বলেন, এনইআইআরের মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরও সুরক্ষিত হবে। একই সঙ্গে এটি অপরাধ দমনেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারণ, চুরি বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইস সহজেই শনাক্ত ও ব্লক করা সম্ভব হবে।

ফয়েজ আহমদ বলেন, এনইআইআর শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নয়, এটি নাগরিকের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি জাতীয় অঙ্গীকার।

বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, এনইআইআরের মাধ্যমে মোবাইলে যে সিম ব্যবহার করা হবে, তার তথ্যও পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ট্রেস করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এআইকে প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গ্রামীণ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অধিকাংশ কর্মীই নারী। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
গ্রামীণ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অধিকাংশ কর্মীই নারী। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

একসময় বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোই ছিল ভারতের আউটসোর্সিং আইটি হাব। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এখন তাদের কাজ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং অফিসের খরচ তুলনামূলক কম। এই নতুন প্রবণতাটি ‘ক্লাউড ফার্মিং’ নামে পরিচিত, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর আগমন এই ধারায় নতুন গতি এনেছে।

মোহান কুমারের মতো কর্মীরা এই পরিবর্তনের সুফল পাচ্ছেন। তামিলনাড়ুর ছোট শহর টিএন পালায়ামের বাসিন্দা তিনি। তাঁর কাজ হলো এআই অ্যানোটেশন।

মোহান কুমার বলেন, ‘আমার কাজ হলো এআই অ্যানোটেশন। আমি বিভিন্ন সোর্স থেকে ডেটা সংগ্রহ করি, সেগুলোতে লেবেল লাগাই এবং মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ দিই, যাতে তারা বস্তুকে চিনতে পারে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মডেলগুলো স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে।’

মেট্রো শহরে না থাকার কারণে কোনো পেশাগত ক্ষতি হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেশাগতভাবে কোনো পার্থক্য নেই। ছোট শহরে থেকেও আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একই বৈশ্বিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করি। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার মানও একই।’

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ডেসিক্রু হলো ক্লাউড ফার্মিং-এর অন্যতম পথিকৃৎ। চেন্নাইয়ে সদর দপ্তর থাকলেও এই প্রতিষ্ঠান প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ ছড়িয়ে দিয়েছে।

ডেসিক্রুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মান্নিভান্নান জে কে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, চাকরির খোঁজে মানুষকে শহরে যেতে বাধ্য করার বদলে, যেখানে মানুষ থাকে সেখানেই কাজ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে সুযোগগুলো কেবল শহরেই কেন্দ্রীভূত ছিল, যার ফলে গ্রামের যুবসমাজ পিছিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের লক্ষ্য সব সময়ই ছিল মানুষের দোরগোড়ায় বিশ্বমানের ক্যারিয়ার তৈরি করা।’

ডেসিক্রুর মোট কাজের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই বর্তমানে এআই সম্পর্কিত। মান্নিভান্নান জে কে আশা করেন, খুব শিগগিরই তা বেড়ে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশে পৌঁছাবে। এই কাজগুলোর একটি বড় অংশ হলো ট্রান্সক্রিপশন বা অডিও থেকে টেক্সটে রূপান্তর, যা মানুষের কথা বলার বৈচিত্র্য বুঝতে এআইকে সহায়তা করে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘অনেকেই ধরে নেন যে গ্রাম মানেই অনুন্নত। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রগুলো শহুরে আইটি হাবগুলোর মতোই—সুরক্ষিত ডেটা অ্যাকসেস, নির্ভরযোগ্য সংযোগ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রয়েছে। পার্থক্য কেবল ভৌগোলিক অবস্থানে।’ তাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী, যাদের জন্য এটি আর্থিক নিরাপত্তা এনে দিয়েছে।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নেক্সটওয়েলথ ক্লাউড ফার্মিংয়ে আরও একটি অগ্রণী সংস্থা। বেঙ্গালুরুতে সদর দপ্তর থাকা সত্ত্বেও, ভারতের ছোট শহরগুলোতে তাদের ১১টি অফিসে ৫ হাজার কর্মী কাজ করেন।

নেক্সটওয়েলথ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিথিলি রমেশের মতে, ‘ভারতের ৬০ শতাংশ স্নাতক ছোট শহর থেকে আসে, অথচ বেশির ভাগ আইটি কোম্পানি শুধু মেট্রো শহর থেকে নিয়োগ করে। এটি বিপুলসংখ্যক স্মার্ট স্নাতকের সম্ভাবনাকে অব্যবহৃত রেখে দেয়।’ তিনি জানান, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অ্যালগরিদমগুলো ভারতের ছোট শহরগুলোতেই প্রশিক্ষণ ও যাচাই করা হচ্ছে।

মিথিলি রমেশের অনুমান, আগামী ৩ থেকে ৫ বছরে এআই এবং জেনারেটিভ এআই প্রশিক্ষণ, যাচাই এবং রিয়েল-টাইম হ্যান্ডলিং-এর ক্ষেত্রে প্রায় ১০ কোটি নতুন কাজের সৃষ্টি করবে। ভারতের ছোট শহরগুলো এই বিশাল কর্মবাহিনীর মেরুদণ্ড হতে পারে। তিনি মনে করেন, এআই আউটসোর্সিংয়ে ভারতের প্রাথমিক সূচনা এবং কাজের বিশাল ব্যাপ্তি দেশটিকে পাঁচ থেকে সাত বছরের সুবিধা দিয়েছে।

এআই-এর জন্য সিলিকন ভ্যালি ইঞ্জিন তৈরি করলেও, সেই ইঞ্জিনকে সচল রাখার দৈনন্দিন কাজ এখন ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতের ক্লাউড ফার্মিং শিল্প থেকে আসছে বলে মনে করেন প্রযুক্তি উপদেষ্টা কে এস বিশ্বনাথন। তিনি এটিকে একটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তবে এই সাফল্যের পথ চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। ডেসিক্রু ও নেক্সটওয়েলথ নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগের কথা বললেও, বিশ্বনাথন স্বীকার করেন, ভারতের ছোট শহরগুলোতে উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং সুরক্ষিত ডেটা সেন্টারের মান এখনো মেট্রো শহরগুলোর সমতুল্য নয়।

এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে ছোট শহরগুলো ডেটা সুরক্ষার মান পূরণ করতে পারবে না। এই ধারণা কাটিয়ে ওঠা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

নেক্সটওয়েলথ-এর কর্মী ধনলক্ষ্মী বিজয়, যিনি এআই ‘ফাইন টিউন’ করার কাজ করেন (যেমন, নীল ডেনিম জ্যাকেট এবং নেভি শার্টের মতো দেখতে দুটি কাছাকাছি বস্তুকে চিনিয়ে দেওয়া), তিনি বলেন, ‘এই সংশোধনগুলো সিস্টেমে পাঠানো হয়, যা মডেলটিকে আরও নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে। আপনার অনলাইন শপিংয়ের অভিজ্ঞতা সহজ ও ঝামেলামুক্ত করার জন্য পরোক্ষভাবে আমার দলই এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অস্ট্রেলিয়ায় কিশোরীদের সহিংস কাজ করিয়ে মজা নিচ্ছে অনলাইন অপরাধী চক্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ২১
নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে অনলাইন অপরাধ চক্রগুলো। ছবি: জেমিনি
নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে অনলাইন অপরাধ চক্রগুলো। ছবি: জেমিনি

অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধী চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।

এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় তিনজন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরও ৯ জনকে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ (এএফপি) কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট জানিয়েছেন, এই নতুন ও উদ্বেগজনক ‘লিঙ্গভিত্তিক’ সহিংসতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার এক ভাষণে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন তিনি।

টার্গেট করা কিশোরীদের দিয়ে কী ধরনের কাজ করানো হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কমিশনার ব্যারেট বলেছেন, অভিযুক্ত অপরাধীরা সহিংস উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং ‘মজা করার জন্য’ মানুষকে আঘাত করতে চায়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিশের ঘরে থাকা তরুণ। যাদের বেশির ভাগ পশ্চিমা পটভূমি থেকে এসেছে। তারা রোবলক্সের মতো গেমিং প্ল্যাটফর্ম বা ডিসকর্ড ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে কিশোরী বা প্রাক্‌-কিশোরী মেয়েদের টার্গেট করে।

কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট এদের ‘ক্রাইমফ্লুয়েন্সার’ (crimefluencer) বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিরা নানা ধরনের মতাদর্শে বিশ্বাসী, যার মধ্যে নিহিলিজম (জীবনের অর্থ অস্বীকার), স্যাডিজম (অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া), নাৎসিবাদ ও শয়তানবাদ অন্তর্ভুক্ত।

ব্যারেট বলেন, এই দলগুলোর সংস্কৃতি অনেকটা মাল্টিপ্লেয়ার বা অনলাইন গেমিং সংস্কৃতির মতো। তারা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিকার খোঁজে, অনুসরণ করে এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের টেনে আনে।। তারা হয়তো তাদের আচরণের পরিণতি পুরোপুরি বোঝে না।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই নেটওয়ার্কগুলোর সদস্যদের প্রেরণা অর্থনৈতিক নয়, যৌন তৃপ্তির জন্যও নয়, একেবারেই তাদের বিনোদনের জন্য, মজা করার জন্য কিংবা অনলাইনে জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তারা এসব করছে।’

কমিশনার ব্যারেট জানান, শুধু অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৬০ জন সন্দেহভাজন অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ ফাইভ আইজ (Five Eyes) জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মিলে এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময়ে এই ঘোষণা এল। তবে ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিষেধাজ্ঞা থেকে বাইরে থাকবে গেমিং ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নেটওয়ার্ক ৫জি দেখালেই পৃথিবীর কোথাও ৫জি সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফোনে ৫জি দেখানো মানেই ৫জি নয়। ছবি: সংগৃহীত
ফোনে ৫জি দেখানো মানেই ৫জি নয়। ছবি: সংগৃহীত

মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে যখন ৫জি প্রতীকটি লেখা ওঠে, তখন ব্যবহারকারী ধরেই নেন যে তিনি অতি দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল নেটওয়ার্কের এই লেখাটি গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করছে। পাঁচ বছর আগে ৫জি চালু হওয়ার সময় যে গতি, মসৃণ স্ট্রিমিং এবং তাৎক্ষণিক সংযোগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তা অনেক ক্ষেত্রেই অধরা।

প্রতীক মানেই গতি নয়

যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা পলিসিট্র্যাকার-এর গবেষণা এবং বিবিসির ‘মর্নিং লাইভ’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ সময় একটি ফোনে যখন নেটওয়ার্ক বারে ৫জি প্রতীক দেখা যায়, তখন ফোনটি আসলে ৪জি সংযোগ ব্যবহার করে।

এর অর্থ হলো, গ্রাহকেরা উচ্চ মূল্যে ৫জি পরিষেবার বিল পরিশোধ করেও নীরবে ধীর গতির ৪জিতেই আটকে থাকছেন। পলিসিট্র্যাকারের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হলো মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো ৫ জি-কে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। তাঁদের মতে, স্ক্রিনের প্রতীকটি এলাকায় ৫জি সিগন্যালের ‘উপস্থিতি’ দেখায় মাত্র, কিন্তু ফোনটি প্রকৃতপক্ষে সক্রিয়ভাবে সেই দ্রুততম নেটওয়ার্কে যুক্ত কি না, তা নিশ্চিত করে না।

নীতিগতভাবে, ৫জি-এর সর্বোচ্চ তাত্ত্বিক ডাউনলোড গতি প্রতি সেকেন্ডে ২০ হাজার মেগাবিটস (এমবিপিএস) পর্যন্ত হতে পারে। এই গতিতে এক মিনিটেরও কম সময়ে ১৮টি এইচডি চলচ্চিত্র ডাউনলোড করা সম্ভব। তবে গ্রাহকদের জন্য এই গতি বহুলাংশে কম দেখা গেছে।

মোবাইল অপারেটর এবং সরকারের বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও,৫জি পরিষেবা বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এর মূল কারণ হলো,৫জি প্রযুক্তিতে দ্রুত গতি বজায় রাখতে তুলনামূলকভাবে কম দূরত্বে অনেক বেশি টাওয়ার (mast) স্থাপনের প্রয়োজন হয়।

পলিসিট্র্যাকারের মার্টিন সিমনস জানান, ফোনে ৫জি লোগো দেখানো সত্ত্বেও, ডেটা এখনও পুরোনো ৪জি অবকাঠামো ব্যবহার করে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকেরা যেখানে অতি-দ্রুত নেটওয়ার্কের প্রত্যাশা করেন, সেখানেও ধীর ডাউনলোড বা বাফারিংয়ের সম্মুখীন হতে পারেন।

এই সমস্যার সমাধানে কিছু মোবাইল নেটওয়ার্ক এখন ‘স্ট্যান্ডালোন ৫ জি’ নামে একটি নতুন পরিষেবা চালু করছে। তারা দাবি করছে, এই পরিষেবাটি সব সময় সত্যিকারের ৫জি গতি সরবরাহ করবে।

তবে এই সুবিধা পেতে হলে গ্রাহকদের জন্য একটি বিশেষ ফোন প্ল্যান কিনতে হবে, যার খরচ সাধারণত বেশি হয়। কনজিউমার বিশেষজ্ঞ জেসপার গ্রিগসন বিবিসিকে বলেছেন, এই স্ট্যান্ডালোন ৫জি অনেকের জন্য ‘খুব বেশি খরুচে নয়’ কারণ এর চুক্তিগুলো ব্যয়বহুল এবং বড় শহরগুলোতে এখনও কভারেজ অসম্পূর্ণ। যদিও ট্রেন স্টেশন বা ব্যস্ত এলাকায় ভালো পরিষেবা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকদের স্বচ্ছতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আপনি একটি জিনিস পাওয়ার আশা করছেন, কিন্তু পাচ্ছেন অন্য কিছু। এখানে নির্ভুলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্য সংস্থা মোবাইল ইউকে অবশ্য নিশ্চিত করেছে,৫জি আইকন মানেই সক্রিয় ৫জি সংযোগ নয়। এটি শুধু ব্যবহারকারী ৫জি এনাবল এলাকায় আছেন তা নির্দেশ করে। তারা জানায়, নেটওয়ার্কগুলো রিয়েল-টাইম সিগন্যাল শক্তির ওপর ভিত্তি করে গ্রাহকদের গতিশীলভাবে ৪জি বা ৫ জি-এর মধ্যে সেরা সংযোগে পরিচালিত করে।

গ্রাহকেরা কী করবেন?

যদি অপারেটর ৫জি নেটওয়ার্ক দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু আপনি নিয়মিত এবং নির্ভরযোগ্য ৫জি সংকেত পাচ্ছেন না বলে মনে করেন, তাহলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা:

গতি পরীক্ষা করুন: একটি অনলাইন স্পিড টেস্ট ব্যবহার করে আসল ডাউনলোড এবং আপলোড রেট দেখুন।

কভারেজ যাচাই করুন: আপনার এলাকায় কোন নেটওয়ার্ক সেরা ৪জি বা ৫জি সংকেত দিচ্ছে, তা জানতে একটি কভারেজ চেকার ব্যবহার করুন।

প্রোভাইডারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন: যদি আপনি কভারেজ নিয়ে অসন্তুষ্ট হন, তবে আপনার বর্তমান পরিষেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করে সমস্যাটি ব্যাখ্যা করুন এবং তাদের পরামর্শ নিন।

প্রোভাইডার পরিবর্তন করুন: একটি অপারেটরে আবদ্ধ না থেকে, ভালো কভারেজ দেয় এমন অন্য একটি প্রোভাইডারে সুইচ করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’, প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ ভারত

আপনার রাশিফল: অতি আত্মবিশ্বাসের লাগাম টানুন, ভুল ধরলে রোমান্স বরবাদ

পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশ ও চীনকে পেছনে ফেলার পরিকল্পনা করছে ভারত

সোনার দাম ২ লাখের নিচে নামল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত