Ajker Patrika

স্যামসাংয়ের জোয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হিস্যা কমছে অ্যাপলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত জুলাইয়েই স্যামসাং বাজারে এনেছে ভাঁজযোগ্য স্ক্রিনযুক্ত দুটি স্মার্টফোন। ছবি: সংগৃহীত
গত জুলাইয়েই স্যামসাং বাজারে এনেছে ভাঁজযোগ্য স্ক্রিনযুক্ত দুটি স্মার্টফোন। ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তি জগতে স্মার্টফোন নিয়ে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের প্রতিযোগিতা বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। ২০১৪ সালে বড় পর্দার ফোনে এগিয়ে ছিল স্যামসাং, আর অ্যাপল ভক্তরা চাইছিলেন একটি বড় স্ক্রিনের আইফোন। অবশেষে আইফোন ৬ আনার মাধ্যমে অ্যাপল সেই দাবি পূরণ করে। সেবার জয় হয়েছিল অ্যাপলের। তবে এক দশকেরও বেশি সময় পর আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে অ্যাপল-স্যামসাং প্রতিযোগিতা। আর এবারও মূল বিষয়বস্তু—স্ক্রিন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন চালান নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের তথ্য বলছে, আগের প্রান্তিকে যেখানে স্যামসাংয়ের মার্কেট শেয়ার ছিল ২৩ শতাংশ, সেখানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশে। অন্যদিকে, অ্যাপলের মার্কেট শেয়ার কমে ৫৬ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৪৯ শতাংশে।

এখনো অবশ্য মার্কিন বাজারে অ্যাপলই শীর্ষস্থানে। তবে এই পতনটি ইঙ্গিত দেয়, দীর্ঘ এক দশক পর অ্যাপল সত্যিই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে ২০২৫ সালে অ্যাপলের শেয়ারের দাম কমেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে, স্যামসাংয়ের শেয়ার বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।

অবশ্য গত জুলাইয়ে প্রকাশিত অ্যাপলের আয় বিবরণী অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় আইফোন বিক্রি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

গত জুলাইতেই স্যামসাং বাজারে এনেছে ভাঁজযোগ্য স্ক্রিনযুক্ত দুটি স্মার্টফোন—গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৭ এবং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৭। জেড ফোল্ড ৭ ফোনটি ব্যবহারকারীদের জন্য ট্যাবলেটে পরিণত হতে পারে, আর জেড ফ্লিপ দেখতে অনেকটা পুরোনো দিনের ফ্লিপ ফোনের মতো হলেও এতে রয়েছে আধুনিক সব প্রযুক্তি। এই ফোনগুলো যুক্ত হয়েছে গ্যালাক্সি এস ২৫ এজ—একটি হালকা ও পাতলা প্রিমিয়াম স্মার্টফোন।

ভাঁজযোগ্য ফোনগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, বিশেষত রিভিউ ভিডিও নিয়ে। এক ব্যবহারকারী লাইভ স্ট্রিম করে দেখিয়েছেন কীভাবে তিনি জেড ফোল্ড ৭ ফোনটিকে টানা ২ লাখবার ভাঁজ করেছেন। সেই ভিডিও থেকে তৈরি একটি ক্লিপ ইউটিউবে ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালাইটিকস প্রতিষ্ঠান স্প্রাউট সোশ্যালের তথ্যমতে, গত এক মাসে স্যামসাংয়ের প্রিমিয়াম স্মার্টফোন, বিশেষত জেড ফোল্ড ৭ নিয়ে ৫০ হাজারের বেশি বার পোস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশ পোস্টই ছিল ইতিবাচক বা নিরপেক্ষ।

শুধু ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দই নয়, বিশ্লেষকেরা বলছেন, জুন প্রান্তিকে মার্কেট শেয়ারে পরিবর্তনের অন্যতম কারণ শুল্কজনিত ঝামেলা। এ কারণে বিভিন্ন ফোন নির্মাতা বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে বাজারে নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য।

তবে স্যামসাংয়ের অগ্রগতি আরও বড় একটি বাস্তবতা তুলে ধরছে—বিভিন্ন দামের ফোন বিক্রির কৌশল। প্রতিষ্ঠানটি ৬৫০ ডলার থেকে শুরু করে ২ হাজার ৪০০ ডলার পর্যন্ত দামের ফোন বাজারে এনেছে। ক্যানালিসের বিশ্লেষক রুনার বিয়োরহোভদে বলেন, ‘প্রতিটি দামে আপনি কাউকে টার্গেট করতে পারবেন—এটাই মূল বার্তা।’

অন্যদিকে, আইফোনের ডিজাইন ২০১৭ সাল থেকে খুব একটা বদলায়নি—সামনে স্ক্রিন, পেছনে কয়েকটি ক্যামেরা। বর্তমানে অ্যাপল চারটি মডেলের আইফোন বিক্রি করছে, যার দাম শুরু ৮২৯ ডলার থেকে এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৯৯ ডলার পর্যন্ত।

স্যামসাংসহ অন্য নির্মাতারা এখন নতুন ডিজাইনের ফোন আনার চেষ্টা করছেন। অ্যাপলও সেই পথে হাঁটতে চলেছে। আগামী মাসেই আসতে পারে একটি পাতলা আইফোন, যা স্যামসাং গ্যালাক্সি ‘এজ’-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।

গত মে মাসে লুপ ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জন ডোনোভান লিখেছেন, ‘অ্যাপল নিশ্চিত যে তাদের ৫ দশমিক ৫ মিমি পুরুত্বের নতুন “এয়ার” মডেল বাজারে ভালো করবে, কারণ পরীক্ষায় এই নতুন আকৃতি নিয়ে ব্যবহারকারীদের আগ্রহ পাওয়া গেছে।’

গত মাসে জেপি মরগ্যান চেজের বিশ্লেষক সামিক চ্যাটার্জি বলেন, অ্যাপল ২০২৬ সালে প্রথম ভাঁজযোগ্য আইফোন বাজারে আনতে পারে, যার সম্ভাব্য নাম—আইফোন ১৮।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘২০২৬ সালের শরতে অ্যাপল প্রথম ফোল্ডেবল ফোন বাজারে আনতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের নজর ইতিমধ্যে সেদিকেই চলে গেছে।’

বর্তমানে অ্যাপলের সবচেয়ে দামি ফোন আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স—যার ২৫৬ জিবি সংস্করণের দাম ১ হাজার ১৯৯ ডলার এবং ১ টেরাবাইট সংস্করণ ১ হাজার ৫৯৯ ডলার। অন্যদিকে, সদ্য ঘোষিত স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৭-এর দাম শুরু ১ হাজার ৯৯৯ ডলার থেকে এবং সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪১৯ ডলার পর্যন্ত। চ্যাটার্জি বলছেন, অ্যাপলের ফোল্ডেবল ফোনের দামও হতে পারে ১ হাজার ৯৯৯ ডলার।

ভাঁজযোগ্য ফোন এখন পরিপক্ব

স্যামসাং ২০১৯ সালে প্রথম ফোল্ডেবল ফোন বাজারে আনে, তবে শুরুটা ভালো ছিল না। সে সময় কিছু ডিভাইসে ভাঁজের লাইনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা বাতিল করতে হয়।

তবে স্যামসাং বলছে, এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে এবং এবার ভাঁজযোগ্য ফোন পুরোপুরি প্রস্তুত। স্যামসাং ইলেকট্রনিকস আমেরিকার মোবাইল পণ্যের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্রু ব্ল্যাকার্ড বলেন, ‘এখন আর ফোল্ডেবল ডিভাইস ব্যবহার করার জন্য কোনো বড় আপস করতে হয় না।’

যদিও প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির নির্দিষ্ট সংখ্যা জানায় না, তবে ব্ল্যাকার্ড দাবি করেছেন, গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৭ আগের যেকোনো ভাঁজযোগ্য ডিভাইসের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি প্রি-অর্ডার পেয়েছে এবং বিক্রি আগের সংস্করণের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, জুন প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের বিক্রি ১৬ শতাংশ বেড়েছে, যা এসেছে মূলত উচ্চমূল্যের ফোনগুলোর কারণে। বিশেষ করে গ্যালাক্সি এস ২৫ এজ ফোন থেকেও কিছুটা সহায়তা পেয়েছে স্যামসাং।

এদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থান নতুন ধরনের প্রযুক্তিপণ্যের সম্ভাবনা তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে আইফোনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। ২০২৫ সালের মে মাসে অ্যাপলের প্রাক্তন ডিজাইনপ্রধান জনি আইভের প্রতিষ্ঠিত একটি স্টার্টআপ ৬.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয় ওপেনএআই। এই স্টার্টআপ তৈরি করছে ভবিষ্যতের নতুন ধরনের হার্ডওয়্যার। এআই-নির্ভর অন্যান্য স্টার্টআপ ইতিমধ্যে বাজারে এনেছে ভয়েস কন্ট্রোলড পিন, পেনডেন্ট ও স্মার্ট চশমা।

তথ্যসূত্র: সিএনবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত